• মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
Tuesday, June 17, 2025
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ
No Result
View All Result

রামপ্রসাদ সেনের শাক্ত পদাবলীঃ মনের গান মানুষের গান

আমিনুল ইসলাম by আমিনুল ইসলাম
May 25, 2021
in সাহিত্য আলোচনা
0
রামপ্রসাদ সেনের শাক্ত পদাবলীঃ মনের গান মানুষের গান

Image Source: bongodorshon

Share on FacebookShare on Twitter

অষ্টাদশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের নবীনতর শাখা শাক্তপদাবলীর শ্রেষ্ঠ কবি রামপ্রসাদ সেন। কবি ঈশ্বর গুপ্ত রামপ্রসাদের জীবন সম্পর্কে যেসব তথ্য দিয়েছেন তা থেকে জানা যায় যে, আনুমানিক ১৭২০-২১ খ্রিস্টাব্দে হালিশহরে কবি জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে দেহরক্ষা করেন। তাঁর পিতার নাম রামরাম সেন এবং মাতার নাম সিদ্ধেধুরী। কবি কলকাতার ধনী জমিদার দুর্গাচরণ মিত্রের সেরেস্তায় মুহুরির কাজ করতেন। জনশ্রুতি এই, জমিদারি সেরেস্তার খাতায় কবি নাকি ‘আমায় দে মা তবিলদারি, আমি নিমকহারাম এই শঙ্করী’ গানটি লিখে গুণগ্রাহী জমিদারের অশেষ প্রীতি-শ্রদ্ধা লাভ করেন এবং ওই জমিদার কবিকে কর্ম থেকে অব্যাহতি দিয়ে নিশ্চিন্তে ভজন-সাধন করবার জন্য মাসিক ত্রিশ টাকা বৃত্তির ব্যবস্থা করেন। কবি ধনাঢ্য জমিদার রাজা। কিশাের মুখােপাধ্যায়ের পৃষ্ঠপােষকতায় ‘কালীকীর্তন’ রচনা করেন। নবদ্বীপাধিপতি কৃষ্ণচন্দ্র রায় এবং আরও কয়েকজন জমিদার কবিকে ভূ-সম্পত্তি ও বৃত্তি দিয়েছিলেন। কবি ছিলেন সংসারের প্রতি উদাসীন, এবং স্বভাবে আত্মভােলা। এই সাধক-কবি শুধু উচ্চশ্রেণির গানই বাঁধতে পারতেন না, নিজেও সুকণ্ঠের অধিকারী ছিলেন, ভাল গান গাইতেও পারতেন। তাঁর সহজসরল কথা ও সুরে রচিত সকলের প্রিয় এবং সকলের গেয় ছিল গানগুলি, যা ‘প্রসাদী-সঙ্গীত’ বা ‘রামপ্রসাদী-সঙ্গীত এবং বিশেষ সুরের ধাঁচটি ‘প্রসাদী সুর’ নামে খ্যাত হয়েছিল। ধনী-নির্ধন জমিদার-প্রজা ইতর-ভদ্র সকলের প্রিয় ছিল এই গীত। শােনা যায়, গঙ্গাবক্ষে বজরায় চেপে যাওয়ার পথে নবাব সিরাজউদ্দৌলা কবিকণ্ঠে এই সঙ্গীত শুনে মুগ্ধ হয়ে কবিকে শ্রদ্ধাসহ পুরস্কার প্রদান করেছিলেন। ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে কালীপূজার শেষে গঙ্গায় প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় কবি সজ্ঞানে গঙ্গাপ্রবাহে আত্মবিসর্জন করেন।

মাতৃসংগীত বা শ্যামা-সঙ্গীতের উদ্ভাবক ও সর্বশ্রেষ্ঠ কবি রামপ্রসাদ সর্বমােট প্রায় তিনশাে পদ রচনা করেছিলেন। অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এই পদগুলিকে চারটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন—

  • ১. ‘উমা-বিষয়ক’ (অর্থাৎ আগমনী ও বিজয়া),
  • ২. সাধনা-বিষয়ক,
  • ৩. শক্তিদেবীর স্বরূপ-বিষয়ক এবং
  • ৪. তত্ত্বদর্শন ও নীতি-বিষয়ক।

অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “..আগমনী ও বিজয়া পর্যায়ের পদের সংখ্যাও অল্প, গুণগত উৎকর্ষও অল্প। সাধন-বিষয়ক পদে কবি নানা উপমা-রূপকের মধ্য দিয়ে নিজের সাধনার কথা আভাসে ব্যক্ত করেছেন। তত্ত্ব ও নীতির বিষয়ে তিনি যে সমস্ত গান লিখেছিলেন, তাতে শুষ্ক নীতি ও নিষ্করুণ বৈরাগ্য ব্যতীত আর কোন উচ্চতর অনুভূতির প্রকাশ দেখা যায় না। কিন্তু আদ্যাশক্তির স্বরূপ এবং তার সঙ্গে কবির বাৎসল্য রসের যে চিত্র উদ্ঘাটিত হয়েছে, বাংলা সাহিত্যে তার তুলনা নেই।”১

রামপ্রসাদ-রচিত আগমনী-বিজয়ার পদগুলি বাৎসল্য রসে এবং মানবিক আবেদনে সমৃদ্ধ, এবং হৃদয়স্পর্শী। একটি পদের অংশবিশেষ

ওগাে রাণি নগরে কোলাহল, উঠ, চল চল,

নন্দিনী নিকটে তােমার গাে।।

চল বরণ করিয়া গৃহে আনি গিয়া

এসাে না সঙ্গে আমার গাে।।

জয়া, কি কথা কহিলি, আমারে কিনিলি

কি দিলি শুভ সমাচার।

তােমায় অদেয় কি আছে এস দেখি কাছে।

প্রাণ দিয়ে শুধি ধার গাে।।…

রামপ্রসাদের অন্যান্য শাক্তগীতির যে সার্বজনীন আবেদন ও গভীর সংবেদনা তার পরিচয় আছে এই পদটিতে—

বল মা, আমি দাঁড়াই কোথা

আমার কেহ নাই শঙ্করী হেথা।

মার সােহাগে বাপের আদর এ দৃষ্টান্ত যথা তথা।

যে বাপ বিমাতারে ধরে শিরে

এমন বাপের ভরসা কোথা।।…

ব্যক্তিজীবন অভিজ্ঞতার সঙ্গে সামাজিক অভিজ্ঞতার রসায়নে মর্মস্পর্শী কিছু পদ রচনা করেছিলেন রামপ্রসাদ। একটি পদের অংশ—

মা গাে, তারা, ও শঙ্করী।

কোন্ বিচারে আমার পরে করলে দুখের ডিক্রি জারি?

এক আসামী ছয় প্যাদা, বল মা কিসে সামাই করি।

আমার ইচ্ছা করে ঐ ছয়টারে বিষ খাওয়াইয়ে প্রাণে মারি।।

প্যাদার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র, তার নামেতে নিলাম জারি।

ঐ যে পান বেচে খায় কৃষ্ণ পান্তি তারে দিলে জমিদারি।।…

‘নিতান্ত গতানুগতিকভাবে হলেও ধর্মগত আদর্শ-চেতনার প্রতি এই কবিতার অবধান স্পষ্ট ও প্রত্যক্ষ। তাহলেও, কৃষ্ণপান্তির মতাে অযােগ্যজনের জমিদারি লাভ-জনিত অর্থনৈতিক অসংগতির বিরুদ্ধে কবি-মানসের অভিযােগ এবং আক্ষেপও কিছু অস্পষ্ট নয়, বরং ঐটুকুই কবিতাটির অন্তর্লোকে স্নিগ্ধ জীবনাবেদন সঞ্চার করেছে।২ একেই বােধহয় ম্যাথু আর্নল্ডের ভাষায় ‘ক্রিটিসিজম অফ লাইফ’ বলা যায়, যা শ্রেষ্ঠ সাহিত্যের গুণ বলে অর্নল্ড মনে করতেন। এরকম জীবন-সমালােচনামূলক আরও কয়েকটি পদের অংশবিশেষ

১. মা আমায় ঘুরাবি কত

কলুর চোখ বাঁধা বলদের মত।

২. শ্যামা মা ওড়াচ্ছে ঘুড়ি

ভব-সংসার মাজার মাঝে

৩. এমন দিন কি হবে মা তারা।

যবে তারা তারা তারা বলে তারা বেয়ে ঝরবে ধারা।

৪. আসার আসা ভবে আসা আসা মাত্র হল।

যেমন চিত্রের পদ্মেতে পড়ে ভ্রমর ভুলে র’ল।।

উদ্ধৃত পদগুলিতে জীবন-বাস্তবতা, আধ্যাত্ম-চিন্তা এবং কাব্যরস মিলেমিশে গেছে। বাস্তব জীবনের মৃত্তিকাভূমি থেকে উপমা চিত্রকল্প ও শব্দ-সম্ভার কুড়িয়ে এনে অনুভূতিরসে জারিত করে কবি এক অপূর্ব ও অভিনব কাব্যরূপ দান করেছেন। আত্মিক অনুভূতি ও করুণ-গভীর সুরমুর্হনায় পদগুলি উৎকৃষ্ট গীতিকবিতার আকার নিয়েছে। অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় রামপ্রসাদের আদ্যাশক্তিকে জননীরূপে দেখা, আধিভৌতিক দুঃখকে অস্বীকার, তত্ত্বসাধনার সঙ্গে বাস্তব জীবনের সংযােগ ঘটানাে ইত্যাদি (মতার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন—“বৈষ্ণব পদাবলীর মতাে রামপ্রসাদের গান বৈকুণ্ঠের গান নয়, তার সঙ্গে ধূলি ও ধরিত্রীর নিবিড় যােগ আছে বলে আধ্যাত্মিকতা বাদ দিয়েও কাব্যরস উপলব্ধি করা যায় যে বাক্যরস বাস্তব জীবনকে অবধারণ করে আছে। শ্যামার সন্তান রামপ্রসাদ অধ্যাত্মসাধনা, বাস্তবতা ও কাব্যরসের ত্রিবেণী রচনা করে ভক্তির গীতি-সাহিত্যকে নতুন সার্থকতা পথে প্রেরণ করেছেন।৩

তাছাড়া রামপ্রসাদী পদে মিলনের সাধনার কথাও নানা আঙ্গিকে এসেছে। বুদ্ধিজীবী মহলে আজ সম্প্রীতির কথা প্রায়শই শােনা যায়। বাংলার লােক-ঐতিহ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের সঙ্কীর্ণতার বিরােধিতা নতুন কোনাে ব্যাপার নয়—চর্যাপদ থেকে চণ্ডীদাস, চণ্ডীদাস থেকে শাহ মুহম্মদ সাগির আবদুল হাকিম, আবদুল হাকিম থেকে রামপ্রসাদ সেনের পদাবলী প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের বিরােধিতা করে আসছে। লালন ফকির থেকে খালেক দেওয়ান (কিছু দিন আগেও ঢাকার উপকণ্ঠে বাস করতেন), সুফী-মুর্শীদা সাধকগণ থেকে একালের সনাতন দাস-চক্রধর দাস-বিধানাথ দাসরা প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের বিরােধিতা করে আসছেন একদিকে, অন্যদিকে বিভিন্ন ধর্মের মূল ঐক্যের কথা গেয়ে আসছেন। এর মধ্যে বহুপদ/ গান এঁরা গুরু বা অন্য কোনাে বাউল গায়কদের মুখে শুনে শিখেছেন, অর্থাৎ তিনির্ভর এই পদ/গান জ্ঞাত কবিদের দ্বারা রচিত, বহুকাল ধরে লােকমুখে গীত হয়ে আসছে। মূল পদের অনেক শব্দ, বাক্যাংশ, ছত্র গেছে কালের চলায় বদলে। বিষয়টি সম্ভবত রবীন্দ্রনাথই প্রথম ঔপনিবেশিক ইয়রােকেন্দ্রিক আধুনিকতার যুগে আমাদের সামনে তুলে ধরেন, “আমাদের দেশে যাঁরা নিজেদের শিক্ষিত বলেন তারা প্রয়ােজনের তাড়নায় হিন্দু-মুসলমানের মিলনের নানা কৌশল খুঁজে বেড়াচ্ছেন। অন্যদেশের ঐতিহাসিক স্কুলে তাদের শিক্ষা।

কিন্তু আমাদের দেশের ইতিহাস আজ পর্যন্ত প্রয়ােজনের মধ্যে নয়, পরন্তু মানুষের অন্তরতর গভীর সত্যের মধ্যে মিলনের সাধনাকে বহন করে এসেছে। বাউল সাহিত্যে বাউল সম্প্রদায়ের সেই সাধনা দেখি—এ জিনিস হিন্দু-মুসলমান উভয়েরই একত্র হয়েছে অথচ কেউ কাউকে আঘাত করেনি। এই মিলনে সভা-সমিতির প্রতিষ্ঠা হয়নি, এই মিলনে গান জেগেছে, সেই গানের ভাষা ও সুর অশিতি মাধুর্যে সরস। এই গানের ভাষায় ও সুরে হিন্দু-মুসলমানের কণ্ঠ মিলেছে, কোরান-পুরাণে ঝগড়া বাধেনি।…বাংলাদেশের গ্রামের গভীর চিত্তে উচ্চ সভ্যতার প্রেরণা স্কুল কলেজের অগােচরে আপনা আপনি কিরকম কাজ করে এসেছে, হিন্দু-মুসলমানের জন্য এক আসন রচনার চেষ্টা করেছে।”

রবীন্দ্রনাথ অশিক্ষিত বলতে সম্ভবত নিরক্ষর বুঝিয়েছিলেন, যে মানবতার শিক্ষা। আমরা এই ‘অশিক্ষিত’দের কাছে পেয়ে থাকি আধুনিকতায় শিথিত বাঙালি নব্য সম্প্রদায়ের কাছ থেকে তা পাই না। উনিশ শতকে ইংরাজ-সংস্পর্শে আসার পর ইংরেজি শিক্ষিত যে বুদ্ধিজীবী সমাজ তৈরি হল তারা দেশীয় সমস্ত কিছুই পরিত্যাজ্য ভেবে, বাংলার লােক-ঐতিহ্যকে সম্পূর্ণ কুসংস্কার ভেবে বর্জন করে রইল। ফলে অষ্টাদশ শতকের শেষে পশ্চিমবঙ্গে ধর্ম ও সংস্কৃতিতে উভয় সম্প্রদায় কতটা এক হয়ে এসেছিল, উনিশ শতকে ততটাই গেল দূরে। বর্ণ বাঙালি হিন্দুর সঙ্গে নিম্নবর্ণের হিন্দুর, মুসলমানের দূরত্ব তৈরি হল, বিষবৃক্ষ রােপিত হল। ইউরােপীয় নবজাগরণের আদলে বাঙালি বর্ণ হিন্দু প্রাচীন গৌরবের গর্বে তাদের ইংরেজি জ্ঞানের শিক্ষা ছড়িয়ে দিলেন। সঙ্কীর্ণগণ্ডীতে—এখান থেকেই আধুনিক বুদ্ধিজীবীর সূচনা। প্রগতিমানবতার কথা বললেও সংকটে তাদের স্বরূপ বেরিয়ে পড়ে। আসলে আধুনিক বাঙালি তার অসাম্প্রদায়িক লােক-ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন নয়। আমরা লােকসংস্কৃতি থেকে নিতে পারি আমাদের ঐক্যের শিক্ষা।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলার ব্রত’ একটি অপরিহার্য গ্রন্থ, এ প্রসঙ্গে বিনয় ঘােষ জানান, ব্রত সমাজের এমন একটা পর্বের অনুষ্ঠান যখন ‘ব্যক্তি’ বা তার বাসনা-কামনা সমাজ জীবনে প্রধান হয়ে ওঠেনি। ব্ৰত উৎসব সমাজের আদি স্তরের সংঘবদ্ধ অনুষ্ঠান পরবর্তী ‘সুসভ্য স্তরের’ (প্রধানত নাগরিক মধ্যবিত্তের) ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান নয়। যাবতীয় লােককৃষ্টিও তাই। আমরা যারা শহরে কয়েক পু(ষ ধরে বাস করছি বা নগরকেন্দ্রিক জীবনযাপন করছি—তাদের সঙ্গে লােকযানের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক কোথায়? কৃষিকেন্দ্রিক-গ্রামকেন্দ্রিক জীবন থেকে নাগরিক জীবনে চলে আসলেও আমাদের মন কখনই মাটির তলায় চাপা পড়ে যায়নি। লােকবৃত্ত সংবেদনশীল মানুষ মাত্রেই স্পর্শ করে।

বাংলার মরমী গানে অর্থাৎ বাউল-মারফতি-ফকিরি-মুর্শীদা-দেহতত্ত্বমূলক গানে মানব শরীরের সঙ্গে জমির উপমা দেওয়া বহুকাল ধরেই চলে আসছে, কৃষিনির্ভর কৃষ্টির প্রাধান্যই এর কারণ। রামপ্রসাদ সেনের উত্তরাধিকারও একই, সে আমলের উচ্চশিক্ষাপ্রাপ্ত হয়েও এবং নির্মীয়মান ইংরেজ সংস্পর্শের নাগরিক অভিজ্ঞতার কাছাকাছি থাকলেও, সহজিয়া-মরমিয়া সঙ্গীতের উপাদান তাঁর পদের বিশিষ্ট শৈলী। রামপ্রসাদ এই মানবদেহকে মানবজমিন রূপে বর্ণনা করেছেন এবং এই পদটি কৃষ্টি-সংস্কৃতির মূল চিন্তাধারার পরিচায়ক—

মনরে কৃষিকাজ জান না।

এমন মানবজমিন রইল পতিত

আবাদ করলে ফলত সােনা।।

কালী নামে দেও রে বেড়া,

ফসলে তছরূপ হবে না।

ইসলামি সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে ইসলামের বাঙালি রূপান্তর শুরু হল। সেখানেও মানবতাবােধ ও প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের বিরােধিতা এবং হিন্দু-মুসলমান সাংস্কৃতিক ঐক্যের একটা ধারা শুরু হয়ে যায় এবং সপ্তদশ শতকের মহান কবি আবদুল হাকিম তার ‘নূরনামা’তে বলেন,

যেই দেশ যেই বাক্য কহে নরগণ।।

সেই বাক্য বুঝে প্রভু অপ নিরঞ্জন।।

সর্ব বাক্য বুঝে প্রভু কিবা হিন্দুয়ানি।

বঙ্গদেশী বাক্য কিবা যত ইতি বাণী।।

আল্লাহ খােদা গোঁসাই সকল তার নাম।

সব গুণে নিরঞ্জন প্রভু গুণধাম।।

মারফতি ভেদ যার নাহিক গমন।।

হিন্দুর অক্ষর হিংসে সে সবের গান।।

যে সবে বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।

সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।

রামপ্রসাদকে আমরা জানি শাক্ত পদাবলী, প্রসাদী সুরের সৃষ্টিকর্তা এবং সাধক হিসেবে। তার কণ্ঠে মায়ের বন্দনা, বর্ণনা, বাৎসল্য ও প্রতিবাৎসল্য ধ্বনিত হয়েছিল আর সমকালীন গ্রামীণ জীবনের, কৃষি জীবনের, দারিদ্র্যের, দুঃখ বেদনার বার্তা উঠে এসেছিল। তার আরাে একটা বড় পরিচয় যাগ-যজ্ঞ, মন্ত্র প্রভৃতি প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের বিরােধিতা এবং সাম্প্রদায়িক ঐক্যের বার্তা প্রকাশের একজন কবি হিসেবে। বৌদ্ধ সহজিয়া-নাথ-সন্ত-বৈষ্ণব সহজিয়া-বাউল-ফকিরদের অসাম্প্রদায়িক ও প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম বিরােধী ধারা ভারতবর্ষে হাজার বছর বা তারও বেশী সময়ব্যাপী চলেছে, রামপ্রসাদও সেই ধারার, সেই ভারতীয় উদারনৈতিক বাগধারার একজন কবি—

ত্যাজিব সব ভেদাভেদ,

ঘুচে যাবে মনের খেদ।

ওরে শত শত সত্য বেদ,

তারা আমার নিরাকারা।।

শ্রীরামপ্রসাদ রটে,

মা বিরাজে সৰ্ব্ব ঘটে।

ওরে আঁখি অন্ধ দেখ মাকে,

তিমিরে তিমির হারা।।

শ্যামা শ্যাম রাম শিব কৃষ্ণ সবই এক, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের কোনাে অর্থ হয় না।  এ পদটিতে ঐক্যের বার্তা খুবই দৃঢ়ভাবে প্রচারিত হয়েছে—

যিনি দেবের দেব মহাদেব, কালরূপ

তার হৃদয়বাসী।

কাল বরণ ব্রজের জীবন, ব্রজাঙ্গনার মন উদাসী।।

হলেন বনমালী কৃষ্ণকালী, বাঁশী ত্যজে করে অসি।।

প্রসাদ ভনে, অভেদ জ্ঞানে কালােরূপে মেশামেশি।

ওরে একে পাঁচ পাঁচেই এক মন করাে না দ্বেষাদেষি।।

সে সময়ের বাংলাদেশে বৈষ্ণব-শাক্তের বিরােধ তীব্র ছিল। চৈতন্যদেবের সময় থেকেই বৈষ্ণব সাহিত্যে শাক্ততন্ত্র সম্পর্কে অপ্রিয় মন্তব্যের অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। আর শাক্তরাও বৈষ্ণবদের অনেক সময় প্রতিচক্ষে দেখতেন না। বৈষ্ণব-শাক্ত সম্প্রদায়গত বিরােধ রামপ্রসাদ-আজু গােসাই-এর কবির লড়াই-এ পাওয়া যায়। রামপ্রসাদ অনেকগুলি পদে এই সাম্প্রদায়িকতার বিরােধিতা করেছেন, আঠারাে শতকের সামাজিক পরিবেশে যার সমর্থন ছিল না। শাক্তধর্ম প্রচারে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র নদীয়ায় এক হাজার কালীপূজা করিয়েছিলেন আর দশ হাজার বলি হয়েছিল বলে কথিত আছে—

আর কাজ কি আমার কাশী।

মায়ের পদতলে পড়ে আছে, গয়া গঙ্গা বারাণসী।।

হৃৎকমলে ধ্যান কালে, আনন্দ সাগরে ভাসি।

ওরে কালীর পদ কোকনদ, তীর্থ রাশি রাশি।।

তীর্থযাত্রার অসারতা নিয়ে রামপ্রসাদের আরাে কয়েকটি পদ আছে। ভক্তি সাহিত্য ও বাউল সাহিত্যের সঙ্গে রামপ্রসাদের বাগধারার সাদৃশ্যের আলােচনা প্রসঙ্গে বলা যায়—

জেনেছি জেনেছি তারা, তুমি জান ভােজের বাজী।

যে তােমায় যে ভাবে ডাকে, তাতেই তুমি হও মা রাজী।।

মগে বলে ‘ফরাতারা’ ‘গ’ বলে ফিরিঙ্গী যারা মা।

‘খােদা’ বলে ডাকে তােমায়, মােগল পাঠান সৈয়দ কাজী।।

শাক্তে বলে তুমি শক্তি, শিব তুমি শৈবেতে উক্তি মা।

গৌরী বলে সূৰ্য্য তুমি, বৈরাগী কয় রাধিকা জী।।

গাণপত্য বলে গণেশ, যক্ষ বলে তুমি ধনেশ মা।।

শিল্পী বলে বিধর্মা, বদর বলে নায়ের মাঝি।।

শ্রীরামপ্রসাদ বলে, কালী জেনাে এ সব জানে।

এক ব্রহ্ম দ্বিধা ভেবে, মন আমার হয়েছে পাজী।।।

রামপ্রসাদ কি লােককবি ছিলেন? উচ্চবর্ণে, একদা বিত্তবান শিথিত পরিবারে জন্ম, নিজেও সংস্কৃত ও ফারসি ভাষায় শিক্ষিত এবং যাঁর পটভূমি তন্ত্রকেন্দ্রিক শাক্ত সাধনায়, পদগুলির মূল কাঠামােও শক্তি সাধনার, তঁাকে লােককবি বলা যায় কিনা। অবশ্যই বলা যায় কারণ রামপ্রসাদের পদগুলি লােকহৃদয় স্পর্শী। সমগ্র বাংলাভাষী অঞ্চলে সর্বসাধারণের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়েছিল। রামপ্রসাদের মৃত্যুর (১৭৮১?) ১৭০ বছরেরও পর যােগেন্দ্রনাথ গুপ্ত লিখছেন,

“রামপ্রসাদের শাক্ত-সঙ্গীত সম্বন্ধে একথা বলা যায় যে—বাঙ্গলার সর্বত্র জনসাধারণের প্রাণে রামপ্রসাদের সঙ্গীত সঞ্জীবিত। অল্প কবির ভাগ্যেই এইরূপ সৌভাগ্য হয়। আমি পথচারী কুলী-মজুরের মুখে ধানের ক্ষেতে কাৰ্য্যরত কৃষাণের মুখে রামপ্রসাদের সঙ্গীত—‘দিনান্তে যাবে এদিন, এ দিন যাবে, কেবল ঘােষণা রবে গাে’ এ গীতটি গাইতে শুনিয়াছি। আসন্ন সন্ধ্যায় সূর্য যখন অস্ত গমনােন্মুখ, পাখিরা দলে দলে কলরবে আকাশ বাতাস মুখরিত করিয়া নীড় পানে ছুটিয়া চলিয়াছে, তখনও প্রশান্ত নদীর বুকে নৌকারােহী যাত্রী ও নৌকার মাঝিদের মুখে রামপ্রসাদের গান শুনিয়াছি। হাট হইতে ফিরিবার সময় খেয়া নৌকায় বসিয়া ও গ্রামবাসীদের মুখে গাহিতে শুনিয়াছি রামপ্রসাদের গান।”৪

এরকম বর্ণনা ঈরচন্দ্র গুপ্ত, এডােয়ার্ড টমসন আরাে অনেকেই দিয়েছেন।

রামপ্রসাদের শক্তিস্বরূপিণী মাতৃকাদেবী বাঙালির স্নেহময়ী জননী। এই জননীর কাছে পুষের পৌরুষ, নারীর নারীত্ব লাঞ্ছিত ও অবমানিত নয়, তাঁর মাতার রূপ করুণাময়ী, অন্নপূর্ণার রূপ—বাৎসল্য, মায়া ও মমতাময়ী জননীর রূপ এবং সেই রূপের চরণে রামপ্রসাদ আত্মনিবেদিত, ভয়ে নয়, ভালবাসায়, পূজায় নয় প্রেমে। রামপ্রসাদও বিদ্রোহী হয়েছিলেন, কিন্তু সে বিদ্রোহ মায়ের কাছে সন্তানের বিদ্রোহ। তিনিও ভয়ে ভীত হয়েছেন এবং মায়ের দেওয়া দুঃখ বহন করেছেন, কিন্তু যে জননীর কোলে বসে আছে, তার ভয় বা দুঃখ তাে ক্ষণকালের। তিনি কি ভয়ে ভীত হন, না দুঃখকে ডরান?

এ সংসারে ডরি কারে, রাজা যার মা মহেধারী।।

আনন্দে আনন্দময়ীর খাস তালুকে বসত করি।।

নাইকো জরিপ জমাবন্দি, তালুক হয় না লাটে বন্দি মা।।

আমি ভেবে কিছু পাইনে সন্ধি, শিব হয়েছেন কর্মচারী।।

যেহেতু তিনি জননীকে ভালবেসেছেন, সেহেতু মাকে নিন্দাও করেছেন, তিরস্কারও করেছেন। কারণ, এ অধিকার তাে সন্তানেরই। পঞ্চদশ, ষােড়শ, সপ্তদশ, অষ্টাদশ শতকে যে চণ্ডী, কালিকা, অন্নদা, জননী হইয়াও দূরে দাঁড়াইয়া দেবীর দৈবীরূপ লইয়া ভীত, সন্ত্রস্ত, বিপর্যস্ত মানুষের পূজা আদায় করেছেন, রামপ্রসাদের কালে তাঁর ভাবদৃষ্টিতে সেই দেবীই বাঙালির মাটির ঘরের মটির রূপ নিয়ে জননীরূপে সন্তানকে কোলে করে বসে আছেন। এইখানেই রামপ্রসাদের গানের একান্ত মানবিক আবেদন।

চর্যাপদের সময় থেকে প্রচলিত এক ভারতীয় অসাম্প্রদায়িক সাহিত্য বাগধারার কথা আগে আমরা বলেছি। একই প্রতীক ও রূপক কিভাবে ওই সমস্ত সাহিত্যে ও রামপ্রসাদে ব্যবহৃত হয়েছে তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত-

হংস—কালী পদ্মবনে হংস সনে হংসীরূপে মনে রমণ।

তাকে মূলাধারে সহস্রারে সদা যােগী করে মনন।।

আত্মারামের আত্মাকালী, প্রমাণ প্রণবের মতন।

তিনি ঘটে ঘটে বিরাজ করেন ইচ্ছাময়ীর ইচ্ছা যেমন।।

মায়ের উদরে ব্রহ্মাণ্ড ভাণ্ড, প্রকাণ্ড তা জান কেমন।।

মহাকাল জেনেছেন কালীর মর্ম, অন্য কেবা জানে তেমন।।

তীর্থভ্রমণের অসারতা নিয়ে রামপ্রসাদের কয়েকটি পদ আছে, একটি—

কাজ কিরে মন, যেয়ে কাশী।

কালীর চরণ কৈবাল্য রাশি।।

সার্ধ ত্রিশ কোটী তীর্থ, মায়ের ও চরণবাসী।

যদি সন্ধ্যা জান শাস্ত্র মান, কাজ কি হয়ে কাশীবাসী।।

হৃৎকমলে ভাব বসে, চতুর্ভুজা মুক্তকেশী।

রামপ্রসাদ এই ঘরে বসি, পাবে কাশী দিবানিশি।।

ভারতীয় সিদ্ধ ও ভক্তি সাহিত্যে গুরুর ওপর খুব জোর দেওয়া হয়। শাক্ততন্ত্র ও সহজিয়া সাধনায় গুরু অপরিহার্য। কবীর, দাদু, নানক, সুন্দর দাস প্রমুখদের মধ্যে যেমন এই গুরুর প্রতি পথপ্রদর্শকদের শ্রদ্ধা প্রকাশ করতে দেখা যায় তেমনি দেখা যায় সুফিদের মুর্শেদ-এর প্রতি শ্রদ্ধা। বাউল, আউল, বৈষ্ণব সহজিয়াদের মধ্যে, কর্তাভজা, দরবেশদের মধ্যেও এই গুরুর প্রতি নিষ্ঠা। শাক্ততন্ত্র সাধকদের কাছেও গুরু অপরিহার্য। গুরুবাদ কোনাে বিশেষ সম্প্রদায় বা গােষ্ঠীর নয়, কোনাে নির্দিষ্ট ধর্মের নয় ভারতীয় ধর্মের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। রামপ্রসাদ লিখেছেন—

১. গুরুবাক্য শিরে ধর, আত্মতত্ত্ব তত্ত্ব কর।

বিদ্যাতত্ত্ব, রাখ নিয়ে পাতে পাতে।—(রামপ্রসাদ)

২. রামপ্রসাদের আশা কঁাটা কেটে খােলসা করিয়ে।।

মধুপুরী যাব, মধু খাব, শ্রীগুরুর নাম হৃদয়ে ধরি রে।।—(রামপ্রসাদ)

৩. গুরুদত্ত মহাসুধা, ক্ষুধায় খেতে নাহি দিলি।—(রামপ্রসাদ)

পংডিত পঢ়ি লিখি পচি মুয়ে গুরু বিন পরগট ন জ্ঞান।

৪. পরগট বিনা মুক্তি নাহি সব সাধক পয়মান। —(চর্যাপদ)

বাটই সে তক্ষ সুভাসুভ পাণী।

৫. ছেবই বিদুজন গুরু পরিমাণী।।—(চর্যাপদ)

(শুভাশুভ জলে তরু বৃদ্ধি পায়, গুরু উপদেশে বিজ্ঞজন তাকে ছেদ করে)

৬. গুরু রূপে ভক্তি দিয়ে বসেছে যে যােগ-সাধনে।

অটল অমূল্য নিধি বাঁধা আছে তার সামনে। (লালন)

 

এরকম বহু শব্দ, সুবচনী, বাক্য বাগধারা ভারতীয় সাহিত্যে চলে এসেছে অসাম্প্রদায়িক এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বিরােধী সাহিত্যে, রামপ্রসাদের পদও তার অংশ।

ভারতীয় সাহিত্য কেবল যে কতগুলি একই ধরণের ধর্ম-আন্দোলনের মধ্যে গড়ে উঠেছে তা নয়, তাতে ভাষা ও রচনাশৈলীর সাদৃশ্য রয়েছে। চর্যাগীতি, কবীর, সুন্দর দাস প্রমুখদের গানের সারমর্ম সহজিয়া বাউল ফকিরদের মাধ্যমে বাংলায় বহুদিন ধরে প্রচলিত রামপ্রসাদও ভিন্ন মার্গের সাধক হয়েও এই ধারায় চলেছেন। যদিও যখনই সাধনার স্তরে গান লিখেছেন কিছু পার্থক্য এসে গেছে। শশিভূষণ দাশগুপ্ত চর্যাপদ থেকে বৈষব সহজিয়াদের, বাউলদের রচনার কাঠামােগত সাদৃশ্য নিয়ে মনােজ্ঞ আলােচনা করেছেন তাঁর ‘Obscure Religious Cults’ (প্রথম প্রকাশ ১৯৪৬-এ) নামক অসাধারণ একটি গ্রন্থে।

“ভাষার বিভিন্নতা সত্ত্বেও ভারতে সেই যুগে সাধনার জন্য এক একটা সার্বভৌম ‘কালচারাল’ ভাষা ছিল। এক রকমের অপভ্রংশ ভাষা পুরাতন বাংলায় বৌদ্ধগান ও দোহায় দেখি। ইহারই প্রায় কাছাকাছি অপভ্রংশ ভাষায় রচনা ওই যুগে রাজপুতানায়, পাঞ্জাবে, গুজরাটে, মহারাষ্ট্রে এমনকি কর্ণাটক পর্যন্ত বিস্তৃত দেখা যায়। জৈনদের তখনকার দিনের অনেক সাহিত্যেই তাহার পরিচয় মেলে।”৫

আমরা এ নিবন্ধে অল্প কয়েকটি দৃষ্টান্ত নিয়ে আলােচনা করেছি, আরাে অনেক জায়গায়ই এই সর্বভারতীয় বাগধারার বিন্যাসের সঙ্গে, শব্দ ব্যবহারের, কথন ভঙ্গির সঙ্গে রামপ্রসাদের মিল আছে। একে বলা যায় সাংস্কৃতিক অন্তর্বয়ন।

এই বাগধারা সর্বস্তরের মানুষকে বিশেষত অল্পবিত্ত, কৃষি ও শ্রমজীবী মানুষকে তার উদার বার্তা নিয়ে আকৃষ্ট করেছিল। শাক্ততন্ত্রে জাতিভেদ নেই, অস্পৃশ্যতা নেই, তাই নিম্নবর্গও রামপ্রসাদের গানে তাদের মনের কথা শুনতে পেয়েছিল—

অন্ন দে গাে অন্ন দে গাে।

অন্ন দে গাে আন্নদে।

জানি মায়ে দেয় ক্ষুধায় অন্ন।

অপরাধ করিলে পাছে পদে।।।

মােক্ষ প্রসাদ দেও অম্বে

এ সুত অবিলম্বে।

জঠরের জ্বালা আর সহে না তারা।

কাতরা হইও না প্রসাদে।।

সন্ত ও লােক কবিদের মত রামপ্রসাদও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বিরুদ্ধে মানবতাবাদীর সুরে কথা বলেছেন। মুসলমান ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কবিরা রামপ্রসাদে প্রভাবিত হয়ে শাক্ত পদাবলী লিখেছেন। হিন্দুস্থানী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে শিক্ষিত রামপ্রসাদ বৈষ্ণব কীর্তন ও লােকায়ত বাউল সুর সংশ্লেষণ করে ‘প্রসাদী’ সুর সৃষ্টি করেছেন। লােক-ভিত্তি থাকার জন্য তাঁর পদগুলি ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে, লােকহৃদে। তাই ভক্ত সাধক রামপ্রসাদ হয়ে উঠেছেন এক লােককবি, সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের যিনি ছিলেন ঊর্ধের্ব।

তথ্যসূত্র :

  • ১. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলা সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত, কলকাতা, পৃ. ৯৮।
  • ২. ভূদেব চৌধুরী, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, খণ্ড-১, কলকাতা, পৃ. ১৫৭।
  • ৩. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলা সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত, কলকাতা, পৃ. ১১১।
  • ৪. যােগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, সাধক কবি রামপ্রসাদ, কলকাতা, ১৯৫৪, পৃ. ২৭৭।
  • ৫. ক্ষিতিমােহন সেন, বাংলার বাউল, কলকাতা, ১৯৫৪, পৃ. ৯৩।

 

‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।

‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।

‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।

 

Post Views: 4,837
Tags: Ramprasad Senবাংলা সাহিত্যবাংলা সাহিত্যের ইতিহাসরামপ্রসাদ সেনরামপ্রসাদ সেনের শাক্ত পদাবলীসাহিত্য
ADVERTISEMENT

Related Posts

নজরুল ইসলামের উপন্যাসে মানবতাবাদ
সাহিত্য আলোচনা

নজরুল ইসলামের উপন্যাসে মানবতাবাদ

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম মহৎ ঔপন্যাসিক মাত্রই মানবতার পথপ্রদর্শক। সাহিত্য মানেই মানুষের কথা, তার জীবনযাপন, আনন্দ-বেদনা, প্রেম-সংঘর্ষ, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের এক...

by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
March 29, 2025
বনলতা সেন ও জীবনানন্দ দাশের নায়িকারা
সাহিত্য আলোচনা

বনলতা সেন ও জীবনানন্দ দাশের নায়িকারা

লিখেছেনঃ আহমদ রফিক শ-পাঁচেক বছর আগে চিত্রশিল্পের অন্যতম ‘গ্রেট মাস্টার’ লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা আবক্ষ নারীপ্রতিকৃতি ‘মোনালিজা’কে নিয়ে ইতালি-প্যারিস...

by অতিথি লেখক
November 19, 2024
কাজি নজরুল ইসলাম ও আন্তর্জাতিকতা
সাহিত্য আলোচনা

কাজি নজরুল ইসলাম ও আন্তর্জাতিকতা

লিখেছেনঃ সুমিতা চক্রবর্তী কাজি নজরুল ইসলামকে অনেক ভাবেই আমরা চিনি। তিনি উৎপীড়িতের পক্ষে দাঁড়ানো একজন সাহিত্যিক; তিনি অসাম্প্রদায়িক মনের...

by অতিথি লেখক
November 5, 2024
জীবনানন্দ দাশের নারীপ্রেমঃ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা
সাহিত্য আলোচনা

জীবনানন্দ দাশের নারীপ্রেমঃ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা

লিখেছেনঃ বাসন্তীকুমার মুখখাপাধ্যায় জীবনানন্দ যেমন প্রকৃতির বেদনার আঘাতের ও হিংস্রতার দিকটি সম্বন্ধে সম্পূর্ণ সচেতন থেকেও প্রকৃতিলীন জীবনে আস্থা স্থাপন...

by নবজাগরণ
November 7, 2024

POPULAR POSTS

  • সুলতান মাহমুদ

    সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান ও সোমনাথ মন্দির প্রসঙ্গ (১ম পর্ব)

    181 shares
    Share 181 Tweet 0
  • বাউরী সম্প্রদায়ের উৎপত্তির ইতিহাস ও ঐতিহাসিক পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • আর্যদের ভারত আগমন, বিস্তার, সমাজ ও সভ্যতা: এক ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে বৌদি কাদম্বরী দেবীর সম্পর্ক আদৌ কি প্রেমের ছিল?

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • হিন্দু পদবীর উৎপত্তির ইতিহাস, বিবর্তন ও ক্রমবিকাশঃ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

Facebook Page

নবজাগরণ

ADVERTISEMENT
নবজাগরণ

'Nobojagaran' is a website of its kind where you can gather knowledge on all the unknown facts of the world. We human beings always have a thirst for knowledge. Nobojagaran takes its first steps to quench this thirst of ours. We are now in the era of digital world, where we get almost anything online. So how about a bit of knowlyfrom online?

Connect With Us

No Result
View All Result

Categories

  • English (9)
  • অন্যান্য (11)
  • ইসলাম (26)
  • ইসলামিক ইতিহাস (22)
  • ইহুদী (1)
  • কবিতা (37)
  • খ্রিস্টান (6)
  • ছোটগল্প (6)
  • নাস্তিকতা (18)
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (24)
  • বিশ্ব ইতিহাস (24)
  • ভারতবর্ষের ইতিহাস (195)
  • রাজনীতি (38)
  • সাহিত্য আলোচনা (68)
  • সিনেমা (17)
  • হিন্দু (16)

Pages

  • Cart
  • Checkout
  • Checkout
    • Confirmation
    • Order History
    • Receipt
    • Transaction Failed
  • Contact
  • Donation to Nobojagaran
  • Homepage
  • Order Confirmation
  • Order Failed
  • Privacy Policy
  • Purchases
  • Services
  • লেখা পাঠানোর নিয়ম
  • হোম
No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi

©Nobojagaran 2020 | Designed & Developed with ❤️ by Adozeal

Login to your account below

Forgotten Password?

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In
Don't have an account yet? Register Now
1
Powered by Joinchat
Hi, how can I help you?
Open chat
wpDiscuz
0
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
| Reply