• মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
Sunday, June 1, 2025
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ
No Result
View All Result

নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী ও বাংলার নারী জাগরণে তাঁর ঐতিহাসিক অবদান

আমিনুল ইসলাম by আমিনুল ইসলাম
June 23, 2021
in ভারতবর্ষের ইতিহাস
0
নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী

চিত্রঃ নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী, Image Source: khabor

Share on FacebookShare on Twitter

উনবিংশ শতাব্দীর গােড়ার দিকে বাংলার মুসলিম সমাজে নারী শিক্ষা ও জাগরণের এক প্রচণ্ড ঢেউ দেখা যায়। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের একটি সুনির্দিষ্ট ধারার সূচনা হয় খ্রিস্টান মিশনারীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলােতে। নানা বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে সামাজিক কুসংস্কারকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বাংলার নারীকূল ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে ডেভিড হেয়ার এবং পরবর্তীকালে বেথুন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত স্কুলে মেয়েদের পড়াশুনার সুযােগ হয়। অবশ্য অবরােধ প্রথা প্রদর্শন মুসলিম বালিকাদের জন্য স্কুলে শিক্ষাগ্রহণে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। নারী মুক্তির উপায় হিসেবে শিক্ষা একমাত্র হাতিয়ার হিসেবে গণ্য হয়। নারী প্রসঙ্গে কালীপ্রসন্ন ঘােষ ও অক্ষয়কুমার দত্ত নারীদের অবাধ শিক্ষা ও জাগরণের প্রবক্তা ছিলেন। একথা অনস্বীকার্য যে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৫৭-৫৮ খ্রিস্টাব্দে হুগলি, বর্ধমান, নদিয়া এবং মেদিনীপুরে ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু অর্থাভাবে এগুলাে বন্ধ হয়ে যায়। নারীশিক্ষার প্রতি লর্ড ডালহৌসির অনুরাগ থাকা সত্বেও এবং ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের ডেসপ্যাচে শিক্ষানীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হলেও ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এ ব্যাপারে প্রগতি হয়নি। এ সময়ে থেকে কেন্দ্রিয় সরকারে অর্থ বরাদ্দ না থাকলেও পৌরসভাগুলাে নারীশিক্ষা বিস্তারের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে অর্থ বরাদ্দ পান। এ সময়ে বাংলায় নারী শিক্ষা বিস্তারের জন্য দু’জন যােগ্য ও নিবেদিতপ্রাণ ইংরেজ মহিলা মিস মেরি কার্পেন্টার (১৮৬৬) এবং মিস ক্রেনেট অ্যাক্রয়েড (১৮৭২) বিশেষ অবদান রাখেন। তারা মেয়েদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে মিস কার্পেন্টার ‘বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়’ নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করেন, তার দু’বছর পরে অর্থাৎ ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে বেথুন স্কুল কলেজে রূপান্তরিত হয়। পরবর্তীকালে বেথুন কলেজে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমােদন লাভ করলে মহিলাগণ বি এ ডিগ্রি লাভ করতে থাকেন। বাংলার প্রথম যে দু’জন মহিলা বি এ ডিগ্রি লাভ করেন তারা হচ্ছেন কাদম্বিনী বসু (ব্রাহ্ম) এবং চন্দ্রমুখী বসু (খ্রিস্টান)।

উল্লেখ্য যে, হিন্দু সমাজের তুলনায় বাংলায় মুসলমান নারী সমাজ ছিল অনগ্রসর, যদিও কলকাতা, ঢাকা, রাজশাহীতে মহিলাদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়। হিন্দু মহিলা সমাজে শিক্ষা বিস্তারে যারা অবদান রাখেন, তারা হচ্ছেন স্বর্ণময়ী দেবী, পন্ডিত রমাবাঈ এবং মনমােহিনী লুইলার। স্বর্ণময়ী দেবী কাশিম বাজারের ‘দয়াবতী মহিলা’ নামে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি নারী শিক্ষা বিস্তারে অকাতরে দান করেন। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম হান্টার শিক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে যে রিপাের্ট প্রণয়ন করেন তাতে দেখা যায় যে, তখন দেশে ১০১৫টি বালিকা বিদ্যালয়ের উল্লেখ রয়েছে, যার অধিকাংশই বেসরকারি। ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের হার ছিল খুবই সামান্য ১.৯ শতাংশ। মহিলাদের জন্য কলকাতায় বেথুন স্কুল এবং ঢাকায় ইডেন স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। হান্টার তার রিপাের্টে মুসলিম সম্প্রদায়ের আর্থিক ও শিক্ষাগত দূরবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়। উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে স্যার সৈয়দ আহমদ খান (১৭৮৬-১৮৩১) কর্তৃক পরিচালিত ‘আলিগড় আন্দোলন’ মুসলিম সমাজে আধুনিক শিক্ষা (ইংরেজির মাধ্যমে) বিস্তারে সহায়তা করে।

[১]

বাংলায় নারী শিক্ষা প্রসার ও জাগরণে যে দু’জন মহীয়সী নারী প্রাতস্মরণীয় তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী (১৮৩৪-১৯০৩) এবং অপরজন হচ্ছেন বেগম রােকেয়া সাখাওয়াত হােসেন (১৮৮০-১৯৩২)। বলাই বাহুল্য নবাব ফয়জুন্নেসাই প্রথম বাংলায় মুসলিম নারীদের শিক্ষার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে কুমিল্লা জেলার লাকসামের পশ্চিমগাঁও গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।১ তার পিতার নাম ছিল আহমদ আলি চৌধুরী। তিনি হােমনাবাদের জমিদার ছিলেন। মাতার নাম আরফানুন্নেসা।২ ফয়জুন্নেসার মাতামহও (নানা) জমিদার ছিলেন। ফয়জুন্নেসা মাত্র দশবছর বয়সে পিতৃহীন হন। তিনি বাল্যকালে গৃহশিক্ষক সৈয়দ শাহসুফি তাজউদ্দিনের কাছে শিক্ষালাভ করেন।৩ তখন বাংলার মুসলিম সমাজে অবরােধ (পর্দা) প্রথা চরম আকারে বিরাজ করছিল। এসত্ত্বেও তিনি আরবি, ফারসি, বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় বুৎপত্তি অর্জন করেন।৪ ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে ফয়জুন্নেসার সাথে জমিদার মােহাম্মদ গাজি চৌধুরীর বিবাহ হয়।৫ অবশ্য পরবর্তীতে এই সম্পর্কচ্ছেদ হয়। ফয়জুন্নেসার দুই ভাই দুই বােন—ইয়াকুব আলি চৌধুরী ও ইউসুফ আলি চৌধুরী এবং লতিফুন্নেসা চৌধুরাণী ও আমিরুন্নেসা চৌধুরাণী।৬

নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী ও বাংলার নারী নবজাগরণ
চিত্রঃ বেগম রোকেয়া, Image Credit: wikipedia

নবাব আব্দুল লতিফ (১৮২৭-১৮৯৩), সৈয়দ আমির আলি (১৮৪৯-১৯২৮) প্রমুখ মনীষী তখন পুরুষদের শিক্ষার কথাই বলেছিলেন, নারীদের কথা তাদের স্মরণে আসেনি। অবশ্য সৈয়দ আমির আলি সভা-সমিতিতে তাঁর ভাষণে একদা বলেছিলেন, ছেলেদের ন্যায় সমান্তরালভাবে মেয়েদেরও শিক্ষা দেওয়া উচিত। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, তারা কেউ নারীশিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য কোনাে প্রকার সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেননি। একমাত্র নবাব ফয়জুন্নেসাই উপমহাদেশে প্রথম উপলব্ধি করেছিলেন যে, পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও শিক্ষার যথেষ্ট প্রয়ােজন আছে।৭ তিনি কলকাতার ‘সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মহামেডান অ্যাসােসিয়েশন’-এর সদস্য ছিলেন।৮

এখানে উল্লেখ্য যে, নিভৃত পল্লীর এক কোণে বসে একক চিন্তা, একক প্রচেষ্টা এবং একক সাধনায় তৎকালীন সামাজিক প্রতিকূল অবস্থাকে উপেক্ষা করে বন্দিনী নারীদের হৃদয়কে জ্ঞানালােকে উদ্ভাসিত করার জন্য নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী যে মহান প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন তা নজীরবিহীন এবং অত্যাশ্চর্য ব্যাপার। পক্ষান্তরে বেগম রােকেয়া রাজধানী কলকাতায় শিক্ষিত পরিবেশ ও শিথিত সমাজে বসবাস করে সুধী সমাজের সহযােগিতা লাভ এবং দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন বলেই তিনি উপমহাদেশে স্বনামধন্য হয়েছিলেন। তাই নারী জাগরণের অগ্রদূত হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত। প্রেক্ষিতে বলতে হয়, অজপাড়াগাঁয়ে জন্মগ্রহণ করাটাই ছিল ফয়জুন্নেসার জীবনে অভিশাপ। অবশ্য বেগম রােকেয়ার অসামান্য অবদানের বিষয়টি আমরা সকলেই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে থাকি। নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে তাঁর অবিস্মরণীয় অবদান কোনােভাবেই আমরা হেয় করতে চাই না। নবাব ফয়জুন্নেসা ও বেগম রােকেয়া দুজনেই ক্ষণজন্মা নারী। পরিতাপের বিষয় এই যে, যে ফয়জুন্নেসা বেগম রােকেয়ার জন্মের ৪৫ বছর পূর্বে জন্মগ্রহণ করে এবং ‘নবাব’ উপাধিতে ভূষিতা হয়ে উপমহাদেশে বিস্ময়কর আলােড়ন সৃষ্টি করেছিলেন, সেই নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী কেমন করে যুগ যুগ ধরে উপেক্ষিত হয়ে ঐতিহাসিকদের দৃষ্টির অন্তরালেই রয়ে গেলেন তা ভাবলে সত্যি অবাক হতে হয়। নারীশিক্ষার অগ্রদূত হিসেবে কেউ ভুলেও উচ্চারণ করেন না তার নাম, পাঠ্যপুস্তক তাঁকে স্বীকৃতি দেয়নি। কুমিল্লা ছাড়া ফয়জুন্নেসার অস্তিত্বটুকু শুধুমাত্র টিকে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা হােস্টেলের নামকরণে। ইতিহাসে তিনি চরমভাবে উপেক্ষিত।

নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী একথা ভাল করেই জানতেন, শিক্ষাই হচ্ছে আলাে। শিক্ষাই হচ্ছে সকল উন্নতির মূল। শিক্ষার উন্নতি ছাড়া কোনাে দেশ, কোনাে জাতি কোনােদিন উন্নতি করতে পারে না। তাই তিনি সর্বপ্রথম শিক্ষার প্রতি সবিশেষ মনােযােগ দেন। সৈয়দ আমির আলির ‘ন্যাশনাল মহামেডান অ্যাসােসিয়েশন’-এর অন্যতম সদস্য মুহাম্মদ ইউসুফ ১৮৮৩ সালে ভারতীয় ব্যবস্থাপক সভায় মহিলাদের প্রতিনিধিত্বের দাবী উত্থাপন করেন।৯ মুহাম্মদ ইউসুফের এই দাবি উত্থাপনেরও দশ বছর আগে ১৮৭৩ সালে কুমিল্লা শহরে মেয়েদের জন্য দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পৃথক পৃথক ভাবে স্থাপন করেছিলেন ফয়জুন্নেসা। একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল কুমিল্লায় নানুয়া দিঘির পশ্চিম দিকে, অপরটি কান্দির পাড়ে। নানুয়া দিঘির পশ্চিম পাড়ে যে বিদ্যালয়টি ফয়জুন্নেসা স্থাপন করেছিলেন সেটির অস্তিত্ব আজ আর নেই। সেটি পরিবর্তিত আকারে বর্তমানে ‘শৈলরাণী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়’-এর প্রাথমিক বিভাগ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তন সম্পর্কে একটি আশ্চর্য কাহিনি রয়েছে। ১৯৩০ সালে আয়কর বিভাগের জনৈক উচ্চপদস্থ কর্মচারী নানা কৌশলে দশ হাজার টাকা খরচ করে অতি গােপনে নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তন করে নিজ পত্নী শৈলরাণীদেবীর নাম রাখেন। কুমিল্লার বেশকিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি এই স্কুলটিকে অতীতের নামে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন।১০

কান্দিপাড়ে ১৮৭৩ সালে যে বালিকা বিদ্যালয়টি নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী স্থাপন করেছিলেন সেটি পরবর্তীতে উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে পরিণত হয়। নামকরণ হয় ফয়জুন্নেসা উচ্চ ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয়। নবাব ফয়জুন্নেসার জীবনে সবচেয়ে বড় এবং উল্লেখযােগ্য অবদান বা কীর্তি হল এটি। ১৮৮৯ সালে স্কুলটি জুনিয়ার হাইস্কুলে (অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত) পরিণত হয়।১১ ১৮৮৯ সালের আগে কলকাতাতেও কোনাে বলিকা বিদ্যালয় ছিল না। তিনিই সর্বপ্রথম ইংরেজি মাধ্যমে নারীদের জন্য শিক্ষার দরজা উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। উক্ত স্কুলটি সরকারি স্কুলে পরিণত হয়েছিল ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে এবং পাইলট স্কীমের অধীনে আসে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে। ফয়জুন্নেসা উক্ত স্কুলটির জন্য মােট পাঁচ একর জমি দান করেছিলেন। এ স্কুলের সামনে পশ্চিমদিকে প্রতিষ্ঠা করেন ফয়জুন্নেসা ছাত্রী নিবাস। জমিদারীর আয় থেকে এই হােস্টেলের খরচ এবং মেয়েদেরকে উৎসাহ প্রদানের জন্য মাসিক বৃত্তির টাকা পাওয়ার স্থায়ী ব্যবস্থাও করেছিলেন।

সে যুগে এরকম একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়া ছিল খুবই দুঃসাহসের কাজ। কারণ যে যুগে মুসলমান ছেলেরাই ইংরেজি স্কুলে পড়তে যেত না, সে যুগে মুসলমান মেয়েদের ইংরেজি শিক্ষার জন্য তিনি যে জ্ঞানের আলাে জ্বেলেছিলেন তা নিঃসন্দেহে এক দুঃসাহসিকতারই কাজ এবং অসীম দূরদর্শিতারই পরিচায়ক। এখানে উল্লেখ্য যে, কুমিল্লায় বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের দু-বছর পর ১৮৭৫ সালে স্যার সৈয়দ আহমদ কর্তৃক আলিগড়ে স্থাপিত হয় ‘অ্যাংলাে ওরিয়েন্টাল কলেজ’। পরে এটি আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। আর কুমিল্লায় ‘ফয়জুন্নেসা উচ্চ ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয়’ স্থাপনের ৩৮ বছর পর ১৯১১ সালে বেগম রােকেয়া নারী জাগরণের জন্য কলকাতায় স্থাপন করেন সাখাওয়াত মেমােরিয়াল প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়টি ১৯৩১ সালে উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়।।

নবাব ফয়জুন্নেসা পশ্চিমগাঁয়ে নিজ বাড়িতে শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষার জন্যে মক্তবের ব্যবস্থা করেছিলেন। ফয়জুন্নেসা পশ্চিম গাঁয়ে নিজ বাসস্থানের পাশ্বে দশ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণ করেন।১২ সেখানেই দীনিয়াত, পবিত্র কুরআন ইত্যাদি শিক্ষা দেওয়া হত। এরই সাথে তিনি পূর্ণাঙ্গ ধর্মীয় শিক্ষার জন্যে ১৯০১-এ মতান্তরে ১৮৯৩ সালে একটা অবৈতনিক ফয়েজিয়া মাদ্রাসা স্থাপন করেন।১৩ শিক্ষার্থীরা যাতে পড়াশােনার ক্ষেত্রে কোনাে অসুবিধার সম্মুখীন না হয়, সেজন্য তিনি ‘ফ্রী হােস্টেল’ নামে একটি ছাত্রাবাস তৈরি করেছিলেন। ফয়েজিয়া মাদ্রাসা’র দশজন ছাত্র ও একজন মৌলবি শিক্ষক এ হােস্টেলে থাকতেন। রাতে তাদের লেখাপড়ার জন্যে জ্বালানি তেলের খরচটাও তিনি দিয়ে দিতেন।১৪ এ ফ্রী হােস্টেলটি অনেক বছর যাবত পরিচালিত হয়ে আসছিল। ‘ফয়েজিয়া মাদ্রাসাটি’ কলেজে রূপান্তরিত হওয়ার পরও এ ফ্রী হােস্টেলটি বহাল ছিল। ১৯৬৯ সালের দিকে হােস্টেলটি বন্ধ হয়ে যায়।

ফয়জুন্নেসা শুধু অবৈতনিক মাদ্রাসা স্থাপন করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি এর উন্নতি বিধানেরও সবিশেষ চেষ্টা করেছিলেন। এই ‘ফয়েজিয়া মাদ্রাসা’ই কালক্রমে ওল্ড স্কীম হতে নিউ স্কীম মাদ্রাসায় এবং ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে ডিগ্রী কলেজে রূপান্তরিত হয়। ১৯৬৬ সালে বিজ্ঞান বিভাগ চালু করে কলেজটিকে পূর্ণাঙ্গ ডিগ্রি কলেজে রূপান্তরিত করা হয়। ১৯৮২-র ১ মে জাতীয়করণ হয়ে ‘নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ’ রূপে চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। লাকসাম ও এর আশেপাশের উপজেলাগুলাের জন্যে এই ‘নবাব ফয়জুন্নেসা কলেজ’টিই একমাত্র উচ্চশিক্ষার প্রাণকেন্দ্র। এখানে উল্লেখ্য যে, ফয়েজিয়া মাদরাসাটি কালক্রমে কলেজে উন্নীত হলেও মাদরাসাটির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়নি। ফয়েজুন্নেসার মাদরাসাটিই পরে ১৯৩৫ সালে ডাকাতিয়া নদীর অপর তীরে অবস্থিত গাজিমুড়ায় স্থানান্তরিত হয়। গাজিমুড়া আলিয়া মাদরাসাটি ফয়েজিয়া মাদরাসার বর্তমান সংস্করণ।

নবাব ফয়জুন্নেসার শিক্ষা বিস্তারের প্রয়াস শুধু পূর্ববঙ্গেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। সুদূর পশ্চিমবঙ্গেও তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রেখেছিলেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে তিনি একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।১৫ উক্ত বিদ্যালয়টি সম্ভবত প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। এ বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠা সালের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। কৃষ্ণনগরে তিনি একটি মক্তবও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

অশিক্ষিত পল্লী সমাজকে জ্ঞানালােকে উদ্ভাসিত করাই ছিল জমিদার ফয়জুন্নেসার প্রথম এবং প্রধান উদ্দেশ্য। তাই তার শিক্ষা-প্রকল্পের প্রথম ধাপ ছিল প্রাথমিক শিক্ষা। ১৯০১ সালে ফয়জুন্নেসা নিজ গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। বর্তমানে পশ্চিমগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিত। নবাব ফয়জুন্নেসার ছােটো মেয়ে বদরুন্নেসাও নিজ নামে উক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়টির সাথেই ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘বদরুন্নেসা ও ফয়জুন্নেসা সম্মিলিত উচ্চ বিদ্যালয়’।১৬ যা বর্তমানে বি এন হাইস্কুল নামেই পরিচিত। এ বিদ্যালয়ের জমির পরিমাণ এক একর।

এ ছাড়াও ফয়জুন্নেসা ওয়াকফ এস্টেটের অধীনে ১৪টি মৌজার প্রত্যেকটিতে জমিদারী কাছারীর সাথে তার নিজ জায়গায় ও নিজ খরচে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন।১৭ শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে প্রতিটি বিদ্যালয়ের সাথেই একটি করে পুকুরও কাটা হয়। শিক্ষার উদ্দেশ্যে এ সমস্ত ব্যয়ভারও এস্টেট বহন করত। বর্তমানে উক্ত বিদ্যালয়গুলাের সবগুলােই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়েছে।

সাধারণ শিক্ষাবিস্তার প্রচেষ্টার পাশাপাশি সাহিত্য সংস্কৃতির জগতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। আধুনিককালে প্রথম পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ রচনার কৃতিত্ব লেখিকা ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণীর প্রাপ্য। তাঁর ‘রূপ জালাল’ একটি আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস।১৮ ৪৭১ পৃষ্ঠা সম্বলিত ‘রূপজালাল’ একটি ভ্রান্তিকালের স্মরণীয় এবং শংকর চিত্র তুলে ধরে, যার সিংহভাগ পদ্যে এবং মাঝে মাঝে গদ্যের আকারে রচিত।১৯ এই গ্রন্থে রাজকুমারী রূপবানুর জন্য যুবরাজ জালালের রােমান্টিক আকুতি বিধৃত।২০ ‘রূপজালাল’-এর সাহিত্যিক মূল্য হয়তাে তেমন কিছু নেই, কিন্তু যে আবেগী ভাষায় লেখিকা মুসলিম নারীদের অসহায়ত্বকে ফুটিয়ে তুলেছেন, তার মূল্য কম নয়। অভিশপ্ত বহুবিবাহ প্রথা কিভাবে এদেশের নারী জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে, সপত্নীর সংসারে শত শত নিরীহ যুবতীদের কি নিদারুণ গঞ্জনা সহ্য করতে হচ্ছে, এমনকি স্বামীগৃহ ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে, তারই এক করুণ বাস্তব আলেখ্য রচিত হয়েছে ফয়জুন্নেসার ‘রূপজালাল’ উপন্যাসে। এছাড়া আছে নানা অতিথি চরিত্র যেমন-জিন, পীর, রাক্ষস, সাধু, শয়তান ইত্যাদি। মহাকাব্যিক ধরণের এ লেখায় রয়েছে গ্রাম-বাংলায় হিন্দু ও মুসলিম ভাবধারার সংশ্লেষিত রূপ।

এ প্রসঙ্গে একটা কথা বিশেষভাবে স্মরণীয় যে, সংস্কৃত সাহিত্যের সঙ্গে ফয়জুন্নেসার গভীর সম্পর্ক ছিল। তাই তিনি মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ কবি আলাওলের সঙ্গে তুলনীয়। কারণ আলাওল ছিলেন সংস্কৃতে সুপণ্ডিত। আলাওল ছাড়াও মধ্যযুগের প্রায় সকল মুসলিম কবি সংস্কৃতে দক্ষ ছিলেন। ফয়জুন্নেসাও এর ব্যতিক্রম নন, ‘রূপজালাল’ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এই গ্রন্থে ফয়জুন্নেসা অসংখ্য সংস্কৃত শ্লোক উদ্ধৃত করেছেন এবং গ্রন্থরীতিও সংস্কৃত অনুসারী। এক্ষেত্রে তিনি বিদ্যাসাগরকে অনুসরণ করেছেন। ফয়জুন্নেসা তাঁর গ্রন্থে হিন্দু পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত প্রভৃতির প্রসঙ্গেরও অবতারণা ঘটিয়েছেন।

অধুনা ‘রূপজালাল’ দুষ্প্রাপ্য। এটি বাঙালি মুসলিম মহিলা সাহিত্যিকদের মধ্যে প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। গ্রন্থটি ঢাকার গিরিশ মুদ্রাযন্ত্র থেকে ১৮৭৬-এ মুদ্রিত হয়েছিল। ‘রূপজালাল’ মধ্যযুগীয় এবং আধুনিক সাহিত্যধারার একটি শংকর সাহিত্যকর্ম হওয়ায় একে যে কোনাে একটি শ্রেণিভুক্ত করা দুষ্কর। সমালােচকগণ একে উপাখ্যান বলে আখ্যায়িত করেছেন। বইটিকে এর আঙ্গিক ও বিষয়ের বিচারে সমসাময়িক অন্যান্য সাহিত্যকর্মের পাশাপাশি রাখা যায়। ফয়জুন্নেসা মিশ্র ভাষা বর্জন করে খাঁটি বাংলায় সাহিত্য রচনা করেন। এখানে উল্লেখ্য যে, ১৮৭৬-এ কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় স্বর্ণকুমারী দেবীর ‘দীপ নির্বাণ’ উপন্যাসও। উনিশ শতকে বাংলার নারী মুক্তির সময়ের ইতিহাসে ‘দীপ নির্বাণ’ স্থান পেলেও ‘রূপজালাল’ স্থান পায়নি। ফয়জুন্নেসা ‘সঙ্গীত সার’ ও ‘সঙ্গীত লহরী’ নামে দুটি পুস্তকও রচনা করেন। এদুটি মূলত গদ্য আলােচনা। পাশ্চাত্য ও দেশীয় সঙ্গীত নিয়ে তার ভাবনার প্রতিফলন।

[২]

মানবতার সেবা করাই ছিল ফয়জুন্নেসার মহান ব্রত। অশিক্ষিত, অভাবগ্রস্ত অসুস্থ মানুষের নিরাময়, সুখ-শান্তি কামনাই ছিল ফয়জুন্নেসার একান্ত কাম্য। তাই তিনি আরােগ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়নে মনােনিবেশ করেন। তার প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালগুলাে আজও তার অসীম দরদী মনের পরিচয় বহন করছে। ফয়জুন্নেসা মহিলাদের সুচিকিৎসার জন্য ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে কুমিল্লা শহরের দক্ষিণ চর্থায় ‘ফয়জুন্নেসা জানানা হাসপাতাল’ নামে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি লেডি ডাফরিনের সহযােগিতায় বিলেত থেকে ডাক্তার, নার্স ইত্যাদিদের এনে চিকিৎসার সুব্যবস্থা করেন। এঁরা সকলেই ছিলেন মহিলা। সেকালে দেশে মেয়েদের চিকিৎসার জন্য আলাদাভাবে কোনাে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত ছিল না। এক্ষেত্রে ফয়জুন্নেসাই প্রথম পথপ্রদর্শক। এই হাসপাতালটি ফয়জুন্নেসার শুধু অবিস্মরণীয় কীর্তিই নয়, তার প্রবল সমাজ সচেতনতা ও জনদরদী সেবামূলক মনােভাবেরই প্রত্যক্ষ স্বাক্ষর। ফয়জুন্নেসার অর্থানুকূল্যে হাসপাতালে ইংরেজ ডাক্তার, দেশীয় নার্সর্সহ আনুসঙ্গিক সুবিধাদি সম্ভব হয়েছিল। কুমিল্লা সদর হাসপাতালটি বহুকাল যাবৎ গােমতি নদীর পাড়ে গােয়াল পট্টির উত্তরে অবস্থিত ছিল। ১৯২৯ সালে উক্ত হাসপাতালটি উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে দক্ষিণ চর্থায় স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসার সুবিধার্থে এ সময় ‘ফয়জুন্নেসা জানানা হাসপাতালটি’ও সদর হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব উঠে। সেজন্যে নবাব ফয়জুন্নেসার ছােটো মেয়ে বদরুন্নেসা চৌধুরাণী উত্তরাধিকারী হিসেবে এক রেজিষ্ট্রি দলিল দ্বারা ১০ জুলাই ১৯২৯ সালে এটি সরকারের কাছে হস্তান্তর করেন। বর্তমানে এটা ‘নবাব ফয়জুন্নেসা (ফিমেল) ওয়ার্ড’ নামে পরিচিত।২১ ১৫ ডিসেম্বর ২০০৪ সালে পুরাতন ভবনটি ভেঙে আধুনিক স্থাপনা করা হয়। এক তথ্যে দেখা যায়, ২০১০ সালে কুমিল্লা ফয়জুন ওয়ার্ডে ৪০০০ মা ও শিশু চিকিৎসা সেবা পায়। পরবর্তীতে কলকাতায় ‘লেডি ডাফরিন হাসপাতাল’ তৈরির নেপথ্যে ফয়জুন্নেসার ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা ও উদ্যোগ বিশেষ কার্যকরী হয়েছিল।২২

কুমিল্লায় জানানা চিকিৎসালয়টি প্রতিষ্ঠার চার বছর পরে তাঁর জমিদারীর সদরে অর্থাৎ পশ্চিমগাঁও লাকসামেও একটি হাসপাতাল (১১ ডিসেম্বর ১৮৯৭) তৈরি করেন। এই হাসপাতালটির সমুদয় ব্যয় তিনি নিজে বহন করেন। হাসপাতালটি প্রথমে পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য উন্মুক্ত ছিল। পরে তার নাতনী ফখরুন্নেসা স্বতন্ত্রভাবে মেয়েদের চিকিৎসার জন্য আলাদা একটি কক্ষও নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। পরে এ চিকিৎসালয়টি সরকারিভাবে ‘লাকসাম সরকারি দাতব্য চিকিৎসালয়’ নামে পরিচালিত হতে থাকে। লাকসাম সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের উত্তর পাশে উক্ত দাতব্য চিকিৎসালয়টি এখনাে বিদ্যমান। বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র হিসেবে এ চিকিৎসালয়টি পরিচালিত হচ্ছে।

নবাব ফয়জুন্নেসা ছিলেন এক অসাধারণ জনমানব সেবিকা। যেখানেই তার সুযােগ এসেছে সেখানেই তিনি জনসেবামূলক কাজের জন্যে তার উদার হস্ত প্রসারিত করে দিয়েছিলেন। ১৮৯৪ সালে পবিত্র মক্কা নগরীতে হজব্রত পালন করতে গিয়ে তিনি দেখলেন—ঐতিহাসিক নহরে যুবাইদা অনেকটা ভরাট হয়ে পানীয় জল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। তাই তিনি বহু অর্থ ব্যয় করে উক্ত ‘নহরে যুবাইদা’ সংস্কারের কাজে অংশগ্রহণ করেন। এখানে স্মর্তব্য যে, আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশীদের (৭৮৫-৮০৯) দানশীলা পত্নী যুবাইদা হাজিদের পানীয় জলের অভাব দূর করার জন্যে এ ‘নহর’ বা সরােবরটি ৭৯১ সালে খনন করে দিয়েছিলেন। উক্ত নহরটি আরাফত, মুজদালিফা, মিনা হয়ে মক্কা নগরী পর্যন্ত প্রবাহিত হচ্ছে। তার নাম অনুসারেই এই নহরের নাম হয় নাহরে যুবাইদা। এক দানশীলা সম্রাজ্ঞী নহরটি খনন করেছিলেন। প্রায় ১২০০ বছর পর আরেক দানশীলা নবাব সেটি সংস্কার করে দেন!

মহীয়সী নবাব ফয়জুন্নেসার উদার হস্ত ভারতীয় উপমহাদেশে তাে বটেই—তা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও প্রসারিত হয়েছিল। ফয়জুন্নেসা ১৮৯৪ সালে পবিত্র হজব্রত পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা শরিফ গমন করেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সে বছর তিনি হজ্ব পালন করতে পারেননি। তিনি পবিত্র মক্কায় অবস্থানকালে ‘মিসফালাহ মহল্লায়’ একটি মাদরাসা ও একটি মুসাফিরখানা স্থাপন এবং ‘মাদরাসা সাওলাতিয়া’ ও ফোরকানিয়া মাদরাসার জন্যে মাসিক তিনশত টাকা সাহায্যের ব্যবস্থা করেছিলেন। মদীনাতে শরিফেও একটি মাদরাসার জন্য তিনি মাসিক একশত টাকা সাহায্যের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই টাকা তার উত্তরাধিকারীগণ নিয়মিত প্রেরণ করে আসছিলেন। কিন্তু ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হবার পর টাকা পাঠানাের ব্যবস্থায় জটিলতা সৃষ্টির কারণে উক্ত টাকা পাঠানাে বন্ধ হয়ে যায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, প্রখ্যাত ভাষাবিদ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর খালাম্মা কর্তৃক স্বনামে প্রতিষ্ঠিত ‘মাদরাসা সাওলাতিয়া’ প্রতিষ্ঠানটি।২৩

[৩]

সমাজ উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি উদার হস্ত সম্প্রসারিত করেছিলেন। জনগণের খেদমতে নিয়ােজিত পত্রিকাগুলােরও তিনি ছিলেন পৃষ্ঠপােষকদের মধ্যে অন্যতম। কুমিল্লা থেকে সুদূর কলকাতা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থান থেকে প্রকাশিত অধিকাংশ পত্রপত্রিকার সংগে ফয়জুন্নেসার সংযােগ ঘটেছিল। এইসব পত্রিকাকে তিনি অর্থ দিয়ে এককালীন সাহায্য করতেন অথবা পৃষ্ঠপােষকতা দান করতেন। তিনি সে যুগে কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘সুধাকর’ ও ‘মুসলমান বন্ধু’ পত্রিকার অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপােষক ছিলেন। উল্লেখ্য যে, ‘সুধাকর’ পত্রিকা সমকালীন মুসলিম সমাজের একখানি বলিষ্ঠ মুখপত্র ছিল। পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১১ আগস্ট। ‘মুসলমান বন্ধু’ পত্রিকায় ফয়জুন্নেসা এককালীন পাঁচশত টাকা দান করেছিলেন। ঐ পত্রিকায় তাঁর পৃষ্ঠপােষকতা সম্পর্কে ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে লেখা হয়েছিল,

“ত্রিপুরা জিলান্তৰ্গত লাকসাম গ্রামে স্বদেশ হিতৈষিণী শ্রীমতি ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী কুমিল্লা হইতে প্রকাশিত পত্রিকার ক্রমােন্নতির জন্য যথেষ্ট সাহায্য করিয়াছেন।”

কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলােকে তিনি নিয়মিতই সাহায্য করতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেসব পত্রিকার এখনও কোনাে সন্ধান পাওয়া যায়নি। ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলাের সঙ্গেও ফয়জুন্নেসার সংযােগ ছিল। ‘ঢাকা প্রকাশ’ পত্রিকাতেও তিনি নগদ অর্থ সাহায্য দান করেছেন। ‘বান্ধব’ পত্রিকাও তাঁর দানে উপকৃত হয়েছিল। ‘ঢাকা প্রকাশ’ পত্রিকার এক সংবাদে বলা হয়—

“অদ্য আমরা আমাদিগের পূর্ব বাঙলার একটি মুসলমান মহিলা রত্নের পরিচয় দান না করিয়া ক্ষান্ত থাকিতে পারিলাম না…ইনি যেমন বিদ্যানুরাগিনী ও বিষয় কার্য পারদর্শিনী সেইরূপ সৎকার্য্যেও সমুৎসাহিনী। বাহিরে ইহার আত্মপর মাত্র নাই।…শুনিলাম ইহার স্থানে সচরাচর যেরূপ করিয়া থাকেন, এখানেও (ঢাকা) সেইরূপ বিনাড়ম্বরে নিরুপায় দরিদ্রদিগকে দান করিয়াছেন।”২৪

জ্ঞানপিপাসু ফয়জুন্নেসা জ্ঞানের পরিধি বাড়ানাে এবং বহির্বিশ্বের সংগে যােগাযােগ রক্ষার জন্যই স্বগৃহে একটি পাঠাগার স্থাপন করেছিলেন। অনুমিত হয় পিতার সংগৃহীত পুস্তকাদি এবং নিজের সংগৃহীত সমকালীন পত্র-পত্রিকা, গ্রন্থাদি দ্বারা তিনি পাঠাগারটি সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলেছিলেন। অবসর সময়ে নিয়মিতভাবে পাঠাগারে বসে তিনি নিবিষ্ট চিত্তে অধ্যয়ন করতেন। ফয়জুন্নেসার প্রয়াণেরপর তাঁর সংগৃহীত অমূল্য বইগুলাে স্কুল-কলেজ লাইব্রেরীতে দান করলেও অধিকাংশ বই ১৮৫৭-র স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় লুট হয়ে গেছে। তার সখের এই গ্রন্থাগারটির নাম ছিল—‘ফয়জুন পাঠাগার’।

ব্রাহ্ম মহিলাদের নারী কল্যাণমূলক একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল ‘সখি সমিতি’। ১৮৮৬ সালে এই সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় বােন স্বর্ণকুমারী দেবী। ১৮৯০ সালে এই সমিতির পরিচালিত মহিলাশিল্পমেলা উপলক্ষে নবাব ফয়জুন্নেসা দুইশত টাকা দান করেছিলেন। সে যুগে এই সমিতির একমাত্র মুসলিম মহিলা পৃষ্ঠপােষক ছিলেন নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী। আর সমিতির অনুদানকারীদের তালিকায় মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামের পরেই ছিল ফয়জুন্নেসার নাম।২৫ এছাড়া শীতকালে শীতবস্ত্র দান করা। আর দাতব্য হিসাবে দৈনিক তিনি ব্যয় করতেন ছয়শত টাকা। এছাড়া ফ্রী হােস্টেলের ছাত্রদেরকে তিনি বস্ত্র দান করতেন।

নবাব ফয়জুন্নেসার স্বামী মােহাম্মদ গাজি চৌধুরীর বাড়ির২৬ সামনে মুঘল স্থাপত্য শিল্পের অনুকরণে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। মসজিদটি ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে (১৩০৯) স্থাপিত হয়। তিনটি বৃহদাকার গম্বুজ, চারপাশে ছােটো বড় ৩২টি মিনার, পাঁচটি দরজা, দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি প্রধান গেট বিশিষ্ট এ মসজিদটি।

ফয়জুন্নেসার সমাজ সেবামূলক কাজের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য মুসাফিরখানা, দীঘি-পুষ্করিণী-খাল খনন, রাস্তাঘাট ও বাঁধ-পুল নির্মাণ। গােমতি নদী ছিল কুমিল্লা শহরের জন্যে দুঃখের কারণ। প্রায় প্রতি বছরই প্রমত্তা গােমতি শহরের ঘরবাড়ি, অফিস আদালত, রাস্তাঘাট ডুবিয়ে মানুষের দুর্ভোগের সৃষ্টি করত। তাই কুমিল্লা শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণকালে নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী যথেষ্ট আর্থিক সহায়তা দান করেছিলেন। এর অনেক পরে সরকারি অর্থে গােমতির দু’কূলে উঁচু বাঁধ নির্মাণ করে প্রমত্তা গােমতিকে বাগে আনা হয়েছে। এ ছাড়া লাকসাম ও দৌলতগঞ্জ বাজারের সাথে পশ্চিমগাঁও গ্রামে ও অন্যান্য স্থানে যাতায়াত ও পরিবহণের সুবিধার জন্যে নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী ডাকাতিয়া নদীর উপর একটি লােহার পুল নির্মাণ করেন।২৭ কয়েক বছর পূর্বে সরকার পুলটিকে আবার নতুন করে নির্মাণ করেছে।

[৪]

ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী জনগণের শিক্ষা, চিকিৎসা ও অন্যান্য মানবিক সেবা, মহত্ত্ব ও সুশাসনের জন্যে তার জমিদারী এলাকা তাে বটেই, তিনি সমগ্র বঙ্গদেশেই স্বনামধন্যা হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু না, বাংলার এ মহীয়সী নারী তার মহত্ত্বের বার্তা উপমহাদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে ইউরােপের প্রাণকেন্দ্র লন্ডনের রাজপ্রাসাদেও পৌঁছে দিয়েছিলেন। এককালের প্রায় অর্ধ-পৃথিবীর শাসক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের তৎকালীন শাসক মহারানী ভিক্টোরিয়াকে হতবাক করিয়েছিল ফয়জুন্নেসার মহানুভবতার বার্তা।

নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী
চিত্রঃ নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী, Image Source: kalerkantho

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ত্রিপুরার (বর্তমান কুমিল্লা) তদানীন্তন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিস্টার ডগলাস জেলার উন্নয়ন ও জনহিতকর কাজের জন্যে পশ্চিমগাঁওয়ের মহিলা জমিদার ফয়জুন্নেসার শরণাপন্ন হলেন। ফয়জুন্নেসা বুঝতে পারলেন, এটি একটি জনকল্যাণমূলক কাজের পরিকল্পনা। এখানে ঋণ দিলে সমাজ উপকৃত হবে। ফয়জুন্নেসা উক্ত পরিকল্পনার পুরাে টাকাটাই (কারাে মতে, ষাট হাজার টাকা। আবার কারাে মতে, এক লক্ষ টাকা) ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। ফয়জুন্নেসার মহানুভবতার কাছে শ্রদ্ধায় ডগলাসের মাথা নত হয়ে গেল। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী মহারানী ভিক্টোরিয়া মিস্টার ডগলাসের মাধ্যমে ফয়জুন্নেসার মহানুভবতার পরিচয় পেয়ে অতিশয় মুগ্ধ হলেন।২৮ শিক্ষা ও সমাজ কল্যাণে অসামান্য অবদানের স্বীকৃত স্বরূপ ইংল্যান্ডের রাণী ভিক্টোরিয়া ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফয়জুন্নেসাকে ‘নবাব’ উপাধিতে ভূষিত করেন।২৯ এ অনুষ্ঠানে তিনশত পদস্থ সরকারি কর্মচারী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এ খেতাব প্রাপ্তিতে সারা ভারতবর্ষ চমকে উঠেছিল, ভারতবর্ষের অপর কোনও মহিলা এরূপ বিরল সম্মানের অধিকারিণী হতে পারেননি।

ফয়জুন্নেসার অনির্বাণ ত্যাগের নিদর্শন তার বিরাট সম্পত্তির ওয়াক্‌ফনামা সম্পাদন। ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১২৯৮ বঙ্গাব্দে তিনি তার জমিদারী ওয়াকফ করে একটি বিরাট অংকের টাকা শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নমূলক কাজের জন্য রেখে যান। এই টাকার পরিমাণ ১,০০,০০০ (এক লক্ষ টাকা) এর ষাট ভাগ অর্থাৎ ৬০,০০০ টাকা বাৎসরিক অনুদান হিসাবে আল্লাহর নামে মানব সেবায় দান করে গেছেন। ওয়াকফনামা দলিলে উল্লেখ আছে,

“ধর্ম ও পরম কারুণিক পরমেশ্বরের উদ্দেশ্যে যে কার্য করা যায় তাহাই স্থায়ী ও মানব জীবনের সার্থকতা এবং মানবাত্মার ফলপ্রদ বটে। ক্ষণভঙ্গুর মানবদেহ কখন যে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় তাহার নিশ্চয়তা নাই। সুতরাং আমার অবশিষ্ট জীবন ঈশ্বর উপাসনায় পর্যবসিত ও আমার সম্পত্তির উপস্বত্ব ধর্ম ও সকার্যে ব্যয় হয় ইহাই কায়মনােবাক্যে সংকল্প ও কর্তব্য মনে করিয়াছি। এতদার্থে রাহে লিল্লাহ ওয়াকফনামা লিখিয়া দিলাম। প্রার্থনা যে খােদাতালা আমার ওয়াকফনামায় লিখিত দানটি কবুল ও মঞ্জুরপূর্বক আমাকে যাবজ্জীবন পাপ দায় হইতে মুক্ত করুন। স্বার্থ কিংবা শৈথিল্যবশত যদি কোনাে মােতাওয়াল্লী অথবা যে কোনাে ব্যক্তি আমার কৃত ওয়াকফনামার নির্দিষ্ট সকার্যের বাধা জন্মাইবেন তিনি তজ্জন্য খােদাতালার নিকট দায়ী ও দণ্ডনীয় হইবেন।”৩০

নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী অন্য ধর্মের মানুষদের সুনজরে দেখতেন। তিনি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে আপন করে নিতে ভােলেননি। ফয়জুন্নেসার জমিদারীর অধিকাংশ আমলাই ছিলেন হিন্দু।৩১ কালীচরণ দে মহাশয় সে সময়ে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য অর্থ সাহায্য চাইলে ফয়জুন্নেসা তাকে আর্থিক সাহায্য দান করেছিলেন। নানাবিধ সমস্যা সত্ত্বেও সমাজের সার্বিক উন্নয়নের জন্য তিনি আজীবন নিরলস প্রয়াস চালিয়ে গেছেন। শুধুমাত্র নারীশিক্ষা বিস্তারে নয়, সামগ্রিকভাবে শিক্ষা প্রসারেই অভূতপূর্ব অবদান তিনি রাখতে সম হয়েছিলেন। এছাড়াও আর্ত মানবতার সেবায় তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। মহৎপ্রাণা ফয়জুন্নেসার বহুমুখী কার্যকলাপ, নিঃস্বার্থ সমাজসেবা আজকের প্রজন্মকে নতুনভাবে উদ্বুদ্ধ ও ভাবতে প্রেরণা জোগায়।

 

তথ্যসূত্রঃ

  • ১. বেগম রওসন আরা, নবাব ফয়জুন্নেসা ও পূর্ববঙ্গের মুসলিম সমাজ, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৯৯৩, পৃ. ১২। মিয়া মােহাম্মদ বাহাদুর আলি, নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা, ২য় প্রকাশ, ২০১৪, পৃ. ২১। আরও দেখুন- গৌতম রায়, নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত, বিকোস পরিষদ, কলকাতা, ২০০৭, পৃ. ১০।
  • ফয়জুন্নেসার জন্মসাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। শাহ সৈয়দ এমদাদুল হক তার ‘হােমনাবাদের ইতিহাসংশ’ গ্রন্থে বহু তথ্য বিচার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, ১৮৪৮, ১৮৫২ ও ১৮৫৮ সালে ফয়জুন্নেসার জন্মসংক্রান্ত যে অনুমানগুলি রয়েছে সেগুলির কোনাে বাস্তব ভিত্তি নেই। আবুল কাসিম মাহমুদ আদমুদ্দিন তার নবাব ফয়জুন্নেসা গ্রন্থে ফয়জুন্নেসার জন্মসাল হিসেবে ১৮৪০ সালকেই মান্যতা দিয়েছেন। (আবুল কাসিম আদমুদ্দিন, নবাব ফয়জুন্নেসা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা, ১৯৮০, পৃ. ১১৩)। ‘নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী’ গ্রন্থে মােহাম্মদ আবদুল কুদুস ১৮৩৪ সালকে ফয়জুন্নেসার জন্মসাল হিসেবে দেখিয়েছেন। (মােহাম্মদ আবদুল কুদ্দুস, নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী, কুমিল্লা, ১৯৭৯, পৃ. ৮৯)। ‘কুমিল্লা ফয়জুন্নেছা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় শতবার্ষিকী স্মরণিকা ১৯৭৩’-এ প্রকাশিত পত্রিকার ৮৭-৮৮ পৃষ্ঠায় ফয়জুন্নেসার জীবনপঞ্জি এবং একটি টীকা দেওয়া আছে। এখানে ফয়জুন্নেসার জন্মসাল ১৮৩৪ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই স্মরণিকা থেকে টীকা অংশটি উদ্ধৃত হল “ফয়জুন্নেছার জন্ম তারিখ নিয়ে বেশ মতভেদ আছে। আদমুদ্দীন সাহেব বলেছেন ১৮৪০-এর কাছাকাছি। সিরাজউদ্দীন হােসেন লিখেছেন ১৮৪৮। মনসুরউদ্দীন সাহেব বলেছেন ১৮৫২ আর মুহাম্মদ আব্দুল হাই সাহেব লিখেছেন ১৮৫৮। এর কোনটাই ঠিক নয়। ১৮৪৪ সালের সেপ্টেম্বরে পিতার মৃত্যুকালে বয়স সম্পর্কে ফয়জুন্নেছা নিজে লিখেছেন, ‘শৈশবাবস্থা দূরীভূত হওয়ার বিলম্ব ছিল না।’ তখন বড় ভাই ইয়াকুব আলী চৌধুরীর বয়স ১৬। তার দুবছর পর ১৮৪৬ সালে সাবালক হয়ে জমিদারীর কার্যভার গ্রহণ করেন। তখন ছােট ভাই ইউসুফ আলী চৌধুরীর বয়স ১৩ হলে তৃতীয় সন্তান ফয়জুন্নেছার বয়স তখন ১০ হতে পারে। পিতার মৃত্যুর সময় আরও দুটি ছােট বােন ছিল। প্রথম লেখকের মতে জন্ম ১৮৪০ হলে ফয়জুন্নেছার বয়স তখন হয় মাত্র চার। এসব বিশ্লেষণ করলে জন্ম ১৮৩৪ সাল বা তার কাছাকাছি হবে বলে অনুমান করা যায়।” (কুমিল্লা ফয়জুন্নেছা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় শতবার্ষিকী স্মরণিকা-১৯৭৩, পৃ. ৮৮)।
  • ২. মিয়া মােহাম্মদ বাহাদুর আলি, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৫।
  • ৩. গৌতম রায়, প্রাগুক্ত, পৃ. ১১। আরও দেখুন- সৈয়দ শাহসুফি তাজউদ্দিন ছিলেন আদর্শ শিক্ষক। পরিণত জীবনে ফয়জুন্নেসা তার ‘রূপজালাল’ গ্রন্থে এই শিক্ষকের প্রতি নিজের শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেছেন এভাবে

“ওস্তাদের পদ বন্দি শিরের উপর।

অন্ধচক্ষে জ্যোতি দিয়ে করিল নজর।।

শ্রীযুত তাজ উদ্দিন মিএ তার নাম।

প্রভু আলাে মাগি তার স্থান-‘হৈতে স্থান।।”

(আবদুল কুদ্দুস সম্পাদিত, রূপজালাল, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৯৮৪, পৃ. ৪)।

  • ৪. মিয়া মােহাম্মদ বাহাদুর আলি, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৩। আরও দেখুন- গৌতম রায়, প্রাগুক্ত, পৃ. ১১।।

ফয়জুন্নেসা তাঁর ‘রূপজালাল’ কাব্যে রূপকথার মাধ্যমে আত্মজীবনী প্রকাশ করেছেন। ওই গ্রন্থে ফয়জুন্নেসা শিশুদের বা শিক্ষানবীশদের শিক্ষাদানের পদ্ধতি ও বিষয় সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছেন তাতে তাঁর বাল্য জীবনের লেখাপড়ার পদ্ধতিটিই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। এই বর্ণনায় দেখা যায় যে, ফয়জুন্নেসা ‘রূপজালাল’এর নায়ককে পাঁচ বছর বয়স থেকে শিক্ষা জীবন শুরু করার বিধান দিচ্ছেন। তার পাঠক্রম বা পাঠ্যতালিকায় ভাষার ক্ষেত্রে ফারসি, উর্দু এবং শাস্ত্রের ক্ষেত্রে ব্যাকরণ, দর্শন, গণিত থেকে অলংকার শাস্ত্র এবং শেষে সাহিত্যের কথা অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এমনকি পরীক্ষার ব্যবস্থাও তাতে বাদ যায়নি—

“কুমারের চুতুরব্দ যবে গত হৈল।।

বিদ্যালয়ে দিতে দেবী আদেশ করিল।।

মন্ত্রীবর আনাইয়া প্রধান বিদ্বান।

সমর্পিল যুবরাজে গুরু সন্নিধান।।।

কোরান জব্দুর আর তৌরিত ইঞ্জিল।

পার্সী উর্দু আদি করি শিখিতে লাগিল।।

ব্যাকরণ, তর্ক ধৰ্ম্ম মীমাংসা গণিত।

ক্রমে ক্রমে সৰ্ব্ব শাস্ত্রে হইল পণ্ডিত।।

অলঙ্কার সাহিত্যাদি শিক্ষা অগণিত।

বিজ্ঞগণ পরীক্ষিতে আলাপে বিমােহিত।।

অল্পদিনে মহাবিজ্ঞ হইল তনয়।।

সত্যবাদী সদাচার সদয় হৃদয়।।”

  • “এই বর্ণনায় কোরাণ প্রভৃতির ভাষার পাশে পার্সী-উর্দু সংস্কৃত ভাষা শাস্ত্রের কথাই বিস্তারিত বলা হয়েছে এবং মাতৃভাষা বা স্থানীয় ভাষা শিক্ষার প্রসঙ্গ ‘সাহিত্যাদি’তে গােপন থাকেনি।” (মনিরুজ্জামান, ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৯৮৮, পৃ. ২৬)।
  • ৫. প্রখ্যাত গবেষক গৌতম রায় অবশ্য লিখেছেন, ১৮৬০ থেকে ১৮৬৪ সালের মধ্যে কোনাে এক সময়ে ফয়জুন্নেসার বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল। দেখুন-গৌতম রায়, প্রাগুক্ত, পৃ. ১২।
  • ৬. এ কে এম শামসুল আলম, আলাের দিশারী নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী, অনির্বাণ, ঢাকা, ২০১৩, পৃ. ২৭। নবাব ফয়জুন্নেসার দুই কন্যা ছিলেন—আরশাদুন্নেসা চৌধুরাণী ও বদরুন্নেসা চৌধুরাণী। দেখুন- এ কে এম শামসুল আলম, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৬।
  • ৭. সেলিনা বাহার জামান, কালান্তরে নারী, নারীকেন্দ্র, ঢাকা, ২০০৫, পৃ. ১২।
  • ৮. ওয়াকিল আহমদ, উনিশ শতকে বাঙালি মুসলমানের চিন্তা-চেতনার ধারা, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৯৯৭, পৃ. ৮১।
  • ৯. বিমানবিহারী মজুমদার, হিস্টরি অফ পলিটিক্যাল থট, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৩৪, পৃ. ৩৯৪-৪০০। ১০. গৌতম রায়, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৪।
  • ১১. কৌতূহলােদ্দীপক বিষয় এই যে, নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী প্রতিষ্ঠিত ‘ফয়জুন্নেসা উচ্চ ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয়’-এর দু’জন ছাত্রী বিশ শতকের বিশের দশকে যুগান্তর দলের সদস্যা হিসেবে বিপ্লবী আন্দোলনে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। ১৪-১৫ বছরের দুই কিশােরী সুনীতি চৌধুরী আর শান্তি ঘােষ কুমিল্লার ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সকে হত্যা করে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল। এই দুই বিপ্লবী ম্যাজিস্ট্রেটকে হত্যা করবার সময়ে ফয়জুন্নেসা স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। ফয়জুন্নেসা যে সময়ে স্কুলটি স্থাপন করেছিলেন সেই সময়ের গ্রাম বাংলার সামাজিক অবস্থায় ১৮৫৭-র প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের জের যথেষ্টই ছিল। অবিভক্ত কুমিল্লায় এই আন্দোলনের প্রভাব যথেষ্টই পড়েছিল। দেখুন- গৌতম রায়, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৫।
  • ১২. গৌতম রায়, প্রাগুক্ত, পৃ. ২২।
  • ১৩. মিয়া মােহাম্মদ বাহাদুর আলি, প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৯।
  • ১৪. গৌতম রায়, প্রাগুক্ত, পৃ. ২২।
  • ১৫. মিয়া মােহাম্মদ বাহাদুর আলি, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫০।
  • ১৬. বেগম রওসন আরা, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৭।
  • ১৭. মিয়া মােহাম্মদ বাহাদুর আলি, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫১।
  • ১৮. নবাব ফয়জুন্নেসা তাঁর গ্রন্থ রচনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা বলেছেন তা প্রণিধানযােগ্য। গভীর মর্মবেদনাই তাকে ‘রূপজালাল’ রচনায় প্রেরণা জুগিয়েছে। ফয়জুন্নেসা তার ‘রূপজালাল’-এ এ বিষয়ে লিখেছেন—

“থাকে স্বামি সঙ্গে,

অতি মনােরঙ্গে,

দুঃখ নাহি পায় মনে।।…

আমার গর্ভেতে, তারি ঔরসেতে,

তনয় জন্মিল দ্বয়।

দুখ পরে দুখ বিদরয়ে বুক,

বলিতে সে সমুদয়।।

প্রথম নন্দিনী,

নিয়ে নৃপমণি,

অর্পিলা সতিনী হাতে।

কেমন বিচার, করিয়া বিচার,

জ্ঞানবান্ দেখ চিতে।

পতির বিচ্ছেদে, দুহিতার খেদে,

মত বিচলিত হয়।

দিবস যামিনী, এই বিরহিনী,

প্রাণ প্রিয় প্রিয় কয়।।

বিরল বাসরে, নয়নের নীরে,

বয়ান পাখালি সদা।।

লােক মাঝে আসে,

অধরেত হাসি, জীবমানে মরা আধা।।

এই খেদে মন, সদা উচাটন,

ভাবি কিসে হবে শান্ত।

রচিনু পয়ার, করিতে নিবার,

এ বলিনু আদি অন্ত।।

শ্ৰীমতী ফয়জনে, পুস্তক রচনে,

বলি অন্যের কাহিনী।

ওগাে গুণী গণ, অশুদ্ধ রচন,

ক্রমিবে আমি অধীনী।।”

(রূপজালাল, পৃ. ২৫-২৬)।

  • ১৯. এই গ্রন্থ চুলচেরা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রথম থেকে ২৪৪ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পদ্যে রচনা। ২৪৫ পৃষ্ঠা থেকে ৪২০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত গদ্যে রচনা। ৪২১ থেকে ৪৩৯ পৃষ্ঠা পর্যন্ত আবার পদ্যে রচিত। ৪৪০ থেকে ৪৪২ পৃষ্ঠা পর্যন্ত গদ্যে রচনা। তারপর শেষ পর্যন্ত পদ্যাকারে লিখিত।
  • ২০. তপতী নাথ, রূপকথায় রূপজালাল, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, নবম বর্ষ, সংখ্যা-৯০, ২৫ জুলাই ১৯৮০।
  • ২১. সৈয়দ তাইমুর আব্দুল্লাহ, শতবার্ষিকী স্মরণিকা-১৯৭৩, পৃ. ১৭।
  • ২২. বেগম রওসন আরা, প্রাগুক্ত, পৃ. ৭৭-১০১।
  • ২৩. মিয়া মােহাম্মদ বাহাদুর আলি, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫০।
  • ২৪. ঢাকা প্রকাশ, ৫ মাঘ ১২৮১।
  • ২৫. এ কে এম শামসুল আলম, প্রাগুক্ত, পৃ. ৮০-৮১।
  • ২৬. ভাউকসার গ্রামের চৌধুরী বাড়ি ছিল ফয়জুন্নেসার স্বামীর বাড়ি।
  • ২৭. এ কে এম শামসুল আলম, প্রাগুক্ত, পৃ. ৭৬।
  • ২৮. এ কে এম শামসুল আলম, প্রাগুক্ত, পৃ. ৮২।
  • ২৯. ডব্লিউ এইচ টমসন, রিপাের্ট অফ দ্য সার্ভে অ্যান্ড সেটেলমেন্ট অপারেশনস ইন দ্য ডিসট্রিক্ট অফ ত্রিপুরা ১৯১৫,
  • ১৯, কলকাতা, ১৯২০, পৃ. ৭৭।
  • ৩০. এ কে এম শামসুল আলম, প্রাগুক্ত, পৃ. ৮৩।
  • ৩১. গৌতম রায়, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৬।

 

‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।

‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।

‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।

Post Views: 8,262
Tags: Nawab Faizunnesa ChoudhuraniNobojagaranWomenWomen's Awakening in Bengalনবজাগরণনবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণীনারীবাংলার নারী জাগরণ
ADVERTISEMENT

Related Posts

বিদ্যাসাগরের প্রতি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিদ্বেষ ও বিরোধীতা
ভারতবর্ষের ইতিহাস

বিদ্যাসাগরের প্রতি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিদ্বেষ ও বিরোধীতা

একজন বিদ্যার সাগর, আর একজন সাহিত্যের সম্রাট। উভয়েই উনিশ শতকের বিখ্যাত মনীষী ও লেখক এবং পরস্পরের সমকালীন। উনিশ শতকের...

by কামরুজ্জামান
November 13, 2024
মন্দির ধ্বংস এবং ইন্দো-মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ
ভারতবর্ষের ইতিহাস

মন্দির ধ্বংস এবং ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিবৃত্ত

লিখেছেনঃ রিচার্ড এম. ইটন সম্প্রতি, বিশেষ করে ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর, দক্ষিণ এশিয়ার মন্দির এবং মসজিদের রাজনৈতিক...

by অতিথি লেখক
November 12, 2024
প্রকৃতি, নান্দনিক চৈতন্য ও মরমিবাদ: বাংলার আরবি-ফার্সি শিলালিপির আধ্যাত্মিক দিক
ইসলামিক ইতিহাস

প্রকৃতি, নান্দনিক চৈতন্য ও মরমিবাদ: বাংলার আরবি-ফার্সি শিলালিপির আধ্যাত্মিক দিক

চিত্র ৪.১ (শিলালিপি নং): পাণ্ডুয়ার শায়খ নূর কুতব আল আলমের সমাধিফলকে ব্যবহৃত সাতটি আধ্যাত্মিক উপাধি...

by মুহাম্মাদ ইউসুফ সিদ্দিক
November 7, 2024
সিন্ধু-সভ্যতার অস্তিত্ব সম্পর্কে নতুন ও রোমাঞ্চকর তথ্য উন্মোচন
ভারতবর্ষের ইতিহাস

সিন্ধু সভ্যতার অস্তিত্ব সম্পর্কে নতুন ও রোমাঞ্চকর তথ্য উন্মোচন

মোহেন্-জো-দড়ো—হরপ্পার তথাকথিত সিন্ধু সভ্যতা সম্পর্কে ভারতের মানুষের গর্ববোধের শেষ নেই। ঐ সভ্যতার ‘আবিষ্কার’-এর সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় সভ্যতার বয়স এক...

by বিবস্বান আর্য
November 8, 2024

POPULAR POSTS

  • সুলতান মাহমুদ

    সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান ও সোমনাথ মন্দির প্রসঙ্গ (১ম পর্ব)

    181 shares
    Share 181 Tweet 0
  • বাউরী সম্প্রদায়ের উৎপত্তির ইতিহাস ও ঐতিহাসিক পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • আর্যদের ভারত আগমন, বিস্তার, সমাজ ও সভ্যতা: এক ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে বৌদি কাদম্বরী দেবীর সম্পর্ক আদৌ কি প্রেমের ছিল?

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • হিন্দু পদবীর উৎপত্তির ইতিহাস, বিবর্তন ও ক্রমবিকাশঃ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

Facebook Page

নবজাগরণ

ADVERTISEMENT
নবজাগরণ

'Nobojagaran' is a website of its kind where you can gather knowledge on all the unknown facts of the world. We human beings always have a thirst for knowledge. Nobojagaran takes its first steps to quench this thirst of ours. We are now in the era of digital world, where we get almost anything online. So how about a bit of knowlyfrom online?

Connect With Us

No Result
View All Result

Categories

  • English (9)
  • অন্যান্য (11)
  • ইসলাম (26)
  • ইসলামিক ইতিহাস (22)
  • ইহুদী (1)
  • কবিতা (37)
  • খ্রিস্টান (6)
  • ছোটগল্প (6)
  • নাস্তিকতা (18)
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (24)
  • বিশ্ব ইতিহাস (24)
  • ভারতবর্ষের ইতিহাস (194)
  • রাজনীতি (38)
  • সাহিত্য আলোচনা (68)
  • সিনেমা (17)
  • হিন্দু (16)

Pages

  • Cart
  • Checkout
  • Checkout
    • Confirmation
    • Order History
    • Receipt
    • Transaction Failed
  • Contact
  • Donation to Nobojagaran
  • Homepage
  • Order Confirmation
  • Order Failed
  • Privacy Policy
  • Purchases
  • Services
  • লেখা পাঠানোর নিয়ম
  • হোম
No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi

©Nobojagaran 2020 | Designed & Developed with ❤️ by Adozeal

Login to your account below

Forgotten Password?

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In
Don't have an account yet? Register Now
wpDiscuz
0
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
| Reply
Open chat
1
Powered by Joinchat
Hi, how can I help you?