লিখেছেনঃ সুরজিৎ দাশগুপ্ত
মধ্যযুগ পর্যন্ত ইতিহাসকে অনুধাবন ও অধ্যয়ন করা হয় এক-একটা দেশ অথবা ভূখণ্ডকে ভিত্তি করে। যখন থেকে একটা দেশের সঙ্গে আর-একটা দেশের ইতিহাস জড়িয়ে যেতে থাকল তখন থেকেই শুরু হল আধুনিক ইতিহাসের, যাকে জার্মান : দার্শনিক হেগেল বর্ণনা করেছেন Welt-Geschichte বা বিশ্ব ইতিহাস বলে। যদিও প্রাচীনকাল থেকেই চিন-ভারত-গ্রীসের মধ্যে জলপথে একটা যোগাযোগের ব্যবস্থা। ছিল তবু ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দে অতলান্তিক মহাসাগর পার হয়ে কলম্বাস-এর এক নতুন দেশের এবং ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে মহাসাগরে জাহাজ ভাসিয়ে আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্ত ঘুরে ভারত মহাসাগর ও আরবসাগর পেরিয়ে ভাসকো-দা-গামার ভারতের মাটিতে পা ফেলার থেকেই এক নতুন ইতিহাসের সূত্রপাত। এজন্যই ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ বলেছেন যে, কলম্বাস ও গামার সমুদ্রাভিযান দুটি যিশুখ্রিস্টের জন্মের পরবর্তী কালের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
কিন্তু ঘটনা দুটির পেছনে ছিল আরও অনেক ঘটনা। যেন ঘটনার পর ঘটনার এক লম্বা মিছিল। সেই ঘটনা দুটি মিছিলের থেকে কয়েক ঘটনাকে পৃথকভাবে উল্লেখ করি। একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল চতুর্দশ শতাব্দীতে আগ্নেয়াস্ত্রের আবিষ্কারে ব্যক্তিগত বীরত্বের বিষয় অবান্তর হয়ে গেল, সম্মুখ সমরের চাইতে বড় হয়ে উঠল নিরাপদ দূরত্ব থেকে প্রতিপক্ষকে কৌশলে আঘাত করে পরাস্ত করার রীতি। কয়েক বছরের মধ্যেই তারা আয়ত্ত করে ফেলল জাহাজের পাটাতনে কামান বসিয়ে গোলা নিক্ষেপের প্রযুক্তি। এই কালেই রেনেসাঁস আন্দোলনের অন্যতম প্রধান চরিত্র নিকলো মেকিয়াভিলি শিক্ষা দিলেন যে, ধূর্ততা, প্রতারণা, মিথ্যাচারিতা ইত্যাদি অন্যান্য সময় নিন্দনীয় হলেও যুদ্ধের সময় গৌরবজনক ও প্রশংসনীয় কাজ বলে গণ্য। আর-একটি উল্লেখ ঘটনা হল চিনে উদ্ভাবিত কম্পাস বা দিগদর্শন যন্ত্রের ইটালীয়দের হাতে আধুনিকীকত যার ফলে পঞ্চদশ শতাব্দীর সমুদ্রাভিযানগুলি সহজসাধ্য হল। একই সঙ্গে যা ছিল সীমাহীন সেই সাগর-মহাসাগরকে জরিপ করা হতে লাগল আড়াআড়ি ও লম্বালম্বি কল্পিত রেখা দিয়ে। মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার এই পর্বের আর একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা কারণ এই যন্ত্রে মুদ্রিত জ্ঞানবিদ্যা যেমন একই সঙ্গে কাছে-দূরে বহুজনের কাছে পৌছে গেল তেমনই তা সুরক্ষিত থাকল একাধিক গ্রন্থাগারে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। আবার জ্ঞানবিদ্যার চর্চা নতুন মাত্রা পেল কোপারনিকাস–কেপলার–গ্যালিলিও প্রমুখের জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণায়। ওপরে স্বর্গ, নিচে নরক, মাঝখানে একটা থালার মতো ইহলোক বিশ্বজগৎ সম্বন্ধে এই রকমই ছিল মধ্যযুগীয় ইউরোপের ধারণা। ভারতের মহাকাব্য মহাভারতেও পাই একইরকম ধারণার সমর্থন। কিন্তু পঞ্চদশ শতাব্দীর সমুদ্রাভিযানের অভিজ্ঞতা থেকে পৃথিবীর আকৃতি সম্বন্ধে গ্রীক প্যাগানদের ধারণাই ফিরে এল কিছুটা সংশোধিত রূপে এবং তার ফলেই এই জ্ঞান প্রতিষ্ঠা পেতে লাগল যে, পৃথিবীটা সমতল নয়, গোলাকার।
“সমুদ্রাভিযানের তাগিদ দক্ষিণ ইউরোপের মানুষের মনে ক্রমশ প্রবল হয়ে উঠতে থাকে পঞ্চদশ শতাব্দীতে। কারণ ইউরোপের মানুষ খাদ্যবস্তুকে সম্যক রক্ষা ও সুস্বাদু করার জন্য নির্ভরশীল ছিল বিভিন্ন রকম মশলাপাতির উপরে। এই মশলাপাতি আরবসাগর, ভূমধ্যসাগর দিয়ে পৌঁছত ইটালির বন্দরগুলিতে এবং সেখান থেকে ইউরোপের বিভিন্ন বাজারে। কিন্তু নবম-দশম শতাব্দী থেকে এই মশলা-বাণিজ্যের অনেকখানি লাগাম চলে যায় ইসলামের নামে সংঘবদ্ধ আরব সওদাগরদের হাতে। ইউরোপীয় বণিকশক্তি তখন ইসলামি সওদাগরদের ফাঁকি বা বাদ দিয়ে সরাসরি দক্ষিণ এশীয়দের সঙ্গে মশলা-বাণিজ্য করা যায় কি না তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে।
সমুদ্রাভিযানের ব্যাপারে পর্তুগালের মানুষের মনে বহুকাল ধরেই একটা বিশেষ ভাবনা ছিল। দেশটার ভৌগোলিক অবস্থান এমন যেন সমুদ্রে লাফ দিয়ে পড়ার জন্য। উদ্যত। তাছাড়া আরব মুসলিম তথা মূররা যখন স্পেন-পর্তুগাল-ফ্রান্সে ঢুকে পড়েছিল। তখন তাদেরকে সাফল্যের সঙ্গে বহিষ্কারে সমর্থ হয়েছিল পর্তুগাল। তাদের সেই কীতির মূলে নিশ্চয়ই পর্তুগিজদের প্রতি ঈশ্বরের বিশেষ ইচ্ছা ছিল। হ্যা, তারা একান্তভাবে বিশ্বাস করা শুরু করে যে পর্তুগিজরা ঈশ্বরের বিশেষ মনোনীত সম্প্রদায়। ঈশ্বর তাদেরকে দেশে দেশে সত্য ধর্ম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য মনোনয়ন করেছেন। যেন ঈশ্বর আর প্রকৃতির ইচ্ছাক্রমেই তারা মাটির বাঁধন ছিড়ে বেরিয়ে পড়বে দিগন্তবিস্তৃ জলরাশিতে। তাদের উৎসাহ ও প্রেরণা জোগাতে এগিয়ে এলেন রাজা প্রথম জনের – তৃতীয় পুত্র হেনরি, যিনি ইতিহাসে হেনরি দ্য নেভিগেটর নামে পরিচিত। তার উদ্যোগে পর্তুগিজ নৌবাহিনী বছরে একটি করে সমুদ্রাভিযানে বের হত আর একটু করে আফ্রিকার পশ্চিম তীর ধরে দক্ষিণে অগ্রসর হত। সেই সঙ্গে অভিযাত্রীরা আফ্রিকা থেকে পর্তুগালে আমদানি করত হাতির দাঁত, ধাতু সোনা, এবোনি কাঠ, কালো দাস ইত্যাদি। পর্তুগিজদের বাৎসরিক সমুদ্রাভিযানে কিছুদিন বিরতি পড়ে ১৪৬০ খ্রিস্টাব্দে প্রিন্স হেনরির অকাল মৃত্যুতে। কিন্তু আবার তা শুরু হল, ১৪৭০ সালে, তারা লোপো গোনসালভেস-এর নেতৃত্বে বিষুবরেখা অতিক্রম করে। ততদিনে দাস-ব্যাবসা আর ধর্ম যুদ্ধ অর্থাৎ হয় দাস হও, নয় ধর্ম নাও এই ব্যাপারটা কেঁপে উঠেছে।

পর্তুগালের দেখাদেখি খ্রিস্টান স্পেনও আফ্রিকার তটে তটে হানা দিয়ে ধাতু সোনা আর কালো দাসের কারবার শুরু করে দেয়। স্পেন তখন মুসলিম মূরদের শাসন থেকে মুক্ত হয়ে আবার খ্রিস্টান স্প্যানিয়ার্ডদের শাসনে ফিরে আসতে সচেষ্ট। এ ব্যাপারে অগ্রণী ছিলেন আরাগন-এর রাজা ফার্দিনান্দ আর কাস্তিল-এর রানি ইসাবেলা এবং দুজনের বিয়ের পরে স্পেনের রাজশক্তি বলতে এঁদের দুজনকে যুক্তভাবে বোঝাত। রাজারানির মধ্যে আবার ইসাবেলা বিশেষভাবে খ্রিস্টান ধর্মের বিষয়ে বেশি উগ্র ছিলেন আর এজন্যে তিনি ক্যাথলিক’ ইসাবেলা নামে ইতিহাসে পরিচিত। খ্রিস্টধর্মের শুদ্ধতা রক্ষার জন্য ধর্মাচরণে বিচ্যুতির অপরাধে আগুনে পুড়িয়ে মারার যে-প্রথা ইনকুইজিশন। নামে কুখ্যাত তা ইসাবেলার প্রশ্রয়েই স্পেনে সবচেয়ে ভীষণ রূপ নেয় এবং স্পেনের সীমানা থেকে অখ্রিস্টান বিতাড়নেও তারই ভূমিকা ছিল প্রধান, তারই অভিযানে ত্রয়ােদশ শতাব্দী থেকে নাসরিদ বংশের, যে-শাসন ছিল গ্রানাডায় তার অবসান ঘটে। কলম্বাসের সমুদ্রাভিযানগুলির ব্যয়ভার তারই আদেশক্রমে স্পেনের রাজকোষ থেকে দেওয়া হয়েছিল।
অপ্রাসঙ্গিক হলেও জানাই যে তার অভিযানগুলির যে বিবরণ কলম্বাস লিখে গেছেন তাতে দেখা যায় তার সমুদ্রাভিযানগুলির উদ্দেশ্য ছিল পশ্চিমের জলরাশির ওপারে অবস্থিত সোনার দেশ থেকে প্রচুর সোনা রানি ইসাবেলাকে এনে দেওয়া, যাতে তিনি চূড়ান্ত ক্রুশেড সংগঠন করতে পারেন, কিন্তু কলম্বাসের সে-লেখা ১৮৯৩ সালের পরে আর প্রকাশিত হয়নি। সেই লেখা অনুসারে স্পেনের রানি ক্যাথলিক’ ইসাবেলা এই শর্তে সমুদ্রাভিযানে কলম্বাসকে সাহায্য করেছিলেন যে কলম্বাস তাকে অনেক সোনা এনে দেবেন। এমনই অমূল্য দলিল, যা দাভিঞ্চির নোট্-এর মতোই ধ্রুপদী প্রমাণ রূপে ধার্য ও মান্য, তা কেন শিকাগো ধর্মসভার পর থেকে বিদ্যাচর্চার বিশ্ব থেকেই গায়েব ও লোপাট হয়ে গেল? তা পুনর্মুদ্রিত হলে পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের পক্ষে অস্বস্তিকর তথ্য বেরিয়ে পড়বে বলেই কী? এই প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের : পর্যবেক্ষণটিও কৌতুহলোদ্দীপক। তিনি লেখেন, …allow me to construe for you the history of the Parliament of Religions. They wanted a horse and they wanted to ride it.’ (Lectures from Colombo to Almora 1992, p.242) এই ‘horse’ রাজ্যজয়ের জন্য অশ্বমেধ যজ্ঞের অশ্বের দ্যোতনা বহন করছে না কি?
ফিরে আসি মূল প্রসঙ্গে। পর্তুগালের দেখাদেখি স্পেনও যে আফ্রিকার ভূখণ্ড ও দক্ষিণে প্রসারিত জলরাশির অধিকার নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে পড়ে সেকথা আগে বলেছি। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা যাতে যুদ্ধবিগ্রহে পর্যবসিত না হয় সেজন্য রোমের পোপ ১৪৮১ খ্রিস্টাব্দে বুল অ্যাতেরনিরেগিস (bull aeterniregis) নামক আজ্ঞাবলে অখ্রিস্টান পৃথিবীর যে-অংশ আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণে বিদ্যমান সেই অংশ ভোগ দখলের অধিকার দিলেন পর্তুগালকে। আবার ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দে কলম্বাস পশ্চিমের নতুন দেশে পৌঁছনোর পর স্পেন দেশীয় পোপ ষষ্ঠ আলেকজাণ্ডার বুল ইল ইন্তার স্যায়তেরা (bull il inter caetera) ঘোষণা করে ৩৮° দ্রাঘিমা রেখা বরাবর পৃথিবীকে পূর্ব ও পশ্চিমে ভাগ করে পশ্চিম ভাগ দিলেন স্পেনকে আর পূর্ব ভাগ পর্তুগালকে। এতে ক্ষুন্ন হল পর্তুগাল। অর্ধশতাব্দী ও অধিক কাল ধরে আফ্রিকাতে খ্রিস্টধর্ম প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা আর আফ্রিকা থেকে হাজার হাজার কালো দাস নিয়ে আসার মহান কর্ম সম্পাদন করার জন্য শেষে কি মহামান্য পোপের কাছ থেকে এই পুরস্কার? পর্তুগালের দুঃখটা বুঝে পোপ স্পেন ও পর্তুগালকে আলোচনার বৈঠকে বসালেন। ফলে ১৪৯৪ সালে দুটি দেশ টরডেসিলাসএর চুক্তিতে (Treaty of Tordesillas-এ) ঠিক করল যে পৃথিবীটাকে ৩৮° দ্রাঘিমা রেখা বরাবর নয়, ৪৬°৩৭ দ্রাঘিমা রেখা বরাবর ভাগ করা হবে।
এবার চলে আসি ১৪৯৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে লিসবন বন্দর থেকে ভাস্কোডা-গামার ভারতের উদ্দেশে যাত্রার ঘটনায়। যাত্রার আগে গামার কাছে পোপের কাছ থেকে এই শুভেচ্ছা পৌঁছলো যে বার্থলোমিউ দিয়াস-এর মতো ব্যর্থ হয়ে ফিরলে পুরস্কার মিলবে মৃত্যু। আন্দাজ করা যায় গামার পরিস্থিতি। বিফল হয়ে ফিরলে মৃত্যুদণ্ড যখন জুটবে তখন মৃত্যুপণ করেই পৌঁছতে হবে ভারতে। সত্যিই গামা দক্ষিণ ভারতের কালিকটে পৌঁছলেন ১৪৯৮-এর মে মাসে। তখন কালিকটের রাজা জামেরিন-এর প্রবল প্রভাব ছিল আরব সাগর অঞ্চলে এবং তার ক্ষমতার মূলে ছিল আরব। সওদাগরদের সখ্য ও সাহচর্য। আরবরাই যে ভারতে পর্তুগিজ শক্তি বিস্তারের প্রধান। বাধা এই জ্ঞান নিয়ে গামা ফিরে এলেন দেশে। এবার কামান-বারুদে জাহাজ বোঝাই করে ১৫০০ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে পর্তুগিজদের দ্বিতীয় অভিযান শুরু হল আলভারেজ কাৰৱাল-এর নেতৃত্বে। কালিকটে দুদিন ধরে জাহাজ থেকে গোলাবর্ষণ করে প্রচণ্ড সন্ত্রাস সৃষ্টি করাই বোধহয় ছিল তার কর্মসুচি। পরের বার ২০টা জাহাজ নিয়ে ১৫০২ খ্রিস্টাব্দে গামা আবার এলেন ভয়ংকর ধ্বংসকাণ্ড ও হত্যাকাণ্ডের নজির স্থাপন করতে। তবে ভারতে পর্তুগিজ ঘাঁটি তৈরির যে-কর্মসুচি গামা আরম্ভ করেছিলেন তা সম্পন্ন করার কৃতিত্ব আলকানসো দা আলবুকার্ক-এর। আর গামা যে কাজ করেছিলেন তার জন্য ধর্মের মহান রক্ষক’ এই খেতাবে গামাকে ভূষিত করেন স্বয়ং মহামান্য পোপ, তাছাড়া জেরোনিমোস (Jeronimose) নামক জায়গাতে গামার সম্মানে তৈরি করা হয় খ্রিস্টান সাধুদের জন্য একটি আবাস বা মঠ আর পর্তুগালের রাজা সামান্য বংশজাত গামাকে দিলেন অভিজাত বংশের ভূষণ ও স্বীকৃতি।।

এইভাবে পঞ্চদশ শতাব্দীর ইউরোপের ধর্ম, স্বর্ণ ও পণ্য এই তিনটি প্রধান উপাদানে গঠিত এক নতুন বিপুল ঐতিহাসিক তরঙ্গ উখিত হল। প্রধান ধর্মযাজক মহামান্য পোপ যেভাবে ভক্তদের ভেতর অখ্রিস্টান হতভাগ্যদের পৃথিবী বারবার ভাগ-বাটোয়ারা করেন তাতেই বোঝা যায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উদ্ধত গর্বিত বিশ্বগ্রাসী মানসিকতা। ধর্মের উন্মাদনার সঙ্গে অবশ্যই ছিল স্বর্ণের প্রচণ্ড আকর্ষণ এবং স্বর্ণের আসক্তি যে বিশেষভাবে স্প্যানিয়ার্ডদের মধ্যে এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে তা তারা নিজেরাই নানাভাবে নানাস্থানে স্বীকার করেছে। ধর্ম ও স্বর্ণের সঙ্গে ছিল পণ্যের বাধ্যবাধকতা আর পণ্য বলতে যেমন নিষ্প্রাণ মশলাপাতি বোঝাত তেমনি সপ্রাণ কালো দাসদেরও বোঝাত। এটা মনে রাখা ভালো যে বেঁনেসাসের যুগই ছিল দাস ব্যবসায়ের স্বর্ণযুগ। ধর্ম, স্বর্ণ ও পণ্যের মিলিত অভিঘাতে সৃষ্ট তরঙ্গ কামানের গোলার মতোই আছড়ে পড়ল মালাবার উপকূলে পঞ্চদশ শতাব্দীর অন্তিম প্রান্তে, ফলে ভারতের ঐতিহাপূর্ণ সমাজজীবনে একই সঙ্গে শুরু হল ধ্বংসের ও নবজন্মের অধ্যায়।
দুই
পঞ্চদশ শতাব্দীর রক্তসন্ধ্যার পরে শুরু হল নতুন শতাব্দী। তখন পশ্চিমে। মোজাম্বিক, পূর্বেমলাক্কা-মমালুকাস, দক্ষিণে শ্রীলঙ্কা-কলম্বো আর উত্তরে ওমান-ওরমুজ পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে পর্তুগিজদের প্রবল প্রতিপত্তি আর স্বদেশে লিসবন হয়ে ওঠে মশলা-মসলিন ইত্যাদির মতো এশীয় পণ্যের প্রধান বিক্রয়কেন্দ্র। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টে যায় ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের দ্বিতীয় ফিলিপ কর্তৃক পর্তুগাল বিজয়ের পরিণামে। বিগত অর্ধ-শতাব্দী ধরে লিসবন থেকে এশীয় পণ্য ক্রয় করে নিয়ে যেত হল্যাণ্ডের বণিকরা এবং তা বিক্রয় করত ইউরোপের বিভিন্ন বাজারে। পর্তুগাল জয় করে স্পেন ভেঙে দিল উত্তর পশ্চিম ইউরোপ জুড়ে হলান্দাজদের এশীয় পণ্যের কারবার। ফলে হলান্দাজ বণিকদের ভাবনা শুরু হল, কীভাবে সরাসরি উৎপন্ন-স্থল থেকেই এশীয় পণ্যগুলি সংগ্রহ করা যায়। অন্যদিকে স্পেনের সঙ্গে ইংল্যাণ্ডেরও ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়েছিল এবং ১৫৮৮ খ্রিস্টাব্দে স্প্যানিশ আর্মার্ড ধ্বংস করে ইংল্যাণ্ড তাদের নৌশক্তির প্রমাণ দিল। এরমধ্যে আরও একটা ব্যাপার ছিল ক্যাথলিক প্রোটেস্টান্ট ধর্মীয় বিবাদ—স্পেন-পর্তুগাল ক্যাথলিক দেশ, ইংল্যাণ্ড-হল্যাণ্ড প্রটেস্টান্ট দেশ যেভাবে বিগত শতাব্দীতে ক্যাথলিক ধর্মগুরু পর্তুগাল ও স্পেনের মধ্যে পৃথিবী। ভাগ করে দিয়েছিলেন তা ছিল প্রোটেস্টান্ট দেশ দুটির পক্ষে গভীর আপত্তির ব্যাপার।
যেহেতু হলান্দাজরা মশলা বাণিজ্যের ক্ষেত্র আগেই তৈরি করে রেখেছিল তাই তারা সেই বাজার রক্ষার প্রয়াসে ১৫৯৫ খ্রিস্টাব্দে অনেকটা পর্তুগিজদের যাত্রাপথ ধরেই গিয়ে হাজির হল মশলার দেশ বাটাভিয়া অর্থাৎ বর্তমান জাকার্তাতে। যাতে তারা আরও যোগ্যতার সঙ্গে বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারে তাই ১৬০২ খ্রিস্টাব্দে হলান্দাজদের বিভিন্ন বাণিজ্য সংস্থা ইউনাইটেড ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি অব দ্য নেদারল্যান্ডস নামে ঐক্যবদ্ধ হল। ভারতের মসলিপত্তনম, পেতাপল্লি প্রভৃতি কয়েকটি স্থানকে তারা গণ্য করল বাণিজ্যপথের পান্থশালা রূপে।
এ প্রোটেস্টান্ট হলাণ্ডের দৃষ্টান্ত প্রোটেস্টান্ট ইংল্যান্ডের বণিক সম্প্রদায়কেও অনুপ্রাণিত করল। হলান্দাজদের প্রচুর পুঁজি ছিল, কারণ তারা তো আগে থেকেই মশলার বাণিজ্যে। ছিল, কিন্তু ইংরেজরা তো এই ব্যবসায়ে নবাগত, তাদের পুঁজির সমস্যা ছিল। পুঁজি সংকটমোচনে তাদের সহায় হল স্যার ফ্রানসিস ড্রেক ও তার মতো জলদস্যুরা, তাদের লুণ্ঠিত ধনসম্পদেই গড়ে উঠল ইংরেজ কোম্পানির জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি। অবশেষে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিনে রানি এলিজাবেথ ইংলিশ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য সনদ অনুমোদন করলেন। কিন্তু ইংরেজ বণিকরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মশলা-বাণিজ্যে প্রবেশের চেষ্টা করতেই তাদের ধর্মভাই হলান্দাজদের সঙ্গে যে বিরোধ বাধল তা ১৬২৯ সালে ভীষণ রূপ পেল মধ্য মোলুকাস-এ অবস্থিত অ্যামবোয়ান বন্দরের ইংরেজ কুঠির সমস্ত কর্মচারীর হত্যাকাণ্ডে। ইতিমধ্যেই হলান্দাজদের বাধা পেয়ে ইংরেজরা বাধ্য হয়েছিল মূল ভারত ভূখণ্ডে বাণিজ্য শুরু করতে এবং ১৬১১ খ্রিস্টাব্দেই সুরাটে প্রথম একটা কুঠি স্থাপন করেছিল। তারপর ১৬১৮ সালে দ্বিতীয় জেমস-এর বিশেষ দূত হিসেবে স্যার টমাস রো জাহাঙ্গিরের সঙ্গে দেখা করে ইংরেজদের জন্যে অনেকগুলি। বাণিজ্যিক সুবিধা আদায় করে নেন। মসলিনম-এ সুতি বস্ত্রের বাণিজ্যের সূত্রে ইংরেজরা করোমণ্ডল উপকূলে একটু একটু করে মাদ্রাজ থেকে কটকবালেশ্বর পর্যন্ত বাণিজ্যিক তৎপরতা বিস্তার করে। উড়িষ্যা থেকে তারা প্রবেশ করল খাস বাংলার চিনি, রেশম ও সোরার বাণিজ্যে।
১৬৫১ খ্রিস্টাব্দেই কোম্পানির চিকিৎসক গেব্রিয়াল বাটন শাহজাহানের পুত্র বাংলার সুবাদার শাহ সুজার কাছ থেকে বার্ষিক তিন হাজার টাকা নজরানাতে বিনা শুল্কে ও বিনা বাধায় বাংলায় ব্যাবসা করার ও ইচ্ছামতো বিস্ফোরক সোরা ক্রয় করার নিশানা বা অনুমতিপত্র লাভ করেছিলেন। বাংলায় প্রথম কুঠি স্থাপিত হয়। ১৬৫৫ খ্রিস্টাব্দে হুগলিতে এবং ১৬৫৭-তে সনদ নবীকরণের সময় হুগলির অধীনে নিয়ে আসা হয় বালেশ্বর, পাটনা ও কাশিমবাজারের কুঠি। কাশিমবাজারের চতুর্থ কর্মচারী রূপেই ইতিহাসে প্রবেশ করেন জোবচার্নক। বাণিজ্যে কাশিমবাজার অচিরেই হুগলির সমকক্ষ হয়ে ওঠে। বাংলা থেকে রেশম, বাফতা, সোরা, চিনি, সুতি, হলুদ প্রভৃতি পণ্য বিলেতের বাজারে রপ্তানি করে কোম্পানির খুব ভালো লাভ হয়। কোম্পানির চেয়ারম্যান স্যার জোসিয়াহ চাইল্ড-এর ১৬৮৬ সালেই মনে হয়, ভারতের মাটিতে বিস্তৃত, সুদৃঢ় ও সুনিশ্চিত ব্রিটিশরাজ প্রতিষ্ঠার সময় সমাগত। বাণিজ্যে ইংরেজদের শ্রীবৃদ্ধি দেখে ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের চতুর্দশ লুই-এর অর্থমন্ত্রী কোলবার (Colbert)-এর উদ্যোগে গঠিত হল একটি আধা-সরকারি ফরাসি বাণিজ্য সংস্থা। দু বছর পরে ফরাসি কোম্পানির প্রতিনিধিবর্গ ঔরঙ্গজেব-এর কাছ থেকে বাণিজ্য করার অনুমতি পেয়ে জিঞ্জির রাজার কাছ থেকে জমি কিনে ১৬৮৩ খ্রিস্টাব্দে একটা শহর বানায়, শহরটাকে তামিল ভাষায় পুডু অর্থাৎ নতুন ও চরি অর্থাৎ শহর থেকে পণ্ডিচেরী নাম দেয়। তেমনই ১৬৮৮ সালে বাংলায় গঙ্গার পশ্চিম তীরে তিনটে অখ্যাত গ্রামকে নিজেদের বাসক্ষেত্র তথা বাণিজ্যক্ষেত্র করে নাম দেয় চন্দননগর। দুটি জায়গার নির্বাচনেই তাদের বিবেচ্য বিষয় ছিল মোগল, ইংরেজ ও হলান্দাজদের শক্তিস্থল থেকে নিরাপদ দূরত্ব, কিন্তু স্থানীয় দু-দুবৃত্তদের উৎপাত প্রতিরোধের ব্যবস্থা রাখা।
এদিকে ইংরেজরাও মোগল বাদশাহর প্রতিনিধি শায়েস্তা খাঁ-এর এবং অন্যদিকে বাংলায় ক্যাথলিক ফরাসিদের মতিগতি সম্বন্ধে শঙ্কিত হল। তাদের মনে হল নিজেদের সুরক্ষার জন্য একটা দুর্গ চাই! সত্যিই ১৬৮৬ সাল থেকে শায়েস্তা খাঁ-এর সঙ্গে ইংরেজদের বিবাদ শুরু হয়ে গেল। জোবচার্ক তখন হুগলি কুঠির কর্তা। এক রাতের অন্ধকারে হুগলি ছেড়ে গঙ্গা ধরে দক্ষিণ দিকে পালাতে পালাতে মাইল তিরিশেক এসে দেখতে পেলেন বনজঙ্গলের মধ্যে এক ছোট্ট গ্রাম্যবাজার, নাম সুতানুটি। শায়েস্তা খাঁ-এর নজর এড়াবার চন্য চমৎকার জায়গা এই সুতানুটি। তিনি ১৬৯০ খ্রিস্টাব্দের অগস্ট মাসে সুতানুটিতে চলে এলেন পাকাপাকিভাবে। তিন বছর পরে তাঁর মৃত্যুর পরে সুতানুটি কুঠির কর্তা হলেন তার জামাতা এবং তাঁর আমলে ১৬৯৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলার এক বড় জমিদার শোভা সিংহ এবং উড়িষ্যার আফগান সর্দার রহিম । মিলিতভাবে মোগল সুবাদারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এই নৈরাজ্যের পরিপ্রেক্ষিতে আত্মরক্ষার্থে ইংরেজরা সুতানুটি সংলগ্ন কলিকাতায় দুর্গ নির্মাণ শুরু করে। কিন্তু সেই জমি-জায়গিরের মালিক বড়িশার সাবর্ণ চৌধুরী পরিবার। বাংলার সুবাদার আজিমুশশান-এর অনুমতিক্রমে ১৬৯৮-এর নভেম্বর মাসে জমি হস্তান্তর হল আর ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যাণ্ডের রাজা তৃতীয় উইলিয়মের নামে দূর্গের নাম হল ফোর্ট উইলিয়াম। শোভা সিংহের বিদ্রোহই বাংলায় নতুন সামরিক শক্তি রূপে ইংরেজদের আবির্ভাবের তাৎক্ষণিক কারণ। ঘটনার পর ঘটনার যে-শোভাযাত্রার কথা আগে বলেছি তার অবধারিত অভিমুখ লক্ষ্যণীয়।
তিন
এটা সর্বজনবিদিত যে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে ঔরঙ্গজেব-এর মৃত্যুর পরে ভারতে মোগল সাম্রাজ্য ক্রমে ভেঙে পড়তে শুরু করে আর মোগলদের শূন্যস্থান পূরণে সচেষ্ট হয়। মারাঠারা। এদিকে বাংলায় মোগল শাসকদের দুর্বলতার অবসরে এক নতুন নবাবি প্রথার প্রচলন হয়। বাদশাহ ফারুকসিয়ার ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদকুলি খাঁ-কে একই সঙ্গে রাজস্ব সংগ্রহের কর্তা রূপে দেওয়ান ও শাসনের কর্তা রূপে নাজিম দুটি পদাধিকারীর স্বীকৃতি দেন। মুর্শিদকুলি বাইরে বাদশাহের অনুগত থাকলেও বাংলার ভেতরে ছিলেন স্বাধীন নবাব। রায়তদের কাছ থেকে খাজনা আদায়কারী ও কৃষিতে আগ্রহী জমিদারদের কাছে তিনি ছিলেন দক্ষতার প্রতীক, আবার কলিকাতার ইংরেজ আর্মেনি, চন্দননগরের ফরাসি ও কুঁচুড়ার হলান্দাজ বণিকদের কাছে একজন নিষ্ঠুর নবাব। এই সময় এইসব ইউরোপীয় এবং আর্মেনি-আফগান-ইরানি বণিকদের বহু বিস্তৃত ব্যবসায়ের সুবাদে বাংলায় তখন গড়ে ওঠে এক ধনবান প্রভাবশালী বণিক ও মহাজন শ্রেণি যাদের মধ্যে জগৎশেঠ পরিবারের খ্যাতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বন্দরগুলি থেকে পারস্য উপসাগর-লোহিতসাগর পর্যন্ত প্রসারিত হয়। বাংলার এই বণিক-মহাজন শ্রেণির প্রতিপত্তি এতই বৃদ্ধি পায় যে ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে যখন সরফরাজ খান বাংলার নবাব, তখন তারই ফৌজদার আলিবর্দি খান বিহার থেকে এসে জগৎশেঠদের ও কয়েকজন জমিদারের সমর্থনে ও সহায়তায় সরফরাজ খানকে বহিষ্কার করে নিজেই বাংলার নবাব হন। ওই একই বছরে বাংলা তথা ভারত থেকে বহুদূরে, ইউরোপের। মাটিতে শুরু হয় এক নতুন ঘটনাচক্র যার প্রতিক্রিয়া অচিরেই পরিস্ফুট হয় ভারতের তথা বাংলার ইতিহাসে।
অস্ট্রিয়া শাসনের অধিকার নিয়ে দ্বিতীয় ফ্রেডরিক ও মারিয়া থেরেসার মধ্যে বিরোধ থেকেই ওই ঘটনাচক্রের সূচনা। এই বিরোধের মধ্যে ধর্ম নিয়েও একটা বিবাদ ছিল। দ্বিতীয় ফ্রেডেরিক ছিলেন প্রটেস্ট্যান্ট আর মারিয়া থেরেসা ক্যাথলিক। ফলে ইংল্যান্ড নেয় ফ্রেডেরিক-এর, আর ফ্রান্স নেয় মারিয়া থেরেসার পক্ষ। অস্ট্রিয়ার সিংহাসনের অধিকার নিয়ে যুদ্ধে ইংল্যাণ্ড ও ফ্রান্স যেমন ইউরোপের মাটিতে জড়িয়ে পড়ে তেমনই ভারতের মাটিতেও। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে ইংরেজরা ছিল আর্থিকভাবে অনেক বেশি সমর্থ আর যুদ্ধকর্মে অনেক বেশি সুশৃঙ্খল। যুদ্ধের পরিণামগত তাৎপর্যে এটা এক প্রকার বিশ্বযুদ্ধই ছিল, কারণ যুদ্ধাবসানে আঈলাশ্যাপেল (aix-La-Chapell)-এর সন্ধির শর্ত অনুসারে ইংরেজরা ভারতে মাদ্রাস আর ফরাসিরা উত্তর আমেরিকায় লুইবার্গ (Louisburg) ফিরে পায়। এই পর্বে দক্ষিণ ভারতে দুপ্লের নেতৃত্বে ফরাসিদের অবস্থান যথেষ্ট সুবিধাজনক হয়ে ওঠে, বিশেষত হায়দ্রাবাদের নতুন নিজাম কে হবে তা নির্ধারণে ও নতুন নিজামের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য দে বুসি (de Bussy)-কে দায়িত্ব দেওয়ার ব্যাপারে দুপ্লের ভাবনাই প্রাধান্য পায়। ত্রিচিনোপল্লির ওপরেও কায়েম হয় ফরাসি প্রভাব। দুপ্লে অনুধাবন করেন যে, মোগল শাসনের অবস্থানে এই ভারতে ইউরোপীয় শাসনের বিপুল সম্ভাবনা। – কিন্তু আপন অনুধাবনকে বাস্তব রূপ দিতে পারেননি দুপ্লে। না পারার একটি কারণ ছিল ইংরেজ কোম্পানির তুলনায় ফরাসি কোম্পানির না ছিল পুঁজিশক্তি, না আর্থিক স্বাধীনতা। আর-একটি কারণ হল পশ্চিম উপকূলে ইংরেজদের বোম্বাইয়ের তুলনায় ফরাসিদের মাহের, রোমণ্ডল উপকূলে মাদ্রাজের তুলনায় পণ্ডিচেরির এবং বাংলায় কলিকাতার তুলনায় চন্দননগরের ভৌগোলিক অরস্থানের অসুবিধা। দুপ্লের ব্যর্থতার আরও একটি কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে—যে দুজনের উপর তাঁর। বেশি নির্ভরশীলতা ছিল তাঁদের প্রথম জন তারই স্ত্রী, যিনি দুপ্লের বিদেশমন্ত্রী হিসেবে কাজ করতেন ও আগ্রহী ছিলেন ভারতীয় সংস্কৃতির চর্চায় এবং অপরজন দে বুসির বেশি আগ্রহ ছিল প্রাচ্য ভাষাগুলির বৈচিত্র্য সম্বন্ধে আর দুপ্লে নিজেও ছিলেন চিন্তাশীল ও ভাবুক প্রকৃতির।
১৭৪৮-এ আঈলাশ্যাপেল-এর সন্ধি স্থাপনের পর ছয়-সাত বছর ভারতীয় ইতিহাসের জন্য প্রাসঙ্গিক তেমন কোনো যুদ্ধ-বিগ্রহ হয়নি ইউরোপে, কিন্তু ১৭৫৬ খ্রি. আবার এক যুদ্ধ শুরু হয়, যা সাত বছরের যুদ্ধ নামে পরিচিত। এই যুদ্ধের এক পক্ষ হল অস্ট্রিয়া-ফ্রান্স-রাশিয়া-সুইডেন আর অন্যপক্ষ প্রুশিয়া ইংল্যাণ্ড, যাদের প্রেরণা জোগাল প্রোটেস্টান্ট ঈশ্বরকে রক্ষা করার জন্য আওয়াজ। ইউরোপে যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিতেই ইংরেজরা কলিকাতার কুঠি-দুর্গর সামরিক অর্থে সংস্কার শুরু করে। জোবচার্নক প্রথমে আত্মগোপনের উদ্দেশ্যেই সুতানুটিতে এসেছিলেন, কিন্তু সংলগ কলিকাতাতে দুর্গ নির্মাণ করেই ইংরেজরা বুঝতে পারে তার অবস্থানগত গুরুত্ব পাটনা, রাজমহল, মুর্শিদাবাদ, কাশিমবাজার, হুগলি, চুচুড়া, চন্দনগর পর্যন্ত বিস্তৃত নৌবাণিজ্যর ওপর নজরদারি করা এই দুর্গ থেকে খুবই সহজ।
কলিকাতা দুর্গের গুরুত্ব নবাবও বুঝতে পেরেছিলেন, তাই সামরিক অর্থেদগাহ সংস্কার হচ্ছে দেখে তিনি শঙ্কিত হয়ে কৈফিয়ত চাইলেন। ইংরেজরা কারণ দেখাল যে মারাঠা দস্যুদের মোকাবিলা করার জন্যই তাদের সমরসজ্জা। আলিবর্দি নিজেও এই মারাঠা লুণ্ঠনকারীদের হামলাতে জর্জরিত ছিলেন। তাই তিনি ইংরেজদের দুর্গসংস্কারের আপত্তি জানালেও কঠোরভাবে বাধা দেননি, কিন্তু তিনি সন্দেহ করেছিলেন যে বর্বর বর্গিদের অজুহাতে যেভাবে ইংরেজরা ধূর্তের মতো যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি, নিচ্ছে তাতে বাংলার বিপদ হতে পারে। তবে তাঁর প্রথম চিন্তা ছিল বর্গিদের প্রতিরোধ করা আর সেজন্য ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দে মারাঠাদের সঙ্গে একটা চুক্তি করেন বাংলা, থেকে তারা বার্ষিক একটা চৌথ পাবে এই শর্তে যে তারা আর সুবর্ণরেখা পার হয়ে এসে বাংলা সুবাতে হামলা করবে না। তখন ইংরেজরাও সাময়িকভাবে দুর্গ সংস্কারের, কাজ বন্ধ রাখে বলে অনুমান করা যায়। কিন্তু ইউরোপে আবার যুদ্ধ বাধতে পারে এটা বুঝতে পেরেই আবার তারা দুর্গ সজ্জা শুরু করে।

নবাব আলিবর্দির কোনো পুত্র ছিল না, মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে বুঝেই তিনি প্রিয়। দৌহিত্র উনিশ কুড়ি বছর বয়স্ক সিরাজ-উদ-দৌল্লাহ কে বাংলার নবাব ঘোষণা করে, ১৭৫৬ খ্রি. ১০ এপ্রিল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাংলার নবাবি মসনদের অন্তত তিনজন দাবিদার ছিলেন – একজন সিরাজেরই মাসতুতো দাদা শওকত জঙ্গ, যিনি ছিলেন পূর্ণিয়ার শাসক; অন্য জন সিরাজের মাসিমা ঘসেটি বেগম, যার বিশাল ধনভাণ্ডার ছিল মোতিঝিল প্রাসাদে; এবং সর্বোপরি খাস ফৌজদার বকশি মীরজাফর। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় যে তিন-তিনজন অভিজ্ঞ পরিণতমনা যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে আলিবর্দি মশলা-সাজিশে কষ্টার্জিত বাংলার মসনদ কেন তরুণ সিরাজকে দিলেন? শুধু কি তরুণ নাতির প্রতি একান্ত দুর্বলতাতেই তিনি একাজ করেছিলেন? নাকি নাতির মধ্যে তিনি কোনো বিশেষ গুণ বা যোগ্যতার পরিচয়, পেয়েছিলেন? প্রকৃতপক্ষে এসব প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই ইতিহাসে এবং অভিজ্ঞতাপক আলিবাগ খান কর্তৃক সিরাজকে মসনদে নিয়োজনের প্রকৃত কারণ বা যুক্তি রহস্যাবৃত। সিরাজও মসনদে বসার সময় থেকেই জানতেন যে শত্ৰু পরিবৃত হয়েই তা বাংলার নবাব হয়েছেন এবং জানতেন বলেই মসনদে বসে প্রথমেই তিনি খাস বক” পদ থেকে মীরজাফরকে সরিয়ে তার জায়গায় নিয়োগ করলেন মীর মদনকে। ঘসেটি বেগম যাতে তার বিপুল ঐশ্বর্যের জোরে সিরাজের কোনো ক্ষতি করতে না পারেন তাই মোতিঝিলের ধনভাণ্ডার বাজেয়াপ্ত করলেন। মসনদে বসেই তিনি যে দুটি পদক্ষেপ নিলেন তা থেকে স্পষ্ট যে তার শীতল মস্তিষ্ক প্রসূত যথেষ্ট বুদ্ধি-বিবেচনা ছিল। সিরাজের নবাব হওয়ার পর থেকে বাংলার ঘটনাবলি ফোর্ট উইলিয়মের অভ্যন্তরে সমবেত ইংরেজদের দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করা বাঞ্ছনীয়। তবে এজন্যে জরুরি দলিল-সাবুদ আমার হাতে নেই, আমি শুধু পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের চিন্তা ও কথা অনুমানের চেষ্টা করতে পারি। সেই যে স্যার জোসিয়াহ চাইল্ড ১৬৮৬ সালে বিলেতের কর্তাদের লিখেছিলেন, ভারতে ব্রিটিশরাজ প্রতিষ্ঠার সময় এসেছে, প্রকৃতই তেমন সময় এসেছে ১৭৫৬-র বাংলায়, যখন নবাবের মসনদে এক বাচ্চা ছেলে, ফলে রিস্তাদার ফৌজদার সকলেই বিক্ষুব্ধ। ইংরেজদের শত্রু ফরাসিদের সঙ্গে নবাবের দোস্তি ইংরেজদের পক্ষে খুবই খারাপ ব্যাপার। দশ বছর আগে দক্ষিণ ভারতে ফরাসিরা যে-ক্ষমতার বিস্তার করছিল তাতে ঠিক সময় রবার্ট ক্লাইভ এসে, ১৭৫১ সালে আরকট উদ্ধার করে, ফরাসিদের ক্ষমতা বিস্তারে রাশ না টানলে দুপ্লে হয়তো এতদিনে দিল্লির মসনদ দখল করে নিতেন। ফরাসিরা বাংলায় সুবিধা করার আগেই বাচ্চা নবাবের বিরুদ্ধে বাংলা সুবার ক্ষোভগুলোকে উস্কে দিয়ে ইংরেজদের বাংলার মসনদ কায়েম করার এটাই মওকা। ওই যে জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত রাজা কৃষ্ণবল্লভ এসে আমাদের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন ওঁর সঙ্গেই করতে হবে বাংলার মসনদ দখলের শলা-পরামর্শ। কলিকাতা দূর্গের কাজ চালু রাখা আর কৃষ্ণবল্লভকে আশ্রয় দেওয়া এই দুটো কারণের সঙ্গে কোম্পানিকে দেওয়া বাদশাহি দস্তক দেখিয়ে অনেক ইংরেজের ব্যক্তিগত কারবার করার রেওয়াজ ইংরেজদের বিরুদ্ধে সিরাজকে ক্রুদ্ধ করেছিল। তিনি ১৭৫৬খ্রিস্টাব্দের ৪ জুন ইংরেজদের কাশিমবাজার কুঠি দখল করে কলিকাতা দুর্গ দখলে আসছেন শুনেই দুর্গপাল ড্রেক ফলতা পালিয়ে গেলেন, পরদিন ২০ জুন ফোর্ট উইলিয়ম দখল করে সিরাজ ফিরে গেলেন মুর্শিদাবাদ। ওদিকে মীরজাফরের প্ররোচণায় শওকত জঙ্গ নিজেকে বাংলার নবাব বলে ঘোষণা করলে সিরাজ পূর্ণিয়া যাত্রা করে ১৬ অক্টোবর মণিহারি যুদ্ধে শওকতকে পরাস্ত করেন। তরুণ সিরাজের হাতে দমনেশাসনে অভিজ্ঞ ও রণক্ষেত্রে ভয়ংকর শওকত জঙ্গের পরাজয় একটা অত্যন্ত অর্থপূর্ণ ব্যাপার। প্রমাণ হল বয়সে নবীন হলেও সিরাজ বীরত্বে প্রবীণ। নবাবির সাত মাসের মধ্যে সিরাজ যতগুলি কাজ করেন তার থেকে ইংরেজরাও সিরাজের অসাধারণ কর্মপ্রতিভা সম্বন্ধে নিশ্চিত হয় এবং বুঝতে পারে যে অবিলম্বে এই দুরন্ত কর্মকুশলী বাচ্চা নবাবকে বিনষ্ট করতে না পারলে তাদের সম্মুখে সমূহ বিপদ। কলিকাতার ঘটনাবলি জেনে মাদ্রাজ থেকে আর-এক কর্মকুশলী তরুণ রবার্ট ক্লাইভ এসে কলিকাতা পুনরাধিকার করলেন এবং ১৭৫৭-খিস্টাব্দের ৯ ফেব্রুয়ারি সিরাজের সঙ্গে আলিনগরের-সন্ধি করলেন। বিদেশি বণিকদের সঙ্গে ব্যবসায়ে গ্রামাঞ্চলে দেশি বস্ত্র শিল্পীদের রোজগার হচ্ছে দেখে সিরাজও চাননি যে কোনো বণিক সম্প্রদায় বাংলা ছেড়ে যাক। কিন্তু দেশের কিছু ক্ষমতা-পিপাসু মানুষ চাইছিল সিরাজের অপসারণ। তারা ইংরেজদের বোঝায় যে সিরাজ বাইরে ইংরেজের মিত্র হলেও ভেতরে ফরাসিদের। বন্ধু ছিল ওআছে। তাই সিরাজের অপসারণে লাভ হবে ইংরেজের। অদ্ভুত ব্যাপার। সিরাজের দেশি শত্রুরা ইংরেজকে আর ইংরেজরা সিরাজের দেশি শত্রুদের ব্যবহার করার চক্রান্ত করল। নজির তো ছিলই—জগৎশেঠ পরিবারের সঙ্গেই চক্রান্ত করে। আলিবর্দি নবাব হয়েছিলেন। এবার ওই পরিবারেরই দু-ভাই মহতাব চাঁদ আর স্বরূপ। চাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে মীরজাফর চাইলেন নবাব হতে। ষড়যন্ত্রে শামিল হলেন রবার্ট ক্লাইভ, এবং রাজা জানকিরাম, রায়দুর্লভ, রাজা রামনারায়ণ, রাজা মানিকচাঁদ, উমিচাঁদ প্রমুখ আরও অনেকেই। এটা কৌতুহলোদ্দীপক যে সিরাজের বিরুদ্ধে দেশি চক্রান্তকারীদের অধিকাংশই ছিল ধর্মে হিন্দু। উদ্যোগী, কর্মনিষ্ঠ, তরুণ নবাবকে হঠিয়ে বৃদ্ধ মীরজাফর নবাব হলে সকলেই ক্ষমতার ভাগ পাবে, সকলেই নবাবকে চালাতে পারবে নিজ নিজ স্বার্থ অনুসারে। ক্লাইভের চরিত্রে ছিল দুঃসাহস ও দুর্নীতির বিস্ময়কর মিশ্রণ। সিরাজকে সরাবার ষড়যন্ত্রে তিনিই হলেন সকলের প্রেরণাস্থল।

ক্লাইভ প্রথমবার ভারতে এসে দক্ষিণ ভারতে বীরত্ব দিয়েই ইংরেজদের জন্য সাফল্যের জমি তৈরি করে ফিরে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে। আবার এলেন ১৭৫৬ সালে। তখন ইউরোপে চলছে সাত বছরের যুদ্ধ, যা ছিল ইউরোপে ছদ্মরূপে প্রটেস্ট্যান্ট ক্যাথলিকে যুদ্ধ তা-ই ভারতে হল ইংরেজে-ফরাসিতে যুদ্ধ এবং ইতিমধ্যে ক্লাইভ সম্ভবত বিলেত থেকে এই সত্য জেনে বুঝে এসেছিলেন যে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে মেকিয়াভেলির শিক্ষাও একটা বড় অস্ত্র, যে-কোনো ভাবে ফরাসিদেরকে তথা ফরাসিবন্ধু নবাবকে সরাতে হবে। চক্রান্তকারীদের কাছ থেকে তিনি নিশ্চয়ই এই কথাও জেনেছিলেন যে নবাব হবার পর থেকে সমস্ত যুদ্ধেই জিতে বাংলার মানুষের কাছে সিরাজ একজন বীররূপে সমাদৃত ও আলিনগরের চুক্তি করে দেশের শিল্প-বাণিজ্যকে বাঁচিয়ে সিরাজ একজন প্রজাবৎসল নবাবরূপে জনপ্রিয় এবং তাকে হঠাৎ সরালে। তার প্রতিক্রিয়া বাংলায় খারাপ হবে। সুতরাং যদি সিরাজের বিরুদ্ধে অপদার্থ মদ্যপ লম্পট ইত্যাদি বলে ব্যাপক প্রচার অভিযান চালানো যায় তাহলে দশচক্রে ভগবান ভূত হয়ে যাবে। কোনো অপদার্থ মদ্যপ লম্পটের পক্ষে যে মাত্র দশমাসে এতণ্ডা যুদ্ধ বিজয়, এতজন বিরোধীকে দমন করা সম্ভব নয় এই সহজ কথাটা প্রচারের ঝড়ে উড়ে গিয়েছিল বলে মনে হয়।
অবশেষে পঞ্চদশ-ষোড়শ শতাব্দীর ইউরোপে যে-ঘটনাতরঙ্গের জন্ম তা পরাক্রান্ত। জোয়ারের মতো গড়াতে গড়াতে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন এসে পৌঁছল গঙ্গার পলাশি কূলে। আফ্রিকার পশ্চিম কূল থেকে কালো মানুষদের দাস ব্যাবসার স্বর্ণযুগ। শুরু হয় ১৪৫০ খ্রি. নাগাদ, তখন থেকে ১৭৫৭ পর্যন্ত তিনশো বছরের বিশ্ব ইতিহাসের ঘটনাগুলি আমাদের সবার জানা, আমি শুধু সেই জানা ঘটনাগুলোর মধ্যে নিহিত যে যোগসূত্র তা সন্ধানের চেষ্টা করেছি। তিনশো-সাড়ে তিনশো বছর ধরে যে ঘটনাপ্রবাহ শক্তি অর্জন করেছে তার অব্যর্থ অমোঘগতি রোধ করার শক্তি বাংলার তরুণ নবাব সিরাজ-উদ-দৌল্লার ছিল না। যদি তিনি ২৩ জুন মীরজাফরের কথা শুনে সেদিনকার মতো যুদ্ধ-বিরতি গোষণা না করে যুদ্ধ চালিয়ে যেতেন তা হলে হয়তো সেদিনই তার। পরাজয় হত না, কিন্তু তা হলেও তাঁর পরাজয় অনিবার্যই ছিল, কারণ তাঁর প্রতিপক্ষ ছিল ইতিহাসের আধুনিক বিশ্ব-শক্তি, যে-শক্তির পণ্যনীতি স্বর্ণ নীতির পাশাপাশি একটা ধর্মনীতিও ছিল, এবং যে-শক্তির আক্রমণে আজও বিপর্যস্ত হচ্ছে বিশ্ব, নিকটের মধ্যে যার দৃষ্টান্ত হচ্ছে পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী এই মিথ্যা হেতু সৃষ্টি করে যাকে ধ্বংস করা হল সেই ইরাকের সাদ্দাম।
প্রাসঙ্গিক গ্রন্থপঞ্জী
J. H Parry, Europe and the wider World 1415-1715 (London, 1949) G.R. Elton, ed., The New Cambridge Modern History, vol.II (Cambridge, 1958) C.R. Boxer, The Portuguese Seaborne Empire (London, 1969) R.S. Kinsman, ed., The Darker Vision of the Renaissance (California, 1974) Kirkpatrick Sale, The Conquest of Paradise (New York, 1991) Noam Chomsky, Year 501 The Conquest Continues (Boston, 1993) J.N. Sarkar, ed., The History of Bengal, vol. II (Calcutta, 1948) R.C. Majumdar & V.G.Dighe, eds., The Maratha Supremacy (Bombay, 1977) Percival Spear, A History of India 2 (Penguin, 1965) Swami Vivekananda, Lectures from Colombo to Almora (Calcutta, 1992) রজতকান্ত রায়, পলাশীর চক্রান্ত ও সেকালের সমাজ (আনন্দ পাব.)