লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
একসময় বাংলা ছিল বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ। শুধু তাই নয় বৌদ্ধরা বাংলায় শাসন করেছিল চারশত বছর। বৌদ্ধ শাসনকাল ইতিহাসে পাল শাসনকাল নামে পরিচিত। বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ বৌদ্ধদেরই সৃষ্টি। অর্থাৎ বাংলা ভাষার জনক ছিল বৌদ্ধরা। বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে এখনো বৌদ্ধদের নানা নিদর্শন এখনো দেখতে পাওয়া যায়। বৌদ্ধদের বহু বিহার এখনো বাংলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যমান। অথচ আজ বাংলা সম্পূর্ণভাবে বৌদ্ধ শূন্য। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই বিপুল সংখ্যক বৌদ্ধ কোথায় হারিয়ে গেল?
৭৫০ খ্রিস্টাব্দে পাল বংশের প্রথম শাসক গোপালের মাধ্যমে বৌদ্ধদের শাসনের সূত্রপাত হয় এবং স্থায়ী হয় চারশত বছর পর্যন্ত। এক সময় দক্ষিণ ভারত থেকে আগত ব্রাহ্মণ্যধর্মের অনুসারী সেন রাজারা বাংলা আক্রমণ করেন এবং পাল রাজাদের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে বাংলার গদিতে আসীন হন। সেন রাজারা বৌদ্ধদের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েই ক্ষান্ত হননি তাঁরা রীতিমত বৌদ্ধ নির্যাতন শুরু করেন এবং বৌদ্ধ নিধনযজ্ঞ শুরু করেন। ফলে প্রাণ বাঁচানোর জন্য বৌদ্ধদের একটা অংশ নেপালে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেজন্য চর্যাপদ নেপাল থেকেই আবিস্কৃত হয়।
ষষ্ঠ শতকে যখন আরবে অন্ধকার যুগের যবনিকা বিদীর্ণ করে ইসলামের অভ্যুদয় হয়েছে তখন ব্রাহ্মণ্যবাদীদের হাতে বাংলায় চলছিল বৌদ্ধ নিধন যজ্ঞ। ৬০০ থেকে ৬৪৭ সাল পর্যন্ত বাংলার শৈব শাসক রাজা শশাঙ্ক বাংলা থেকে বৌদ্ধ ধর্মকে উৎখাত করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন এবং গৌতম বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত গয়ার বোধিবৃক্ষ গুলি তিনি সমূলে উৎপাটন করেন। এই বৃক্ষগুলিকে বৌদ্ধ সম্রাট অশোক অসীম শ্রদ্ধা করতেন সেই বৃক্ষগুলিকে শৈব শাসক শশাঙ্ক পত্র পল্লব মূলকাণ্ড সবকিছু জ্বালিয়ে ছাই করে দেন। পাটলিপুত্রে (বর্তমান পাটনা) গৌতম বুদ্ধের পদচিহ্ন শোভিত পবিত্র প্রস্তর ভেঙে দিয়েছিলেন তিনি রাজা শশাঙ্ক। বুশিনগরের বৌদ্ধ বিহার থেকে বৌদ্ধদের বিতাড়ন করেন। গয়ায় বৌদ্ধ মন্দিরে গৌতম বুদ্ধের যে মূর্তিটি স্থাপিত ছিল সেই মূর্তিটিকে অসম্মানের সাথে উৎপাটিত করে সেখানে শিবের মূর্তি স্থাপন করেন। অক্সফোর্ডের ‘Early History of India’ গ্রন্থের মধ্যে লেখা রয়েছে রাজা শশাঙ্ক বৌদ্ধ মঠগুলি ধ্বংস করে দিয়ে সেখান থেকে মঠ সন্নাসীদের (বৌদ্ধদের) বিতাড়িত করেছিলেন। গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান নেপালের পাদদেশ পর্যন্ত বৌদ্ধ নিধন কার্যক্রম চালিয়েছিলেন কট্টর হিন্দু রাজা শশাঙ্ক। ‘আর্য্যা মুখশ্রী মূলকল্প’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে শুধুমাত্র বৌদ্ধ ধর্ম নয় জৈন ধর্মের ওপরও উৎপীড়ন ও অত্যাচার সমানভাবে চালিয়েছিলেন তিনি।
বর্তমান যুগে বর্ণ সংস্কারে লালিত কিছু ব্যক্তি তাদের পূর্ব পুরুষদের কৃতকর্ম মুসলমানদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নিজেরা সাধু সাজার করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য মুসলিমরা নাকি বৌদ্ধ বিতাড়ন ঘটিয়েছিল বাংলার মাটি থেকে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়টি ১১০০ খৃস্টাব্দে বখতিয়ার খিলজি ধ্বংস করেছেন। ভারতীয় ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বখতিয়ারের এই আক্রমণের তারিখ দিয়েছে ১১০০ খৃস্টাব্দ। অথচ স্যার উলসলি হেগ বলছেন, বখতিয়ার উদন্তপুরী আক্রমণ করেছেন ১১৯৩ খৃস্টাব্দে আর স্যার যদুনাথ সরকার এই আক্রমণের সময়কাল বলছেন ১১৯৯ খৃস্টাব্দ। মুসলিম বিদ্বেষী হিন্দুভারত মুসলিম বিজেতাদের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার জন্য ইতিহাসের তথ্য বিকৃত করতেও কুণ্ঠিত নয়।
প্রকৃত ঘটনা হল একজন ব্রাহ্মণ সম্রাট হর্ষবর্ধনকে হত্যা করে এবং তারপর সেই ব্রাহ্মণ মন্ত্রী ক্ষমতা দখল করেন। এই সময়েই ব্রাহ্মণদের নেতৃত্বে একদল চরমপন্থী বৌদ্ধবিদ্বেষী ধর্মোন্মাদ হিন্দু নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস ও ভস্মীভূত করে। বখতিয়ার খিলজী বৌদ্ধদের ওপর কোন ধরনের নির্যাতন করেছেন এমন তথ্য ইতিহাসে নেই বরং বৌদ্ধদের আহ্বানে বঙ্গ বিজয়ের জন্য বখতিয়ার খিলজী সেনা অভিযান পরিচালনা করেন। এমনকি বাংলা বিজয়ের পর তিনি বৌদ্ধদের কাছ থেকে জিজিয়া কর আদায় থেকে বিরত থাকেন।
ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে বৌদ্ধদের উৎখাতের পর বহিরাগত আর্য অর্থাৎ ব্রাহ্মণ্যবাদীরা ভারতের মূল অধিবাসীদের উপর একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হলেও অপরাজেয় শক্তি হিসেবে মুসলমান শাসকদের উপস্থিতি তাদের স্বপ্নের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মুসলমান ও মুসলমান শাসকরা বহিরাগত ব্রাহ্মণ সৃষ্ট বর্ণবাদের শিকার এদেশের অপামর জনসাধারণকে মুক্তির নিঃশ্বাস দিয়েছিল।
ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুশক্তি তার ক্ষত বিক্ষত অস্তিত্ব কোন মতে টালটামাল অবস্থায় ধরে রাখলেও বৃহত্তর পরিসরে কোথাও ধরে রাখতে পারেনি। তাই শেষ পর্যন্ত বাংলাই ছিল ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তির শক্তিশালী ঘাঁটি। সব শেষে বাংলা থেকে যখন ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তির উৎখাত হয় তারপর তাদের প্রাধান্য বিস্তারে রাজনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ে।
একসময় এই বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিলেন। টানা চার শত বছর বৌদ্ধরা বাংলা শাসন করেছিলেন। বৌদ্ধ শাসনামল ‘পাল’ শাসনামল নামে পরিচিত ছিল। অর্থাৎ পুরো পাল যুগটাই ছিল বাংলার ইতিহাসে বৌদ্ধ যুগ। আজো বাংলাদেশে এবং পশ্চিম বঙ্গে বৌদ্ধ শাসনামলের নানা নিদর্শন দেখা যায়। বৌদ্ধদের পুরাতন অনেক বিহারের অস্তিত্ব আজও বাংলার মাটিতে বিদ্যমান রয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাই সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় কিছু ধর্মীয় গান রচনা করেছিলেন যেগুলো ‘চর্যাপদ’ নামে পরিচিত। চর্যাপদই হচ্ছে বাংলা ভাষায় রচিত প্রাচীনতম নিদর্শন।
তাহলে এখন প্রশ্নহচ্ছে এত সংখ্যক বৌদ্ধ ধর্মালম্বী মানুষজন কোথায় হারিয়ে গেল? ৭৫০ সালে পাল বংশের প্রথম রাজা গোপালের মাধ্যমে বৌদ্ধদের শাসনামল শুরু হয় এবং বৌদ্ধদের শাসন চারশ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। পরবর্তিতে দক্ষিণ ভারত থেকে আগত সেন বংশের লোকেরা পালদের ক্ষমতাচ্যুত করে। দক্ষিন ভারতীয় সেন শাসকেরা ক্ষমতায় এসে বৌদ্ধদের উপর অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে। সেনরা ছিল ব্রাহ্মণ। সেন রাজাদের অত্যাচারে বৌদ্ধদের একটা অংশ নেপালে গিয়ে আশ্রয় গ্রহন করেন। যে কারণে চর্যাপদ নেপাল থেকে আবিস্কৃত হয়েছিল।
শেষ পর্যন্ত প্রাণ বাঁচানোর জন্য বাধ্য হয়ে বৌদ্ধদের একটা অংশ হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে বর্ণ প্রথার সর্বনিম্নে স্থান পায়। বৌদ্ধদের আরেকটি অংশ দিল্লির মুসলিম শাসক কুতুবুদ্দিন আইবেকের শরণাপন্ন হয় এবং বৌদ্ধদের রক্ষায় বাংলায় মুসলিম সেনাবাহিনী পাঠানোর জন্য অনুরোধ করে। তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ঐতিহাসিক কুলাচার্য জ্ঞানানশ্রীর বিবরনী থেকে জানা যায় মগধ থেকে এক দল ভিক্ষু মির্জাপুরে গিয়ে বখতিয়ার খিলজীর সাথে দেখা করে তাকে মগধকে মুক্ত করতে অনুরোধ করেন। বৌদ্ধদের আবেদলে সাড়া দিয়ে বখতিয়ার খিলজি তার বাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসেন এবং সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষণ সেনকে যুদ্ধে পরাস্ত করেন। ফলে ১২০৪ সালে বাংলায় মুসলিম শাসনের সূত্রপাত হয়।
এই প্রসঙ্গে ডাঃ দীনেশচন্দ্র সেন লিখেছেন, “বৌদ্ধগণ এতটা উৎপীড়িত হইয়াছিল যে তাহারা মুসলমানদের পূর্বকৃত শত অত্যাচার ভুলিয়া বিজয়ীগণ কর্তৃক ব্রাহ্মণ দলন এবং মুসলমান কর্তৃক বঙ্গবিজয় ভগবানের দানস্বরূপ মনে করিয়াছিল। শূন্যপুরাণের নিরঞ্জনের উষ্মা নামক অধ্যায়ে দেখা যায় যে তাহারা অর্থাৎ বৌদ্ধরা মুসলমানদিগকে ভগবানের এবং নানা দেবদেবীর অবতার মনে করিয়া তাহাদের কর্তৃক ব্রাহ্মণ দলনে নিতান্ত আনন্দিত হইয়াছিল। …….ইতিহাসে কোথাও একথা নাই যে সেনরাজত্বের ধ্বংসের প্রাক্কালে মুসলমানদিগের সঙ্গে বাঙালি জাতির রীতিমত কোনো যুদ্ধবিগ্রহ হইয়াছে। পরন্তু দেখা যায় যে বঙ্গবিজয়ের পরে বিশেষ করিয়া উত্তর এবং পূর্বাঞ্চলে সহস্র সহস্র বৌদ্ধ ও নিম্নশ্রেণীর হিন্দু নব ব্রাহ্মণদিগের ঘোর অত্যাচার সহ্য করিতে না পারিয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহণপূর্বক স্বস্তির নিশ্বাস ফেলিয়াছে।” [ডঃ দীনেশ চন্দ্র সেন, বৃহৎ বঙ্গ, পৃষ্ঠা-৫২৮ থেকে সংগ্রহীত।]
মুসলিম শাসকদের উদারতা, বৌদ্ধদের প্রতি মুসলিমদের ভালো ব্যবহারের ফলে দলে দলে বৌদ্ধরা ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় নিতে থাকে। মুসলিম শাসকেরা বৌদ্ধদের প্রতি এতটাই উদার ব্যবহার করেছিলেন ফলে পাইকারী হারে বৌদ্ধরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকে। পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী লিখেছেন, ‘বাংলার অর্ধেক বৌদ্ধ মুসলমান হইয়া গেলো।’ [হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, বৌদ্ধধর্ম, পৃষ্ঠা ১৩১]
তবে বৌদ্ধ থেকে মুসলমান হওয়ার এই প্রক্রিয়াটি রাতারাতি সম্পন্ন হয়নি রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিকভাবে বৌদ্ধ ও মুসলিম সংমিশ্রনের ফলে বৌদ্ধরা ধীরে ধীরে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকেন।
বখতিয়ার খিলজীর বাংলা আক্রমণের আগেও নির্যাতিত বৌদ্ধদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন বাংলার মুসলিমরা এবং তাঁদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করেন। ব্রাহ্মণ্যবাদীদের অত্যাচার থেকে নিস্কৃতি পাবার জন্য বৌদ্ধরা বখতিয়ার খিলজি এবং তার বাহিনীকে সাদরে বরণ করে নেন। স্থানীয় বৌদ্ধদের সমর্থন করেছিলেন বলেই মুসলিমরা এত সহজে বাংলা বিজয় করতে পেরেছিলেন। বৌদ্ধদের দুর্দিনে মুসলিমরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ফলে বৌদ্ধরা মুসলিমদের সংস্পর্শে আসতে থাকেন এবং ইসলাম দ্বারা অনুপ্রানিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকেন। হিন্দু ধর্ম থেকেও অনেক নিম্ন বর্ণের হিন্দু বর্ণ বৈষম্যের কারণে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকেন।
বৌদ্ধরা তাঁদের ধর্মের রীতি পালনের জন্য নেড়া হতেন সেজন্য তাঁদের কটাক্ষ করে ‘নেড়ে’ বলা হত। এই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ইসলামের ধর্মান্তরিত হলে সেইসব ধর্মান্তরিত বৌদ্ধদের সাথে সাথে মুসলিমদেরকেও ‘নেড়ে’ বলা হতে থাকে। এখনও কিছু উগ্র সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন সংকীর্ণমনা কিছু লোক মুসলমানদের ‘নেড়ে’ বলে কটাক্ষ করে। যেহেতু তারা বৌদ্ধদের একসময় ‘নেড়ে’ বলে কটাক্ষ করত। সেই পরম্পরা তারা মুসলমানদের মধ্যে বজায় রেখেছে। কেননা সেইসব বৌদ্ধরাই ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছিল।
যেসব বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বাংলায় থেকে গিয়েছিলেন তাঁরা ভয়ে হিন্দুধর্ম গ্রহণ করে শূদ্র হিসেবে পরিচিত হতে থাকেন। কিছু বৌদ্ধ তৎকালীন দিল্লি মুসলিম শাসক কুতুবুদ্দিন আইবকের শরণাপন্ন হন। তাঁরা কুতুবুদ্দিন আইবককে অনুরোধ করেন যে বাংলাকে রক্ষা করার জন্য যেন তিনি সেনাবাহিনী পাঠান। তিব্বতের বুদ্ধ ঐতিহাসিক কুলাচার্য জ্ঞানানশ্রীর বিবরনী থেকে জানা মগধ থেকে এক দল ভিক্ষু মির্জাপুরে গিয়ে মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খিলজীর সাথে সাক্ষাত করেন এবং মগধকে মুক্ত করতে আবেদন করেন (Journal of the Varendra Research Society, Rajshahi, 1940)।
বৌদ্ধরা অনুরোধ করলে বখতিয়ার খিলজী তাঁর বাহিনী নিয়ে বাংলার দিকে অগ্রসর হন এবং সেন বংশের শেষ শাসক লক্ষণ সেনকে পরাস্ত করে বাংলায় মুসলিম শাসনের সূত্রপাত করেন। স্থানীয় বৌদ্ধদের সমর্থন না পেলে মুসলিমদের পক্ষে এত সহজে বাংলা বিজয় সম্ভব হতনা।
হিন্দুদের হাতে বৌদ্ধরা এতটাই নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছিল যে বখতিয়ার খিলজীর বাংলা বিজয়কে ভগবানের দান মনে বিজয়উল্লাসে মেতে উঠেছিল।
বাংলা একাডেমী পুরস্কার প্রাপ্ত সাহিত্যিক আবদুস সাত্তার লিখেন; ”ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খিলজীর আগমনে এদেশের সাধারণ মানুষ উৎফুল্ল হয়ে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। হোসেন শাহের বেলায়ও একই কথা।”
বাংলায় মুসলিম শাসন স্থাপনের পর নির্যাতিত বৌদ্ধরা দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকে। চরম দুর্দিনে বৌদ্ধরা মুসলিমদের কাছে সাহায্য পেয়েছিল এবং মুসলিমদের সংস্পর্শে আসার সুযোগও পেয়ে ছিল ফলে তারা অনুপ্রানিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে। হিন্দু ধর্ম থেকেও অনেকে বর্ণ বৈষম্যের শিকার হওয়ার কারণে ইসলামে প্রবেশ করতে থাকে।
ব্রিটিশ শাসনের সময় পশ্চিমা ওরিয়েন্টালিষ্ট ঐতিহাসিক ও পশ্চিমাদের পদলেহী কিছু কিছু ভারতীয় ঐতিহাসিক মিথ্যা প্রচার করতে থাকে যে মুসলমানদের সাথে বৌদ্ধদের দ্বন্দ্বের কারনে বাংলা থেকে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী হারিয়ে গেছে। প্রফেসর Johan Elverskog তাঁর Buddhism and Islam on the Silk Road বইয়ে ভারতে বৌদ্ধ মুসলিম সম্পর্ক নিয়ে প্রচলিত এই মিথ্যাচাকে খণ্ডন করেছেন। বৌদ্ধদের উপর মুসলিম সেনাপতি ও শাসকগন অত্যাচার করেছেন এই ধারণাকে তিনি নাকচ করে দেন। তিনি লিখেছেন, “…the stereotypical image of Muslims as hostile towards Buddhists has been constructed in the West, and “reaffirmed” with the Taliban’s destruction of the giant Buddha statues in Bamiyan in 2001” (pp. 1–4).
অর্থাৎ, বৌদ্ধদের সাথে মুসলমানদের শত্রুতার প্রচলিত ধারণা পশ্চিমে তৈরি হয় এবং এটা আরো প্রতিষ্ঠিত হয় তালেবান কর্তৃক ২০০১ সালে (আফগানিস্তানের বামিয়ানে) বিশাল বৌদ্ধমুর্তি ধ্বংসের মাধ্যমে।
বাংলার মুসলমানদের বড় অংশই বৌদ্ধ ধর্ম থেকে ইসলাম গ্রহণকারী হিসেবে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা যাচ্ছে (দেখুনঃ The Rise and Fall of Buddhism in South Asia, London, 2008)।
[সৌজন্যঃ পুবের কলম ৩০ জানুয়ারী ২০২২]
‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।