কয়েক বছর আগে সৌদি আরবের রিয়াদের কিছু লোকে পবিত্র কুরআনে ভ্রূনতত্ত্বের ব্যাপারে যেসব আয়াত আছে সেসব একত্রিত করেন। অতঃপর কুরআনের ভাষায় তারা বলেন, “কুরআন যা রলে তা এখানে। এটা কি সত্য?” পরিশেষে তারা কুরআনের উপদেশ গ্রহণ করলেনঃ “যে জানে তাকে জিজ্ঞাসা করো।” ঘটনাক্রমে এর জন্য তাঁরা টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্রূণতত্ত্বের অমুসলিম একজন প্রফেসারকে বেছে নেন। তাঁর নাম কিথ মুর। তিনি ভ্রূণতত্ত্বের উপর একাধিক বইয়ের লেখক এবং এ বিষয়ে একজন বিশ্ব বিশ্লেষক। তাঁরা তাঁকে রিয়াদে আমন্ত্রণ জানান এবং বলেন, “কুরআন আপনার বিষয় সম্বন্ধে যা বলছে তা হল এই। এটা কি সত্য? আপনি আমাদেরকে এ সম্পর্কে কি বলতে পারেন?”
যতদিন ডঃ মুর রিয়াদে ছিলেন ততদিন তারা অনুবাদসহ যতরকম সাহায্য সহযোগিতা দরকার তা সবই করেন। ডঃ মুর যা খুঁজে পান তাতে এতটাই বিস্মিত হন যে, তিনি তাঁর লেখা পাঠ্যবইগুলি পরিবর্তন করেন। সত্যি বলতে কি, তাঁর বইগুলির একটি “Before we are bron” (আমাদের জন্মের আগে)-এর দ্বিতীয় সংস্করণে ‘ভ্রূণতত্ত্বের ইতিহাস’ সংক্রান্ত অধ্যায়ে তিনি কিছু বিষয়ের সংযোজন করেন যা তিনি কুরআন পড়ে খুঁজে পান এবং যা বইয়ের প্রথম সংস্করণে ছিল না। সত্যিকার অর্থে এ ঘটনা স্পষ্টভাবে এটাই ব্যাখ্যা করে যে, আল্-কুরআন তার সময়ের চেয়ে অগ্রগামী এবং যারা কুরআনে বিশ্বাস করে তারা যা জানে অন্যরা তা জানে । এক টেলিভিশন উপস্থাপনায় এ ব্যাপারে সবিস্তারে-স্লাইড ইত্যাদি মুরের সাক্ষাৎকার প্রদর্শিত হয়েছিল। তিনি উল্লেখ করেন, মানুষের বৃদ্ধির কিছু কিছু ব্যাপারে (মাতৃগর্ভে) কুরআন যা বলছে মাত্র ত্রিশ বছর পূর্বেও তা জানা ছিল। তিনি বলেন-বিশেষ করে এ ব্যাপারে কুরআন একটি স্তরে মানুষকে বর্ণনা করেছে, “জোক সদৃশ্য জমাট বাঁধা রক্ত” হিসেবে। (সূরা আল হাজ্ব আয়াত-২২) এটা তার কাছে ছিল অভিনব, কিন্তু যখন তিনি তা পরোখ। করলেন তখন দেখলেন, তা সঠিক; অতঃপর তিনি এ তথ্য তার বইয়ে সংযোজন করে নিলেন। তিনি বলেন, “আমি এ ব্যাপারে কখনই চিন্তা করিনি”। তিনি প্রানীবিদ্যা বিভাগে চলে যান এবং একটি জোঁকের ছবি চান। যখন তিনি দেখেন যে, এটা দেখতে ঠিক মানব ভ্রূণের (প্রাথমিকস্তরের) মতই, তখন তিনি উভয় ছবিই তার লিখিত একটি পাঠ্য বইয়ে সংযোজন করেন।
ডাঃ কিথ মূর ক্লিনিক্যাল ভ্রুণতত্ত্বের উপরও একটি বই লিখেছেন এবং তিনি যখন টরেন্টোতে এই তথ্য হাজির করেন, তখন তাও সমগ্র কানাডার পত্র পত্রিকায় লেখা হয় এবং কোন কোন পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় স্থান পায়। তবে কিছু কিছু শিরোনাম ছিল এরকমঃ “পুরানো প্রার্থনার বইয়ে বিস্ময়কর বস্তুর সন্ধান।” এ উদাহরণ হতে স্পষ্টতঃই বুঝা যায় যে, ও লোকেরা ব্যাপারটি পুরোপুরি বুঝেনি। একটি পত্রিকার রিপোর্টার প্রফেসর মুরকে প্রশ্ন করে, “আপনি কি এটা মনে করেন না যে, আরবরা পূর্ব থেকেই এসব ব্যাপারে অবশ্যই জেনে থাকবে, জ্বনের বর্ণনা, এর আকৃতি এবং কিভাবে এটা পরিবর্তিত হয় এবং বৃদ্ধি লাভ করে? তারা বৈজ্ঞানিক না হতে পারে, কিন্তু হতে পারে তারা-পূর্বে নিজেদের উপর কোন অমার্জিত স্কুল পন্থায় কাটা ছেড়া চালিয়েছিল, লােকদের কেটেকুটে এসব জিনিস দেখেছিল?” প্রফেসর মুর তৎক্ষণাৎ তাকে বুঝিয়ে দেন যে, সে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে গেছে-ভ্রূণের সকল স্লাইড যা দেখানো হয়েছে এবং পর্দায় প্রদর্শিত হয়েছে। তার সবই অনুবীক্ষণ যন্ত্রের ভিতর হতে তোলা ছবি । তিনি তাকে আরে বললেন “চৌদ্দশত বছর পূর্বে যদি কেউ ভ্রুণতত্ব আবিস্কারের পদক্ষেপ নিয়ে। থাকে তাতে কিছু আসে যায় না। তারা এটাকে দেখতে পারেনি।”
ভ্রূণের আকৃতির ব্যাপারে আল্-কুরআনের বর্ণনা হচ্ছে, যখন তা থাকে। খুবই ক্ষুদ্র যাকে খালি চোখে দেখা যায় না; সুতরাং তা দেখতে অনুবীক্ষণ। যন্ত্রের প্রয়োজন হয়। যেহেতু এ রকম যন্ত্রপাতির অভিজ্ঞতা মাত্র দুশি’ বছরের কিঞ্চিৎ পূর্বের, তাই ডঃ মুর বিদ্রুপ করে তাকে বলেন, “সম্ভবত চৌদ্দশত বছর পূর্বে গোপনে কারো অনুবীক্ষণ যন্ত্র ছিল, সে এ ব্যাপারেই গবেষণা চালিয়েছিল এবং কোথাও সে কোন ভুল-ভ্রান্তি করেনি। তারপর সে কোনভাবে মুহাম্মদ (সঃ) কে তা শেখায় এবং তাকে এ তথ্যটি তার বইয়ে জুড়ে দেয়ার ব্যাপারে, রাজী করায়। তারপর সে তার যন্ত্রটি ধ্বংস করে ফেলে এবং চিরকালের জন্য এটা গোপন রাখে। এটা কি তুমি বিশ্বাস করবে? আসলেই এমন কোন কথা তোমার বিশ্বাস করা উচিত নয়, যতক্ষণ না তুমি কোন প্রমাণ পেশ করো। কারণ তোমার কথা খুবই হাস্যকর এবং একেবারেই অদ্ভুত।” অতঃপর তাকে প্রশ্ন করা হল, “কুরআনের এই তত্ত্ব ! কিভাবে আপনি ব্যাখ্যা করবেন?” ডাঃ কিথ মূর এর জবাব ছিল, “এ তত্ত্ব একমাত্র ঐশ্বরিকভাবেই নাজিল হতে পারে। এসব মানুষের জানার সাধ্যের বাইরে।”
সংগৃহীতঃ কম্পিউটার ও আল কুরআন,
লেখকঃ ডাঃ খন্দকার আব্দুল মান্নান (এমবিবিএস, ঢাকা)
বিগ ব্যাং তত্ত্বের বাস্তবতা এবং আল কুরআনে বিগ ব্যাং তত্ত্বের প্রমাণ