লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
রেযাখানী মুফ্তী গোলাম ছামদানী রেযবী লিখেছেন, ব্রিটিশ সরকার তাহাদের প্রিয় এজেন্ট থানবী সাহেবকে তৎকালীন মুদ্রায় মাসিক ছয়শত টাকা বেতন প্রদান করিত। যাহা বর্তমান মুদ্রায় প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। ধুরন্ধর সরকার অত্যন্ত চালাকীর সহিত টাকা পাঠাইত। যাহাতে সাধারণ মানুষ বুঝিতে না পারে।
সুতরাং দেওবন্দীদের নির্ভর যোগ্য সাক্ষী মৌলবী শাবীর আহমদ উসমানী জমিয়াতুল উলামা হিন্দের সদস্যদের সম্মুখে বলিয়াছেন দেখুন। হ্জরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) আমাদের ও আপনাদের সর্বসম্ম্ত বুজর্গ ছিলেন। তাহার সম্পর্কে কিছু লোকের বলিতে শুনা গিয়াছে যে, ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ হইতে তঁাহাকে মাসিক ছয়শত টাকা প্রদান করা হইত। তবে অত্যন্ত সুকৌশলে প্রদান করা হইত, স্বয়ং মাওলানা থানুবী সাহেব পর্যন্ত জানিতে পারিত না। (মুকালামাতুস সাদ রাইন, পৃষ্টা-৯)

এখানে আমার বক্তব্য হল, “মুকালামাতুস সাদরাইন” কিতাবটি হযরত মাদানী (রহঃ) বিরোধী পক্ষ মুসলিম লীগের সক্রিয় কর্মী তাহের সাহেবের লেখা। তিনি কংগ্রেস পন্থী উলামাদিগকে হেয় এবং অপ্দ করবার জন্য এই অপপ্রচার মূলক বইটি লিখেছিলেন। বইটি প্রকাশিত হবার পরেই মাদানী (রহঃ) “কাশফে হাকীকাত” নামক কিতাব লিখে তার প্রতিবাদ করেন; যা ১৯৪৬ সালে দিল্লী ওয়ার্কস প্রিন্টিং প্রেস থেকে মুদ্রিত হয়। তাতে তিনি লিখেছিলেন, “আমার সঙ্গে শাব্বীর উসমানী সাহেবের আলোচনার সময় তাহের সাহেব উপস্থিত ছিলেন না। শোনাশুনি কথার উপর ভিত্তি করে সেই পুস্তক লিখেছেন।
তাতে আমার এবং আমার সাথীদের এবং উসমানী সাহেবের বক্তব্য হিসাবে যা প্রচারিত হয়েছে তা মিথ্যা। উসমানী সাহেবের সমর্থনের সাক্ষর ও ঐ বইয়ে নাই।” (কাশফে হাকীকাত, ৮৯ পৃষ্ঠা, সংক্ষেপে)
উসমানী সাহেবের পক্ষ থেকে এর কোন প্রতিবাদ করা হয় নাই। অতএব “মুকালামাতুস সাদরাইন” থেকে প্রমান পেশ করা একমাত্র চরম মিথ্যাবাদী রেযাখানী লা মাজহাবী জামাআতের পক্ষেই শোভা পায়!
তর্কের খাতিরে যদি মেনে নেওয়া হয় তবুও আলোচ্য কিতাবের উক্ত উদ্ধৃতির পুর্ব বাক্যে আছে, “সাধারণ নিয়ম হল এই যে, যখন কোন ব্যাক্তি কোন রাজনৈতিক দলের অথবা কোন আন্দোলনের বিরোধী হন, তখ্ন তার সম্পর্কে এই ধরনের কথা বার্তা প্রচার করা হয়। দেখুন হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী সাহেব..….…(ঐ, পৃষ্ঠা-৯) জমিয়ত উলামা হিন্দ ছিল কংগ্রেসের সমর্থক । হযরত থানবী ও উসমানী সাহেব ছিলেন কংগ্রেস বিরোধী। (দ্রঃ ছাম দানী পত্রিকা, ৪-৬ সংখ্যা, ৪২ পৃষ্ঠা)
উসমানী সাহেবের কিছু চরমপন্থী অনুসারী অপবাদ দিয়েছিল যে, জমিজত নেতারা কংগ্রেস থেকে টাকা পায়। অনুযোগ সহকারে তারা এটা উসমানী সাহেবের নিকট পেশ করেছিলেন। তার উত্তরে তিনি ঐ কথা বলেছিলেন। এর দ্বারা থানবীর টাকা পাওয়া কোন মতেই প্রমানিত হয়না, বরং উসমানী সাহেব সেটাকে বিরোধীদের অপপ্রচার বলছেন।
পুর্ব বাক্যটিই তা চুড়ান্তভাবে প্রমান করে। সেই জন্যই ছামদানী গ্রুপ তা ‘মাতৃদুগ্ধ’ মনে করে হজম করে নিয়েছে। তাদের রেফারেন্সে যারা আস্থা রাখবেন, তারা কত খানি বিভ্রান্ত হবেন বুঝে নিন!
হযরত থানবী (রহঃ) এর জীবদ্দশায় “আশরাফুস সাওয়ানেহ” নামে তাঁর বৃহৎ আকারের জীবনী গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। তার তৃতীয় খন্ডের ১৬৫ পৃষ্ঠায় তাঁর মাসিক ‘আন নুর’ পত্রিকার ১৩৩৯ হিজরী সনের জামাদাল উখরা সংখ্যা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে লেখা আছে যে, “আমি সরকারের পক্ষ থেকে ভাতা অথবা বেতন পাই, এগুলি সেই সব অপপ্রচারের অন্তর্ভুক্ত যার ব্যাপারে আমি বিরোধীদের সঙ্গে ‘মোবাহালা’ পর্যন্ত করতে পস্তুত।
১৩৩৯ হিজরী সনে হযরত থানবী (রহঃ) এই চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন এবং ১৩৬২ হিজরী সনের রজব মাসের ১৬ তারিখে ইন্তেকাল করেছেন। এই ২৩ বছরের মধ্যে তাঁর চ্যালেঞ গ্রহণ করার হিম্মৎ রেযাখানী বেরেলবীদের হয় নাই। তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নেবার পর একটি অনির্ভর যোগ্য কিতাবের রেফারেন্স দিয়ে এই অপপ্রচার চালাতে আরম্ভ করেছে। এই হল রেযাখানী সততার নমূনা এবং তাদের হিম্মৎ ও মুরোদের দৌড়!
মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) ব্রিটিশদের নিকট বেতন পেতেন এটা প্রমানিত নয় তবে রেযাখানী ইমাম মাওলানা আহমদ রেযা খান যে ব্রিটিশদের শীর্ষ স্থানীয় অনুগত ছিলেন এটা ঐতিহাসিক ভাবে প্রমানিত।
যেমন ব্রিটিশ ঐতিহাসিক ফ্রান্সিস রাম্বস এই কথা স্বীকার করে লিখেছেন,
“আহমদ রেযা খান বেরেলবী ইংরেজ সরকারের হিতাকাংখী ছিলেন। তিনি প্রথ্ম বিশ্ব যুদ্ধে ইংরেজদের পক্ষ অবলম্বন করেন। ঠিক সেই রকম ১৯২১ সালের খিলাফত আন্দোলনেও ইংরেজ সরকারের পক্ষপাতি ছিলেন। তিনি স্বয়ং বেরেলী শহরে উলামা কনফারেন্স ডাকেন যা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিরোধী ছিল।” (Indian Musalmans, page-443, Cambridge University-1974)
রেযাখানীরা অনেকে নিজের নামের সাথে ‘রেযবী’ পদবী লাগিয়ে থাকেন। যেমন মুফতী গোলাম ছামদানী রেযবী নিজের নামের সাথে ‘রেযবী’ টাইটেল লাগিয়েছেন । আর এই ‘রেযবী’ শব্দের বাংলা অর্থ ‘ফরহঙ্গ-ই-র ব্বানী’ নাম্ক উর্দূ-বাংলা অভিধানে লেখা আছে, ‘ভারতের বেরলবীর ইংরেজ পদলেহনকারী; আহমদ রেযা খানের ধ্বজাধারী। বেরেলবী। রেযবী।” (পৃষ্ঠা-৪৪৩)
তাহলে আপনারাই বিচার করে বলুন ব্রিটিশের পদলেহী কারা? দেওবন্দীরা না রেযাখানী দানবেরা?
নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা




