আমরা পূর্বেই ভারতের প্রাচীন যুগের ধর্ম, ইতিহাস ও বিবর্তনের বিষয় সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ আলােচনা করেছি, এখন ভারতে মুসলমান সম্প্রদায়ের আগমনের পূর্ব পর্যন্ত রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু আলােচনা করব। প্রয়ােজনের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান ইতিহাস থেকে উদ্ধৃতির জন্য আমরা ‘ভারত জনের ইতিহাস’ টিকে বেছে নিলাম। তার অনেকগুলাে কারণের মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে এই যে, এটি ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষের মস্তিস্বরূপ পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা পর্ষদের সিলেবাস অনুযায়ী নবম, দশম ও একাদশ শ্রেণীর অর্থাৎ স্কুল ও কলেজের উপযুক্ত ইতিহাস। যেহেতু একাদশ শ্রেণী পূর্বে কলেজেই পড়তে হত। মাঝে স্কুলেই একাদশ শ্রেণী চালু হয়েছিল, পুনরায় তা কলেজেই চালু হয়েছে। ইতিহাসটি বেছে নেওয়ার আরও একটি কারণ হচ্ছে এই যে, ইতিহাসটির লেখক যে একজন সুবিখ্যাত ব্যক্তি তা তার বইয়ে প্রমাণ পাওয়া গেছে। যেমন-
‘বিনয় ঘােষ’
‘এমএ, রকফেলার রিসার্চ ফেলাে ও বিদ্যাসাগর লেকচারার (১৯৫৬-৫৭), কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়; মেম্বার, হিস্টোরিকাল রেকর্ডস, কমিশন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার; ‘পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি’, ‘বিদ্যাসাগর ও বাঙালি সমাজ’, ‘সাময়িক পত্রে বাংলার সমাজ চিত্র’ প্রভৃতি প্রধান ইতিহাস গ্রন্থের লেখক; সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাস রচনার জন্য রাজ্য সরকারের শ্রেষ্ঠ সম্মান রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কারপ্রাপ্ত।
বর্তমানে যাঁদের কালি-কলমের উপর ভারতনির্ভর করছে সেই শিক্ষিত পুরুষ ও নারীর বর্তমান স্বরূপও উপলব্ধি করতে পারা যাবে এই ইতিহাসটির দ্বারা। কারণ, হাঁড়ির ভাত একটা টিপলেই বােঝা যায় শক্ত না নরম। এবার আসুন আলােচনা শুরু করা যাক।
“বেদের বিরুদ্ধে বিরাট আক্রমণ শুরু হয়েছিল একদল লােকের দ্বারা, তাদের বলা হতাে ‘লােকায়ত বা চার্বাক’। বৌদ্ধ গ্রন্থে এদের নাম আছে, মহভািরতে এদের নাম ‘হেতুবাদী’। তারা আসলে নাস্তিক। তারা বলতেন পরকাল, আত্মা ইত্যাদি বড় বড় কথা বেদে আছে। কারণ ভণ্ড, ধূর্ত ও নিশাচর এই তিন শ্রেণীর লােকই বেদ সৃষ্টি করেছে, ভগবান নয়। বেদের সার কথা হলাে পশুবলি। যজ্ঞের নিহত জীব নাকি স্বর্গে যায়। চার্বাকরা বলেন, যদি তাই হয় তাহলে যজ্ঞকর্তা বা যযমান নিজের পিতাকে হত্যা করে সােজা স্বর্গে পাঠান না কেন? ইত্যাদি। (ভারত জনের ইতিহাস দ্রষ্টব্য)
ঐ ঝগড়া বাড়তে বাড়তে বেদ ভক্তদেব সঙ্গে বৌদ্ধদের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঝাঁপ দিতে হয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা যে নাস্তিক তা চার্বাকদের উক্তিতেই প্রমাণ হয়েছে। অতএব বৌদ্ধরা মূর্তিপূজা যজ্ঞ বলি বা ধর্মাচার নিষিদ্ধ করে প্রচার করেছিল পরকাল নেই, জীব হত্যা পাপ প্রভৃতি। মােটকথা হিন্দুধর্ম বা বৈদিকধর্মের বিপরীত ধর্ম বৌদ্ধধর্মে জাতি ভেদ ছিল না। (ভারত জনের ইতিহাস)
বৌদ্ধধর্মের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ধর্ম সংগঠন ও সন্ন্যাস সংঘ। হিন্দুধর্মের বিধান হচ্ছে জীবনে প্রথম দিকে ব্রহ্মচারী, তারপর গৃহী বা সংসারী, তারপর বানপ্রস্থ আর বার্ধক্যে বা বয়সের শেষাংশে সন্ন্যাস। আর হিন্দু সন্ন্যাস সংবিধানে সংঘ সৃষ্টির কোন নিয়ম নেই। কিন্তু বৌদ্ধধর্মে সংঘ সৃষ্টি একটি বিশেষ চিত্তাকর্ষক মূল্যবান ব্যবস্থা। কিন্তু পরে দেখা যায় শঙ্কর হতে শ্রী চৈতন্য, শ্রী রামকৃষ্ণ পর্যন্ত প্রত্যেকেই বৌদ্ধের ঐ নীতি গ্রহণ করেছেন। যদি আজও ভারতে হিন্দু জাতির মধ্য হতে সংঘগুলাে বাতিল করা হয় তাহলে জাতি সামাজিক শৃঙ্খলা ও উন্নতি হতে বহু দূরে ছিটকে পড়বে। (ভারত জনের ইতিহাস)
ঐতিহাসিক ডিনসেন্ট স্মিথ বলেছেন, “The Sanga of monks developed in to a hightly organized, wealthy and powerful fraternity…
যাহােক, হিন্দুধর্মের সাথে বৌদ্ধধর্মের লড়াই চলতে লাগল, পরস্পর পরস্পরকে গ্রাস করার চেষ্টা করতে লাগলাে। ছল, বল, কলা, কৌশল প্রভৃতি অন্ত্রেরই প্রয়ােগ হতে লাগল। একে অপরের প্রতি ঐ লড়াইটিও ছিল নিঃসন্দেহে সাম্প্রদায়িক লড়াই। অনেক উত্থান-পতনের পর অনুন্নত হিন্দুধর্ম বৌদ্ধধর্ম হতে অনেক শিক্ষা গ্রহণ করে উন্নত হয়েছিল আর বৌদ্ধরা নানা চক্রান্তের শিকার হয়ে বৌদ্ধদলকে দুই ভাগে ভাগ করেছিল। প্রাচীনপন্থীরা হীনযান আর আধুনিকরা হলাে ‘মহাযান’। মহাযান নতুন দল হিন্দু বা বৈদিক সম্প্রদায়ের সমর্থন বা প্রয়ােজনীয় প্রশংসা পেয়ে মূর্তিপূজা শুরু করে। ফলে বৌদ্ধধর্মের ভিত্তি ওখানেই নড়ে যায়, পরে হিন্দুদের অত্যাচার ও অনাচারে ভারতে সৃষ্ট বিশাল বৌদ্ধ সমাজ হিন্দু শক্তির কাছে পরাজয় স্বীকার করে ভারত হতে বিতাড়িত ও বিদূরিত হয়েছে, শুধু পড়ে আছে বুদ্ধদেবের ছােট-বড় গােটা কতক বুদ্ধমূর্তি। ব্রহ্মদেশ, জাপান ও সিংহল প্রভৃতি বহির্ভারত বা অপর রাষ্ট্রে বৌদ্ধধর্ম বেঁচে থাকলেও ভারতবর্ষ হতে বৌদ্ধদলকে নিষ্ঠুরভাবে বিদায় হতে হয়েছে। ভারতজনের ইতিহাস-এ ১০০ পৃষ্ঠায় আছে- “হিন্দুধর্মের কাছে নতি স্বীকার করিয়া তাকে নিজের শ্রেষ্ঠ নীতি ও গুণগুলি দান করিয়া বৌদ্ধধর্ম ভারতবর্ষ হইতে বিদায় লইয়াছে।”
এখানে মনে রাখার কথা, কোন জাতি তার মৌলনীতির পরিবর্তন সাধন করে অপর জাতির সংস্কৃতি ও সভ্যতার কাছে নতি স্বীকার করে তাহলে তাকে স্বাতন্ত্রবিহীন হয়ে ধ্বংসের অতল তলে তলিয়ে যেতে হয়। এ কথা অব্যর্থ সত্য।
যাহােক, শিব ঠাকুরের শৈব ভক্ত শ্রেণী বা প্রাচীন হিন্দু সম্প্রদায় যে বৌদ্ধদের ওপর বেপরােয়া অত্যাচার করেছিল তা বহু ইতিহাসে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ আছে। শ্রী রমেশ মজমুদারের ইতিহাস গ্রন্থেও পাওয়া যায় হিন্দু রাজা শশাঙ্ক বিদ্বেষবশে বুদ্ধদেবের স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র “বােধিদ্রুম বৃক্ষ” যা গয়াতে ছিল তা সমূলে উৎপাটন করেন এবং পাটলিপুত্রে বৌদ্ধদের ভক্তির বস্তু বৃদ্ধদেবের পদচিহ্ন সম্বলিক পবিত্র পাথরটিকে গঙ্গায় ফেলে দিয়েছিলেন। তাছাড়া কুশীনগরের একটি বৌদ্ধ বিহার হতে বৌদ্ধদের তাড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং গয়ার বৌদ্ধ মন্দিরে বুদ্ধদেবের মূর্তিটি অসম্মানের সঙ্গে নিক্ষেপ করেছিলেন এবং সেই স্থানে স্থাপন করেন শিবমূর্তি। ‘আর্য মন্ধুশ্রী মূলকল্প’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, শুধু বৌদ্ধধর্মে। নয়, জৈনধর্মের ওপরও উৎপীড়ন এবং অত্যাচার তিনি প্রায় সমানভাবেই করে গেছেন।
জৈনধর্ম ও বৌদ্ধধর্মে অনেক মিল আছে। উভয় ধর্মেই জীব হত্যা নিষেধ এবং পরকাল ও ঈশ্বর স্রষ্টা সম্বন্ধে তাদের ধারণা নেতিবাচক। এবার প্রশ্ন হচ্ছে বৌদ্ধধর্ম ধ্বংস হল, আর মহাবীরের জৈনধর্ম টিম টিম করে বেঁচে রইল কেন? তার কারণ হচ্ছে এই যে, জৈন বেচারারা হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না। করে চুপচাপ তাদের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে ফেলেছে, ফলে তাদের জৈনতা। মৌনতায় পরিণত হয়ে আসল সত্তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মুছে গেছে। তারা ব্যবসায়ে নতুন খাতা, গণেশ ঠাকুরকে সম্মান প্রদর্শন, দুর্গা, কালী, সরস্বতী প্রভৃতি প্রত্যেক পূজা পার্বণে খুশি হয়ে অংশগ্রহণ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে তারা মূর্তি পূজারীর ন্যায় যে অবস্থায় এসে পৌছেছিল তা তাদের মুছে যাওয়ারই পূর্বাভাষ। প্রমাণস্বরূপ ভারতজনের ইতিহাসে পাওয়া যায় যে, “হিন্দু মতে যদিও জৈন ও বুদ্ধ উভয়ে নাস্তিক তাহলেও হিন্দুধর্মের সহিত উভয়ের সগ্রাম তীব্র ও ব্যাপক হয় নাই।… হিন্দুদের বর্ণাশ্রম হিন্দু দেবদেবী এবং হিন্দু আচার নিয়ম তারা অনেকটা মেনে নিয়েছে ও রক্ষা করেছেন।”
তারপর মৌর্য সাম্রাজ্য, শিশু নাগবংশ এবং নন্দবংশের উল্লেখ ইতিহাসে আছে। কিন্তু সাল তারিখ ও ঐতিহাসিক তথ্যের অস্পষ্টতা হেতু মূল উপাদানের অভাবে বহু মতভেদে পরিপূর্ণ হয়ে আছে ঐ অধ্যায়। এরপর খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ বছর আগে পারস্য সম্রাট তার সৈন্য ভারতের দিকে চালনা করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩৬ সালে গ্রীসদেশের ম্যাসিডন রাজ্যের রাজা হন আলেকজাণ্ডার। তিনি পারস্য আক্রমণ করে সেখানকার রাজাকে পরাস্ত করেন। রাজার মৃত্যুর পর সমগ্র পারস্য দেশ আলেকজাণ্ডারের কবলিত হয়। এরপর খ্রিস্টপূর্ব ২৭ সালে বীরবিক্রমে আক্রমণ করে সিন্ধু নদীর পার্বত্য এলাকার লােকদের হাজার হাজার আহত-নিহত করে আলেকজাণ্ডার ভারতে প্রবেশ করলেন। ভারতের পুরু নামীয় রাজার সাহসের পরিচয়ে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে তাঁর রাজ্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। নিশ্চয়ই উভয়ের সৎসাহস ও উদারতা প্রশংসার দাবি রাখে। ঐ সময়ে গ্রীক সভ্যতার সঙ্গে ভারতের যােগাযােগ হয় এবং সেখানকার ঠাকুর-দেবতার মূর্তির নমুনাগুলােও ক্রমে ভারতে আমদানি করা হয়। শ্রী বিনয় ঘােষের ইতিহাসে ১২৩ পৃষ্ঠায় আমাদের এই মতের সমর্থন আছে। যথা “ভারতের গন্ধার শিল্প ও ভাস্কর্য শিল্প গ্রীক শিল্পের কাছে অত্যধিক ঋণী। গ্রীক দেবতাদের মডেলে ভারতের দেবদেবীর মূর্তি গঠিত হয়েছে।”
তাহলে এটা লক্ষণীয় বিষয় যে, আর্য, মুসলমান, গ্রীক, ইরানি, তুরানি সবই বিদেশী। এমনকি ঠাকুর দেবতার মূর্তিগুলাে পর্যন্ত বাইরের প্রভাব বহন করে।
তারপর এল মৌর্য সাম্রাজ্য বা চন্দ্রগুপ্তের ভূমিকা। চন্দ্রগুপ্ত সিংহাসনে আরােহণ করে প্রজাদের শেয়াল-কুকুরের মত অর্থাৎ পশুর মত মনে করে দুর্ব্যবহার করেন এবং হত্যাকাণ্ড করে প্রজাদের রক্তে হাত রাঙা করেন। প্রজাদের তিনি ক্রীতদাস শ্রেণীতে পরিণত করেছিলেন। (রােমান ঐতিহাসিকদের লেখা দ্রষ্টব্য)। তিনি নাকি জৈন ধর্মে দীক্ষা নিয়ে শেষে সিংহাসন ছেড়ে উপবাস ব্রত পালন করতে করতে মৃত্যু মুখে পতিত হন। তাঁর মৃত্যুর পর পুত্র বিন্দুসার পিতার রাজ্যের সংরক্ষণ ও আরও পরিবর্ধন করেন।
বিন্দুসারের মৃত্যুর পর তার পুত্র অশোক মগধের সিংহাসনে বসলেন। ইংরেজ মহাশয়ের কৃপায় ‘The great’ শব্দের অনুবাদে আমরা তাঁকে মহমতি বলে ডেকে থাকি। তিনি যৌবনে বন্ধুহীন ও অনুন্নত চরিত্রের মানুষ ছিলেন। নিষ্ঠুরতার পরিচয়ে তিনি অনেককে টপকে গেছিলেন। সিংহাসন দখল নিয়ে প্রত্যেক ভাইকে তিনি নৃশংসভাবে হত্যা করে রক্তস্নাত সিংহাসনে সমাসীন হলেন। তিনি জীবনে প্রথম যুদ্ধ করলেন কলিঙ্গকে কেন্দ্র করে। অবশ্য তিনি জয়ীও হয়েছিলেন। সেই প্রথম যুদ্ধই তার জীবনের শেষ যুদ্ধ। কারণ সহস্র সহস্র নয়, লক্ষ লক্ষ প্রজার মুণ্ডহীন দেহ চারদিকে ছড়িয়ে থাকা, কাটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, প্রাণহীন অজস্র দেহের পাশে কুকুরের মাংস নিয়ে মারামারি, শকুনের কর্কশ স্বর তাকে দিয়েছিল চমকে। আর তিনি যুদ্ধের পথে চলতে চাইলেন না। থমকে দাঁড়িয়ে গেলেন। সকলকে অভয় দিয়ে পালিয়ে যাওয়া প্রজাদের ফিরিয়ে আনলেন। প্রজাদের জন্য রাজকোষের দ্বার খুলে দিলেন। নিজে বৌদ্ধধর্মের আশ্রয় গ্রহণ করলেন। শুধু অনুশােচনা আর পূর্ব কর্ম তাকে বারবার আঘাত করতে লাগলাে। এবার দয়ার প্রতীক বৌদ্ধধর্মকে রাজধর্ম করে ভারতকে বৌদ্ধ রাষ্ট্র বলে। ঘােষণা করলেন। প্রচুর শিলালিপিতে সারা রাজ্যে বুদ্ধদেবের বাণী খােদাই করলেন। সেই সঙ্গে নিজের জীবনের অপরাধ অনুশােচনার চিহ্নস্বরূপ পূর্বকাহিনীগুলােও লিপিবদ্ধ করতে তাঁর নির্ভেজাল সারল্যে ও সাধুতায় বাধেনি। অশােকের আদর্শ নিঃসন্দেহে প্রণিধানযােগ্য সারা বিশ্বের লােকের জন্য। তবুও বলব, এইসব সিংহাসনকেন্দ্রিক রক্তাক্ত ইতিহাস প্রত্যেক পাঠক-পাঠিকাকে মুসলমান রাজাদের বিশেষত ঔরঙ্গজেবের ইতিহাস পড়ার সময় অবশ্য মনে রাখা উচিত।
প্রায় খ্রিঃ পূঃ ২৩২ সালে আশােকের মৃত্যু হয়। কিন্তু তার সন্তান ও উত্তরাধিকারীগণ ছিলেন অযােগ্য, ফলে সিংহাসনকে কেন্দ্র করে বিবাদ শুরু হয়। মৌর্য বংশের শেষ রাজা বৃহদ্রথকে ব্রাহ্মণ সেনাপতি হত্যা করে নিজে সিংহাসনে। বসলেন এবং অশােকের স্মৃতি লােপ করে নতুন রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করলেন। মেগাস্থিনিসের বিবরণ মতে, ভারতের অনেক প্রশংসার উল্লেখ আছে, আবার দুর্নামও আছে তেমনি। যেমন-হিন্দু জাতির মধ্যে কোন দল বা শাসক ছিল না। আর রাজাগণ যে নারী নিয়েই অধিকাংশ সময় অপব্যয় করতেন তারও উল্লেখ আছে। রাজা লােক লস্কর নিয়ে শিকারে যাওয়ার সময় সুন্দরী নারী বেষ্টিত হয়ে যেতেন এবং উচ্চ মঞ্চ তৈরি করে রাজা সেখান হতে তীর নিক্ষেপ করতেন। সেখানে শুধু কয়েকজন সুন্দরীই রাজার সহযাত্রী হতেন।
ভারতের শাসকগণ কর আদায় করতেন যথাযথভাবে। ব্যবসাদারেরা। বিক্রয়লব্ধ অর্থের দশ ভাগের এক ভাগ কর হিসেবে দিতে বাধ্য থাকতেন। অনাদায়ে শাস্তি হতাে। এমনকি প্রাণদণ্ডও পর্যন্ত দেওয়া হতাে। এখানে ঔরঙ্গজেবের জিযূইয়া কর প্রসঙ্গ পড়ার সময় পাঠকবৃন্দকে এগুলাে না ভুলতে অনুরােধ করি।
পূর্বেই বলেছি, অশােকের পর তার সন্তানরা ছিল অযােগ্য। তাই তাদের অযােগ্যতার সুযােগ নিয়ে নতুন শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। বহু দিন হতে মৌর্য শক্তির সঙ্গে হিন্দু শক্তির ছােট-বড় লড়াই চলে আসছিল। অবশেষে শেষ রাজা বৃহদ্রথকে হত্যা করে ব্রাহ্মণ পুষ্যমিত্র খ্রিঃ পূঃ ১৮৭ সালে সুঙ্গ রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। পুষ্যমিত্রের মৃত্যুর পর তাঁর বংশধররা সিংহাসন আর ক্ষমতার লড়াই। করে অবশেষে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। তারপর রাজা দেবভূতির মন্ত্রী বসুদেব রাজাকে হত্যা করে কাবংশের প্রতিষ্ঠা করলেন। আবার তেলেগু ভাষী সাতবাহন বংশ প্রবল শক্তি দিয়ে কাৰবংশকে অস্ত্র বলেই একেবারে ধ্বংস করেন।
তারপরই শকদের আক্রমণ। আক্রমণের ফলে সাতবাহন বংশ কাহিল হয়ে পড়ে। কিন্তু শ্ৰীযজ্ঞ সাতকর্নির আমলে আবার সাতবাহন শক্তিশালী হয়ে উঠে।
আমাদের অনেকের ভুল ধারণা আছে যে, বুদ্ধদেব, মহাবীর প্রমুখ ধর্ম। প্রচারকগণের দলবল মৌর্য বংশ তথা উপরের আলােচিত রাজাগণ হিন্দু বা ব্রাহ্মণ বংশের লােক। শুধু ভারতে ইংরেজ আর মুসলমানরাই হচ্ছে অহিন্দু বা বিদেশী। এটা এক বিরাট ত্রুটি বা অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই নয় । বিনয় ঘােষ মহাশয়ের ইতিহাসে ১৬৮, ১৬৯ পাতায় আছে- “পূর্ব ভারতে মগধে শৈশু নাগ, নন্দ, মৌর্য রাজবংশের প্রতিষ্ঠা লাভের ফলে এসব বেদবিরােধী ধর্মমত যে রাজ পােষকতা লাভ করে তাতে বেশ কয়েক শতাব্দীর জন্য হিন্দুধর্মের প্রসার ও প্রতিষ্ঠার পথ অবরুদ্ধ হয়ে যায়। প্রকাশ্যে অবশ্য মৌর্য রাজারা হিন্দুধর্মের বিরােধিতা করেননি, চন্দ্রগুপ্ত হইতে অশােক কেই ব্রাহ্মণ বিদ্বেষী ছিলেন না। কিন্তু তাঁদের মত সম্রাট যে বেদবিরােধী ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন ইহাই যথেষ্ট।”
শক বংশে মহাহ্মত্রপ রুদ্রদামনই হচ্ছেন শেষ রাজা। ১৫০ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু হয়। তারপর ভারতের বাহির হতে কুশান নামে আর এক শক্তিশালী জাতির আবির্ভাব ঘটল। ইউচি নাম তাদেরই। কুশন বংশের শেষ রাজার নাম কনিষ্ক। আমরা কিন্তু একটা মজার জিনিস দেখতে পাই কনিষ্ক কুশান বংশীয় রাজা, মােটেই ‘শক’ বংশীয় নন অথচ ৭৮ খ্রিঃ হতে তিনি নতুন অব্দ শুরু করেছিলেন। কনিষ্কের এই অব্দ কনিষ্কাব্দ বা কুশানা নাম না দিয়ে নাম হয়েছে শকাব্দ। যদিও তিনি শক নন তবু আমাদের সাধের শখে তিনিও শকের মত চিহ্নিত।
এ ক্ষেত্রেও আমাদের অনেকেই মনে করে থাকেন তিনিও হিন্দু। অতএব দেখা যাচ্ছে মুসলমান প্রতিষ্ঠিত হিজরি সন গণনা করলে সম্মান যেতে পারে অথচ বিদেশী কুশান বংশকে মনে মনে হিন্দু ও স্বদেশী কল্পনা করে শকাব্দকে গ্রহণ করে ধন্য হলে ক্ষতি নেই। কনিষ্কও বৌদ্ধধর্মে শুধু বিশ্বাসী ছিলেন বললেই হবে না বরং অশােকের মত তিনিও তাঁর রাষ্ট্রে বৌদ্ধধর্মকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়েছিলেন এবং রাষ্ট্রের তরফ হতে বহু অর্থ ব্যয় করে যে বৌদ্ধধর্ম দু-নান্দু হয়ে পড়েছিল তাকে সবল করে তুলেছিলেন। এমনকি বৌদ্ধধর্মের উন্নতির জন্য কনিক যা করেছিলেন মহামতি সম্রাট অশােকও অতটা করতে পারেননি। বিনয় ঘােষের লেখায় আছে-
“অশােক বৌদ্ধধর্মের উন্নতি ও বিস্তারের জন্য যে কাজ করিয়াছিলেন কণিষ্ক তা আরও সুবিন্যস্তরূপে সম্পাদন করার চেষ্টা করেন।”
কনিষ্কের সময়ে চীনে সেই দেশীয় পণ্ডিতদের সহযােগিতায় বৌদ্ধধর্মের অনুবাদ করে অনেক লােককে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত করার ব্যবস্থা করেছিলেন। এমনিভাবে জাপানেও বৌদ্ধধর্মের প্রসার ঘটে।
অতঃপর আসে গুপ্ত যুগ। প্রথম রাজা চন্দ্রগুপ্ত। ইনি মৌর্য বংশীয় চন্দ্রগুপ্তের ন্যায় প্রতাপশালী ছিলেন না। ৩৭৮ খৃিঃ ইনি মারা যান। ইনিও অশ্বমেধ যজ্ঞ করেন এবং চারদিকের রাজা-প্রজার মধ্যে সন্ত্রাসের সৃষ্টি করেছিলেন। তার উপাধি হয়েছিল সর্বোরাজোচ্ছেতা’ অর্থাৎ সকল রাজ্যের উচ্ছেদ সাধনকারী। তারপর আসেন দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য। তারপর এলেন একে একে কুমারগুপ্ত, স্কন্ধগুপ্ত প্রমুখ। সর্বশেষে এলেন রাজবুধগুপ্ত।
এরপর ভারতের বাহির হতে শুরু হল হুন জাতির আক্রমণ। সারা দেশে মারধর, লুট, অগ্নিসংযােগ, হত্যাকাণ্ড প্রভৃতিতে এক বিভীষিকাময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল। তারপর ঐ জাতি ভারতে বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন করে ভারতীয়অভারতীয় দুই জাতির সংমিশ্রণে রাজপুত বংশের সাথে মিশে যায়।
গুপ্ত যুগেই শিব পূজার প্রবর্তন হয়। “গুপ্ত যুগে শৈব ধর্মেরও বিকাশ হইয়াছিল।“ (ভারত জনের ইতিহাস, ২০৭ পৃঃ) গুপ্ত যুগে একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে। হিন্দুধর্মের চিরদিনের বিষ্ণু হঠাৎ কৃষ্ণতে পরিণত হয়। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর এই তিন ভগবানের মধ্যে বিষ্ণু কৃষ্ণ হয়ে সমাজে প্রচারিত হতে থাকেন। (ভারতজনের ইতিহাস দ্রঃ ২০৮ পৃঃ)।
এদিকে হুন জাতির প্রবল আক্রমণে হিন্দু গুপ্ত বংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে। ঐ সময় রাজা শশাঙ্ক প্রবল প্রতিভাশালী হয়ে আত্মপ্রকাশ করেন এবং বৌদ্ধধর্মের ওপর নির্মম ব্যবহার করেন। তারপর দিল্লির নিকটে ধানেশ্বরে পুষ্যভূতি রাজার আর্বিভাব হয়।
তারপর রাজনীতির মঞ্চে আসেন রাজা হর্ষবর্ধন। তাঁর ভাই রাজা গ্রহবর্ধন নিহত হয়েছিলেন। হত্যাকারী শশাঙ্ক হর্ষবর্ধনেরও শক্ত হয়ে উঠলেন। তাঁর ভাইকে হত্যার অপরাধে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যত দিন ভ্রাতৃ হত্যার প্রতিশােধ না নিতে পারবেন ততদিন তিনি ডান হাতে খাবেন না। অবশ্য তিনি বাম হাতেই খেতেন। শশাঙ্ক কিন্তু প্রবল শক্তি ও প্রভাবমণ্ডিত অবস্থাতেই স্বাভাবিকভাবে পরলােক গমন করেন। তার মৃত্যুর পর হর্ষবর্ধন ও ভাস্করবর্মা সব অঞ্চল দখলে আনেন।
এত আলােচনায় দেখা গেল শুধু আক্রমণ, হত্যা, মারামারি আর জয়পরাজয়ের ইতিহাস, শুধু রক্ত আর রক্ত। আমাদের মতে ওগুলাে তত দোষণীয় নয়, কারণ সিংহাসনের জন্য, রাজ্যের জন্য লড়াই তখন বীরত্ব বলে ধরা হতাে। আজকের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তখনকার দিনের কীর্তিকলাপকে বিচার করা উচিত নয়। বর্তমানে মুষ্টিযুদ্ধে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বীর মােহাম্মদ আলী কে। তিনি কোটি কোটি টাকা পুরস্কার পাচ্ছেন আর তাঁর খেলা দেখার জন্য পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ টেলিভিশন সামনে করে বসে থাকেন। খেলা শেষে দেখা যায় প্রবল ঘুষির আঘাতে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়তােবা নাকভাঙা, চোখ উৎপাটিত কিংবা হাড়ভাঙা হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন। কিন্তু সেদিন অদূরে না হলেও সুদূরে যে এই বীভৎস খেলা অসভ্যতায় পরিগণিত হতে পারে। তখনকার সমালােচকগণ যদি বিশ্ববিজয়ী মােহাম্মদ আলী কে আর ভারতের বিশ্ববিজয়ী কুস্তিগীর গামা এবং রামমূর্তিকে বলেন অসভ্য তাহলে বিরাট ভুল করা হবে। করুং সে যুগে বীরত্ব ও বুদ্ধির প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল বললে বেশি কিছু আসে যায় না।
যাহােক, হর্ষবর্ধনের পর ভারতের বুকে ‘চেত বংশের আর্বিভাব হয়। ঐ বংশের শেষ রাজা খরবেল এবং রাজ্যের নাম ছিল কলিঙ্গ । খ্রিঃ পূঃ ১৬৫ সালে তিনি তামিল দেশের রাজ্যগুলাে আক্রমণ করেন। শেষে ‘পাণ্ড দেশ’ থেকে মণিমুক্তা, সােনা-রুপা, হাতি-ঘােড়া বহু কিছু নিয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। মােটকথা, হর্ষবর্ধনের রাজত্ব তাঁর মৃত্যুর পরে আস্তে আস্তে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।
তারপর এল চালুক্য বংশ ও পল্লব বংশ। যথাক্রমে প্রথম পুলকেশী, দ্বিতীয় পুলকেশীসহ ছােট-বড় অনেক রাজার আর্বিভাব ঘটে ক্রমে পাল বংশের সূচনা হয়। পাল বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ধর্মপাল।
তারপর ৮৫০ হতে ১২০০ সাল পর্যন্ত ‘চোল বংশ’ আত্মপ্রকাশ করে টিকে থাকে। রাজবাজ, রাজেন্দ্র প্রমুখ চোল রাজার ভূমিকাও শক্তিদীপ্ত ছিল। ঐ চোল রাজাদের সময়ে ভারতের শিল্পনৈতিক বেশ উন্নতি হয়েছিল। বড় বড় মন্দির এবং স্থাপত্য শিল্পে নৈপুণ্য সগর্বে প্রমাণিত হয়েছে।
তারপরই পাল বংশ ও সেন বংশের আর্বিভাব। গােপাল, ধর্মপাল, দেবপাল, মহীপাল, প্রথম নহাপাল ও দ্বিতীয় মহীপাল প্রমুখ রাজা ছিলেন পাল বংশের মধ্যে। দ্বিতীয় মহীপাল তার ভাই সুরপাল ও রামপালকে জেলের মধ্যে বন্দি অবস্থায় রেখেছিলেন। কারণ আতঙ্ক ছিল ভবিষ্যতে যদি সিংহাসন নিয়ে লড়াই হয়। তাই পূর্বাহ্নেই পাকাপাকি ব্যবস্থা। যাহােক, পাল বংশে আরও অনেক নরপতির আগমন ঘটেছিল। যেমন নারায়ণপাল ৫৪ বছর রাজত্ব করেছিলেন, রাজ্যপাল ৩২ বছর রাজত্ব করেছিলেন। দ্বিতীয় গােপাল ১৭ বছর, দ্বিতীয় সুরপাল ২৬ বছর, রামপাল ৪২ বছর, গােপাল (তৃতীয়) ১৪ বছর, মদনপাল ১৮ বছর ও গােবিন্দপাল ৪ বছর রাজত্ব করেছিলেন। এমনিভাবে সেনবংশের মধ্যেও বিজয় সেন ৬২ বছর মতান্তরে ৩২ বছর, বল্লাল সেন ১১ বছর, লক্ষ্মণ সেন ২৭ বছর, বিশ্বরূপ সেন ১৪ বছর, কেশব সেন ৩ বছরকাল প্রভৃতি।
এর মধ্যে কৈবর্ত বংশ একবার শক্তিশালীরূপে আত্মপ্রকাশ করে মেরুদণ্ড সােজা করতে চেয়েছিল। কৈবর্ত রাজার নাম ছিল ভীম। সম্ভ্রান্ত রাজাগণ ঐ সময় একতাবদ্ধ হয়ে জোট বাঁধলেন যে, কৈবর্ত রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হতে দেওয়া হতেই পারে না। কৈবর্ত রাজা ভীমের সেনাবাহিনীও ছিল দুরন্ত এবং রণনিপুণ। কিন্তু যুদ্ধে সমস্ত প্রতিদ্বন্দ্বী দলের মিলিত শক্তির কাছে তাকে পরাজিত হতে হল। ভীমরাজা বন্দি হলেন এবং জীবিত অবস্থায় তাকে ধরে আনা হল। তার মন্ত্রী হরিকে এবং যুদ্ধের পর অনেককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে কৈবর্ত শক্তিকে দমন করা হয়েছিল। ভীমরাজার আত্মসমর্পিত সৈন্যদের রামপাল নিজের সৈন্যদলে সংযুক্ত করেন। তারপর রামপালের পুত্র রাজ্যপালও সবশেষে গােন্দিপাল রাজা হন, কিন্তু রামপালের মত এদের উপযুক্ততা ছিল না।
এবার সেন বংশের রাজারা এগিয়ে এলেন শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। পাল রাজাদের বিদায় পর্ব এবং সেন রাজাদের উদয় পর্ব শুরু হয়ে গেল।
বল্লাল সেন খুব উচ্চ হৃদয়সম্পন্ন মানুষ ছিলেন না। যুগের তালে ব্রাহ্মণ শূদ্ৰাদি পাশাপাশি বসবাস করার ফলে ক্রমে ছুতমার্গিদা হিন্দু সমাজে কমে আসছিল। কিন্তু বল্লাল সেন শক্ত হাতে তা দমন করলেন। ব্রাহ্মণদের দ্র ও কুলীন শ্রেণীতে এবং অব্রাহ্মণ ও অনুন্নত শ্ৰেণীকে নীচ বা ছােটলােক ও অস্পৃশ্য শ্রেণীতে পরিণত করেন। “রাজা বল্লাল সেন বলেন যে, কুলীনদের নয়টি গুণ থাকা উচিত। যাদের এসব গুণ আছে তাদের শ্রেষ্ঠ, যাদের আটটি গুণ আছে তাদের ‘সিদ্ধ শ্রোত্রীয়’ ও যাদের সাতটি গুণ তাদের আছে ‘সাধ্য শ্রোত্রীয়’ বলে অভিহিত করেন। বাকি কুলীনদের তিনি নাম দেন কাষ্ঠ শ্রোত্রীয়।… বল্লাল সেন সব কুলীনকেই সমান স্থান দিয়েছিলেন। তিনি তাদের অকুলীন কন্যা বিবাহেও কোন বাধাআরােপ করেননি।” (বিনয় ঘােষের লেখা ‘ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর’ পুস্তকের ১০৯ পৃঃ হতে)
ঐ পুস্তকে ১১০ পৃষ্ঠায় আরও লেখা আছে “..ব্রাহ্মণরা এই কৌলিন্য প্রথার দোহাই দিয়ে সামাজিক সুবিধা আদায় করতে লাগলেন। ক্রমে এই কৌলিন্য প্রথা থেকে সৃষ্টি হল কন্যাকে উচ্চ বর্ণে বিবাহ দেওয়ার রীতি-যার অবশ্যম্ভাবী ফল হল বহু বিবাহ। এক একজন কুলীন ব্রাহ্মণ বহু কন্যার পানি গ্রহণ করতে লাগলেন।… ঋতুমতী হওয়ার আগে কন্যার বিবাহ দেওয়ার বাধ্য-বাধকতা ও বিবাহ দিতে না পারলে পিতা-মাতার যে সামাজিক অমর্যাদা হতাে তা থেকে নিষ্কৃতি দেওয়ার জন্যই কুলীন ব্রাহ্মণরা এই কন্যাদের বিবাহ করতেন। অতএব বিবাহ বেশ লাভজনক পেশা হয়ে উঠল। কুলীন ব্রাহ্মণ কন্যাদের অসহায় পিতা-মাতারা দুতিন ডজন স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও ৭০/৮০ বছরের বৃদ্ধ কুলীন ব্রাহ্মণদের উপযুক্ত পাত্র বলে বিবেচনা করতেন।… মৃতপ্রায় আশি বছরেরও অধিক বয়স্ক বৃদ্ধের সঙ্গে নিতান্ত নাবালিকা কন্যাদের বিবাহ হতাে। মৃত্যুর আগে সেই বৃদ্ধের লাভ হতাে সামান্য কয়েকটি টাকা।”
কুলীন ব্রাহ্মণদের মধ্যে যারা অনেকে এই প্রথার বিরােধিতা করেছিলেন তাদের মধ্যে পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) রাশবিহারী মুখােপাধ্যায় ছিলেন বিশেষ উল্লেখযােগ্য। তিনি তাঁর জীবন চরিতে যা লিখেছেন সামান্য একটু তুলে ধরা হল। তিনি লিখেছেন,“…পিতাঠাকুর মহাশয় আমাকে অতি শৈশবাবস্থায় রাখিয়া স্বর্গারােহণ করেন। তখন পিতৃব্য শ্রীযুক্ত তারক চন্দ্র মুখােপাধ্যায় মহাশয় আমার অবিভাবক ছিলেন। দারিদ্রতাবশত আমাকে অল্পকালের মধ্যেই তিনি আটটি বিবাহ করান।… বহুবিবাহে সম্মতি থাকলে বােধহয় আমাকে শতাধিক রমণীর পানিগ্রহণ করিতে হইত। অনন্যোপায় হয়ে আরও ছয়টি পরিণয় স্বীকার। করিতে হইল, তাতে আমার ঋণ পরিশোেধ ও পরিবার বর্গের কিঞ্চিৎকালের ভরণ-পােষণের সংস্থান হইলে আমি… হুসেন শাহীর জমিদারদের আশ্রয় গ্রহণপূর্বক তহশীলদারী কর্মে নিযুক্ত হইলাম। (রাশবিহারী মুখােপাধ্যায়ের। সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত)। এছাড়া আরও অনেক দৃষ্টান্ত দ্বারা প্রমাণ করা যেতে পারে যে, কৌলীন্য প্রথা সমাজে কত ভীষণ আকার ধারণ করেছিল । যেমন-
এ ছাড়া এমন ব্যক্তিদের কথা জানা গেছে, যারা ৮২, ৭২, ৬৫, ৬০ ও ৪২টি কন্যার স্বামী। এবং ঐ স্ত্রীদের যথাক্রমে ১৮, ৩২, ৪১, ২৫ ও ৩২টি করে পুত্র সন্তান এবং ২৬, ২৭, ২৫, ১৫ ও ১৬টি করে কন্যা সন্তান ছিল। মােটকথা কৌলিন্য প্রথা একশ্রেণীকে একশত খণ্ডে বিভক্ত করে বিভেদের প্রাচীর রচনার ফলে মানুষের মানবিকতাকে দারুণভাবে অপমানিত করা হয়েছিল এবং মানুষের স্বাধীন অধিকারের মূলে কুঠারাঘাত করা হয়েছিল।
তারপরেই রাষ্ট্রমঞ্চে লক্ষ্মণসেনের পদার্পণ। তার সময় দেশের একতা আরও নষ্ট হয়ে যায়। ছােট-বড় প্রত্যেক রাজাই যেমন নিজের সিংহাসন, রাজ্য ও স্বার্থকেই বড় করে দেখেছেন, দেশ, সমাজ ও জাতির কল্যাণ কামনায় উদারতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে তেমন কাউকে অগ্রবর্তী হতে দেখা যায়নি। তার ওপর তিনি বৃদ্ধ হয়ে শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতাবােধ করছিলেন। এমন সময় নিত্যনতুন সংবাদ মুসলমান জাতি সম্বন্ধে শুনতে লাগলেন। তারা নাকি তিন ঈশ্বরে বিশ্বাসী নন। এমনকি তাদের ধর্মে মূর্তিপূজা মােটেই নেই। তারা নাকি মূর্তিপূজার খুব বিরােধী, তাদের আধ্যাত্মিক ক্ষমতা এত বেশি যে, হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শিষ্যরা আল্লাহর শক্তিতে প্রথমেই কোন দেশ আক্রমণ করার আগেই জানতে পারেন সেই রাজ্যের সমস্ত অবস্থা। তার পরেই হয় আক্রমণ। তারা নাকি অল্প সৈন্য নিয়ে বিশাল বিশাল সৈন্য বাহিনীর সাথে লড়াইয়ে জয়লাভ করেন ইত্যাদি। তবে একথা ঠিক যে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” পতাকা তলে একত্রিত হয়ে তথা কুরআন ও হাদীসের মর্মকেন্দ্রে সমবেত হয়ে আধ্যাত্মিক বা ঐশী ক্ষমতায় ক্ষতাবান মুসলমানরা যে দিকেই পদার্পণ করেছে জগতের সেই অংশই হয়েছে জ্ঞান-গরিমা, শিক্ষা-সভ্যতা, তাহজিব ও তামাদুন অতুলনীয়।
আমাদের দেশের প্রচলিত ইতিহাসের মধ্যে রমেশ মজুমদারের ইতিহাস ও ঐতিহাসিকতায় অনেকেই আস্থাশীল। সেই ইতিহাস অবলম্বনে লক্ষ্মণ সেনের হাত হতে রাজশক্তি কেমনভাবে মুসলমানের হাতে এল এখন সেই প্রসঙ্গে কিছু আলেচনা করা যাক।
তিনি তাঁর ইতিহাসে অবশ্য ঐতিহাসিক মিনহাজুদ্দিন সিরাজ সাহেবের লেখার অনুবাদ হতে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। উদ্ধৃতিটি নিম্নরূপ,
“এই সময় লখমনিয়া রাজধানী নুদীয়তে অবস্থান করিতে ছিলেন। তাঁহার পিতার মৃত্যুর সময়ে তিনি মাতৃগর্ভে ছিলেন। তাঁহার জন্মকালে দৈবজ্ঞগণ গণনা করিয়া বলেন যে, যদি এই শিশুর এখনই জন্ম হয় তবে সে কখনই রাজা হইবে না কিন্তু আর দুই ঘণ্টা পরে জন্মিলে সে ৮০ বছর রাজত্ব করিবে। এই কথা শুনিয়া রাজমাতার দুই পা বাঁধিয়া মাথা নিচের দিকে করিয়া তাহাকে ঝুলাইয়া রাখা হইল। শুভ মুহূর্তে উপস্থিত হইলে তাঁহাকে নামান হয়, কিন্তু পুত্র প্রসবের পরেই তাঁহার মৃত্যু হইল। তিনি হিন্দুস্তানের একজন প্রসিদ্ধ রাজা ছিলেন। বখতিয়ার কর্তৃক বিহার জয়ের পরে তাহার বীরত্বের খ্যাতি নুদীয়ায় পৌছিল।
তাহলে উপরােক্ত উদ্ধৃতি হতে এও জানা গেল, ভাগ্য ভবিষ্যতের যে ফল ব্রাহ্মণ ও দৈবজ্ঞগণ বলতেন সামান্য হতে স্বয়ং রাজা পর্যন্ত তা বিশ্বাস করতেন। নচেৎ ঐ প্রসবকালের যন্ত্রণাদায়ক সময়ে এ রকম নিষ্ঠুর ভূমিকা প্রতিপালিত হতে পারত না।
পূর্বেই বলা হয়েছে মুসলমান সৈন্য, সেনাপতি ও রাজাগণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাতে কঠোর সাধনা এবং দিনে সৈন্য চালনা করতেন। তারা ঘুমানাের পূর্বে পাঁচ থেকে দশ মিনিটের সময় নিয়ে একটি নামায পড়তেন তার নাম ছিল। ইসতিখারা নামায। তারপর দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন; হে আল্লাহ! আমরা আমাদের জন্য নয়, তােমার জন্য যুদ্ধ করে যাচ্ছি এবং তােমার জন্য মরতেও আমরা প্রস্তুত। এখন আমাদের আগামী অভিযান কেমনভাবে কোনদিকে করা হবে তুমিই জানিয়ে দাও, সাহায্য কর; তারপর শুয়ে ঘুমিয়ে পড়তেন। স্বপ্নযােগে প্রার্থনার ফলাফল জানতে পারতেন এবং সেই মত যুদ্ধের ময়দানে ও জীবনের সর্বত্র দুর্বার গতি নিয়ে ছুটে যেতেন; সাফল্য তাদের সাদর অভিবাদন জানাত। এখনাে খুব সাধু শ্রেণীর মুসলমানরা নিজেদের ব্যক্তিগত কাজেও ঐ নামাযের মাধ্যমে নির্দেশ লাভ করে থাকেন। খুব পরীক্ষিত এমনি বহু তথ্যপূর্ণ ঘটনা আমাদের হাতে আছে, কিন্তু বর্তমান বিশ্বের নিচ হতে ওপর পর্যন্ত বেশির ভাগ মুসলমানই মুখে ধর্মের মত বাণীই বলেন না কেন, অনেক মানুষেরই অবস্থায় ঘুণ ধরেছে। এর কারণ পরিবেশ ও উৎকট শিক্ষার চাপ।
যাহােক, নুদীয়ার বৃদ্ধ রাজা কতগুলাে সৈন্যকে স্বপ্নে দেখলেন তারা নুদীয়া আক্রমণ করেছেন, ঘুম ভাঙার পর যারপরনাই বিচলিত হয়ে পড়লেন। তার ওপর মুহাম্মদ বখতিয়ার তুর্কী মুসলমান বীরের খ্যাতি নানাভাবে শুনে আসছেন। তখন ঐ বড় বড় দৈবজ্ঞ, যারা তাকে বিধান দেন তাদের ডাকলেন। তারা গণনা করে বললেন আক্রমণের সম্ভাবনা। দৈবজ্ঞগণ এবং রাজা অনেক চিন্তা-ভাবনার পর অবশেষে এক সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে, গুপ্তচরগণ ভিক্ষুক বেশে গিয়ে দেখে আসুক তুর্কী সৈন্যদের চেহারা পােশাক-পরিচ্ছদ কেমন। তারপর যদি স্বপ্নে দেখা রূপ চেহারার সাথে মিলে যায় তাহলে স্বপ্ন সত্যিই বলতে হবে। তাই-ই করা হল। কিছুদিন পরে সংবাদ এল-তাঁদের দাড়ি আছে, গোঁফ কামানাে, মাথায় উন্নত শিরস্ত্রাণ, সৈন্যরা লৌহবর্ম পরে থাকে। কথায় কথায় ‘আল্লাহ’ আর ‘ইনশাআল্লাহ’ শব্দ উচ্চারণ করে। একতাবদ্ধ হয়ে উপাসনা করে তারপর সমবেত হয়ে হাত তুলে নিজের ভাষায় কী যেন প্রার্থনা করে এবং উপাসনা শেষে শিশুর মত সকলে কান্নাকাটি করে। এই সংবাদ শুনেই দৈবজ্ঞ বললেন, “হ্যাঁ, শাস্ত্রে ও ঐ রকম লেখা আছে।” তারপরই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে রাজা লক্ষ্মণ সেন জানালেন, আমার স্বপ্নে দেখা তুর্কীবীরদের চেহারা আর গুপ্তচরদের আনা সংবাদ একেবারে মিলে গেছে। তখন দৈবজ্ঞগণ পরামর্শ দিলেন, আপনাদের চুপিচুপি সম্মান নিয়ে নদীয়া হতে সরে পড়াই ভাল, আমরাও আপনার সঙ্গে যেতে প্রস্তুত।
এ সম্বন্ধে শ্রী রমেশ মজুমদারের ইতিহাসে শুধু ইঙ্গিত আছে মাত্র। যেমন-“গুপ্তচর পাঠাইয়া বখতিয়ারের আকৃতিতে বিবরণ আনান হইলে দেখা গেল যে, শাস্ত্রের বর্ণনার সহিত এর সম্পূর্ণ ঐক্য আছে। তখন বহু ব্রাহ্মণ ও বণিক নদীয়া হইতে পলায়ন করিল।”
যাহােক, লক্ষ্মণসেনের মত রাজার ‘ওঠ বললেই কাঁধে ঝুলি’র মত পলায়ন সম্ভব নয়। বছর খানেক পরেই মুহাম্মদ বখতিয়ার ১৮ জন অশ্বারােহী সৈন্যসহ বিপুল বেগে নদীয়ার রাজদরবারে এসে উপস্থিত হলেন। তার পূর্বেই নগরে ও রাজধানীতে রাজার সৈন্যদের বাধা দেওয়া কর্তব্য ছিল; কিন্তু প্রত্যেকের আতঙ্ক হিল জুজুর ভয়’ যেখানে স্বয়ং রাজাই আতঙ্কিত; ফলে বখতিয়ার সহজেই রাজপ্রাসাদ আক্রমণ করলেন। লক্ষ্মণ সেনের পুত্র এবং খুব অল্পসংখ্যক দেহরক্ষী এতক্ষণে বুঝতে পারল এঁরা বণিক নন; সেই স্বপ্নে দেখা তুর্কী সৈন্য। বীর বিক্রমে একবার বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেন কিন্তু বৃথা হল শেষ চেষ্টা। এইবার বাধ্য হয়ে রাজা লক্ষ্মণ সেন পেছনের দরজা দিয়ে আত্মগােপন করে পূর্ব বঙ্গে পলায়ন করলেন।
রমেশ মজুমদার ‘বাংলা দেশের ইতিহাস’-এ ২৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “যে সময়ে তুরস্ক সেনাকর্তৃক দেশ আক্রান্ত হওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা বিদ্যমান সেই সময়ে রাজধানীর দ্বাররক্ষীরা আঠারজন অশ্বারােহী তুর্কীকে বিনা বাধায় নগরে প্রবেশ করিতে দিল এবং অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত বর্মাবৃত সৈন্যকে অশ্বব্যবসায়ী বলিয়া ভুল করিল।”
ঐতিহাসিকগণের নিজের জ্ঞান দিয়ে সমালােচনা করা একটা চিরন্তন স্বভাব ধর্ম। যেমন অমুক রাজা অমুক বাদশার পতনের কারণ এই ইত্যাদি। যদি তিনি এই ভুল না করতেন তবে পরাজয়বরণ করতে হতাে না ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু একটা কথা মনে রাখার প্রয়ােজন যে, যদিও প্রচলিত আছে ‘সাবধানের বিনাশ নাই’। কিন্তু তবুও এর চেয়েও শক্তিশালী পরীক্ষিত সত্য কথা হচ্ছে এই যে বিনাশের সাবধান নাই। অতএব যখন স্রষ্টার সদিচ্ছা অনুকূলে থাকবে তখন সব। ভুলই ঠিকে পরিণত হবে আর যখন বিশ্ববিধাতা পক্ষে না থেকে বিপক্ষে প্রতিকূলে ভাব পােষণ করবেন তখন সব ঠিকই ভুলে রূপ নেবে-যদিও এই বিশ্বাস শুধুমাত্র আস্তিকদের ক্ষেত্রেই প্রযােজ্য। এক্ষেত্রে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দলভুক্ত মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজীর দলকে ঘােড়া ব্যবসায়ী নামে আখ্যায়িত করার বা মনে করার পেছনে ঐ একই সত্যের ইঙ্গিত রয়েছে।
‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।