• মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
Saturday, June 21, 2025
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ
No Result
View All Result

বনলতা সেন ও জীবনানন্দ দাশের নায়িকারা

অতিথি লেখক by অতিথি লেখক
November 19, 2024
in সাহিত্য আলোচনা
0
বনলতা সেন ও জীবনানন্দ দাশের নায়িকারা

Image Source: Google image and AI

Share on FacebookShare on Twitter

লিখেছেনঃ আহমদ রফিক

শ-পাঁচেক বছর আগে চিত্রশিল্পের অন্যতম ‘গ্রেট মাস্টার’ লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা আবক্ষ নারীপ্রতিকৃতি ‘মোনালিজা’কে নিয়ে ইতালি-প্যারিস থেকে বিশ্বের সর্বত্র শিল্পরসিক, সংস্কৃতিমনস্ক মহলে কম আলোড়ন সৃষ্টি হয় নি। এমনকি কয়েক শতক পর সে ঢেউ সুদূর বঙ্গদেশের সারস্বত সমাজকেও স্পর্শ করে। এর প্রধান কারণ মোনালিজার অস্ফুরিত অধরোষ্ঠ এবং চোখের গভীরতা ঘিরে রহস্যময় মায়াবী হাসি, যা দর্শকদের যেন জাদুস্পর্শে অভিভূত করেছিল, এখনো করে।

সে হাসিতে কটাক্ষ নেই, যৌথ-আবেদনের তির্যক ইঙ্গিত নেই; আছে নরম মাধুর্যময় সৌন্দর্যের প্রকাশ। ঐ সৌন্দর্যের কারুকাজ যদিও মোনালিজার আলতো হাসি ঘিরে, তবু তার কালো পোশাক ও চুলের অন্ধকার এবং পশ্চাৎপটে নিসর্গের কালো ও ফিকে ধোঁয়াটে উপস্থিতির আলো-আঁধারের মাঝে পূর্বোক্ত বিশ্বজয়ী হাসির রহস্যময়তা সৃষ্টিতে সাহায্য করেছে। সৃষ্টি করেছে মুখাবয়ব ও বুকের ঊর্ধ্বাংশের আকর্ষণীয় রঙের সঙ্গে বৈপরীত্য।

মোনালিজা শিল্পী দ্য ভিঞ্চির ভাবনালোক বা স্বপ্নলোকের বাসিন্দা নন, বরং রক্তমাংসের মানবী লিজা (অর্থাৎ লিজা জ্যাকোন্দা) এক ইতালীয় অভিজাতের স্ত্রী। আর সে নারীর মুখচ্ছবিই যুগ যুগ ধরে বিশ্বের সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের চোখে, শিল্পীসাহিত্যিকদের কাছে ‘মাস্টারপিস’ চিত্রশিল্পের মর্যাদা অর্জন করেছে। মোনালিজার হাসি রক্তমাংসের বাস্তবনারীর হলেও দর্শকের মুগ্ধচোখের আলোয় তা হয়ে ওঠে স্বপ্নলোকের মায়া, পার্থিব হওয়া সত্ত্বেও ঐ হাসিতে আরোপিত হয়েছে অপার্থিব সৌন্দর্য। এক কথায় কালো পোশাক ও চুল এবং আলোছায়ার প্রাকৃত রূপময়তার পটভূমিতে এঁকে তোলা মোনালিজার মুখাবয়ব মর্যাদা পেয়েছে রহস্যময়ী মোহিনী নারীর। এসব দিক থেকে জাদুকরি রোমান্টিকতার আরেক নাম ‘মোনালিজা’।

মোনালিজার মতো তেলরঙে আঁকা নারীপ্রতিকৃতি না হলেও রোমান্টিক স্বাপ্নিকতা ও প্রাকৃত রূপময়তার অসামান্য অনুষঙ্গে ভিন্ন স্থান কাল পরিবেশে বাঙালি কবির কলমে আঁকা শব্দচিত্রের নায়িকা-নারী বনলতা সেন। মোনালিজার মতো হাস্যমুখী এবং পুরোপুরি বাস্তবজগতের নারী হয়তো নয়, তবু রহস্যময়তায় রোমান্টিক, প্রাকৃতিক অনুষঙ্গের নারী বনলতা সেন মোনালিজার চিত্রপটভূমি মনে করিয়ে দিতে পারে তার কলারসিক পাঠককে। বলা বাহুল্য, কবি জীবনানন্দ দাশের নায়িকাদের মধ্যে সর্বাধিক আকর্ষণীয় ও পাঠকপ্রিয় বনলতা সেন। গভীর অন্বেষায় এ নায়িকার বাস্তবভিত্তিক পরিচয় হয়তো বা মিলতে পারে কবির অন্য কোনো কোনো নায়িকার পরোক্ষ প্রতিরূপে।

রহস্যময়তা, তা শব্দচিত্রে হোক বা তেলরঙে হোক, পাঠক-দর্শকচেতনায় অপরিসীম কৌতূহল সৃষ্টি করে। বোঝা-না-বোঝার, জানা-অজানার সীমারেখার আকর্ষণ বরাবরই বেশি। হয়তো তাই ন্যুড ছবির চেয়ে রসজ্ঞ দর্শকের চোখে অর্ধনগ্নিকার আবেদন অধিকতর। সেক্ষেত্রে গভীর হয়ে জেগে থাকে অজানাটুকুকে জানার আকর্ষণ। হয়তো তাই চুল, চোখ ও অন্ধকারের প্রাকৃত প্রেক্ষাপট ও অনুষঙ্গ মিলে আঁকা শব্দচিত্রে নায়িকা বনলতা সেনের যে ভাবরূপ আর আলোছায়ার কারুকার্যে খচিত শৈল্পিক সৌন্দর্য তাই কবিতা পাঠকের চিত্তজয়ের কারণ হয়ে ওঠে।

জীবনানন্দ দাশ তাঁর ইতিহাস-বিহারী চেতনার আলোয় ‘বনলতা সেন’ নাম্নী এমন এক নায়িকার রূপচিত্র এঁকে তুলেছেন, যা রমণীয়তা ও মাধুর্যে অসামান্য। আকর্ষণীয় এ নায়িকার বাস্তবভিত্তি হয়তো তাঁর আরেক নায়িকা ‘শঙ্খমালা কিশোরী’র স্মৃতিচিত্রণে খুঁজে পাওয়া সম্ভব। নাটোরের ঠিকানা সেক্ষেত্রে অনাবশ্যক হয়ে যায়। পরে লেখা বনলতাবিষয়ক একাধিক এবং শঙ্খমালাবিষয়ক একাধিক রচনার সঙ্গে কবির ব্যক্তিগত ডায়েরির কিছু বক্তব্যের তুলনামূলক বিচার তা স্পষ্ট করে তোলে।

ইতিহাস-চেতনা ও চিত্রসৃষ্টির প্রতি প্রবল অনুরাগের কারণেই হয়তো জীবনানন্দ দাশ তাঁর নায়িকা-প্রধান কবিতার চরিত্র চিত্রণে চিত্রশিল্পীসুলভ প্রবণতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন শব্দচিত্র এঁকে তুলে। ‘বনলতা সেন’-এ এমন প্রকরণিক সৌকর্য সুস্পষ্ট। সেখানে ঠিকই মোনালিজার রহস্যময় হাসি নেই, কিন্তু আছে ইতিকথার প্রেক্ষাপটে বিদিশা নগরীর অন্ধকার রাত্রির নিবিড়রূপ নিয়ে আকর্ষণীয় কালো চুল, ইতিহাসখ্যাত শ্রাবস্তীর স্থাপত্য- ভাস্কর্যের কারুকর্মে রমণীয় ও শ্রীময়ী মুখের রূপময়তা, আছে পাখির নীড়ের মতো প্রাকৃত রূপের চোখ, যা আয়ত বা দীঘল না হয়েও বুঝি সৌন্দর্যমণ্ডিত হতে পারে। এ সবই ঐতিহ্যনির্ভর সুষমায় আঁকা, ইতিহাসভিত্তিক বাস্তবতায় ঋদ্ধ।

বনলতা সেন এভাবে এমন এক শ্রীময়ী নায়িকা হয়ে ওঠে যার জন্য হাজার বছর ধরে পথ হাঁটা যায়, বলা যায় ‘যাত্রী আমি ওরে’ ‘সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে’ কিংবা ‘আরো দূর বিদর্ভ নগরে’। দীর্ঘ পথ চলার ক্লান্তি, অন্বেষার মানসিক অবসাদভার সম্বল করে ইতিহাসনিষ্ঠ প্রেমিকের পক্ষেই ‘জীবনের সফেন সমুদ্রের পাশে দাঁড়িয়ে বলা চলে—’আমি ক্লান্তপ্রাণ এক’ এবং প্রেমিকার স্বল্পকালীন সান্নিধ্য পরম পাওয়া রূপে বিবেচনা করে বলা চলে ‘আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন’। এরপর স্মৃতিচিত্র রচনাই মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠে।

‘দুদণ্ড শান্তি’ পাবার আনন্দিত উপলব্ধি নায়িকার অন্বেষায় ‘ক্লান্তপ্রাণ’ কবির কাছে মনে হয়েছে অচেনা সমুদ্রে দিকহারা নাবিকের হঠাৎ করে সুগন্ধি চারুচিনি-দ্বীপের মধ্যে সবুজ ঘাসের দেশ আবিষ্কারের অবিশ্বাস্য প্রাপ্তির মতো। আর তা তাৎপর্যময় আনন্দের উৎস হয়ে ওঠে প্রেমিকার উৎকণ্ঠ প্রশ্নে—’এতদিন কোথায় ছিলেন?’—এ প্রশ্ন শুধু প্রশ্নই নয়, এতে মিলনের আয়োজন পরিপূর্ণ করে তুলতে যে-প্রাকৃত পরিবেশের উপস্থিতি, সেখানে দিনরাতের সন্ধিক্ষণ, এমনকি রাতের অন্ধকারে শঙ্খমালা নায়িকার প্রবেশ।

শঙ্খমালা কিশোরী কবির এক অকালপ্রয়াত নায়িকা, যে চেয়েছিল কবির সঙ্গে ঘর বাঁধতে (জীবনানন্দের ভাষায় ‘আমার হৃদয়ে যে গো শঙ্খমালা কিশোরীটি বাঁধিতে আসিয়াছিল ঘর’)। কিশোরী প্রেমিকার প্রসঙ্গ জীবনানন্দের একাধিক কবিতায় ফিরে ফিরে এসেছে। এসেছে গ্রামীণ প্রকৃতির পরিবেশ রচনার মধ্য দিয়ে। সেখানে ‘কান্তার’ শব্দটি বহুব্যবহৃত। যে গ্রামীণ কান্তার ছেড়ে মনের অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজধানী শহরে পাড়ি জমিয়েছেন কবি, নিতান্ত এক অসফল প্রেমহীন জীবনযাপনের বাধ্যবাধকতায়।

আর শহরে ‘সারাদিন ট্রাম-বাস’-এর প্রতিকূল পরিবেশের ঘাতক চরিত্রে জীবনানন্দ মৃত্যুর গন্ধই পেতে থাকেন। বারবার হৃদয়ের গভীরে বেজে উঠতে থাকে কিশোরী নায়িকা শঙ্খমালার আহ্বান। অকালপ্রয়াত প্রেমিকার আহ্বানে একদিকে প্রাণ চায় ‘অঘ্রাণের পাড়াগাঁর তেপান্তরে চলে যেতে, যেখানে রাঙা পশমের মতো বটফল ঝরে পড়তে থাকে, যেখানে সন্ধ্যার বক কামরাঙা রক্তমেঘে শঙ্খের মতো শাদা পাখনা ভাসায়’। অন্যদিকে শঙ্খমালার প্রতি কবির আহ্বান এ পৃথিবী থেকে চলে যাবার পর শঙ্খমালা যেন তাঁর জন্য আকাশে অপরিসীম নক্ষত্র বিছিয়ে রাখে, যে-নক্ষত্র জীবনানন্দের কবিতায় বরাবর আসা- যাওয়া করে বিশেষ উপাদান হয়ে।

‘বনলতা সেন’ কবিতাগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ‘শঙ্খমালা’ কবিতার নারীও নায়িকার ভঙ্গিতেই ‘কান্তারের’ পথ ছেড়ে সন্ধ্যার আঁধারে এসে ডেকে বলে—’তোমারে চাই’। কিন্তু এ কবিতা প্রয়াত প্রেমিকার উপাখ্যান রচনার নামে শোকগাথায় শেষ হয়। করুণ শঙ্খের মতো স্তন’ আর ‘কড়ির মতো শাদামুখ’ নিয়ে শঙ্খমালা চিতার আগুনে শেষ হওয়া সত্ত্বেও তাকে স্মৃতিচিত্রে ধরে রাখা সম্ভব হয়। বলা চলে ‘এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর’। এ পাওয়া না-পাওয়া নিয়েই জীবনানন্দের প্রেমের উপাখ্যান।

বনলতা সেন আর শঙ্খমালার পারস্পরিকতায় দুজনই যেন কবির প্রধান নায়িকা হিসাবে একই আসনে বসে থাকে। প্রয়াত প্রেমিকার জন্য মনস্তাপ ‘বনলতা সেন’ ও ‘শঙ্খমালা’ সিরিজের কবিতায় প্রায় একই সুরে ধ্বনিত হতে থাকে । দুই নায়িকার মধ্যে পার্থক্য ততটা বড় হয়ে দেখা দেয় না। গ্রামীণ কিশোরী প্রেমিকার জন্য রচিত শোকপক্তিমালা পরবর্তীকালে লেখা বনলতা সেন বিষয়ক অগ্রন্থিত কবিতায় প্রায় একই চরিত্র নিয়ে ফুটে ওঠে— শেষ হ’ল জীবনের সব লেনদেন, বনলতা সেন।…

(কেন যে সবার আগে তুমি)

ছিঁড়ে গেলে কুহকের ঝিলমিল টানা ও পোড়েন

কবেকার বনলতা সেন।

ধরে নিতে হয় কবির প্রেমিকা বাস্তবিকই প্রয়াত—তার নাম শঙ্খমালা হোক বা বনলতা সেনই হোক। সে নায়িকা নাটোরের হোক বা বরিশালের গ্রামীণ প্রাকৃত পরিবেশে লালিত “কান্তারের শঙ্খমালা’ই হোক। জীবনানন্দ দাশের ডায়েরিতে উল্লিখিত ‘রুরাল গার্ল’ তথা ‘গ্রামীণ কিশোরীর প্রেম’ কবির সৃষ্ট নায়িকা শঙ্খমালাতেই প্রতিফলিত বলে মনে হয়।

যেমন উপরে উদ্ধৃত কবিতায়, তেমনি ‘বনলতা সেন’ কবিতায় প্রেমিকাকে প্রয়াত বলে ধরে নিতে হয়। সে জন্যই উক্ত কবিতার শেষ স্তবকে ‘দুদণ্ড শান্তি’র স্মৃতি উদযাপনের জন্যই ‘অন্ধকারে মুখোমুখি’ বসার আয়োজন করা হয়। রক্তমাংসের সজীব নায়িকার বদলে প্রেমের পূর্বস্মৃতিই বাস্তবের রূপ নেয়। তাই ‘দিন শেষে শিশিরের শব্দের মতন রোমান্টিক পরিবেশে সন্ধ্যা নামে, পৃথিবীর সব আলো নিভে যায়’। আসে রাত। রাতের অন্ধকারে বিদেহী নায়িকাকে নিয়ে প্রেমের নিঃশব্দ উদযাপন জমে ওঠে।

স্বভাবতই অন্ধকার এ মিলনের পটভূমি রচনা করে। একই কারণে এ মিলনের স্মৃতিচিত্র রোমান্টিক ও স্বাপ্নিক। একই সঙ্গে তা অপার্থিব হয়েও পার্থিব। বিচ্ছেদ-বেদনার শৈল্পিক প্রকাশ ঘটাতেই বুঝি বনলতা সেনকে ঘিরে স্মৃতিচিত্র রচনা। প্রেমের দ্বিমাত্রিক চরিত্র প্রকাশ করার জন্যই সম্ভবত এ আলেখ্য রচনায় কিছু বিশিষ্ট শব্দ ও বাক্যবন্ধ সংকেত, শব্দের ব্যঞ্জনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট একাধিক কবিতায় ফিরে ফিরে এসেছে। যেমন—’জীবনের লেনদেন ফুরিয়ে যাওয়া’র অনুষঙ্গে শিশির, শীত, সন্ধ্যা, অন্ধকার, হাজার বছরের প্রতীক, অন্ধকার ও জোনাকির আলো নিয়ে জীবন-মৃত্যুর বৈপরীত্য এবং সেই সঙ্গে বিশেষ গাছগাছালির ও পাখি-পাখালির প্রাকৃত পরিবেশ।

নানা দিক বিচারে রমণীয় রোমান্টিকতার সংহত কাব্যরূপ ‘বনলতা সেন’ (এমন কি “শঙ্খমালা’ও) প্রেমের কাহিনী হয়েও রচনা-সৌকর্যের গুণে যেন এক একটি আলেখ্য, কবিতা হয়েও চিত্রশিল্প ( যদিও শব্দচিত্র)। এতে ঐতিহাসিক কাব্য-ঐতিহ্যের আরোপ, নায়িকার রূপ বর্ণনায় প্রাচীন ভারতীয় শিল্পকর্মশৈলীর আরোপ, নায়িকার অন্বেষায় নায়কের অন্তহীন সময়-পরিক্রমায় শৈল্পিক ঐতিহ্যের প্রকাশ ঘটেছে।

একই সঙ্গে নায়িকার রূপময়তা সৃষ্টিতে প্রাকৃত সৌন্দর্যের আরোপ বনলতা সেনকে একাধারে দেশজ রূপকথার ও লৌকিক বাস্তবতার নায়িকায় পরিণত করেছে। গভীর বিচারে শঙ্খমালাও সম্ভবত ব্যতিক্রম নয়। বর্তমান ও অতীত, ইতিহাস ও পুরাণ মিলেমিশে নায়িকার রূপাশ্রয়ী সত্তা নিয়ে যে ‘মিথ’ তৈরি করেছে তা-ই সংশ্লিষ্ট প্রেমকথার প্রাণ। এ জন্যই বনলতা সেন তথা শঙ্খমালার প্রেম স্বপ্নলোকের হয়েও অতীত ও বর্তমানের, স্বপ্ন ও বাস্তবতার মেলবন্ধন ঘটিয়েছে। কবির প্রেমও তাই স্বাপ্নিক হয়েও বাস্তব উপলব্ধির।

কথাটা কারোরই অজানা নয় যে, জাগতিক সত্যের অনিবার্য টানে জীবন, যৌবন, প্রেম কোনো কিছুই চিরস্থায়ী হয় না, অন্তত বাস্তব ভুবনে হয় না। প্রেম আসে, প্রেম ঝরে যায়। জীবনও একই ধারায় মৃত্যুর মধ্যে শেষ হয়। কিন্তু শিল্পসৃষ্টির গুণে জীবনের লেনদেন ফুরিয়ে যাবার পরও প্রেম স্মৃতিচিত্রে স্থায়িত্ব অর্জন করে। তাই প্রেম বা প্রেমিক-প্রেমিকার মৃত্যু ঘটে না। কবির ভাষায়, ‘থাকে শুধু অন্ধকার মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।’

২

‘জীবন-মৃত্যুর পর তুহিন দৃষ্টি মেলে’ কবি ইয়েটসের ঘোড়সওয়ার যেমন নির্বিকার চলে যায়, অনেকটা তেমনি জীবনানন্দ দাশের একদা প্রাণময়ী নায়িকা স্মৃতির সত্তা অর্জন করে জীবন ও মৃত্যুকে জয় করে। অবশ্য করে কবির শৈল্পিক হাত ধরে। তাই সময়ের খেলাঘরে বনলতা সেনের মুখোমুখি হওয়া যেন এক অনিবার্য ঘটনা। যেখানে নায়িকা প্রবল কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করে—মনে আছে?’ জবাবে কবির সোৎসাহ স্বীকৃতিবাচক বক্তব্য—’বনলতা সেন?’ এখানে বিস্ময় ও আনন্দ দুই-ই উপস্থিত। স্মৃতি এভাবেই জীবনানন্দ দাশের নায়িকাদের সজীব করে তোলে।

জীবনানন্দ দাশ দেহাতীত বা ঐশী প্রেমের কবি নন, প্রবক্তাও নন। বরাবরই প্রবলভাবে দেহজ প্রেমে বিশ্বাসী ও সে প্রেম নিয়ে বেঁচে থাকার আনন্দই ছিল কবি জীবনানন্দ দাশের বরাবর আকাঙ্ক্ষিত। কিন্তু ব্যর্থ প্রেম তথা পেয়ে হারানোর ব্যর্থতাই সম্ভবত কবিকে প্ররোচিত করেছিল প্রেমের স্মৃতিচিত্র তথা শাশ্বত কাব্যভাষা রচনার জন্য। তাঁর বোধে মনে হয় এমন এক হিসাবই বড় হয়ে ওঠে যে—প্রেম, প্রকৃতি ও মানুষ (অর্থাৎ মানব-মানবী) নিয়েই মানব-আকাঙ্ক্ষার পূর্ণতা।

পূর্বোক্ত ত্রিকোণরূপে প্রেমের স্মৃতিচিত্র রচনায় প্রবল ব্যাকুলতা নিয়ে পরবর্তী জীবনানন্দ দাশ বনলতা সেনের প্রেমের ধারাবাহিকতা নিয়ে একের পর এক নায়িকাদের তাঁর কাব্যভুবনে হাজির করেছেন। এদের কেউ কেউ নায়িকা হিসাবে বনলতা সেনের ‘প্রোটোটাইপ’, কখনোবা শঙ্খমালার। এদেরকে কাছে পাওয়ার অনুষঙ্গও কিন্তু জীবনানন্দের কবিতার অপরিহার্য প্রাকৃত উপকরণ—বিশেষ করে আকাশ, নক্ষত্র, নানা ঋতুর প্রাকৃত রূপ, পাখি-পাখালি, শিশির, সন্ধ্যা, শীত, ঘাস, বেতফল ইত্যাদি।

ব্যতিক্রম বাদ দিলে তাঁর নায়িকাদের অধিকাংশ একই স্মৃতিচিত্রের প্রতিরূপ মনে হয় । অর্থাৎ সে নায়িকা হারিয়ে গেছে বা দূরে চলে গেছে, কখনো সুস্পষ্টভাবে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। যে জন্য একাধিক অগ্রন্থিত কবিতায় তাকে বা তাদের কাছে পাওয়ার জন্য জীবনানন্দ দাশের আর্তি—

তুমি আর আসবে না, জানি আমি, জীবনের প্রথম ফসল

এখন আসিছে সন্ধ্যা আর শীত আর তীব্র শিশিরের জল।

এখানেও শীত, সন্ধ্যা, শিশির যেমন নায়িকার প্রাকৃত অনুষঙ্গ, যা হারানো নায়িকার কথা তুলে ধরে; তেমনি ‘জীবনের প্রথম ফসল’ ঘুরেফিরে গ্রামীণ কিশোরী শঙ্খমালার প্রথম প্রেমের কথাই মনে করিয়ে দেয়। একইভাবে ধানসিঁড়ি নদীর পাশে গ্রামীণ আকাশে চিলের কান্নায় বেতফলের মতো চোখ যে নারীর কথা মনে আসে সে তো শঙ্খমালাই হওয়ার কথা।

তবে এ কথাও ঠিক, হারিয়ে যাওয়ার পর সে আর পৃথক সত্তায় স্বতন্ত্রভাবে চিহ্নিত হয় না। মৃত্যুর পর রূপকথার রাঙা রাজকন্যাদের দলে ভিড়ে ঐ প্রতীকেই তার আসা-যাওয়া। আসা-যাওয়া স্মৃতিচিত্রের নায়িকা হিসাবে। জীবনানন্দের অন্য নায়িকাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সুদর্শনা, সুচেতনা, সবিতা, শ্যামলী বা সুরঞ্জনা। পূর্বসূত্র যদিও পূর্বোক্ত গ্রামীণ প্রেমিকার, তবু সময় ও স্থান ব্যবধানে এদের কারো কারো প্রতীকী চরিত্র ভিন্ন—হৃদয়ের রোমান্টিকতা থেকে ক্রমশ মননের দিকে, প্রকৃতি থেকে সমাজ-জটিলতার দিকে এদের যাত্রা।

এদের মধ্যে শঙ্খমালা-বনলতা সেনের ধারাবাহিকতা নিয়েও স্বপ্ন থেকে বাস্তবের দেহঘনিষ্ঠ পরিবেশে সবিশেষে হয়ে ওঠা নায়িকার নাম সুদর্শনা। বনলতা সেনের বা শঙ্খমালার উল্লেখ যেমন একাধিক কবিতায়, তেমনি সুদর্শনার দেখা মেলে একাধিক কবিতায়। বনলতা সেন কবিতাগ্রন্থের অন্তর্গত ‘সুদর্শনা’ শিরোনামের কবিতা ছাড়াও ‘অন্ধকারে’; ‘পৃথিবী’ ‘জীবন’ ‘সময়’ ইত্যাদি কবিতা বিশেষভাবে সুদর্শনাকে নিয়ে রচিত। প্রকৃতপক্ষে বনলতা-শঙ্খমালার পরবর্তী নায়িকাদের মধ্যে সুদর্শনা অগ্রগণ্য।

সুদর্শনার গুরুত্ব বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, প্রাকৃত প্রেমের আশ্রয় হওয়া সত্ত্বেও নাগরিক আধুনিকতার স্পর্শ নিয়ে সুদর্শনা যুগের আলোয় দীপ্ত, একাধারে রমণীর প্রেম ও সৌন্দর্যচেতনার প্রতীক। অন্যদিকে সুদর্শনার সঙ্গে কবির তথা নায়কের প্রেম যে দেহজ সম্পর্কের ও রক্তমাংস-নির্ভর আকর্ষণের, তা বুঝতেও কষ্ট হয় না। অন্তত সুদর্শনা-বিষয়ক একাধিক কবিতায় তা কবির জবানিতেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

‘পৃথিবী, জীবন, সময়’ কবিতাটিকে ‘সুদর্শনা’ শিরোনামে চিহ্নিত করলেও ভুল হতো না। এ কবিতার পটভূমি ও গতিময়তা এবং প্রাকৃত রূপ অনেকটা ‘বনলতা সেন’ কবিতাটির মতোই। ‘সাগর আলো পাখি আর বৃক্ষের নির্জনতার’ পটভূমিতে প্রেমের অভিসার, প্রেমিকার সান্নিধ্যে যাওয়া – সেখানেও শিশির ঝরার শব্দে বিকেল আর আপাত- আলোর অন্ধকারে সুদর্শনাকে নিয়ে নায়কের স্বীকারোক্তি।—

একটি শরীর হতাম পরস্পরকে ভালোবেসে।

কিন্তু এ নায়িকার ক্ষেত্রেও পূর্বোক্ত নায়িকাদের পরিণামই যেন সত্য হয়ে ওঠে অন্তত বিচ্ছেদের বিষয় বিবেচনায়। কবির বয়ানেই স্পষ্ট হয় তাদের ভালোবাসার পরিণামের কথা—’এসব অনেক আগের কথা…কোথায় এখন সে সব আকাশ নক্ষত্র রোদ সত্য উজ্জ্বলতা’—অর্থাৎ দু-দণ্ড শান্তির পর সবকিছু হারিয়ে গেছে। এর অর্থ সুদর্শনার কাছ থেকেও কিছু প্রেম, কিছু সময় উপহার পেয়েছিলেন কবি, এমন কি ‘পেয়েছি অনাথ আমায় সুদর্শনাকে বুকে নিয়ে’ (অন্ধকারে)—এমন স্বচ্ছ উপলব্ধির পরও সময়ের অত্যাচারে ভিন্ন এক সত্যই নায়কের আত্মদর্শন হয়ে ওঠে।

সে আত্মদর্শন ও আত্মানুসন্ধানের টানে ‘পরিচিত রোদের মতন উষ্ণ শরীর’ সুদর্শনা আর রক্তমাংসের নরম সুদর্শনা থাকে না। প্রেম ও সৌন্দর্যবোধের সঙ্গে সে একাকার হয়ে যায় এবং তা প্রধানত সময়-জ্ঞানে আত্মস্থ কবির ভিন্নতর উপলব্ধির কারণে। ‘সুদর্শনা’ শিরোনামের অন্য একটি অপরিচিত কবিতার শুরুতেই কবির বয়ান, ‘সুদর্শনা মিশে যায় অন্ধকার রাতে’। অবশ্য মূল ‘সুদর্শনা’তে জীবনানন্দ দাশ দেহ ও দেহাতীত প্রেমের দ্বন্দ্বে নিরক্ষরেখায় অবস্থান নিয়েছেন। একদিকে দেহঘনিষ্ঠ উপলব্ধি, অন্যদিকে অন্ধকারে গতায়ুপ্রেমের অর্চনা, যা প্রেমিকাকে পরমার অবস্থানে ঠেলে দেয়।

সুদর্শনার এই যে অন্ধকারে প্রয়াণ এর মূলে কিন্তু সমকালীন সভ্যতার অবক্ষয়, দূষিতরূপ এবং অস্থির সময়ের সহায়তায় শুদ্ধচেতনার মৃত্যু, যা প্রেম ও প্রেমিকাকে সুস্থ মূল্যবোধে স্থির থাকতে দেয় না। বণিকসভ্যতা মূলত এ জন্য দায়ী। বিরূপ পরিবেশে প্রাকৃত চেতনার সজীবতাও তখন অন্তর্হিত। ‘সুদর্শনা’র প্রেমিক কবি যেমন প্রেমের বাস্তবতা-অবাস্তবতার দ্বন্দ্বে অস্থির, তেমনি তিনি সুন্দরের দূরতম অন্বেষার যাত্রীও। সময়ের অস্থিরতার সঙ্গে যুদ্ধরত কবি কখনো সুরঞ্জনা, কখনোবা সুচেতনা, আবার কখনো সবিতাকে কেন্দ্র করে প্রেমের আচারে নিশ্চিত সূত্রে পৌঁছাতে চেয়েছেন।

সুরঞ্জনাও তার প্রেম ও সৌন্দর্য নিয়ে দ্বন্দ্ব ও জটিলতার শিকার এবং ক্ষতচিহ্নভরা সভ্যতার কৃত্রিমতার কারণেই তার সাধ ও অর্জনের দ্বন্দ্ব ক্রমে প্রকট হয়ে উঠতে থাকে। তবু প্রেমিক এমন সত্যেই স্থিত হতে চায় যে, আবহমান কাল থেকে মানব সভ্যতার স্থিতি ও শান্তির পূর্বাপর শর্ত একটাই, আর তা ‘মানুষের তরে এক মানুষীর গভীর হৃদয়’-এর নিশ্চয়তা। প্রকৃত প্রেমই মানুষ-মানুষীর সুস্থ সম্পর্ক ধরে রাখতে পারে। ‘দেহ দিয়ে ভালোবেসে’ই সুরঞ্জনাদের পক্ষে সম্ভব সভ্যতার সুস্থ বিবর্তনের পথে মানবজীবনে কল্লোলিত ভোরের সন্ধান জানাতে পারা।

তত্ত্বগত দিক থেকে প্রেমাভিসারের বাস্তবতা একই ধরনের সত্যের সন্ধান দেয় ‘সুচেতনা’ নাম্নী নায়িকাকে নিয়ে জীবনানন্দ দাশের কাব্যিক কথকতায়। এখানেও ‘বিকেলের নক্ষত্রের পাশাপাশি পরিচিত দারুচিনি বনানীর নির্জনতার আশ্রয়ে সুচেতনা’র আবির্ভাব। এখানে ক্লান্ত নাবিকের নতুন সামাজিক পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য ‘ক্লান্তিহীন’ প্রত্যাশা ‘পৃথিবীর গভীর, গভীরতর অসুখ’-এর মধ্যেও ‘শিশিরস্নাত সমুজ্জ্বল ভোরের’ আকাঙ্ক্ষা ফুটে ওঠে।

অসুস্থ সমাজ, ক্ষয়িষ্ণু সভ্যতা কি সুস্থ প্রেমের পরিবেশ তৈরি করতে পারে কিংবা গড়ে তুলতে পারে মানব-মানবীর জন্য শুদ্ধ প্রেমের মেলবন্ধন? পারে না বলেই সংবেদনশীল চৈতন্যে যত সমস্যা, যত জটিলতার সৃষ্টি, পৃথিবীতে ‘অপব্যয়ী আগুন আর অবাঞ্ছিত আলো জ্বলা’র ধুম। জীবনানন্দের আরেক নায়িকা সবিতার ‘নিবিড় কালো চুল থেকে প্রাচীন সমুদ্রের নুন ঝরতে থাকে ঐতিহ্যবাহী নারীসত্তার প্রতীক হিসাবে। তার মুখের রেখায় যুগযুগান্তর পেরিয়ে আসা নবসূর্যের আলো সত্ত্বেও সবিতা সত্যিকার অর্থে প্রেমিকের জন্য সবিতা হয়ে উঠতে পারে না। তাকে মনে হয় ‘কত কাছে—তবু কত দূর’। পূর্বতন নায়িকাদের মতোই আকাঙ্ক্ষার পৃথিবী ‘একবার পায় তারে’, কিন্তু স্থায়ীভাবে পায় না।

৩

প্রেমের অভিসার-যাত্রায় কবি জীবনানন্দ দাশ কাব্যপুরাণ বা গল্প-উপাখ্যানের ঐতিহাসিক যাত্রার অনুসারী, প্রেমিকার অন্বেষণ ঐতিহ্যাশ্রয়ী। কিন্তু ঐতিহ্যাশ্রয়ী হয়েও আধুনিক চেতনার কবি জীবনানন্দ ছিলেন সমকালীন নষ্ট সময়-সমাজ-সভ্যতার চরিত্র সম্পর্কে আশ্চর্যরকম সচেতন। বাস্তব সত্য বা জীবন সত্যকে অবহেলা না করেই প্রকৃতির প্রতি গভীর আসক্তির পরিচয় রেখেছেন। এ আকর্ষণ ছিল তাঁর মানসপ্রকৃতির সহজাত। সম্ভবত সে জন্যই মন ও মনন, হৃদয় ও মেধা, বোধ ও বোধির এক অদ্ভুত সমন্বয়ে তাঁর চেতনা গড়ে ওঠে, যে চেতনার ছাপ তাঁর জীবনযাত্রার জন্য সুখ বা স্বস্তির কারণ হয়ে ওঠে নি।

এমনি এক মিশ্র বা দ্বিভাজিত চেতনার কবি সম্ভবত অতিমাত্রিক নিসর্গপ্রিয়তার কারণে গ্রামীণ কিশোরীর সরল, নিখাদ প্রেমে আকণ্ঠ মগ্ন। সাধারণ বিচারে সে প্রেম ‘সামান্য’ বিবেচিত হলেও তরুণ জীবনানন্দ দাশ সে প্রেমের প্রতি মুগ্ধতায় একে যেমন ‘সামান্য’ ভাবেন নি, তেমনি চিরন্তনীর দিকে নজর দেবার প্রয়োজন বোধ করেন নি। এদিক থেকে

কবি সুধীন্দ্রনাথের প্রেমভাবনার সঙ্গে জীবনানন্দের প্রেমাভিসারের মিল সামান্যই। জীবনানন্দের এ মানসিকতা এবং প্রেমের ট্রাজিক পরিণতির প্রতিক্রিয়া ‘ঝরাপালক’ থেকে একাধিক কাব্যগ্রন্থের কবিতায় ধরা পড়েছে এবং এতটা স্পষ্টভাবে তা দেখিয়ে দিতে হয় না।

দুর্ভাগ্যই বলতে হবে যে, গ্রামীণ প্রাকৃত পরিবেশের ঐ কিশোরী-প্রেমিকার অকালমৃত্যু কবিকে কক্ষচ্যুত করে এবং ক্রমে কবি হয়ে ওঠেন দ্বিভাজিত চেতনার শিকার, যা গভীর প্রভাব ফেলে তাঁর কবিতায়। শঙ্খমালা কিশোরীর প্রেমস্মৃতি স্থায়ী করতে গিয়ে চিরন্তনীর (প্রেমিকার) রূপ-কল্পনা মন থেকে মননে ঠাঁই নেয়। সম্ভবত এভাবেই শঙ্খমালাকে অতিক্রম করে শাশ্বত প্রেমের পরমা রূপ নিয়ে বনলতা সেনের আবির্ভাব। রূপকথার রাজপুত্র বা মহাকাব্যের পরাক্রমী নায়কের মতো জলস্থল-পর্বত পরিক্রমার সব বাধাবিপত্তি অতিক্রম করার দুর্জয় সাহস প্রকাশের মধ্য দিয়ে বন্দি রাজকন্যা বা নায়িকাকে উদ্ধার করা বইয়ের পাতায় চলতে পারে, একালের কবি-রাজপুত্রের পক্ষে তা সম্ভব নয় বলে আধুনিক চেতনার কবি জীবনানন্দ দাশকে প্রতীকের সাহায্য নিতে হয়েছে, লৌকিককে লোকাতীতে স্থাপন করে নতুনভাবে নায়িকার স্মৃতিচিত্র তথা রূপচিত্রের ক্যানভাস আঁকতে হয়েছে। সেক্ষেত্রে ‘দুদণ্ড শান্তির’ পূর্বঅভিজ্ঞতা (তা পরেরও হতে পারে) চিরন্তনীকে পার্থিব ভুবনে স্থাপন করে পার্থিব-অপার্থিবের মেলবন্ধন ঘটাতে সাহায্য করেছে। নায়িকা বনলতা সেন তাই একাধারে হৃদয় ও মননের বৈপরীত্যে রচিত।

‘বনলতা সেন’-এর পূর্ববর্তী বহুসংখ্যক কবিতায় বা অপ্রকাশিত কবিতা-পঙ্ক্তিতে পূর্বোক্ত প্রেমের বিচ্ছেদ-বেদনার আর্তি এমনই এক স্পষ্টতা নিয়ে প্রতিফলিত যে, তা নিয়ে প্রশ্নের বা সন্দেহের অবকাশ থাকে না। উদাহরণ টানতে জীবনানন্দীয় কবিতার কিছু পক্তি উদ্ধার করা যায় —

যাহারে খুঁজিয়াছিনু মাঠে মাঠে শরতের ভোরে

হেমন্তের হিমঘাসে যাহারে খুঁজিয়াছিনু ঝরো ঝরো কামিনীর ব্যথার শিয়রে…

শুধু মেরু-আকাশের নীহারিকা, তারা

দিয়ে যায় যেন সেই পলাতকা চকিতার সাড়া।

(ঝরা পালক)

প্রয়াত বা হারানো প্রেমিকার জন্য আর্তি ও অন্বেষা জীবনানন্দ দাশের প্রকাশিত অপ্রকাশিত অনেক কবিতায় ধরা পড়েছে। যেমন—

‘জানি না কোথায় তুমি—শবের ভিতরে সন্ধ্যা যেই আসে নদীটি যখন শান্ত হয়,…

তখন তোমার মুখ—তোমার মুখের রূপ, আমার হৃদয়ে এসে ভিজে গন্ধে চাঁপার মতন

ফুটে থাকে’ (জানি না কোথায় তুমি), কিংবা

‘তুমি আর আসবে না, জানি আমি, জীবনের প্রথম ফসল।

এখন আসিছে সন্ধ্যা আর শীত আর তীব্র শিশিরের জল’।

শেষোক্ত উদ্ধৃতিতে এটা স্পষ্ট যে, জীবনের প্রথম প্রেম আর প্রেমিকা চলে গেছে দূরে, বহু দূরে। প্রেমিকার জন্য কবির এ আর্তি যেমন প্রথমার জন্য, তেমনি বনলতা সেন পর্বে কি ঐ আর্তি একই প্রেমিকার জন্য, না-কি দ্বিতীয়া কারো জন্য—কবিতায় যার নাম বনলতা সেন? কবিতার খসড়া খাতায় ১৯১৯ সালের পর থেকে প্রেম ও প্রেমিকাকে হারানোর যে আর্তি আঁকিবুকিতে স্পষ্ট, তা কি ঐ কিশোরী-প্রেমিকার জন্য, না পরিণত বয়সী কোনো প্রেমিকার জন্য, তা নিশ্চয় করে বলা কঠিন। কিন্তু বনলতা সেনকে ঘিরেও অনুরূপ পক্তি লক্ষ করার মতো—

কোথায় গিয়েছ তুমি আজ এই বেলা…

উচ্ছ্বাসে নদীর ঢেউ হয়েছে সফেন,

তুমি নাই বনলতা সেন। …

তোমার মতন কেউ ছিল কি কোথাও?

কেন যে সবের আগে তুমি চলে যাও।

কেন যে সবের আগে তুমি

পৃথিবীকে করে গেলে শূন্য মরুভূমি।

এ কবিতায় বনলতা সেন-এর উল্লেখ যত রহস্য, যত সমস্যা, সর্বোপরি এক প্রশ্নের জন্ম দেয়—শঙ্খমালা ও বনলতা সেন কি তাহলে পরস্পর থেকে ভিন্ন, না একই ব্যক্তিকে দুই ভিন্ন নামে পরিচিত করে তোলা? ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’তে দেহজ প্রেমবাসনা নিয়ে, পেয়ে হারানোর বেদনা নিয়ে যে গভীর আর্তির প্রকাশ, তা পরিণত বয়সী প্রেমিকার দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করে। এ প্রসঙ্গে ‘১৩৩৩’ কবিতাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য—

তোমার শরীর—

তাই নিয়ে এসেছিলে একবার; তারপর, মানুষের ভিড়…

তোমারে নিয়েছে ডেকে কোন দিকে জানি নি তা,…

তুমি কি আসিবে কাছে প্ৰিয়া।

এ কবিতায় প্রশ্নের জবাব স্পষ্ট যে, এখানে প্রেমিকা প্রয়াত গ্রামীণ কিশোরী নয়, পরিণত বয়সী এ নায়িকা ভিন্ন কেউ, যে হতে পারে দিনলিপিতে উল্লিখিত প্রেমিকা, যে পরবর্তী সময়ে নিজেকে কবির কাছ থেকে সরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু এ প্রেমিকাকেই যদি বনলতা সেন হিসাবে এঁকে তোলা হবে তাহলে এমন পক্তি কবি লিখবেন কেন—

শেষ হ’ল জীবনের সব লেনদেন,

বনলতা সেন।

সেক্ষেত্রে এমনও হতে পারে যে, প্রয়াত কিশোরী-প্রেমিকাকেই জীবনানন্দ দাশ তাঁর কবিতায় নানারূপে শঙ্খমালা থেকে বনলতা সেন-এ পরিণত করেছেন, অনেকটা কথিত ‘মনের মাধুরী মিশিয়ে’। যেমন মানসিক আর্তির টানে, তেমনি শিল্পসৃষ্টির তাগিদে জীবনানন্দ দাশ ঐ করুণ ঘটনা তথা ট্রাজেডির কাব্যরূপ এঁকে তুলেছেন ‘বনলতা সেন’ কবিতায়। ব্যক্তিক প্রেমকে তাত্ত্বিক দিক থেকে সাধারণ্যে উপজীব্য স্তরে নিয়ে গেছেন, আর শৈল্পিক বিচারে ঐ সৃষ্টিকে নিয়ে গেছেন অসাধারণ উচ্চতায়। বনলতা সেন তাই জীবনানন্দের হয়েও সব পাঠকের কাঙ্ক্ষিত নায়িকায় পরিণত।

সত্যি বলতে কি, জীবনানন্দ দাশের নায়িকাদের নিয়ে রচিত কবিতার ভিন্ন পটভূমি, তাদের নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বয়ান সত্ত্বেও গভীর বিচারে বলা যেতে পারে—ওরা সবাই একই নায়িকার ভিন্ন ভিন্ন রূপ। সময়, সমাজ, সভ্যতা ও পরিবেশগত ভিন্নতায় তাঁর নায়িকারা একাধিক পটভূমিতে আবির্ভূত একাধিক তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য—যদিও মূল বিষয় সেখানে প্রেম ও প্রেমের ব্যক্তিক সামাজিক অবস্থান। প্রেমের ট্রাজি-কমেডির পটভূমিতে প্রেমের সুস্থ ভবিষ্যৎ পরিণাম কবির আকাঙ্ক্ষিত। এ সবই এসেছে তাঁর নায়িকাদের স্মৃতিচিত্র রচনার প্রেক্ষাপটে। বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনার দাবি রাখে।

(২০০৩)

Post Views: 1,083
Tags: jibananada dasjibananandaJibanananda Dasjibanananda das kobitajibanananda das poemjibanananda das poemsjibonananda dasঅন্ধকার কবিতা জীবনানন্দ দাশআবৃত্তি বনলতা সেনকবিতা বনলতা সেনজীবনানন্দ দাশজীবনানন্দ দাশ কবিতাজীবনানন্দ দাশ সহজজীবনানন্দ দাশের কবিতাজীবনানন্দ দাশের কবিতা বনলতা সেনজীবনানন্দ দাশের জীবনীজীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতানাটোরের বনলতা সেনবনলতা সেনবনলতা সেন এর জীবনীবনলতা সেন কবিতাবনলতা সেন কবিতার ব্যাখ্যাবনলতা সেন জীবনানন্দ দাশবনলতা সেন তুমিবনলতা সেনের পরিচয়বনলতা সেনের রহস্য
ADVERTISEMENT

Related Posts

নজরুল ইসলামের উপন্যাসে মানবতাবাদ
সাহিত্য আলোচনা

নজরুল ইসলামের উপন্যাসে মানবতাবাদ

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম মহৎ ঔপন্যাসিক মাত্রই মানবতার পথপ্রদর্শক। সাহিত্য মানেই মানুষের কথা, তার জীবনযাপন, আনন্দ-বেদনা, প্রেম-সংঘর্ষ, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের এক...

by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
March 29, 2025
কাজি নজরুল ইসলাম ও আন্তর্জাতিকতা
সাহিত্য আলোচনা

কাজি নজরুল ইসলাম ও আন্তর্জাতিকতা

লিখেছেনঃ সুমিতা চক্রবর্তী কাজি নজরুল ইসলামকে অনেক ভাবেই আমরা চিনি। তিনি উৎপীড়িতের পক্ষে দাঁড়ানো একজন সাহিত্যিক; তিনি অসাম্প্রদায়িক মনের...

by অতিথি লেখক
November 5, 2024
জীবনানন্দ দাশের নারীপ্রেমঃ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা
সাহিত্য আলোচনা

জীবনানন্দ দাশের নারীপ্রেমঃ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা

লিখেছেনঃ বাসন্তীকুমার মুখখাপাধ্যায় জীবনানন্দ যেমন প্রকৃতির বেদনার আঘাতের ও হিংস্রতার দিকটি সম্বন্ধে সম্পূর্ণ সচেতন থেকেও প্রকৃতিলীন জীবনে আস্থা স্থাপন...

by নবজাগরণ
November 7, 2024
বনলতা সেন : পাঠ, প্রসঙ্গ, পর্যবেক্ষণ
সাহিত্য আলোচনা

বনলতা সেন : পাঠ, প্রসঙ্গ, পর্যবেক্ষণ

লিখেছেনঃ কুন্তল চট্টোপাধ্যায় ‘পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন’, অধিকাংশ কবিতাপ্রেমী বাঙালির প্রেম ও কবিতার প্রথম পাঠ...

by অতিথি লেখক
November 4, 2024

POPULAR POSTS

  • সুলতান মাহমুদ

    সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান ও সোমনাথ মন্দির প্রসঙ্গ (১ম পর্ব)

    181 shares
    Share 181 Tweet 0
  • বাউরী সম্প্রদায়ের উৎপত্তির ইতিহাস ও ঐতিহাসিক পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • আর্যদের ভারত আগমন, বিস্তার, সমাজ ও সভ্যতা: এক ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে বৌদি কাদম্বরী দেবীর সম্পর্ক আদৌ কি প্রেমের ছিল?

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • হিন্দু পদবীর উৎপত্তির ইতিহাস, বিবর্তন ও ক্রমবিকাশঃ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

Facebook Page

নবজাগরণ

ADVERTISEMENT
নবজাগরণ

'Nobojagaran' is a website of its kind where you can gather knowledge on all the unknown facts of the world. We human beings always have a thirst for knowledge. Nobojagaran takes its first steps to quench this thirst of ours. We are now in the era of digital world, where we get almost anything online. So how about a bit of knowlyfrom online?

Connect With Us

No Result
View All Result

Categories

  • English (9)
  • অন্যান্য (11)
  • ইসলাম (27)
  • ইসলামিক ইতিহাস (23)
  • ইহুদী (2)
  • কবিতা (37)
  • খ্রিস্টান (6)
  • ছোটগল্প (6)
  • নাস্তিকতা (18)
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (24)
  • বিশ্ব ইতিহাস (24)
  • ভারতবর্ষের ইতিহাস (195)
  • রাজনীতি (38)
  • সাহিত্য আলোচনা (68)
  • সিনেমা (17)
  • হিন্দু (16)

Pages

  • Cart
  • Checkout
  • Checkout
    • Confirmation
    • Order History
    • Receipt
    • Transaction Failed
  • Contact
  • Donation to Nobojagaran
  • Homepage
  • Order Confirmation
  • Order Failed
  • Privacy Policy
  • Purchases
  • Services
  • লেখা পাঠানোর নিয়ম
  • হোম
No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi

©Nobojagaran 2020 | Designed & Developed with ❤️ by Adozeal

Login to your account below

Forgotten Password?

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In
Don't have an account yet? Register Now
1
Powered by Joinchat
Hi, how can I help you?
Open chat
wpDiscuz
0
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
| Reply