আদালতকক্ষে উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যেই শেষ দিনের বিচার পর্ব বসেছিল। দিনটা ছিল ৯-ই মার্চ ১৮৫৮, সময় বেলা ১১-টা। হ্যারিয়াট আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা তার অন্তিম বক্তব্যটি শেষ করেছে। সে পুনরায় তার বক্তব্যে ব্যাখ্যা করেছে তার তত্ত্বটি, এই বিদ্রোহ ছিল আন্তর্জাতিক ইসলামী বিদ্রোহের একটি অংশ।
“আমি চেষ্টা করেছি বার করতে, কেমন করে বন্দি অন্তরঙ্গভাবে ভারতবর্ষে ইসলাম ধর্মের সর্বেসর্বা হিসাবে এই ষড়যন্ত্রের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে নেতা হিসাবে নির্লজ্জতার সংগে যোগাযোগ রেখেছিল।”
বেলা ৩ টের কিছুক্ষণ আগে বিচারকরা রায় নিয়ে বিবেচনার জন্য একসঙ্গে বেরিয়ে গেল এবং কিছুক্ষণ পরই ফিরে এল রায় দিতে “জাফর একজন অপরাধী তার উপর আরোপিত সমস্ত অভিযোগের জন্য।”
মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর ১৮৬২-র ৭ নভেম্বর ভোর ৫ টার সময় ৮৭ বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করেন। দেশে নয় বিদেশে, মায়নামারের রেঙ্গুণের মাটিতে তিনি একfকি শুয়ে আছেন।
২০২১ হল তঁর মৃত্যুর ১৫০ বছর।
শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের মৃত্যু সংবাদ পক্ষকাল পরে নভেম্বর ২০ তারিখ দিল্লিতে এসে পৌঁছায়। মির্জা গালিব মৃত্যুর খবরটি ‘আওধ আখবারে’ পড়েন। একই দিনে দিল্লির জামা মসজিদকে পুনরায় মুসলিমদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। অনেকগুলি হত্যা, মৃত্যু ও দুঃখজনক খবরে মির্জা গালিব নিরব হয়ে গিয়েছিলেন। সম্রাটের মৃত্যুর খবর গালিব ক্রান্তির সঙ্গে চুপচাপ গ্রহণ করলেন।
শুক্রবার‘ ৭-ই নভেম্বর ১৪ জমাদিউল আউয়াল আবু জাফর সিরাজউদ্দিন বাহাদুর শাহ-শেষ মুঘল সম্রাট, বিদেশিদের হাতে রক্তমাংসের বন্দী অবস্থা থেকে এবং একইসঙ্গে ইহলোক থেকেও মুক্ত হলেন।
“আমরা আল্লাহর সৃষ্টি এবং আমাদের আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে।”. ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
‘The Last Mughal’ by William Dalrymple pp 442-443 and 475.
দেখতে পাচ্ছি কবি, সূফী সম্রাটকে একটি কাঙারু কোর্ট (প্রহসনের বিচার) কট্টরপন্থি অপরাধি হিসাবে বিচার করছে। তার প্রতি দোষারোপ করা হয় ভারত ও বিদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জনপ্রিয় সামরিক অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানের। এটা অস্বীকার করতে পারি না ভারতে হিন্দু মুসলিম সামাজিক ঐক্যের জন্য সুফি মিষ্টিক সন্তরা বরাবর কাজ করে গেছেন। বৃটিশ বিরোধী সংগ্রামেও কট্টরপন্থা সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।
আমাদের উচিত কাউকে সন্তু কাউকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকা। দুই মুসলিম গোষ্ঠী (কট্টর ও সুফিবাদী) আমাদের সমাজের জন্যে এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে যথেষ্ট অবদান রয়েছে। হামলাকারীরা সব সময় আমাদের দোষারোপ করার অজুহাত খুঁজে থাকে, কোন গোষ্ঠী বা সিলসিলা যাইই সে অনুসরণ করুন।
আরও পড়ুন,
প্রাচীন গ্রীস ও রোমের ক্রীতদাস প্রথার মর্মান্তিক ইতিহাস