লিখেছেনঃ সুরজিৎ দাশগুপ্ত
মােহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর শৈশব কেটেছিল গৃহ ও বিদ্যালয়ের সংকীর্ণ পরিবেশে। পাঠ্যবইয়ের বাইরে বিদ্যার জগৎ সম্বন্ধে তার না ছিল আগ্রহ না কোনও জিজ্ঞাসা। বয়ােজ্যেষ্ঠদের আদেশ পালন ও ইচ্ছাপূরণকেই তিনি জীবনের একমাত্র স্মরণীয় কর্ম মনে করতেন। তিনি ১৮৮৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য লন্ডনে যান। লন্ডনে এসে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে পরিচয় ও মেলামেশার পরিণামে অন্যান্য ধর্ম সম্বন্ধে তার কৌতূহল জাগে। লন্ডনে তাঁর সহবাসী ছিলেন জোসিয়া ওল্ডফিল্ড, তিনিও ছিলেন মােহনদাসের মতাে শাকাহারী এবং সমভাবাপন্ন। কিন্তু তার ছিল অন্যান্য ধর্মের গ্রন্থ ও পাঠ্যগ্রন্থের তালিকা বহির্ভূত চিন্তামূলক গ্রন্থাদি অধ্যয়নের অভ্যাস। মনে হয় তার সংগ্রহ থেকেই মােহনদাস টলস্টয়ের লেখা The Kingdom of God is Within You বইখানি পড়েছিলেন। মােহনদাস গান্ধী আত্মজীবনীতে লিখেছেন—Three moderns have left a deep impress on my life and captivated me: Raychand bhai by his living contact; Talstoy by his book The Kingdom of God is within you, and Ruskin by Unto This Last.১ লন্ডন থেকে দেশে প্রত্যাবর্তনের পরে বম্বেতে এসে রায়চাঁদ বা রাজচন্দ্র নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে মােহনদাসের পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা হয়। এই রায়চঁাদ পেশায় জহুরি হলেও কবিতা লিখতেন ও ধর্মশাস্ত্রাদিঅধ্যয়ন করতেন।
লন্ডনে মােহনদাসের ছাত্রজীবন কেটেছে ১৮৮৮ সাল থেকে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত। এই সময় ১৮৯০ সালে তিনি প্যারিসে বেড়াতে যান। তার আগের বছর প্যারিসের নতুন দ্রষ্টব্য বস্তু আইফেল টাওয়ার নির্মাণের কাজ শেষ হয় এবং হাজার হাজার মানুষ তা দেখতে এসে তার অপূর্বতার প্রশংসাতে পঞ্চমুখ হতে থাকে। সকলেই তার চমৎকারিত্বে মুগ্ধ হলেও টলস্টয় আইফেল টাওয়ারের মধ্যে অর্থহীন উচ্চতা ছাড়া কোনাে অভিনবত্ব দেখতে পাননি এবং তার সে মন্তব্য সমস্ত ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডে প্রচণ্ড বিতর্ক সৃষ্টি করে। মনে হয় এই বিতর্কের সূত্রেই টলস্টয়ের নাম মােহনদাস প্রথম শােনেন। নিজেও আইফেল টাওয়ার দেখে তার নির্মাণ কৌশলে বিস্ময় বােধ করলেও তাতে সৌন্দর্যের কোনাে প্রকাশ দেখেননি। তবে এটা মেনে নেওয়াই ভালাে যে মােহনদাস কবে কোন্ সুবাদে টলস্টয়ের নামের সঙ্গে প্রথম পরিচিত হন তা নিশ্চিতভাবে জানা যায় না।
আগেই ইঙ্গিত দিয়েছি যে পাঠ্যবইয়ের বাইরের বই পড়ার কোনাে অভ্যাস তার ছিল না। তবু বিদেশের পরিবেশে বহু প্রকার ধর্মবিশ্বাসীদের সংস্পর্শে এসে তাদের ধর্মগ্রন্থগুলি অধ্যয়নে তার আগ্রহ জাগে। সেই আগ্রহ থেকে খ্রিস্টধর্ম ও ইসলাম ধর্ম সম্বন্ধে কিছু বই কিনে পড়লেন। তখন তার মনে হলাে ‘What was the meaning of saying that the Vedas were the inspired of God? if they were inspired, why not also the Bible and the Koran?”২ ধর্মাশাস্ত্রে তার আগ্রহের পরিচয় পেয়ে মিস্টার কোটস নামে এক ভদ্রলােক তাকে The perfect way এবং The new interpretation of the Bible বই দুখানি পড়তে দিলেন। আত্মজীবনীতে গান্ধীজি বই দুটি পড়ে লিখেছেন, I liked both. They seemed to support Hinduism’ কিন্তু এর পরেই গান্ধীজি যােগ করেছেন ‘Tolstoy’s The Kingdom of God is within you overhelmed me. It left an abiding impression on me. Before the independent thinking, profound morality, and the truthfulness of this book, all the books given me by Mr. Coates seemed to pale into insignificance.”৩
মােহনদাস ১৮৯১ সালের ১০ জুন ব্যারিস্টারি পরীক্ষা পাস করে ১১ জুন আড়াই শিলিং জমা দিয়ে হাইকোর্টে নথিভুক্ত হয়ে ১২ জুন লন্ডন থেকে দেশে ফিরে বম্বেতে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন, কিন্তু বম্বেতে তার ব্যবসা একেবারেই জমেনি। কাজের খোঁজে রাজকোটে গেলেন, আবার ফিরে এলেন বম্বেতে। এবার তার সঙ্গে যােগাযােগ হল দক্ষিণ আফ্রিকার দাদা আবদুল্লা অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে। কোম্পানির আইন বিষয়ক কাজকর্মের জন্য একজন বড় ইংরেজ ব্যারিস্টার ছিল, তাকে সাহায্য করার জন্য প্রয়ােজন ছিল গুজরাটি জানা কম খরচের ব্যারিস্টার। এই কম খরচের ব্যারিস্টার হিসেবে এক বছরের জন্য মােহনদাস ১৮৯৩-এর মে মাসে দক্ষিণ আফ্রিকাতে এলেন। তখন দক্ষিণ আফ্রিকা বলতে বােঝাত ওলন্দাজদের অধীন ট্রান্সভাল ও অরেঞ্জ ফ্রিস্টেট বা অরেঞ্জিয়া এবং ইংরেজদের অধীনে নাটাল ও কেপকলােনি প্রদেশ চারটিকে। ওলন্দাজ বংশােদ্ভূত দক্ষিণ আফ্রিকীয়দের বলা হতাে বােয়ার। গ্রেট ব্রিটেন এবং ট্রান্সভাল ও অরেঞ্জিয়ার মধ্যে ১৮৯৯ থেকে ১৯০২ পর্যন্ত যে যুদ্ধ হয় তা বােয়ার যুদ্ধ নামে প্রসিদ্ধ।
এদিকে ১৮৬০ সালে ভারত থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্রমিক পাঠানাের চুক্তি বা। এগ্রিমেন্ট ব্রিটিশ ভারত সরকার ও দক্ষিণ আফ্রিকান সরকারের। এগ্রিমেন্ট কথাটার বিকৃত রূপ দাঁড়ায় গিরমেন্ট এবং ভারতীয় শ্রমিকরা পরিচিত হয় গিরমিটিয়া নামে। গিরমিটিয়াদের সােজা করে বলা হত কুলি। ক্রমে সব ভারতীয়ই পরিচিত হল কুলি শব্দটা দিয়ে বা মােহনদাসও পরিচিত হলেন কুলি ব্যারিস্টার বলে। কুলি ব্যারিস্টার মােহনদাস গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকাতে কী রকম বারবার লাঞ্ছিত হয়েছেন তা সকলেরই জানা। কিন্তু বােয়ার যুদ্ধের পর্বে বােয়ারদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া সত্ত্বেও মােহনদাস ইংরেজ পক্ষকেই সমর্থন ও সাহায্য করেন ব্রিটিশ ভারতের একজন অনুগত নাগরিক হিসেবে। এজন্য ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বর্ণপদক পুরস্কারও লাভ করেন। কিন্তু পুরস্কৃত হয়েও তিনি ভুলতে পারেননি যে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের হাতে দক্ষিণ আফ্রিকার কুলি ভারতীয়দের অপমান ও নির্যাতনের কথা। এই সময় তিনি ভারতে আসেন ও দক্ষিণ আফ্রিকার ভারতীয়দের মর্মন্তুদ দুঃখ দুর্দশার কথা বর্ণনা করে পুস্তক ছেপে বিলি করেন এবং কলকাতা বম্বে ও মাদ্রাজে অনেকগুলি বক্তৃতাও দেন। এই সময় গােখলের সঙ্গে তার গুরুশিষ্য সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং দু’জনে একমত হন যে রাজনীতিকে ধর্মময় করা প্রয়ােজন। কলকাতা থাকাকালেই তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে টেলিগ্রামে জানলেন যে সেক্রেটারি অব স্টেট মিস্টার চেম্বারলেন আসছেন দক্ষিণ আফ্রিকাতে এবং তখন মােহনদাসের উপস্থিতি আবশ্যক। তিনি ১৯০২-এর ডিসেম্বরে বম্বে থেকে নাটালের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেলেন। নাটাল থেকে প্রিটোরিয়াতে পৌছলেন ১৯০৩-এর ১ জানুয়ারি। তিনি আশা করেছিলেন যে বােয়ার যুদ্ধে ইংরেজকে সাহায্য করার জন্য। সরকার বােধহয় ভারতীয়দের সঙ্গে উদার ব্যবহার করবে। কিন্তু এসে দেখলেন ভারতীয়দের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। ডারবানে তিনি ভারতীয়দের এক প্রতিনিধি দল নিয়ে চেম্বারলেনের সঙ্গে দেখা করেন এবং চেম্বারলেনও তাদের অভাব অভিযােগ দূরীকরণের ব্যাপারে আশ্বাস দেন। কিন্তু প্রিটোরিয়াতে যখন ভারতীয়রা চেম্বারলেনের সঙ্গে দেখা করেন তখন তারা শূন্য হাতে ফেরেন। গান্ধী বুঝতে পারলেন দক্ষিণ আফ্রিকাতে তার অনেক কাজ আছে এবং এখানেই অনির্দিষ্টকাল তাকে থাকতে হবে।
১৯০৪ সালে তার ঘাড়ে ‘ইন্ডিয়ান অপিনিয়ন’ পত্রিকায় দায়দায়িত্ব এসে পড়ল। দক্ষিণ আফ্রিকার ভারতীয়দের অবস্থা সম্বন্ধে চেতনা জাগাবার উদ্দেশে এই পত্রিকাটির প্রকাশ শুরু হয়। প্রত্যেক সংখ্যাতেই মােহনদাসকে কিছুনা কিছু লিখতে হতাে। সত্যের পরীক্ষা’ নামে তার বিখ্যাত আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, ‘In the very first month of Indian Opinion, I realise that the sole aim of journalism should be service. The newspaper press is a great power, but just as an unchained torrent of water submerges whole countrysides and devastates crops, even so an uncontrolled pen serves but to destroy. If the control is from without, it proves more poisonous than want of control. It can be profitable only when exercised from within.”৪
এই উদ্ধৃটি থেকে বােঝা যাবে যে সাংবাদিকতার আদর্শ সম্বন্ধে গান্ধিজীর ধারণা। ও প্রত্যাশা কী ছিল। কিন্তু পত্রিকার ছিল গভীর আর্থিক সমস্যা সমাধানের জন্য তাকে ডারবানে সশরীর উপস্থিতির প্রয়ােজন হওয়াতে তিনি ডারবান রওনা হন। জোহান্সবার্গের স্টেশনে ট্রেনে তুলে দিতে এসে ইন্ডিয়ান অপিনিয়ন’-এর সহকারী সম্পাদক মিস্টার পােলক যাত্রাকালে পড়বার জন্য গান্ধীজিকে একখানি বই দেন, বইটি জন্ রাসকিনএর লেখা Unto this last. বইখানি তার মনে গভীর ছাপ রেখে যায়। ডারবানে পৌছেই রাসকিন-এর শিক্ষাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার উদ্দেশে ডারবান থেকে চৌদ্দ মাইল দূরে কিছু ফলের গাছপালা ও একটি পুরনাে বাড়িসহ একশাে একর জমি কিনে ফেলে তার নাম রাখলেন ফিনিস্ সেটলমেন্ট।
এবার থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার কাজের ফাকে ফাকে মােহনদাস ম্যাসমুলেয়রের লেখা India What Can It Teach Us? এবং থিয়ােসফিকাল সােসাইটি প্রকাশিত প্রধান প্রধান উপনিষদগুলি পড়েন। উপনিষদের সঙ্গে হজরত মুহম্মদ সম্বন্ধে ওয়াশিংটন আরভিন আর কার্লাইল-এর লেখা দুখানি বই পড়ে মুহম্মদ সম্বন্ধে বিশেষ শ্রদ্ধান্বিত হয়ে ওঠেন। এই বইগুলির পাশাপাশি টলস্টয়েরও কয়েকখানি বই পড়েন আর সে প্রসঙ্গে আত্মজীবনীতে লেখেন I made too an intensive study of Tolstoys books. The Gospels in Brief, What to Do? and other books made a deep impression on me, I began to realize more and more the infinite possibilities of universal love.”৫
কিন্তু এটা লক্ষণীয় ব্যাপার যে, যে টলস্টয়ের সম্বন্ধে গান্ধী জির এত উচ্চ ধারণা, এত শ্রদ্ধা সত্ত্বেও টলস্টয়ের অন্য সাহিত্য, যেমন গল্প-উপন্যাস সম্বন্ধে, বিশেষত যুদ্ধ ও শান্তি এবং ‘আনা কারেনিনা’ যে-দুটি উপন্যাস সমগ্র ইউরােপ ও উনবিংশ শতাব্দী শেষের বিশ্বকে তুমুল আলােড়িত করেছিল সে-দুটি সম্বন্ধে কোনও আগ্রহ অনুভব করেছিলেন কিনা বলে জানা যায় না। অথচ টলস্টয়ের যুদ্ধ ও শান্তি এবং আনা কারেনিনা এবং সে সঙ্গে ‘ক্রয়েতজার সােনাটা’- এই তিনটের বিষয় অথবা প্রসঙ্গ সম্বন্ধে গান্ধী জির নিজের যথেষ্ট আগ্রহ জিজ্ঞাসা ছিল। ‘যুদ্ধ ও শান্তি’ নাম থেকেই বােঝা যায় উপন্যাসটির বিষয় কী এবং এই বিষয়টি যে সমগ্র মানব ইতিহাসের একটি
প্রধান বিষয় তা বুঝতে বিশেষ বিদ্যাবুদ্ধির প্রয়ােজন হয় না। এবং ওই বিষয়টির বিপ্রতীপেই উদগত হয়েছে গান্ধী জির প্রিয় বিষয় অহিংসার মহিমা। আনা কারেনিনার মধ্যে আছে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সমাজবন্ধন বিষয়ক এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার ও ব্যক্তির নিজস্ব জীবন সংক্রান্ত বহু গৃঢ় জিজ্ঞাসা –এইসব জিজ্ঞাসা গান্ধীজিকেও আজীবন ভাবিয়েছে। আর নিজে জর্জরিত হয়েছেন যৌন প্রবৃত্তির যে তাড়না দিয়ে সেই তাড়না নিয়েই টলস্টয় লিখেছেন, ‘ক্ৰয়েতজার সােনাটা’।
টলস্টয়ের জীবন সম্বন্ধেই বা মােহনদাস কতটা জানতেন তা বলা মুশকিল। এক ধনী বনেদি পরিবারে ১৮২৮ সালের ২৮ আগস্ট মতান্তরে ৯ সেপ্টেম্বর কাউন্ট লিয়াে টলস্টয়ের জন্ম। আর ১৯১০ সালের ৭ নভেম্বর মতান্তরে ২০ নভেম্বর অসহায় অসুস্থ অনিকেত অবস্থায় তার মর্মান্তিক মৃত্যু। এই ৮২ বছরের দীর্ঘ জীবনের প্রথমার্ধ কেটেছে বড় লােকের বখাটে বজ্জাত ছেলের মতাে, দ্বিতীয়ার্ধ কেটেছে সাধুসজ্জন মহাপুরুষের মতাে, তাই আমরা তাকে ঋষি টলস্টয় বলে উল্লেখ করি। প্রথম জীবনের অভিজ্ঞতাবলি নিয়ে লেখা “শৈশব, কৈশাের’, ‘যৌবন’, ‘সেভাস্ত পল’ প্রভৃতি উপন্যাসগুলির জন্য তিনি প্রচুর প্রশংসা এবং পরে যুদ্ধ ও শান্তি এবং ‘আনা কারেনিনা’ লিখে বিশ্বখ্যাতি পান। বিশেষত যুদ্ধ ও শান্তি’ উপন্যাসটির নাম যখনই মনে পড়ে তখনই মনে হয় এর চেয়ে মহান উপন্যাস কি আর কেউ লিখেছেন? এর চেয়ে মহান উপন্যাস কি হতে পারে? তখনই মনে প্রশ্ন জাগে যুদ্ধ ও শান্তির চেয়ে আনা কারেনিনা’ কি আরও মনােগ্রাহী আরও সম্মােহক নয়? তারপরেই প্রশ্ন জাগে নাকি যে হৃদয়াবেগের দ্বিধাদ্বন্দ্বে উত্তাল ‘আনা কারেনিনা’ লেখার পরে এই লেখক কীভাবে নিজের দুর্বার শিল্পীসত্তার সম্মুখীন হবেন? নিজের সৃষ্টিকে দেখে বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্কেনস্টাইন যেমন অভিভূত ও আতঙ্কিত হয়েছিলেন তেমনই কি আনার পরিণাম দেখে টলস্টয়ও বিস্মিত ও সন্ত্রস্ত হয়েছিলেন? নাকি সপ্তম সন্তানের দশমাস বয়সে মৃত্যুর পরে পরে জন্মগ্রহণের আগেই অগঠিত কন্যা সন্তানের মৃত্যু তাকে এমনভাবে আলােড়িত করেছিল যে তিনি ক্রমশ মহর্ষি বাল্মীকিতে পরিণত হলেন? এসব তথ্য বা প্রশ্ন কি কখনাে মােহনদাসের মনে এসেছিল? অবশ্য আগেই বলেছি যে গান্ধীজির কোনাে কালেই অর্থকর বা পাঠ্যবইয়ের বাইরে বই পড়ার অভ্যাস ছিল না, যা পড়তেন নিজের বক্তব্য ও ব্যাখ্যাকে জোরদার বা শক্তিশালী করার জন্যই পড়তেন। তাঁর কাছে সমস্তই ছিল মামলার বিষয়। যা পড়তেন তা মামলায় লড়বার জন্যই পড়তেন। তিনি ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে এমন এক মামলাতে জড়িয়ে পড়লেন যে ব্যাপারে তার প্রয়ােজন পড়ল টলস্টয়ের পরামর্শ ও প্রেরণার।
যে মামলা বা ঘটনার থেকে মােহনদাসের মাথায় টলস্টয়কে চিঠি লেখার তাগিদ জোগায় সেটি হল দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমিপুত্র জুলুদের তথাকথিত অভ্যুত্থান। প্রকৃতপক্ষে এই অভ্যুত্থানটি ঘটে ১৯০৬-এর এপ্রিল মাসে এবং চার মাসের মধ্যেই শ্বেতাঙ্গ সরকারের শাসনে আসে। অভ্যুত্থানটি প্রকৃতপক্ষে স্থানীয় অধিবাসীদের সদ্য আরােপিত এক নতুন কর দেওয়ার ব্যাপারে সংঘবদ্ধ প্রতিবাদের আন্দোলন। এই বিষয়টি শ্বেতাঙ্গ বর্বরতার বাস্তবতা সম্বন্ধে মােহনদাসের চোখ খুলে দেয়। যেমন বােয়ার যুদ্ধের সময় ইংরেজ বাহিনীর সেবা-শুশ্রুষার জন্য অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা গড়ে তুলেছিলেন এবারও তেমন এক বাহিনী গড়ে তুললেন জুলুদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য। জুলুদের এই অভ্যুত্থান জুলাই মাসেই ইংরেজ শাসকদের নিয়ন্ত্রণে এলেও ট্রান্সভাল সরকার ২২ আগস্ট জুলুদের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন ভারতীয়দের দমিত করার জন্য এই মর্মে এক বিশেষ অধ্যাদেশ জারির কথা ঘােষণা করে যে এবার থেকে অষ্টম বা তদূর্ধ্ব বয়ঃপ্রাপ্ত প্রত্যেক ভারতীয়, আরবীয়, তুর্কি তথা এশীয়কে রেজিস্ট্রার অব এশিয়াটিকসের কাছে জন্মচিহ্ন ও অঙ্গুলি ছাপসহ নাম নথিভুক্ত করতে হবে এবং ওই নথিকরণের প্রমাণ সর্বদা সঙ্গে রাখতে হবে। অন্যথায় মােটা জরিমানা বা তিন মাসের জেল হবে নতুবা ট্রান্সভাল থেকে বহিষ্কৃত হতে হবে। গান্ধীর নেতৃত্বে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসােসিয়েশনের আপত্তি সত্ত্বেও সেপ্টেম্বরের শুরুতেই অধ্যাদেশের প্রস্তাবটি আইনে পরিণত হয়। তখন ১১ সেপ্টেম্বর জোহান্সবার্গের জিউইশ এম্পায়ার থিয়েটারে প্রায় ৩০০০ ভারতীয়ের এক প্রতিবাদ সভা হয়। গৃহীত সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণটি হল অর্ডিন্যান্সটাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা। তার জন্য সরকার যে শাস্তি দেবে সেই শাস্তিকে হাসিমুখে মেনে নেওয়া হবে। এই আন্দোলনকে কী নাম দেওয়া হবে? গান্ধী আন্দোলনটির নাম দিলেন Passive resistance অর্থাৎ নিস্ক্রিয় প্রতিরােধ। এই আন্দোলনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গান্ধী সরকারকে পরপর দুটি স্মারকলিপি পাঠান। জবাবে সরকার অর্ডিন্যান্সের পরিসর থেকে মহিলাদের বাদ দিলেও অধ্যাদেশের অন্যান্য অংশ বহাল রাখল। ট্রান্সভাল তখনাে ব্রিটিশ রাজমুকুটের অধীনে এক উপনিবেশ। তাই সমাবেশে স্থির হল যে ওই অধ্যাদেশ রদ করার জন্য আবেদন জানিয়ে এই প্রতিনিধিমণ্ডল ইংল্যান্ডে পাঠানাে হবে। সেই অনুসারে মােহনদাস গান্ধী ও মিস্টার এইচ. ও. আলী ১৯০৬ সালের ৩ অক্টোবর ইংল্যান্ড রওনা হলেন। ইংল্যান্ড যাত্রার আগে গান্ধী বললেন, ‘We shall of course try our best, but there is little chance of our prayer being granted …. we shall explain our case to all our friends in England. You too will do your duty by not submitting to registration.”৬
বিভিন্ন দৈনিক পত্র-পত্রিকাতে গান্ধী চিঠিপত্র লিখলেন, তার সভা ও বক্তৃতার সংবাদ প্রকাশিত হল নানা পত্র-পত্রিকাতে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিটিশ ইন্ডিয়া কমিটি বলে একটি সংস্থাও গঠিত হল। অবশেষে ডিসেম্বর মাসে দক্ষিণ আফ্রিকাতে তাদের প্রত্যাবর্তন।
কিন্তু উল্লেখযােগ্য কোনাে ফল ফলল না। ট্রান্সভাল ও অরেঞ্জিয়া স্বায়ত্তশাসন পেল ৬ ডিসেম্বর এবং ট্রান্সভাল পার্লামেন্ট প্রথম অধিবেশনেই ১৯০৭-এর ২১ মার্চ এমন একটি আইন পাস করল যা ছিল পূর্বোক্ত অধ্যাদেশেরই অনুলিপি। আইনটি কার্যকর হল ১ জুলাই এবং ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সমস্ত ভারতীয়কে নাম নথিভুক্ত করতে হবে বলে আদেশ ঘােষিত হল। তখন মােহনদাস প্যাসিভ রেজিস্টান্স অ্যাসােসিয়েশন স্থাপন করে জোরদার করলেন আন্দোলন আর সরকারও প্রিটোরিয়া ও বিভিন্ন শহরে নথিকরণের দপ্তর খুলে যেতে লাগল। নথিকরণের শেষ দিনে ৩১ জুলাই এক মসজিদ প্রাঙ্গণে ১৩০০০ ভারতীয় সমবেত হলে জেনারেল ম্যাটস বললেন, এর পরে কোনাে অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য ভারতীয়দের নেতারাই দায়ী হবে। কিন্তু সে শাসানিতে কোনাে কাজ হল না দেখে সরকার নথিকরণের শেষ দিন পেছাতে লাগল। শেষে দেখা গেল ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ১৩০০০-রও বেশি ভারতীয়ের মধ্যে নাম নথিভুক্ত করেছে মাত্র ৫১১ জন। গান্ধীর নামে গ্রেপ্তারি পরােয়ানা জারি হল ২৬ ডিসেম্বর, পরােয়ানা পেয়ে গান্ধী জানালেন যে তিনি গ্রেপ্তার স্বীকার করবেন পরদিন। সেদিনই এক জরুরি সভা ডেকে তিনি বললেন ভারতীয়রা কখনাে বিল্পবী ভাবনার পক্ষে নয়, কিন্তু এবার তাদের মনে সরকারি পদক্ষেপের ফলে বিপ্লবী আবেগ জেগে উঠতে শুরু। করেছে। পরদিন আদালতে তার ও তার নির্দেশ মান্যকারীদের বিচারে কারাদণ্ড হল। আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে সমবেত জনতার উদ্দেশে যে সংক্ষিপ্ত ভাষণটি দেন তার শেষ কথাটা ছিল, এটা একটা ধর্মীয় যুদ্ধ, আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ব। কারাগারে সত্যাগ্রহীদের নিজস্ব পােশাক পরার সুযােগ দেওয়া হয়, কিন্তু তারা কয়েদিদের মার্কামারা পােশাকই পরতেন। এক মাস পর ১৯০৮-এর ৩০ জানুয়ারি গান্ধী ও স্মাটস-এর কথাবার্তার ভিত্তিতে গান্ধী মুক্তি পান এবং সেদিনই সন্ধ্যাতে নিউ টাউনের মসজিদ চত্বরে সমবেত এক হাজার ভারতীয়কে স্বেচ্ছায় নাম নথিভুক্ত করার পরামর্শ দিলেন। গান্ধীর কথায় আন্দোলনে নামার পরে এখন তার মুখে অন্য কথা শুনে একজন পাঠান ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে এমন মারে যে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। এদিকে স্মাটস কালা কানুন প্রত্যাহার করার পরিবর্তে তাতে আরাে কঠোর ব্যবস্থা যােগ করলেন। তখন। যাঁরা স্বেচ্ছায় নাম নথিভুক্ত করেছিলেন তারা নথি থেকে নাম খারিজ করার জন্য আর্জি জানালেন। সরকার সে আর্জি অগ্রাহ্য করলে গান্ধী ভারতীয়দের বললেন, নথিকরণেরশংসাপত্র সর্বসমক্ষে আগুনে পােড়াতে।বহু ভারতীয় বিনা লাইসেন্সে রাস্তায় নেমে হকারগিরি শুরু করেন যা আইন অমান্যেরই নামান্তর। আইন অমান্যে অপরাধে প্রায় একশাে ভারতীয়কে গ্রেপ্তার করে বিচারে জরিমানা করা হল, এবং জরিমানা না দেওয়ার জন্য আদেশ হল কারাদন্ডের। কাউকে কাউকে ধরে ফেরত পাঠানাে হলাে ভারতবর্ষে। অতঃপর গান্ধীর নির্দেশে ট্রান্সলের সমস্ত ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ২৩ জুলাই বাণিজ্যিক হরতাল পালন করে। তারপর স্থির হল ১৬ আগস্ট জোহান্সবার্গের হামিদিয়া মসজিদ চত্বরে ভারতীয়রা সমবেত হয়ে নিজ নিজ শংসাপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ্যে পােড়াবে। সেদিন যা হল তাকে এক ব্রিটিশ সংবাদপত্র অষ্টাদশ শতাব্দীতে মার্কিন বিপ্লবকালের বস্টন টী পার্টির মতাে অগ্নৎসব বলে বর্ণনা করে। জেনারেল ম্যাটস আবার আলােচনার জন্য গান্ধীকে ডেকে পাঠালেন, কিন্তু আলােচনা ব্যর্থ হলে আর এক দফা শংসাপত্র পােড়ানাে হল ২৩ আগস্ট। ভারতীয়দের মধ্যে যেন জোয়ার জাগল সরকারি আদেশ অমান্য করার। আরও কয়েক জনের সঙ্গে গান্ধীকে আবার গ্রেপ্তার করা হল ২৯ সেপ্টেম্বর। বিচারে শাস্তি হল দুমাসের কারাদণ্ড।
গান্ধী -র এই শাস্তির প্রতিবাদে লন্ডনে ১৬ অক্টোবর এক সভা হল যাতে বিপিনচন্দ্র পাল, লালা লাজপত রাই, সাভারকর, আনন্দ কুমারস্বামী প্রমুখ বিশিষ্ট ভারতীয় নেতৃবৃন্দ সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন। এদিকে জোহান্সবার্গের এক জেলে দুর্ধর্ষ অপরাধীদের সঙ্গে দুমাস কারাবাসের মেয়াদ শেষ হলে মুক্তি পেয়ে মােহনদাস বাসায় এসে দেখলেন কস্তুরবা রােগে কঙ্কালসার হয়ে গেছেন। তাঁকে ফিনিকস সেটলমেন্ট-এ নিয়ে এসে গান্ধী নিজের হাতে স্ত্রীর সেবা করতে লাগলেন। এভাবে ১৯০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাতে গান্ধীর আন্দোলন ও আদর্শ বিশ্বের ভাবুক সমাজের ইতিহাসে এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে উঠল।শংসাপত্র না থাকার জন্য গান্ধীকে আবার ১৯০৯ সালের জানুয়ারিতে গ্রেপ্তার করে রাজ্যের সীমানার বাইরে ছেড়ে দিয়ে এলে তিনি তখনই ফিরে আসেন। তাকে আবার ২৫ ফেব্রুয়ারিতে গ্রেপ্তার করে দেওয়া হল তিন মাসের জন্য সশ্রম কারাদণ্ড। জেলে থাকাকালে তিনি টলস্টয়, থেরাে, এমার্সন, কার্লাইল প্রমুখের রচনার সঙ্গে গীতা, বাইবেল, মনুস্মৃতি ইত্যাদি পাঠ করেন। মে মাসের শেষ সপ্তাহে মুক্তি পেয়ে আবার পুরােদমে শুরু করলেন তাঁর আরব্ধ আন্দোলন। ব্রিটিশ সরকার ও ব্রিটিশ সমাজকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে গান্ধী ও শেঠ হাজি হাবিব আবার জুন মাসের শেষাশেষি এসে হাজির হলেন লন্ডনে এবং এবারে প্রায় চার মাস লন্ডন বাস করেন। এই সময়ই লন্ডনে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল অ্যাসােসিয়েশনের বার্ষিক সভায় স্যার কার্জন উইলিকে ও আর একজন ইংরেজকে গুলি করে হত্যা করেন মদনলাল ধিংড়া, বিচারে তার মৃত্যুদণ্ড হয়, সেই রায়ের উত্তরে মদনলাল যে-তেজোদৃপ্ত ভাষণ দেন তাকে উইস্টন চার্চিল দেশপ্রেমের সবচেয়ে সুন্দর ভাষণ বলে বর্ণনা করেন। কিন্তু গান্ধী বলেন, ধিংড়া দেশপ্রেমিক বটে, তবে তার সে-প্রেম ছিল অন্ধ। তিনি ভুলভাবে দেহত্যাগ করেছেন, এর পরিণাম দেশের পক্ষে ক্ষতিকর। সন্ত্রাসবাদ দিয়ে কীভাবে স্বাধীনতার সংগ্রামকে সঞ্চালনা করা যাবে তা নিয়ে গান্ধী গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করে একদিকে মাতৃভাষা গুজরাটিতে ১৯০৯এর নভেম্বর লিখে ফেললেন তাঁর বিখ্যাত রচনা ‘হিন্দ স্বরাজ’, অন্যদিকে তার আগের মাসেই ইংরেজিতে লিও টলস্টয়কে লিখলেন তার প্রথম পত্র। এখানে বলে রাখি যে গান্ধীবাদের মূল সূত্রগুলি ‘হিন্দ স্বরাজ’-এই প্রথম উপস্থাপিত হয় এবং আজও গান্ধীভাবনার মূল আকর বলে বিবেচিত হয়। যা হােক, গান্ধী ১৯০৯-এর ১ অক্টোবর এইভাবে টলস্টয়কে তার প্রথম চিঠি শুরু করলেন, ‘I take the liberty of inviging your attention to what has been going in the Transvaal (South Africa) for nearly three years.’ . চিঠির শেষাংশে টলস্টয় লেখেন যে প্রচলিত ব্যবস্থার ফলে অবিচারের বােধ সারা বিশ্বে বেড়ে উঠছে এবং অত্যাচারীর বিরুদ্ধে প্রতিরােধ ও সংগ্রাম নানা রূপ ধরে দেশে দেশে প্রকাশ পাচ্ছে। ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে ট্রান্সলের ভারতীয়দের সংগ্রাম তেমনই একটা রূপ। সংগ্রামের এইরূপটানীতিগতভাবে অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ ও ফলদায়ক —ইতিহাসে এই প্রথম হিংসা বর্জিত প্রতিরােধের সংগ্রাম করার দৃষ্টান্ত ও বাস্তব প্রমাণ।
“There is in that colony a British Indian population of nearly 13,000. These Indians have for several years labored under the various legal disabilities. The prejudice against colour and in some respect against Asiatics is intense in that colony. It is largely due, so far as Asiatics are concerned, to trade jealousy. The climax was reached three years ago, with a law which I’and many others considered to be degrading and calculated to unman those to whom it was applicable’৭
সমতাবলম্বীদের মতাে তাঁর পক্ষেও অমন আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করা সম্ভব নয় এই কথা লিখে তিনি যােগ করলেন, British Indians before whom the position was fully explained, accepted the advice that we should not submit to the legislation, but that we should suffer imprisonment, or whatever other penalties the law may impose for its breach. The result has been that nearly onehalf of the Indian population, that was unable to stand the heat of the struggle, to suffer the hardships of imprisonment, have withdrawn from the Transvaal rather than submit to law which they have considered degrading. Of the other half, nearly 2,500 have for conscience’s sake allowed themselves to be imprisoned, some as many as five times. The imprisonments have varied from four days to six months; in the majority of cases with hard labour. Many have been financially ruined.
At present there are over hundred passive resisters in Transvaal goal. Some of these have been very poor men, earning their livelihood from day to day. The result has been that their wives and children have had to be supported out of public contributions, also largely raised from passive resister. This has put a severe strain upon British Indians, but in my opinion they have risen to the occasion. The struggle still continues and one does not know when the end will come. This, however, some of us at least have seen most clearly, that passive resistance will and can succeed where brute force must fail. We also notice that in so far as the struggle has been prolonged, it has been due largely to our weakness, and hence to a belief having been engendered in the mind on the Government that we would not be able to stand continued suffering.”৮
এরপরে গান্ধী তার ইংল্যান্ডে আসার কারণ ব্যাখ্যা করে লেখেন যে তিনি অবশ্য অচিরে কোনাে সুফল লাভের আশা করেন না, কিন্তু আশা করেন যে নিস্ক্রিয় প্রতিরােধের আদর্শ প্রচার পাবে ও সচেতন মানুষের চিন্তাশক্তিকে সক্রিয় করবে। তিনি জানতে চান যে পুরাে বিষয়টা সম্বন্ধে টলস্টয়ের প্রতিক্রিয়া ও ভাবনা কী। সেই সঙ্গে ভ্যাঙ্কুবার প্রবাসী ও ‘ফ্রি হিন্দুস্তান’ পত্রিকার সঞ্চালক ভারতীয় বিল্পবী তারকনাথ দাসকে ১৯০৮ সালে লেখা যে-চিঠিতে ধর্মে অন্ধ বিশ্বাসের বদলে বিজ্ঞানে অন্ধবিশ্বাসের, অবতারবাদ ও জমান্তরবাদের, সংবিধানবাদ ও বিপ্লববাদের, ধনী ও শাসকশ্রেণির বিলাসিতা ও সম্ভোগের জন্য সমস্ত উপকরণ উৎপাদন কাণ্ড, সবরকম হিংসাত্মক কাণ্ড প্রভৃতির বিরূপ সমালােচনা করেছেন সে-চিঠিখানির অনুবাদ করে ভারতীয়দের মধ্যে বিতরণের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেন।
এই চিঠির মাধ্যমেই টলস্টয় প্রথম জানলেন গান্ধীর নাম এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ভারতীয়দের কথা। উত্তরে টলস্টয় ৮ অক্টোবর লিখলেন, ‘I have just received your very interesting letter, which gave me much pleasure. God help our dear brothers and co-workers in the Transvaal! Among us, too, this fight between gentleness and brutality, between humility and love and pride and violence, make itself ever more strongly felt, especially in one of the sharpest conflicts between religious duty and the State laws – expressed by refusals to render military service. Sạch refusals occur more and more frequently’.৯
এই চিঠিতে তারকনাথ দাসকে লেখা দীর্ঘ চিঠিতে অনুবাদ করে ভারতীয়দের মধ্যে বিতরণ করার প্রস্তাবটিতে টলস্টয় আপন সন্তোষের কথাও স্বীকার করেন। স্বভাবতই টলস্টয়ের চিঠিটি পেয়ে খুবই উৎসাহিত বােধ করলেন গান্ধী। এবার তিনি টলস্টয়কে তার দ্বিতীয় চিঠিখানি লিখলেন—
Hotel Westminister Palace,
4, Victoria Street, London W.C.
10.XI. 1909.
Dear Sir,
I beg to tender my thanks for your registered letter in connection with the letter addressed to a Hindu (an Indian-Translator’s note), and with the matters that I dealt with in my letter to you.
Having heard about your failing health I refrained, in order to save you the troble from sending an acknowledgement, knowing that a written expression of my thanks was superfluous formality; but Mr. Aylmer Maude whom I have now been able to meet reassured me that you are keeping good health indeed and that unfailingly and regularly you attend to your correspondence every morning. It was very gladsome news to me and it encourages me to write to you further about matters which are, I know, of the greatest important according to your teaching.
I beg to send you herewith a copy of a book written by a friend – an Englishman who is at present in South Africa in connection with my life, in so far as it has a bearing on the struggle with which I am so connected and to which my life is dedicated. As I am very anxious to engage your active interest and sympathy I thought that it would not be considered by you as out of the way for me to send you the book.
In my opinion, this struggle of the Indians in the Transvaal is the greatest of modern times, as it has been idealised both as to the goal as also to the methods adopted to reach the goal. I am not aware of a struggle in which the participators are not to derive any personal advantage at the end of it and in which 50 per cent of the persons affected have undergone great suffering and trial for the sake of a principle. It has not been possible for me to advertise the struggle as much as I should like. You command, possibly, the widest public today. If you are satisfied as to the facts you will find set forth in Mr. Doke’s book, and if you consider that the conclusions I have arrived at are justified by the facts, may I ask you to use your influence in any manner you think fit to popularise the movement? If it succeeds, it
will be not only a triumph of religion, love and truth over irreligion, hatred, and falsehood but it is highly likely to serve as an example to the millions in India and to people in other parts of the world, who may be down-trodden and will certainly go a great way towards breaking up the party of violence, at least in India. If we hold out to the end, as I think we would, I entertain not the slightest doubt as to its ultimate success and your encouragement in the way suggested by you can ony strengthen us in our resolve.
The negotiations that are going on for a settlement of the question have practically fallen through, and together with my colleagues I return to South Africa this week and invite imprisonment. I may add that my son has happily joined me in the struggle and is now undergoing imprisonment with hard labour for six months. This is his fourth imprisonment in the course of the struggle.
If you would be so good as to reply to this letter, may I ask you would be so good as to reply to me at Johannesburg. S.A. Box 6522.
Hoping that this will find you in good health. I remain, Your obedient servant, M.K. Gandhi.১০
এই চিঠিতে তৃতীয় অনুচ্ছেদে যে বইটির উল্লেখ আছে সেই বইটি ছিল গান্ধী র বিশেষ গুণগ্রাহী ইংরেজ মিশনারি জোসেফ আই ডােক-এর লেখা M.K. Gandhi, an Indian Patriot in South Africa, যা ১৯০৯ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়। গান্ধীর কথা রেভারেন্ড ডােক বােধহয় প্রথম জেনেছিলেন ১৯০৮-এর ৩০ জানুয়ারি। সে দিন স্মাটসের আশ্বাসের সূত্রে মােহনদাস নাম নথিকরণের পরামর্শ দিলে কয়েকজন ভারতীয় পাঠান তার উপর এমন হামলা চালায় যে গান্ধী গুরুতর আহত হন। তখন ঘটনাক্রমে সেখানে রেভারেন্ড ডােক পৌছান এবং তিনিই আহত গান্ধীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তখন তিনি দেখেন যে গান্ধী রােগশয্যা থেকে অ্যাটর্নি জেনারেলকে এই মর্মে চিঠি দিচ্ছেন যাতে তার ওপর হামলাকারীর বিরুদ্ধে কোনাে আইনি ব্যবস্থা না নেয়। এইভাবে গান্ধীর সঙ্গে রেভারেন্ড ডােক-এর পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতার শুরু। পরের বছর এই অভিনবচরিত্রটির ওপরে ডােক লেখেন তাঁর উল্লেখিত বইটি যা গান্ধী পাঠিয়ে দেন টলস্টয়কে। সম্ভবত শারীরিক অসুস্থতার কারণে গান্ধী র দ্বিতীয় চিঠিখানির উত্তর টলস্টয় দিতে পারেননি, কিন্তু তিনি যে গান্ধীর পাঠানাে বইখানি সাগ্রহে পড়েন তার প্রমাণ আছে বইটির মার্জিনে টলস্টয়ের হাতে লেখা মন্তব্যগুলিতে।
এই দফাতে মােহনদাস লন্ডনে এসেছিলেন ১৯০৯-এর ১০ জুলাই আর চার মাস পরে লন্ডন ছাড়লেন ১৩ নভেম্বর। যে উদ্দেশ্যে লন্ডনে এসেছিলেন তা পূর্ণ হয়নি। কারণ জেনারেল ম্যাটস ও বােথা আগে থেকেই লন্ডনে বসে গান্ধীর ব্যর্থতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। প্রায় পাঁচ মাস লন্ডন বাসকালে জাতীয়তাবাদী, সংবিধানবাদী, সন্ত্রাসবাদী প্রভৃতি বিভিন্ন মতাবলম্বী ভারতীয়দের সঙ্গে ভারতের সমস্যা ও সমাধান সম্বন্ধে গভীর ও বিশদভাবে আলােচনা করে স্বরাজের যে অর্থ অনুধাবন করেন তা সম্পাদনের জন্য আপন কর্মপদ্ধতি নির্ণয় করেন। তিনি এই বিশ্বাসে উপনীত হন যে। রেলপথ, যন্ত্রপাতি ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত আরাম ও সুখপ্রসূ অভ্যাসগুলােই মানুষকে এক বিশেষ ব্যবস্থার দাস করে রেখেছে। এরপর আফ্রিকার উদ্দেশে সমুদ্র যাত্রাকালে ১৩ নভেম্বর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত জাহাজে বসে টানা দশ দিন ধরে মাতৃভাষা। গুজরাটিতে সমাজ ও সভ্যতা সদ্যোপলব্ধ বক্তব্য ও বিচারগুলিকে একটি ছােটো মাপের বইয়ের আকারে লিখে ফেললেন, বইটির নাম রাখলেন ‘হিন্দ স্বরাজ। বইটির মূল প্রতিপাদ্য হল ইংরেজ বা ব্রিটিশরা ভারতকে শাসন করছে না, মানুষের গৌরবকীর্তি বলে বিদিত গত তিন-চারশাে বছরে আবিস্কৃত উপকরণ ও প্রতিষ্ঠানের তথা বাস্তবের উন্নয়নের নামে এক প্রকার ভ্রান্ত ধারণার মাধ্যমে বর্তমান সভ্যতাই ভারতকে শাসন করছে। ‘হিন্দ স্বরাজ’ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হলে বম্বে সরকার কর্তৃক ১৯১০-এর মার্চ মাসে নিষিদ্ধ হয় যদিও প্রাথমিকভাবে রচনাটি লিখতে গান্ধী প্ররােচিত হয়েছিলেন অনেক ভারতীয়/দেশপ্রেমিকের সশস্ত্র বিপ্লবের প্রতি আকর্ষণের বিরূপ প্রতিক্রিয়াতে। গুজরাটি ভাষাতে বইটি নিষিদ্ধ হওয়াতে গান্ধী সেটি ইংরেজিতে অনুবাদ করে Indian Home Rule নামে প্রকাশ করেন। ইংরেজি অনুবাদে বইটি পড়ে গােখলে মন্তব্য করেন যে লেখক নিজেই এক বছর পরে এর সব মত উল্টে দেবেন। কিন্তু দশ বছর পরেও এর একটি মাত্র শব্দ পাল্টানাে বাকি সব কিছুই বহাল রাখেন এবং বলেন যে তিনি শুধু চেষ্টা করেছেন টলস্টয়, রাসকিন, থেরাে, এমার্সন প্রমুখ লেখকের ও ভারতীয় দার্শনিকদের শিক্ষা অনুসরণ করতে। কয়েকে বছর ধরে টলস্টয়ই আমার অন্যতম গুরু।
টলস্টয়ের কাছ থেকে ১৯০৯ সালের ১০ নভেম্বর তারিখের লেখা চিঠিখানির উত্তর না পেলেও ১৯১০-এর এপ্রিলে গান্ধী আবার টলস্টয়কে তার তৃতীয় চিঠিটি পাঠালেন—
‘You will recollect my having carried on correspondence with you whilst I was temporarily in London. As a humble follower of · yours, I send you herewith a booklet which I have written. It is my own translation of a Gujarati writing. Curiously enough, the original writing has confiscated by the Government of India. I, therefore, hastened the above publication of the translation. I am most anxious ņot to worry you, but if your health permits it and if you can find the time to go through the booklet, needless to say I shall value very highly your criticism of the writing. I am sedning also a few copies of your Letter to a Hindoo, which you authorised me to publish. It has been translated in one of the Indian languages also.”১১
এই চিঠির সঙ্গে গান্ধী পাঠালেন তার লেখা এক কপি Indian Home Rule বইখানি এবং অনুরােধ করলেন ওই বইখানি পড়ে মতামত জানাতে, কেননা লেখকের অন্যতম গুরুত্ব বক্তব্য ও বিচার জানার জন্য তিনি অত্যন্ত আগ্রহী। গান্ধীর এই চিঠি পেয়ে টলস্টয় যে কয়েকদিন ধরে Indian Home Rule আর রেভারেন্ড ডােক-এর লেখা গান্ধীর ওপরে বইটি মন দিয়ে পড়েন সে কথা তিনি তাঁর ডায়রিতে নিজেই লিখেছেন। একই সময় তার প্রিয় সঙ্গী ভি. জি. চেটকোডকে লেখেন,
Now and yesterday evening. I have been reading a book (one earlier, another later) sent to me with a letter by a Hindu thinker and fighter against English domination, Gandhi, who is fighting by means of Passive resistance. He is a man very close to us, to me, he has read my writings and has translated into an Indian language my ‘Letter to a Hindu’while his book Indian Home Rule in a Indian language had been proscribed by the British government. He has asked for my opinion about his book. I would like to write to him at length.’১২
কিন্তু শেষ পর্যন্ত টলস্টয়—সম্ভবত স্বাস্থ্যের কারণে—গান্ধীকে বিস্তৃত চিঠি লেখার ইচ্ছে পরণ করতে পারেনি। পরিবর্তে বইদুটির পক্ষে সপ্রশংস কিছু মন্তব্য করে গান্ধীকে লেখেন,
I have read your book with great interest, for I consider the question there dealt – passive resistance – ‘to be of the greatest importance not only for Indians, but for the whole of mankind.১৩
এর পরে গান্ধীর ওপরে ডােকের লেখা বইটির সম্বন্ধে কিছু অনুকূল মন্তব্য করে চিঠির উপসংহারে যােগ করেন।
“I am not very well at present, and therefore refrain from writing all that is in my heart about your book and about your activity in general, which I value-highly. I will, however, do so as soon as I am better.১৪
এদিকে ট্রান্সভাল ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে আত্মমর্যাদা রক্ষার জন্য ভারতীয়দের সংগ্রাম চলতেই থাকল আর শ্বেতাঙ্গ ঔপনিবেশিক শক্তিও ভারতীয়দের মনােবল ও সংহতি চূর্ণ করার জন্য ক্রমশ হিংস্র হয়ে উঠতে লাগল। ফলে শত শত ভারতীয় কর্মহীন ও গৃহহীন হতে থাকল, বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল তাদের জীবন ও সংসার। এই বিপন্ন ভাগ্যাহত ভারতীয়দের পােষণ ও রক্ষণের জন্য গান্ধীর পাশে এসে দাঁড়ালেন হেরমান কালেনবাখ নামে গান্ধীর গুণমুগ্ধ এক জার্মান ধনী স্থপতি। গ্রামাঞ্চলে তাঁর এগারশাে একর যে জমি ছিল সেখানে কমলালেবু, কলা, আলুবােখরা, কুল প্রভৃতি। নানারকম ফলফলারি হতাে। কালেনবাখ এই জমিটা গান্ধীকে দান করলেন যাতে দুর্দশাগ্রস্ত ভারতীয়রা সেখানে এসে বসবাস ও চাষবাস করতে পারে। এই আবাসনটির নাম দেওয়া হলাে টলস্টয় ফার্ম বা খামার। কৃষিকর্মের সঙ্গে যােগ করা হল, চর্মশিল্প ও দারুশিল্পের কাজকর্ম। স্বনির্ভরতা হল খামারের মূলমন্ত্র। টলস্টয়ের নামে খামারটি নামকরণ করে কালেনবাখ টলস্টয়কে লিখলেন যে তার লেখা পড়ে এতই তিনি উদ্বুদ্ধ হয়েছেন যে তার বিনা অনুমতিতেই তার নামে খামারটির নামকরণ করেছেন। আর টলস্টয় ১৯১০-এর ৬ সেপ্টেম্বর তার ডায়রিতে লিখলেন, ট্রান্সভাল উপনিবেশের নিস্ক্রিয় প্রতিরােধকারীদের কাছ থেকে আনন্দ সংবাদ।
টলস্টয়ের উদ্দেশে গান্ধীও একটি চিঠি লিখলেন। গান্ধীর ১৫ আগস্ট তারিখের চিঠিটি এই —
I am much obliged to you for your encouraging and cordial letter of the 8th May last. I very much value your general approval of my booklet, Indian Home Rule. And, if you have the time, I shall look forward to your detailed criticism of the work which you have been so good as to promise in your letter.’
‘Mr. Kallenbach has written to you about Tolstoy Farm. Mr. Kallenbach and I have been friends for many years. I may state that he has gone through most of the experiences that you have so graphically described in your work My Confessions. No writing has so deeply touched Mr. Kallenbach as your, and, as a spur to further effort in living Mr. Kallenbach as yours; and as a spur to further effort in living up to the ideals held before the world by you, he has taken the liberty, after consultation with me, of naming his farm after you.’
‘Of his generous action in giving the use of the farm for passive resisters, the number of Indian Opinion I am sending herewith will give you full information.’
‘I should not have burdened you with these details but for the fact of your taking a personal interest in the passive resistance struggle that is going on in the Transvaal.’১৫
কালেনবাখ ও গান্ধীর চিঠি দুটি পড়ে, বিশেষত গান্ধীর পাঠানাের Indian Opinion পত্রিকাটি পড়ে স্বভাবতই টলস্টয় খুবই খুশি হলেন। তৎক্ষণাৎ গান্ধীর উদ্দেশে উত্তর হিসেবে একটি চিঠি মুখে মুখে বলে গেলেন তার একান্ত সঙ্গীকে, তারপর সেটি তার লন্ডনপ্রবাসী এক অনুরাগীকে পাঠিয়ে দিলেন সেটি ইংরেজিতে অনুবাদ করে গান্ধীকে পাঠানাের জন্য। এই চিঠিতে টলস্টয় প্রবলভাবে তার প্রিয় প্রেম-এর তত্ত্বকে উপস্থাপন করে লিখলেন যে প্রেমই হল প্রাণের প্রধান বিধান,শক্তি ও সত্য। সমস্ত অন্যায়, অবিচার ও বিপর্যয়ের কারণ হল প্রেমকে অস্বীকার করে তার পরিবর্তে হিংসাকে স্বীকার করা। তারপর লিখলেন,
‘The whole of civilization, outwardly so splendid, was grown up on this strange and flagrant partly intentional but chiefly unconscious – misunderstanding and contradiction. The disastrous consequences of this were clearly visible in all the countries of the world, but it was particularly apparent among the so-called Christian peoples, i.e., in Europe and in America, where the contradictions between the religious consciousness of the simple people who no longer reconciled themselves to violence, and the employment of force bases on violence by ruling powers had reached unseen proportions.
This contradiction had reached the utmost limit. At present the question poses itself evidently in the following manner: either it must be admitted that we donot recognise any discipline, religious or moral, and that we are guided in the organisation of life only by the law of force, of that all the taxes that we exact by force, the judicial and police organisations and above all the army must be abolished.
The insolubility of this contradiction in conditions of the domination regime is proved by the growing criminality, unemployment and absurd luxuries of the rich, augmented without limit, and the awful misery of the poor, the terribly increased number of suicides”. All this was the direct consequence of the fact that the relations between people were bases on violence and oppression, on exploitation of man by man. This was the fruit of the perversion of the feelings of love, friendship and brotherhood which are inherent in men.”১৬
চিঠির শেষাংশে টলস্টয় লেখেন যে প্রচলিত ব্যবস্থার ফলে অবিচারের বােধ সারা বিশ্বে বেড়ে উঠছে এবং অত্যাচারীর বিরুদ্ধে প্রতিরােধ ও সংগ্রাম নানা রূপ ধরে দেশে দেশে প্রকাশ পাচ্ছে। ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে ট্রান্সলের ভারতীয়দের সংগ্রাম তেমনই একটা রূপ। সংগ্রামের এই রূপটা নীতিগতভাবে অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ ও ফলদায়ক—ইতিহাসে এই প্রথম হিংসা বর্জিত প্রতিরােধের সংগ্রাম করার দৃষ্টান্ত ও বাস্তব প্রমাণ। সবশেষে তিনি করুণা ও প্রেমের খ্রিস্টীয় নীতির সঙ্গে আধুনিক বুর্জোয়া নীতির বিরােধের, বিশেষত সেনাবাহিনী ও সমরায়ােজনের উল্লেখ করে লেখেন—
All governments are aware of this contradiction, your British as much as our Russion, and therefore, its recognition will be more energetically opposed by the Governments than any other activity inimical to the State, as we in Russia have experienced and as is shown by the articles in your magazine. The governments known from what direction the greatest danger threatens them, and are on guard with watchful eyes not merely to preserve their interests but actually to fight for their very existence.”১৭
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত টলস্টয়ের এই চিঠি যতদিনে গান্ধীর হাতে পৌছাল ততদিনে টলস্টয় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। এগারাে বছর পরে ১৯২১ সালে যখন একজন sirgilios state force1271 Posa, ‘What are your relations with Count Tolstoy?’ ora strah toscha, “There are of a derted admirer who owes him much in his life.১৮
ইতিমধ্যে মােহনদাস গান্ধীর নাম ও কাজের কথা অর্থাৎ নিস্ক্রিয় প্রতিরােধের যা, সত্যাগ্রহের বিস্ময়কর কাহিনি ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের ও মুসলিম লিগের নেতৃমহলে এবং প্রভাবশালী সমাজে ব্যাপক প্রচার লাভ করেছিল। লাহােরে ১৯০৯ সালে ডিসেম্বরের। শেষে কংগ্রেসের যে অধিবেশন হয় তাতে দক্ষিণ আফ্রিকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রস্তাব করেন এবং অধিবেশন শেষে কংগ্রেসে রাষ্ট্রপতি পণ্ডিত মদনমােহন মালব্য গান্ধীকে টেলিগ্রাম করেন ‘The congress deeply appreciates and admires the heroic straggle of the bretheren, urges continuance and premises the utmost support. Cabling funds. Have cables General Botha to grant relief.১৯
বিখ্যাত শিল্পপতি শ্রীরতন টাটা ১৯১০-এর ১০ জানুয়ারি গান্ধীকে পঁচিশ হাজার টাকা সাহায্য পাঠালেন। তারপর হায়দ্রাবাদের নিজাম, আগা খান প্রমুখ অনেকেই একে একে সাহায্য পাঠাতে লাগলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সত্যাগ্রহীদের জন্য। অবশেষে ১৯১২-র অক্টোবরে গােখলে স্বচক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার চিত্র দেখবার জন্যে কেপটাউনে। গিয়ে পৌছলেন। তিনি জেনারেল আর্টস, জেনারেল লুইস বােথা প্রভৃতি সরকার পক্ষের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে আলােচনা করে আশ্বস্ত হলেন যে এবার ভারতীয়দের সমস্যার একটা ন্যায়সঙ্গত নিস্পত্তি হবে এবং গান্ধীকে বললেন, ‘Gandhi, you must return to India in a year. Everything has been settled. The black Act will be repealed. The racial for will be removed from the immigration law. The £3 tax will be abolished.২০
কিন্তু গােখলের এই আশ্বাসে গান্ধী ফেরেননি, ফিরতে পারেননি, কারণ ১৯১৩ সালের ঐতিহাসিক পদযাত্রা ও সত্যগ্রহ বাকি ছিল। সে আর এক মহান সংগ্রামের কাহিনি।
সূত্রাবলিঃ
- ১. Selected works of Mahatma Gandhi vol-I, Autobiography Navajivan Publishing House, Ahmedabad, 1964, পৃ. ১০০।
- ২. পূর্বোক্ত, পৃ. ১৫৩।
- ৩. পূর্বোক্ত, পৃ. ১৫৪। ,
- ৪. পূর্বোক্ত, পৃ. ৩২১।
- ৫. পূর্বোক্ত, পৃ. ১৭৯।
- ৬. MAHATMA Vol. I, D.G Tendulkar, Bombay, 195, পৃ. ৯৬।
- ৭. Tolstoy and India, Alexander Shifman, Sahitya Akademi, New Delhi, 1978 9.vel
- ৮. পূর্বোক্ত, পৃ. ৮৬।
- ৯. পূর্বোক্ত, পৃ. ৮৭।
- ১০. পূর্বোক্ত, পৃ. ৮৯।
- ১১. পূর্বোক্ত, পৃ. ৯০।
- ১২. পূর্বোক্ত, পৃ. ৯২।
- ১৩. পূর্বোক্ত, পৃ. ৯৩।
- ১৪. পূর্বোক্ত, পৃ. ৯৩।
- ১৫. পূর্বোক্ত, পৃ.৯৪।
- ১৬. পূর্বোক্ত, পৃ. ৯৫।
- ১৭. পূর্বোক্ত, পৃ. ৯৬।
- ১৮. পূর্বোক্ত, পৃ. ৯৬।
- ১৯. MAHATMA Vol.I, D.G Tendulkar Bombay, 1951, পৃ. ২৩৭।
- ২০. পূর্বোক্ত, পৃ. ১৫৮।