• মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
Sunday, June 1, 2025
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ
No Result
View All Result

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ): এক ঐতিহাসিক পটভূমি

নবজাগরণ by নবজাগরণ
March 24, 2021
in ভারতবর্ষের ইতিহাস
4
শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী (রহঃ)ঃ এক ঐতিহাসিক পটভূমি

Share on FacebookShare on Twitter

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম

খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগেই ইসলামের আওয়াজ ভারত উপমহাদেশে পৌঁছেছিল। প্রাচীনকাল থেকেই আরব ব্যবসায়ীগণ ভারত উপমহাদেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখত। বিশেষতঃ শ্রীলঙ্কা ও উপমহাদেশের পশ্চিম উপকূলীয় এলাকাগুলোর সাথে আরবদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। এ পথেই সুদূর চীন পর্যন্ত তাদের বাণিজ্যিক নৌবহর যাতায়াত করত। উপমহাদেশে শুধু বাণিজ্যিক সম্পর্কের মাধ্যমেই ইসলাম আসেনি; বরং হযরত উমর ফারুক (রাঃ)-এর যুগেই এদেশে মুসলমানদের সামরিক অভিযান শুরু হয়। অতঃপর ৯২ হিজরীতে মুহাম্মদ ইবনে কাসিম সিন্ধু জয় করে উমাইয়া খেলাফতের অন্তর্ভুক্ত করেন। উমাইয়া ও আব্বাসীয় খেলাফতের সময়ে উপমহাদেশের পশ্চিম অঞ্চলের সিন্ধু, পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান ও সীমান্ত প্রদেশ পর্যন্ত মুসলমানদের সামরিক তৎপরতা সীমাবদ্ধ ছিল। আব্বাসীয় খেলাফতের শেষভাগে সুলতান মাহমুদ বারংবার অভিযান চালিয়ে পশ্চিম ও উত্তর ভারতের বিশাল এলাকা দখল করেন। মাহমুদ গজনভীর শাসন কালের পর মুহাম্মদ ঘোরীর শাসন শুরু হয়। মুহাম্মদ ঘোরী বারংবার অভিযান চালিয়ে উপমহাদেশের অধিকাংশ এলাকা জয় করেন। অতঃপর দাস, খিলজী ও লোদী বংশের শাসনামলে সর্ব ভারতে মুসলিম শাসনের জয় ডংকা নিনাদিত হয়। পরিশেষে মোঘল শাসনামলে গোটা উপমহাদেশ ইসলামী শাসনের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে। অবশেষে সম্রাজ আলমগীরের সময়ে সাম্রাজ্যের চরম বিস্তৃতি ঘটে। কিন্তু তাঁর পরবর্তী সম্রাটদের দুর্বলতার কারণে মোঘল শাসনের পতন শুরু হয়। এমনকি শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহের হাত থেকে শাসন ক্ষমতা ইংরেজের হাতে চলে যায়। শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রঃ) মোগল সম্রাটদের এই পতনকলের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন।

তখন চারদিকে বিদ্রোহ ও হাঙ্গামা চলছিল। রাজনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষাঙ্গনের সর্বত্রই এক নৈরাজ্যকর অবস্থা চলছিল। চারদিকে জুলুম, শোষণ ও অস্থিরতা বিরাজ করছিল। ঠিক এমনি এক মুহুর্তে শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভী (রঃ) এক প্রভাতী সূর্যের ন্যায় আবির্ভূত হলেন। তিনি ইসলামকে বিকৃতির হাত থেকে মুক্ত করলেন। রাজনীতিকে ইসলামের সেবক ও ইসলামপন্থীদের শৌর্যের প্রতীকরূপে প্রতীয়মান করালেন।

নাম ও বংশপঞ্জিঃ

হুজ্জাতুল ইসলাম শায়েখ কুতুবুদ্দিন আহমত ওরফে শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) ইবনে শায়েখ আবদুর রহীম ইবনে শায়েখ ওয়াজিহ উদ্দীন ইবনে শায়েখ মুয়াজ্জিম ইবনে শায়েখ মানসুর ইবনে শায়েখ কামালুদ্দিন ছানী ইবনে শায়েখ কাজীম কাসেম ইবনে শায়েখ কাজী বুধা ইবনে শায়েখ আবদুল মালেক ইবনে শায়েখ কুতুবুদ্দীন ইবনে শায়েখ কামালুদ্দিন (আউয়াল) ইবনে শায়েখ শামসুদ্দীন মুফতী ইবনে শের মালিক ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবুল ফাতাহ ইবনে উমর ইবনে আদিল ইবনে ফারূক ইবনে জার্জিস ইবনে আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে উসমান ইবনে মাহান ইবনে হুমায়ুন ইবনে কুরায়েশ ইবনে সুলায়মান ইবনে আফফান ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উমর ইবনে খাত্তাব আল কুরায়শী।

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) তাঁর বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ “তাফহীমাতে এলাহীয়া”র দ্বিতীয় খণ্ডে বলেনঃ আমার মুহতারাম আব্বা (শায়েখ আবদুর রহীম) ছিলেন জাহেরী  বাতেনী ইলমে পরিপূর্ণ। তিনি ছিলেন এক আরিফ বিল্লাহ ওলী। ঘটনাক্রমে তিনি একবার শায়েখ কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকী (রাঃ)-এর মাজার জিয়ারত করতে গেলেন। শয়েখ বখতিয়ার কাকী (রাঃ) তাঁর সাথে কথাবার্তা বললেন। তিনি আব্বাকে একটি সন্তানের সুসংবাদ দিলেন। সন্তানটি তাঁর ঘরেই জন্ম নেবে। তিনি তাঁকে নির্দেশ দিলেন ছেলের নাম রাখবে কুতুবুদ্দীন। অতঃপর যখন আমার জন্ম হল, আল্লাহ পাক তাঁকে কুতুবুদ্দিন নাম রাখার ব্যাপারটি ভুলিয়ে দিলেন। শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভী পরে অবশ্য কুতুবুদ্দীন নামও রেখেছিলেন। শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভী (রঃ) ফারূকী খান্দানের লোখ। তাই ইসলামের শুরু থেকেই তারা ইসলামী শিক্ষা ও রাজনীতির সমন্বয়কারী হিসেবে চলে আসছেন। তাঁদের বংশে বীরত্ব, বদান্যতা, জ্ঞান ও মর্যাদায় খ্যাতিমান বহু ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটেছে। তাঁর খান্দানের ভেতর সর্বপ্রথম উপমহাদেশে আগমন করেন শায়েখ শামসুদ্দীন মুফতী। তিনি দিল্লী থেকে ত্রিশ মাইল দূরে অবস্থিত এক ক্ষুদ্র শহরে এসে অবস্থান নেন। তিনি অত্যন্ত উঁচু দরের আলেম, জাহেদ ও পরহেজগার বুযুর্গ ছিলেন। ইসলামের প্রচার-প্রসার কল্পে তিনি সেখানে একটি দ্বীনি মাদ্রাসা কায়েম করেন এবং দ্বীনের প্রচার কার্যে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর সময়ে দিল্লী ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় তাঁকেই সবাই ধর্মীয় ও রাজণৈতিক পথপ্রদর্শক ভাবত। ফলে পার্থিব ঝগড়া-বিবাদের কাজী ও দ্বীনি মাসায়েলের মুফতী হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করতেন। তাঁর পর থেকে শায়েখ ‌মাহমুদ ইবনে কাওয়ামুদ্দীন পর্যন্ত কাজীর দায়িত্বভার তাঁদের হাতেই ছিল। তবে শায়খ মাহমুদ তা পরিত্যাগ করে সেনা বিভাগে যোগ দেন। শাহ সাহেব (রঃ)-এর দাদা পর্যন্ত তাঁর পূর্বপুরুষজরা জেহাদের ময়দানেই দ্বীনের শান-শওকত বৃদ্ধির কাজে নিয়োজিত থাকেন। কাফের-মোশরেকের বিরুদ্ধে জেহাদে লিপ্ত থাকাকেই তাঁরা পেশা করে নিয়েছিলেন। তাঁর দাদা শায়েখ ওয়াজিহুদ্দীন আজীবন রণাঙ্গণে কাটিয়েছেন। এমনকি মোগল সম্রাট মহিউদ্দীন মুহাম্মদ আলমগীরের সময়ে তিনি জেহাদের ময়দানে শাহাদাত বরণ করেন। শায়েখ ওয়াজিহুদ্দীনের তিন ছেলে ছিল, তারা হলেন শায়েখ আবু রেজা মুহাম্মদ, শায়েক আব্দুল হাকীম ও শায়েখ আবদুর রহীম। শাহসাহেবের পিতা শায়েখ আবদুল হাকীম ও শায়েখ আবদুর রহীম। শাহ সাহেবের পিতা শায়েখ আবদুর রহীম ১০৬৪ খৃষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কুরআন শরীফ, নাহু, সরফ ও অন্যান্য প্রারম্ভিক শিক্ষার কিতাবাদি তার বড় ভাই শায়েখ আবু রেজা মুহাম্মদের কাছে পড়েন। পরবর্তী স্তরে তিনি আল্লামা মীর মোহাম্মদ জাহেদের কাছে জ্ঞানার্জন করেন। এমনকি কিতাবী ও তাত্ত্বিক জ্ঞানে তিনি এরূপ পারদর্শী হলেন যে, তিনি অনতিকালের ভেতর এ উভয়বিধ জ্ঞান বিতরণের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ালেন। সম্রাট- আলমগীর জিন্দাপীরের উদ্যোগে প্রণীত “ফতোয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের তিনি সম্পাদনতা ও শুদ্ধিকরণের দায়িত্ব পালন করেন। বাদশাহ আলমগীর তাঁর প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ ছিলেন। শরীয়ী মাজহাদের দিক থেকে তিনি হানাফী ছিলেন। তাসাওফের ক্ষেত্রে তিনি নকশবন্দী তরীকার অনুসারী ছিলেন। অবশ্য দলীলের শক্তি ও প্রাধান্যের কারণে কখনও হানাফী মজহাবের বাইরেও ফতোয়া দিতেন। ১১৩১ খৃষ্টাব্দে তিনি ইন্তেকাল করেন।

জন্মঃ

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) ১১১৪ হিজরীর ১৪ই শাওয়াল বুধবার দিল্লীতে জন্ম গ্রহণ করেন। অর্থাৎ ১৭০৪ খৃষ্টাব্দে তাঁর জন্ম হয়। এবং মৃত্যু হয় ১১৭৬ হিজরীতে। শায়েখ আবদুর রহীম (রঃ)-এর জীবনচরিত “বাওয়ারিফুল মারিফাত” গ্রন্থে শাহওয়ালিউল্লাহ (রঃ)- এর জন্মকাল ও তার প্রাক্কালের এমনসব ঘটনাবলীর উল্লেখ পাওয়া যায়, যাতে তাঁর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের লক্ষণ প্রকাশ পায়।

সম্রাট আলমগীর বা ঐরঙ্গজেবের মৃত্যুর তারিখ হলো ১১১৮ হিজরী ২৮ জিলকদ শুক্রবার। এই হিসাব অনুযায়ী সম্রাট ঐরঙ্গজেবের মৃত্যুর চার বছর আগে শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) জন্মগ্রহণ করেন । তিনি ইন্তেকাল করেন দিল্লীর অন্ধ সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের আমলে। এই হিসাবে শাহ সাহেব ১০ জন মুঘল সম্রাটের শাসনকাল এবং তাঁদের উত্থান পতনের ইতিহাস সচক্ষে প্রত্যক্ষ করেন। সেই ১০ জন শাসক ছিলেন যথাক্রমে, (১) সম্রাট ঐরঙ্গজেব, (২) প্রথম বাহাদুর শাহ, (৩) ময়েনউদ্দীন জাহাঁদার শাহ, (৪) ফারুখ শিয়ার, (৫) রফিউদ দারাজাত, (৬) রফিউদ দওলাহ, (৭) মুহাম্মাদ শাহ (৮) মাহমুদ শাহ, (৯) দ্বিতীয় আলমগীর এবং (১০) অন্ধ সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম।

শিক্ষা জীবনঃ

পাঁচ বছর বয়সেই কুরআন শিক্ষার জন্যে তাঁকে মকতবে ভর্তি করা হয়। সাত বছর হতেই তিনি কুরআনের হাফেজ হলেন। সে বছরেই তাঁর আব্বা তাঁকে রোযা রাখার নির্দেশ দেন। এমনকি ইসলামের অন্যান্য বিধি-বিধানও যথাযথভাবে আমল করার জন্যে উপদেশ দেন। সাত বছর বয়স থেকেই তিনি ফার্সী কিতাব অনায়াসে পড়ার যোগ্যতা হাসিল করেন। এক বছরে ফার্সী শেষ করে নাহু, সরফ সম্পর্কিত গ্রন্থাদি পড়া শুরু করেন। দশ বছর বয়সে তিনি শরহে মোল্লা জামী আয়ত্ত করেন। মোটকথা মাত্র তিন বছরে তিনি নাহু-সরফে এরূপ পারদর্শী হলেন যে, উক্ত বিষয়ের বিশেষজ্ঞগণ পর্যন্ত তাঁর সামনে এসে মাথা নত করতে বাধ্য হতেন। তিনি লোগাত, তফসীর, হাদীস, ফিকাহ, তাসাওফ, আকায়েদ, মানতেক, চিকিৎসা শাস্ত্র, দর্শন, অংক শাস্ত্র, জ্যোতি বিজ্ঞান ইত্যাদি শিখেন। মাত্র পনের বছর বয়সে তিনি এসব কেতাব শেষ করেন। পুথিগত ও জ্ঞানগত সকল বিদ্যা শেষ করে তিনি তাঁর আব্বার হাতে আধ্যাত্মিক জ্ঞানার্জনের জন্যে বাইয়াত নেন। অতঃপর তিনি নকশবন্দীয়া তরীকার সুফীদের বিভিন্ন স্তর আয়ত্ত করেন। তিনি আধ্যাত্ম চর্চার ক্ষেত্রেও এরূপ দক্ষতা অর্জন করলেন যে, অল্পসময়ের ভেতরে তিনি সে জগতেও যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করলেন। সলুক সম্পর্কিত তালীম শেষ হলে তাঁর আব্বা শায়েখ আবদুর রহীম তাঁর মাথায় মর্যাদার পাগড়ী বেঁধে দেন এবং তাঁকে শিক্ষা দান করার অনুমতি প্রদান করেন। এ উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠান করা হয়। তাতে দিল্লীর ওলামায়ে কেরাম, বুযুর্গানে দ্বীন, কাজীবৃন্দ ও অন্যান্য আমীর- উমারা উপস্থিত হন। সকলের উপস্থিতিতে শায়েখ আবদুর রহীম তাঁর ভাগ্যবান মহা মর্যাদাবান পুত্র শাহ ওয়ালিউল্লাহকে জাহের ও বাতেনী দ্বীনী ইলম শিক্ষা দানের অনুমতি দান করেন। পরন্তু তিনি নিজ পুত্রের ইলম ও হায়াত দারাজীর জন্যে দোয়া করেন। গোটা মজলিস আমীন, আমীন বলে দোয়ায় শরীক হন এবং এক যোগে তাকে মোবারকবাদ জানান। শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভী (রঃ) তাঁর আব্বা ও শায়েখ মুহাম্মদ আফজল শিয়ালকুটির কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন।

বিবাহঃ

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) -এর বয়স যখন চৌদ্দ বছর, তখনই তাঁর পিতা তাঁকে বিয়ে করাবার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও সংসারের অন্য সবাই বিয়ের প্রস্তুতি নেই বলে ওজর পেশ করেন, তথাপি তাঁর পিতা সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। তিনি বরং অতি ক্ষিপ্রতার সাথে এ কাজ সম্পন্ন করার জন্য উদগ্রীব হলেন। তিনি লিখে পাঠালেনঃ কেন আমি এ ব্যাপারে তাড়াহুড়া করছি তা তোমরা অচিরেই বুঝতে পারবে। এ চিঠি পেয়ে সবাই রাজী হয়ে গেলেন এবং বিয়ে সম্পন্ন হল। বিয়ের পর পরই তাঁর কজন নিকটাত্মীয় ইন্তেকাল করেন। কদিন না যেতেই শায়েখ আবু রেজার ছেলে আবদুর রশীদ মারা যান। তার কিছুদিন পর শাহ সাহেবের মাতা ইন্তেকাল করেন। তারপর স্বয়ং তাঁর আব্বা শায়েখ আবদুর রহীমও ইন্তেকাল করেন। এটাই ছিল শাহ সাহেবের বিবাহের ব্যাপারে তার পিতার তাড়াহুড়ার মূল রহস্য। পর পর এতগুলো আঘাত স্বভাবতঃই তার ওপর প্রভাব ফেলেছিল। তথাপি তিনি তাঁর জাহেরী ও বাতেনী ইলমের জোরে এসব বিপদাপদ সহজেই কাটিয়ে উঠেন।

হারামাইনের সফরঃ

১১৩১ হিজরীতে তার আব্বার ইন্তিকালের পর তিনি রহীমিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। তারপর একযুগ শিক্ষকতার মাধ্যমে তিনি আরব-আজমের সর্বত্র স্বীয় শিক্ষাগত যোগ্যতার বিরাট খ্যাতি অর্জন করেন। চারদিক থেকে ছাত্ররা ছুটে আসছিল তাঁর কাছে জ্ঞানার্জনের জন্যে। তারা নজাহেরী ও বাতেনী জ্ঞানে পরিপূর্ণ হয়ে তাঁর কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছিলেন। বার বছর শিক্ষকতার পর তিনি হজ্জের নিয়তে হারামাইন শরীফাইনে যাবার উদ্যোগ নেন এবং ১১৪৩ হিজরীতে তিনি হেজাজে তশরীফ নেন। অতঃপর ১১৪৫ হিজরীতে তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। প্রায় দু’বছর তিনি মক্কা ও মদীনায় কাটান। সেখানকার ওলামায়ে কেরামের সাথে মিলিত হন। সেখানকার হাদীসবেত্তাদের থেকে তিনি হাদীসের সনদ নেন। বিশেষতঃ শায়েখ ওবায়দুল্লাহ ইবনে শায়েখ মোহাম্মদ ইবনে সুলায়মান আল-মাগরেবীর কাছ থেকে তিনি বিশেষভাবে হাদীসের সনদ গ্রহণ করেণ। তাছাড়া সেকালের হারামাইনের সেরা আলেম, ফকীহ ও মুহাদ্দেস শায়েখ আবু তাহের মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম আল-মাদানী থেকেও তিনি হাদীসের সনদ নেন। এ সম্পর্কে তিনি স্বয়ং বলেনঃ “আমি হারামাইন শরীফাইনের অধিকাংশ বুযুর্গের সাথে দেখা করেছি। সেখানকার অধিকাংশ সর্বজ্ঞাতা পারদর্শী সম্মানিত লোকদের সাথে মেলামেশা করেছি। কিন্তু তাদের কাউকেই সর্বজ্ঞাতা পারদর্শী হয়েও উত্তম চরিত্রে বিমণ্ডিত রূপে দেখতে পাইনি। শুধুমাত্র শায়েখ আবু তাহের আল-মাদানীকে আমি সেরূপ পেয়েছি। তাঁর দূরদর্শিতা ও অগাধপাণ্ডিত্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আমি আমার গ্রন্থরাজির বিভিন্ন স্থানে তা উল্লেখ করেছি”। শাহ সাহেব (রঃ) তাঁর সান্নিধ্যে যথেষ্ট সময় কাটিয়েছেন। তাঁর কাছে হাদীসের বর্ণনা শুনেছেন। মোটকথা শায়েখ আবু তাহের আল-মাদানী তাঁকে শুধু সনদ দেননি, তাঁর নিজস্ব খিরকাও শাহ সাহেবকে দান করেন। সে খিরকা জাহেরী ও বাতেরনী সকল প্রকার ইলম ও ফায়েজের আধার ছিল। হারামইনে থাকা কালে তিনি শায়েখ তাজুদ্দীন হানাফীর খেদমতেও হাজির হন। তাঁর কাছ থেকেও তিনি সনদ হাসিল করেন। তাছাড়াও তিনি সেখান থেকে শায়েখ আহমদ থানাভী, শায়েখ আহমদ কাশানী, সাইয়েদ আবদুর রহমান ইদরিসী, শায়েখ শামসুদ্দীন মোহাম্মদ, শায়েখ ঈসা জাযরী, শায়েখ হাসান আজমী, শায়েখ আহমদ আলী, শায়েখ আবদুল্লাহ ইবনে সালেহ প্রমুখ থেকেও সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে সনদ হাসিল করেন। শায়েখ আবদুল্লাহ ইবনে সালেম আল বাসরী ওয়াল মক্কী সবচেয়ে উঁচু মর্যাদাসম্পন্ন মুহাদ্দেস ও আলিম ছিলেন।

দেশে প্রত্যাবর্তনঃ

হারামইন শরীফাইনের বুযুর্গ ওলামায়ে কেরামের কাছ থেকে জাহেরী ও বাতেনী ইলমে ভরপুর হয়ে শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) উপমহাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১১৪৫ হিজরীর ১৪ই রজব তিনি দিল্লী পৌঁছেন এবং নিজ পৈত্রিক আলয়ে অবস্থান করেন। কিছুদিন তিনি বিশ্রাম নেন। এ ফাঁকে দিল্লীর ওলামা-মাশায়েখদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করেন। তারপর রহীমিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষা দানের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। শত শত হাদীস শিক্ষার্থী সেখানে ছুটে এসে তাঁর কাছ থেকে হাদীসের সনদ হাসিল করে চললেন। আশে- পাশের রাজ্যগুলোয়ও অনতিকালের ভেতর হাদীস চর্চা ছড়িয়ে পড়ল। শাহ সাহেবের যুগে মুসলমান হাদীস সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়েছিল। তারা ফিকাহ শাস্ত্রকেই ইলমের জন্যে যথেষ্ট ভাবত। শাহ সাহেবই হাদীসের গুরুত্ব সুস্পষ্ট করে তুলে ধরলেন। তিনি লোকদের কোরআন ও হাদীসের গভীর অধ্যয়ন এবং এ দুটোকে সর্বাগ্রে স্থান দেয়ার ও সব মতভেদের বিষয়গুলোর মীমাংসা কোরআন ও হাদীস থেকে আহরণের জন্যে উদ্ধুদ্ধ করেন। এমনকি এ ক্ষেত্রে তিনি আশাতীত সাফল্যও লাভ করেন।

মসলকঃ

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) ব্যাক্তিগত জীবনে কট্টরপন্থী হানাফী ছিলেন। তিনি লিখেছেন, “হুযুর (সাঃ) আমাকে (কাশফের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে প্রচলিত হানাফী মাযহাব একটি উত্তম পন্থা যা অন্যান্য মাযহাব বা তরিকা থেকে উত্তম, যা ইমাম বুখারী (রহঃ) এর জামানায় সংগৃহীত ও লিখিত হাদীসগুলির সঙ্গে অতিশয় সাদৃশ্য ও সামঞ্জস্যপূর্ণ ।” (ফুয়ুযুল হারামাইন, পৃষ্ঠা-৮)

তিনি আরও লিখেছেন, “ভারতবর্ষের সাধারণ (যারা মুজতাহিদে মুতলাক নয়) লোকেদের প্রতি ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এর মাযহাব অবলম্বন করা ওয়াজীব এবং ঐ মাযহাব ত্যাগ করা হারাম।” (আল ইনসাফ ফি বায়ানি সাবাবিল ইখতিলাফ, পৃষ্ঠা-৭০)

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) মনে করতেন প্রায় সমগ্র উম্মতই চারটি প্রণীত মজহাবের সাথে জড়িত হয়ে গেছে। তাই আমাদের যুগে তাদের তাকদীল করা বৈধ হয়ে গেছে। তার ভেতরে কয়েকটি কল্যাণকর দিক রয়েছে আর তা অস্পষ্টও নয়। যে যুগে মানুষের হিম্মত কমে গেছে আর মানুষের অন্তরগুলো বাসনা- কামনায় ভরপুর হয়ে গেছে, সে যুগে এ ছাড়া আর করারই বা কি আছে? মতভেদের বিষয়গুলোয় তিনি বিশুদ্ধ হাদীস অনুসরণ করতেন। দ্বীনী ইলমের ক্ষেত্রে তিনি ইজতিহাদের যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। তিনি হানাফী ও শাফেয়ী মজহাবকে প্রাধান্য দিয়ে পড়াতেন। উপমহাদেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী যেহেতু হানাফী মজহাবের অনুসারী তাই তিনি সে মজহাবের বিরোধিতা করতেন না। প্রায় সমগ্র উম্মতই চারটি প্রণীত মজহাবের সাথে জড়িত হয়ে গেছে। তাই আমাদের যুগে তাদের তাকদীল করা বৈধ হয়ে গেছে। তার ভেতরে কয়েকটি কল্যাণকর দিক রয়েছে আর তা অস্পষ্টও নয়। যে যুগে মানুষের হিম্মত কমে গেছে আর মানুষের অন্তরগুলো বাসনা- কামনায় ভরপুর হয়ে গেছে, সে যুগে এ ছাড়া আর করারই বা কি আছে?

ছাত্রবৃন্দঃ

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) এঁর অসংখ্য ছাত্র ছিলেন। তাদের ভেতরে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন তাঁর চার ছেলে যথাক্রমেঃ শাহ আবদুল আসীফ, শাহ রফিউদ্দীন, শাহ আবদুল কাদের ও শাহ আবদুল গণী। অন্যান্যরা হলেনঃ শায়েখ মুহাম্মদ আশেক দেহলভী, শায়েখ মুহাম্মদ আমীন কাশ্মীরী, সাইয়্যেদ মুর্তজা বিলগ্রামী, শায়েখ জাফরুল্লাহ ইবনে আবদুর রহীম লাহোরী, শায়েখ মুহাম্মদ আবু সাঈদ বেরেলভী, শায়েখ রফিউদ্দীন মুরাদাবাদী, শায়েখ মুহাম্মদ আবুল ফাতাহ বিলগ্রামী, শায়েখ মুহাম্মদ মুঈন সিন্ধী, কাজী সানাউল্লাহ পানিপথী প্রমুখ।

রচনাবলীঃ

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেন। তার ভেতরে প্রায় পঞ্চাশখানার খোঁজ পাওয়া গেছে। তিনি তফসীর, হাদীস, তাসাওফ অন্যান্য ইসলামী বিষয়াবলীর ওপর এমন সব গ্রন্থ রচনা করেন যা দেখে জাহেরী বাতেনী ইলমের ধারক ও বাহকগণ তাঁকে এক বাক্যে ইমাম হিসেবে মেনে নেন। তিনি কিছু গ্রন্থ আরবী ভাষায় ও কতিপয় গ্রন্থ ফার্সী ভাষায় রচনা করেন। তাঁর যুগে ফার্সী ছিল সরকারী ভাষা। তাই দেশব্যাপী এ ভাষায় বহুল প্রচলন ছিল। শাহ সাহেবের প্রণীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থের পরিচয় নিম্নে প্রদত্ত হলঃ

১) ফৎহুল রহমান বতরজামাতুল কুরআনঃ এটি হচ্ছে কুরআন পাকের ফার্সী অনুবাদ। আজ থেকে দেড়শ বছর আগে এ অনুবাদ কার্যটি সম্পন্ন হয়েছে। তথাপি আজও এর কল্যাণকারিতা ও গুরুত্ব সমানেই অনুভূত হচ্ছে। শাহ সাহেব তাঁর অনুবাদে গুরুত্বপূর্ণ ও সূক্ষ্ম বিষয়গুলো সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।

২) আয যুহরাবীন ফি তাফসীরে সূরা বাকরা ওয়া আলে ইমরানঃ এটা সূরা বাকারা ও আলে ইমরানের ফার্সী বিশ্লেষণ।

৩) আল-ফাউযুল কাবীরঃ তফসীর শাস্ত্রের নীতিমালা সম্পর্কিত এ গ্রন্থখানি শাহ সাহেবের একটি মূল্যবান অবদান। এর মধ্যে তিনি কুরআন পাকের মূল পাঁচটি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছেন। এতে তিনি কুরআনের ব্যাখ্যা ও তার রীতি- নীতি সম্পর্কে অত্যন্ত জ্ঞানগর্ভ ও মূল্যবান আলোচনা করেছেন। মোটকথা শাহ সাহেবের এ ক্ষুদ্রাকৃতির গ্রন্থটি এ বিষয়ের ওপর রচিত বিরাট বিরাট গ্রন্থের প্রয়োজনীয়তা মিটিয়ে দিয়েছে। কুরআন হরফের মুকাত্তায়াত ও অন্যান্য সূক্ষাতিসূক্ষ্ম বিষয় তিনি এতে সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন।

৪) ফতহুল কবীরঃ  এতে কুরআনেরক ঠিন ও দুর্লভ শব্দ ও পরিভাষার সহজ ও সুন্দর সমাধান রয়েছে। কিতাবটি আরবী ভাষায় লিখিত। কুরআনের আয়াত ও বিশুদ্ধ হাদীসের সাহায্যে তিনি বিভিন্ন শব্দ ও পরিভাষার বিশ্লেষণ করেছেন।

৫) আল মুনাওয়া মিন আহাদীসিল মুয়াত্তাঃ ইমাম মালিকের হাদীস সংকলন “আল মুয়াত্তার” এক বিস্ময়কর আরবী ভাষ্য। শাহ সাহেব ফেকহী দৃষ্টিকোণ থেকে আর অধ্যায়গুলো সজ্জিত করেছেন। এ গ্রন্থে তিনি ইমাম মালেকের সেসব মতামত বাদ দিয়েছেন বা অন্যান্য সকল মুজতাহিদের পরিপন্থী। তার বিন্যস্ত প্রতিটি অধ্যায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট কুরআনের আয়াতের তিনি সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন। এ গ্রন্থটি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি অর্জন করায় এর বহু সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ১৩৫১ হিজরীতে মক্কা শরীফের “আল মাকতাবাতুস সালাফিয়া” থেকেও এটা অত্যন্ত সুন্দরভাবে প্রকাশ করা হয়।

৬) আল সুসাফফা শরহে মুয়াত্তাঃ এটি মুয়াত্তার ফার্সী ভাষ্য। সংক্ষিপ্ত হলেও ভাষ্যটি খুবই উপাদেয়। এতে তিনি মুজতাহিদ সুলভ পর্যালোচনা করেছেন। এতে তার ইজতিহাদ ও ইস্তেখরাজের  যোগ্যতা প্রামণিত হয়েছে।

৭) আল আরবাঈনঃ শাহ সাহেব এতে চল্লিশটি হাদীসের সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন। হাদীসগুলো স্বল্প কথায় অথচ ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ। হাদীসগুলো তিনি তাঁর শায়েখ আবু তাহের (রঃ)-এর সনদে হজরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন।

৮) মুসাল সিলাতঃ এটি একটি ক্ষুদ্রকায় আরবী কেতাব। সনদ সম্পর্কিত অতি মূল্যবান তথ্য এতে সন্নিবেশিত হয়েছে।

৯) হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহঃ (আরবী) ভাষায় রচিত শাহ সাহেবের এ গ্রন্থটি একটি অমূল্য সম্পদ। এতে শরীয়তের বিধি- নিষেধগুলোর গূঢ় রহস্যাবলী তুলে ধরা হয়েছে। পরন্তু এ কালের আধুনিক মন-মানসের শরীয়ত সম্পর্কিত বিভিন্ন জিজ্ঞাসার চমৎকার জবাব দান করা হয়েছে। মোটকথা এ গ্রন্থটি একটি অদ্বিতীয় ও অতুলনীয় গ্রন্থ। প্রাচীন ও নবীন সবার জন্যেই এটি সমান উপাদেয়।

১০) একদুল জীদ ফি আহকামুল ইজতিহাদ ওয়াত তাকলীদঃ ইজতিহাদ ও তাকলীদের ওপর লিখিত একটি বিরল আরবী গ্রন্থ। এই গ্রন্থে শাহ সাহেব ইমাম গণের তাকলীদের পক্ষে লিখেছেন এবং মাযহাব বিরোধীদের দলীলের জবাব দিয়েছেন। খাস করে শাহ সাহেব চরমপন্থী মাযহাব বিরোধী ইবনে হাযম জাহেরীর মতকে খণ্ডন করেছেন।

১১) আল ইরশাদ ইলা মুহিম্মাতে ইলমিল ইসনাদঃ এটি আরবী ভাষায় লেখা সনদ সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ কিতাব।

১২) আল ইনসাফ ফী-বয়ানে সাববিল ইখতিলাফঃ এটি আরবী ভাষায় লেখা একটি উত্তম কিতাব। এতে ফকিহ ও মুহাদ্দেসের মতভেদের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। তাছাড়া তাকদীল করা বা না করার ব্যাপারেও এতে মনোজ্ঞ আলোচনা করা হয়েছে। শাহ সাহেব তাঁর আলোচনায় সকল সংকীর্ণতার অবসান ঘটিয়েছেন।

১৩) আল ইস্তিবাহ ফী-সালাসিলে আওলিয়া আল্লাহঃ গ্রন্থটি ফার্সী ভাষায় রচিত। পয়লা খণ্ডে খ্যাতনামা আওলিয়ায়ে কেরামের সিলসিলার সবিস্তার বর্ণনা রয়েছে। দ্বিতীয় খণ্ডে রয়েছে হাদীসের সনদসমূহ ও ফিকাহ শাস্ত্র সম্পর্কিত মূল্যবান তথ্যাবলী। হাদীস ও ফিকাহের ওপর শাহ সাহেব এ গ্রন্থটিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন।

১৪) তারাজিমু আবওয়াবিল বুখারীঃ এটি আরবী ভাষায় একটি মূল্যবান গ্রন্থ। হায়দরাবাদে এটি ছাপা হয়।

১৫) ইযালাতিল খাফা আন খিলাফাতিল খুলাফাঃ শাহ সাহেব (রঃ)-এর যুগে রাফেজীদের উৎপাত বেড়ে গিয়েছিল। শাহ সাহেব তাদের যাবতীয় প্রশ্নাবলীর জবাব দিয়ে এ গ্রন্থটি লিখেন। এতে তিনি খোলাফায়ে রাশেদীনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল প্রশ্নের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেন। পরন্তু ইসলামী হুকুমতের তাৎপর্য কি তাও তিনি তাতে সুন্দরভাবে তুলে ধরেন। এমনকি ইসলামী হুকুমতের রূপরেখাও পেশ করেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি খোলাফায়ে রাশেদীনের গুণাবলী ও তাঁদের খেলাফতের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস এবং ইসলামী রাজনীতির নীতিমালাগুলো সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। এ কিতাবের বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদও প্রকাশিত হয়েছে।

১৬) কুররাতুল আইনাইন ফী তাফাসিলিশ শায়খাইনঃ এটি একটি ফার্সী গ্রন্থ। হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) ও হযরত উমর ফারুক (রাঃ)-এর ও মর্যাদার বিভিন্ন দিক তিনি এতে তুলে ধরেছেন। এ গ্রন্থে দলীয় প্রমাণ ও মযুক্তি বুদ্ধি দ্বারা তিনি প্রমাণ করেছেন যে, তাঁরা দুজন উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম ছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাতে হযরত উসমান (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ)-এর বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা বর্ণনা করে রাফেজীদের সমালোচনার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছিলেন।

১৭) কিতাবুল ওয়াসিয়াতঃ এটি একটি ফার্সী পুস্তিকা। এতে শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে তিনি পাণ্ডিত্যপূর্ণ আলোচনা করেছেন।

১৮) রিসালায়ে দানেশমন্দীঃ এটিও একটি কল্যাণপ্রদ ফার্সী পুস্তিকা। এতে শিক্ষাদানের পদ্ধতি নিয়ে লিখেছেন।

১৯) আল কাওলুল জামীলঃ শাহ সাহেব (রঃ) তাসাওফ তত্ত্বের ওপর সংক্ষেপে অথচ সামগ্রিকভাবে অত্যন্ত তথ্যপূর্ণ এ গ্রন্থটি আরবী ভাষায় রচনা করেন। তাসাওফের চার তরীকার সিলসিলাগুলো এতে সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে। এ চার তরীকাই উপমহাদেশে চালু রয়েছে। এতে তিনি তাঁর পিতা শাহ আবদুর রহীম ও অন্যান্য বুযুর্গতের ওজিফা ও দোয়া-দরূদ লিপিবদ্ধ করেছেন।

২০) সাতাআত,

২১) হামাআত,

২২) লামাহাতঃ

এ তিনটি পুস্তিকাও তাসাওফের ওপর লেখা হয়েছে।

২৩) আলতাফুল কুদসঃ এটি ফার্সী ভাষায় লিখিত তাসাওফ সংবলিত অত্যন্ত মূল্যবান একটি পুস্তিকা।

২৪) তা’বীলুল আহাদীসঃ এটি আরবী ভাষায় লেখা একটি কল্যাণপ্রদ গ্রন্থ। কুরআন পাকে যে সব আম্বিয়ায়ে কেরামের উল্লেখ রয়েছে, এ গ্রন্থে তাদের ঘটনাবলীর সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে। হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে নবী করীম (সঃ) পর্যন্ত নবুয়তের যে ক্রমবিকাশ ও পূর্ণতা ঘটেছে তার রহস্য ও ব্যবস্থাপনা সংক্ষেপে ও সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে কিতাবটি স্বভাবতঃই জটিল ও আয়াশলব্ধ।

২৫) আল খায়রুল কাসীরঃ এ কিতাবটিও আরবী ভাষায় রচিত। এটা সৃষ্টি জগতের রহস্য ও কলাকৌশলের বর্ণনায় পরিপূর্ণ। এ বিষয়ের ওপর এটা এক অনন্য গ্রন্থ।

২৬) আত তাফহীমাতে এলাহিয়্যাঃ এ গ্রন্থটি দু’খণ্ডে লিখিত। এর কিছু অংশ আরবী ও ফার্সিতে লেখা হয়েছে। এতে বিভিন্ন শ্রেণীর মাকালাত ও রিসালাত জমা করা হয়েছে। শরীয়ত ও যুক্তিবুদ্ধির বিভিন্ন সমস্যা এতে আলোচিত হয়েছে এবং ইলহামীপন্থায় তা উপস্থাপন করা হয়েছে। শাহ ওয়ালিউল্লাহ একাডেমী থেকে নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে।

২৭) আল বদুরুল বালেগাহঃ তাসাওফ শাস্ত্রের ওপর লেখা শাহ সাহেবের এ গ্রন্থখানি অনন্য। এ গ্রন্থটি অধ্যয়ন করলে শাহ সাহেবের অন্যান্য গ্রন্থ বুঝা সহজ হয়ে যায়। সত্য কথা এই যে, কিতাবটি শাহ সাহেবের অন্যান্য কিতাবের সারমর্ম। এ কিতাবটিও শাহ ওয়ালিউল্লাহ একাডেমী থেকে প্রকাশিত হয়।

২৮) ফুয়ূজুল হারামাইনঃ এ গ্রন্থটিতে শাহ সাহেব সেই সমস্ত ব্যাপার সন্নিবেশিত করেছেন যা তিনি মদীনা মুনাওয়ারায় অবস্থান কালে হযরত (সঃ)-এর রূহানী ফয়েযের মাধ্যমে হাসিল করেছেন। সংক্ষিপ্ত হলেও কিতাবটি অত্যন্ত জ্ঞানগর্ভ ও কল্যাণকর।

২৯) আদদুররুস সামীন ফী মুবাশশিরাতে নবায়্যেল আমীনঃ এ কিতাবে শাহ সাহেব তাঁর পিতা শায়েখ আবদুর রহীম ও জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা শায়েখ আবুর রিজা মুহাম্মদের বিশেষ বিশেষ অবস্থা বর্ণনা করেছেন।

৩০) হুসনুল আকীদাঃ আরবী ভাষায় লিখিত এ গ্রন্থটিতে আকায়েদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

৩১) ইনসানুল আইন ফী মাশায়েখিল হারামাইনঃ ফার্সী ভাষায় এ গ্রন্থটিতে শাহ সাহেব ইতিহাস সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যাপার নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন।

৩২) আল মুকাদ্দামাতুস সুন্নিয়াত ফী ইনতিসারে ফিরকাতুস সুন্নিয়াহঃ এ গ্রন্থটিতে আরবী ভাষায় আকায়েদ সম্পর্কে লেখা হয়েছে। এ গ্রন্থটি এ বিষয়ে অনন্য।

৩৩) আল মাকতুবুল সাদানীঃ এটি তাওহীদের হাকীকত সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি। তিনি ইসমাইল ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে রূমীর কাছে এ চিঠি লিখেছিলেন।

৩৪) আল হাওয়ামেহ ফী শরহে হিজবিল বাহরঃ এটি হিজবুল বাহর কিতাবের এক অতুলনীয় ভাষ্য।

৩৫) শেফাউল কুলুবঃ এটি ফার্সী ভাষায় তাসাওফের ওপর লেখা একটি অতি উত্তম গ্রন্থ।

৩৬) সারূরুল মাখযানঃ শায়েখ কবীরজান জানান দেহলভী (রঃ)-এর নির্দেশে শাহ সাহেব ফার্সী ভাষায় এ জ্ঞানগর্ভ কিতাবটি রচনা করেন।

৩৭) শায়েখ আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল বাকীর প্রশ্নাবলীর জবাবঃ

৩৮) তাইয়েবুন নগমা ফী মহ সাইয়্যেদিল আরবে ওয়াল আজমঃ এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম-এর প্রশংসাপূর্ণ একটি আরবী কাব্যগ্রন্থ।

৩৯) মজমুয়ায়ে আশআরঃ শাহ সাহেবের লিখিত বিভিন্ন কবিতার সংকলন গ্রন্থঃ

৪০) ফাতহুল ওয়াদুদ ওয়া মারিফাতিল জুনুদঃ এ সংক্ষিপ্ত আরবী রিসালায় শাহ সাহেব সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন।

৪১) আওয়ারিফঃ আরবী ভাষায় লেখা এ পুস্তিকাটিতে তাসাওফ তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

৪২) শরহে রুবাইয়্যাতাইনঃ খাজা বাকী বিল্লাহ (রঃ)-এর দুটি রুবাইয়্যাতের ব্যাখ্যা।

৪৩) আনফালুল আরেফীনঃ এটি শাহ সাহেবের রচিত একটি উৎকৃষ্ট গ্রন্থ। এতে তিনি তাঁর দাদা ও বংশের অন্যান্য জীবনালেখ্য ও উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী সন্নিবেশিত করেছেন। তাঁদের জাহেরী ও বাতেনী ইলম ও আধ্যাত্মিক গুণাবলীর এতে সবিস্তারে আলোচনা রয়েছে।

ইন্তেকালঃ

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) ১১১৪ হিজরীর ৪ঠা শাওয়াল সূর্যোদয়ের মুহুর্তে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ৬৩ বছর বয়সে ১১৭৬ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। মাত্র অল্প ক’দিন তিনি হাল্কা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তারপর তিনি দুনিয়া ছেড়ে রাব্বুল আলামীনের দরবারে চলে যান। ইন্নালিল্লাহি….রাজিউন। পুরাতন দিল্লীর শাহজাহানাবাদের দক্ষিণ ভাগে তাঁকে দাফন করা হয়। সে কবরস্থানকে মুহাদ্দেসীনের কবরস্থান বলা হয়।

সন্তান-সন্ততিঃ

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) – এর পাঁচটি ছেলে জন্ম নিয়েছিল। এক ছেলে যৌবনে পদার্পণ করেই মারা যান। তাই তার সম্পর্কে তাঁর জীবনী গ্রন্থে তেমন কিছু লেখা হয়নি। অবশিষ্ট চার ছেলে যথাযোগ্য শিক্ষা-দীক্ষা নিয়ে তাঁর বংশকে সমুজ্জ্বল করেছেন। তাঁর জ্যৈষ্ঠ ও শ্রেষ্ঠ সন্তান শাহ আবদুল আযীয (রঃ) ১১৫৯ হিজরীতে জন্ম নেন এবং তাঁর সতের বছর বয়সে শাহ সাহেব ইন্তেকাল করেন। তাঁর শৈশবের লেখাপড়া পিতার কাছেই সম্পন্ন হয়। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তিনি কোরআন পড়া শুরু করেন এবং তের বছর বয়সে তিনি নহু, ছরফ, ফিকাহ, মান্তেক, ইলমুল কালাম, আকায়েদ ইত্যাদি বিষয়ের কিতাবসমূহ আয়ত্ত করেন। অতঃপর পনের বছর বয়সে রহীমিয়া মাদ্রাসায় তাঁর পিতার মসনদে বসে শিক্ষা দানে ব্রতী হন। তাঁর গোটা জীবন শিক্ষা দানে ও কিতাব রচনায় ব্যয়িত হয়। তাঁর যুগে রাফেজী ও অন্যান্য বাতিল পন্থীদের প্রভাব অত্যধিক বেড়ে গিয়েছিল। তাই তিনি তাদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত জোরালো কিতাব লিখেন। তাঁর রচিত তফসীরে আযীয ও তোহফায়ে ইসনা আশারিয়ায় তিনি রাফেজীদের বাতিল ধ্যান-ধারণার মূলোৎপাটন ঘটিয়েছেন। তাছাড়া মুহাদ্দেসদের অবস্থা ও হাদীস সংকলনসমূহের ওপর তিনি বুস্তানুল মুহাদ্দেসীন নামে এক তথ্য বহুল গ্রন্থ রচনা করেন। পরন্তু তিনি শরহে মিযানুল মান্তেক ও আযীযুল ইকতেবাস ফী ফাযায়েলে আখবারিন্নাস নামে আকায়েদের এক মূল্যবান ভাষ্য রচনা করেন। তার দ্বিতীয় সন্তানের নাম শাহ রফিউদ্দীন। তিনিও তাঁর পিতার কাছে শিক্ষা-দীক্ষা লাভ করেন। শাহ রফিউদ্দিন কোরআন মজীদের সহজ উর্দু অনুবাদ করেন। সেটি অত্যন্ত কল্যাণপ্রদ ও জনপ্রিয় হয়েছে। শাহ সাহেবের তৃতীয় ছেলের নাম শাহ আবদুল কাদের। তিনি তফসীর শাস্ত্রে পরম ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। তিনি অত্যন্ত সরল ও একান্ত নিঃসঙ্গ জীবন যাপন পছন্দ করতেন। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি আকবরাবাদ মাজে মসজিদের এক হুজরায় কাটিয়ে গেছেন। তিনি কোরআনের এরূপ উত্তম অনুবাদ করে গেছেন যা বড় বড় তফসীরের কাজ দেয়। এ অনুবাদ ছিল ইলহামী অনুবাদ। উপমহাদেশের উলামায়ে কেরাম এক বাক্যে সেটাকে সর্বোত্তম অনুবাদ বলে গ্রহণ করেছেন। তাঁর চতুর্থ ছেলের নাম শাহ আবদুল গনী। তিনি ইলমে তাসাওফে যথেষ্ট পারদর্শীতা অর্জণ করেন। তিনিও তার পিতার কাছে হাদীস ও ফিকাহ শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। খোদা নির্ভরতা ও স্বল্পে তুষ্টির ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অতুলনীয়। তাঁরই পুত্র হলেন বালাকোটের শহীদ শাহ ইসমাঈল (রঃ)। তিনি পাঞ্জাব ও সীমান্তে কিছু এলাকা দখল করে ইসলামী হুকুমত কায়েম করেছিলেন। তাঁর “তাকবিয়াতুল ঈমান” ও “আল আবাকাত” কিতাবদ্বয় দেশ-বিদেশে বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

সাজরাঃ

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) শাহ আঃ আযীয (রঃ) শাহ রফিউদ্দীন (রঃ) শাহ আঃ কাদের (রঃ) শাহ আঃ গণী মোঃ মূসা মোঃ ঈসা মোঃ মাখসুস উল্লাহ হাসান জান মোঃ ইসমাঈল শহীদ (রঃ) গ্রন্থের উদ্দেশ্য বর্ণনামূলক ও জ্ঞানগত বিদ্যার ওপর সেকালে ও একালে বহু বই লেখা হয়েছে। প্রত্যেক মনীষীই জ্ঞান-গবেষণার ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় অবদান রেখেছেন। সে যুগে বর্ণনামূলক বিদ্যারই সর্বাধিক চর্চা চলছিল এবং এটাকেই তখন যথেষ্ট মনে করা হত। মুসলিম জাহান তখন রাসূলে করীম (সঃ)-এর কাছাকাছি যমানায় লালিত হচ্ছিল। তাই রাসূল (সঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের ফয়েজ ও বরকতের প্রভাবে হাজারো দর্শনের দার্শনিক মার প্যাঁচ তাদের প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়নি। তবে যতই ইসলামী দুনিয়ার প্রসারতা বেড়ে চলল আর এমনকি ইরান, হিন্দুস্তান ও পাশ্চাত্য জগতের বিভিন্ন এলাকায় যখন তা ছড়িয়ে পড়ল, তখন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দার্শনিকদের দুষ্ট প্রভাব মুসলমানদের সহজ সরল ঈমান ও আকায়েদের মজবুত ভিত্তিকে দুর্বল করে দিল। ফলে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের দ্বীন ও ঈমানের হেফাজতের জন্যে এমন ব্যক্তিত্বের এ পৃথিবীতে আবির্ভাব ঘটালেন যাঁরা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দার্শনিকদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়ে তাদের স্তব্ধ করে দিলেন। তারা শুধু ইসলামের জন্যেই প্রাচীর হয়ে দাঁড়ালেন না, পরন্তু দার্শনিকদের ভ্রান্ত চিন্তাধরার কল্পনার ফানুস ছিন্ন ভিন্ন করে হাওয়ায় উড়িয়ে দিলেন। ইসলামের ওপর বারংবার হামলা করেছে। কিন্তু তাদের ভাগ্যে লাঞ্ছনাকর পরাজয় ভিন্ন আর কিছুই জোটেনি। শাহ ওয়ালিউল্লাহ মোহাদ্দেসে দেহলভী (রহঃ) ও তাঁর হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগার আবির্ভাব ও সৃষ্টির পেছনে আল্লাহ পাকের সেই মর্জিই সক্রিয় ছিল। শাহ সাহেব (রহঃ) এ গ্রন্থটিতে শরীয়তের রহস্যাবলী তুলে ধরেছেন। পূর্বসূরীদের কেউই এ বিসয়ের ওপর কলম ধরেননি। শাহ সাহেব (রহঃ) শরীয়তের মূলনীতি দাঁড় করেছেন, তার শাখা-প্রশাখা বর্ণনা করেছেন। যদিও গ্রন্থখানি শরীয়তের রহস্যাবলীর ওপর তিনি লিখেছেন, তথাপি তিনি তাতে হাদীস, ফিকাহ, আখলাক, তাসাওফ ও দর্শনের সমারোহ ঘটিয়েছেন। উম্মতের ভেতর তিনিই প্রথম বর্ণনামূলক ও জ্ঞানগত বিদ্যার বিশেষজ্ঞ, যিনি শরীয়তের রহস্য বর্ণনা করতে গিয়ে শুধু জ্ঞানানুসন্ধানের পথ বেছে নিয়েছেন। তিনি কিতাব ও সুন্নাতের প্রতিটি নির্দেশের এরূপ অনড় কারণ খুঁজে বের করেছেনযা কোন যুগেই কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। গ্রন্থটি পাঠ করতে গিয়ে মনে হয় জ্ঞান ও যুক্তি শাস্ত্রের সকল স্তর আয়ত্তকারী এক বিশাল ব্যক্তিত্ব কথা বলেছেন। কখনও মনে হয়, মালায়ে আলার ইলহাম পেয়ে আধ্যাত্মিকতার বর্ণনা দিচ্ছেন। কখনও দেখা যায় যে, এক মুজতাহিদ এমন ভাবে মসআলা পেশ করছেন যাতে চার মজহাবের সমন্বয় ঘটে যাচ্ছে। এমনকি কিতাব ও সুন্নাতের বক্তব্যের সাথে তা হুবহু মিলে যাচ্ছে। আল্লামা আবু তাইয়্যেবা (রহঃ) “হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ” সম্পর্কে বলেনঃ

“যদিও গ্রন্থটি ইলমে হাদীস নয়, তথাপি তাতে হাদীসের প্রচুর ব্যাখ্যা মিলে। এমনকি তাতে বিভিন্ন হাদীসের তত্ত্ব ও রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। সে যাক, পূর্ববর্তী বার শতকে আরব-আজমের কোন আলেম এরূপ মহামূল্যবান গ্রন্থ রচনা করে যাননি। গ্রন্থটি এ বিষয়ে অনন্য। মোটকথা, গ্রন্থকারের এটা শুধু শ্রেষ্ঠ গ্রন্থই নয়, সর্বকালের একটি শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ”। শাহ সাহেব (রহঃ) তাঁর গ্রন্থটিকে দু’খণ্ডে বিভক্ত করেছেন। পয়লা খণ্ডটি সাত অধ্যায়ে বিভক্ত করেছেন। প্রতিটি অধ্যায় কয়েকটি পরিচ্ছেদে ভাগ করেছেন।

প্রথম খণ্ড

পয়লা খণ্ডে শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) শরীয়তের সেসব রহস্য ও নীতিমালা তুলে ধরেছেন যদ্বারা শরীয়তের বিধি-নিষেধসমূহ সহজেই বের ও উপলব্ধি করা যায়। অতঃপর তিনি পয়লা অধ্যায়ে মানুষকে কেন জবাবদিহি করা হবে আর কেন তাদের পুরস্কার বা শাস্তি দান করা হবে তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ অধ্যায়ে তেরটি পরিচ্ছেদ রয়েছে। পয়লা পরিচ্ছেদে সৃষ্টির উন্মেষ ও তার ব্যবস্থাপনা নিয়ে তিনি আলোচনা করেন। যেহেতু সৃষ্টিতত্ত্বই সব কিছুর আদি প্রশ্ন, তাই তিনি সর্বাগ্রে সেটারই সমাধান দিয়েছেন। আর স্বভাবতঃই সামগ্রিক জ্ঞানের জন্যে রচিত গ্রন্থে এটাই সর্বাগ্রে ঠাঁই পাবে। আমরা যদি সর্বাগ্রে অবতীর্ণ আয়াত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করি, তাহলেও দেখতে পাই, সেখানেও সৃষ্টিতত্ত্ব দিয়ে শুরু করা হয়েছে। যেমনঃ

অর্থাৎ, “সেই প্রভুর নামে পড়, যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে। সৃষ্টি করেছেন এক বিন্দু রক্তপিণ্ড থেকে”। (সূরা আলাক্বঃ আয়াত ১-২)

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) ও আল্লাহ পাকের এ পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। অতঃপর তিনি আলমে মেসাল (নমুনা জগত) মালা-এ-আ’লা (উচ্চতর পরিষদ), হাকীকাতে রূহ (আত্মাতত্ত্ব) ও জবাবদিহি তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। অতঃপর সিদ্ধান্ত প্রদান করেন যে, সবাইকে কর্মফল ভোগ করতে হবে। ভাল কর্মের জন্যে ভাল ফল ও মন্দ কর্মের মন্দ ফল পাবে। তিনি এটাকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তা চার কারণে হবে। এক, যে প্রাকরের কাজ সেই প্রকারের ফল হওয়াই স্বাভাবিক। দুই, মালা-এ-আ’লার সিদ্ধান্ত এটাই। তিন, শরীয়তের চাহিদাও তাই। চার, হুযুর (সঃ)-এর প্রতি অবতীর্ণ ওহীর এবং তাঁর দোয়া ও আল্লাহ পাকের সাহায্যের আশ্বাস স্বভাবতঃই সেটাকে অপরিহার্য করেছে। অতঃপর তিনি বলেন, কর্মফলের পয়লা দুটি দিক হল স্বাভাবিক। তার পরিবর্তন অসম্ভব। তৃতীয়টি কালের পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। চতুর্থটি নবী প্রেরণের পরে দেখা দেয়। অবশেষে তিনি কার্যকারণের বিভিন্ন দিক আলোচনা করে পয়লা অধ্যায় শেষ করেছেন। দ্বিতীয় অধ্যায়ে তিনি পার্থব জীবনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা অর্থাৎ মানুষের সর্বাংগীন জীবন-ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছেন। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কি কি পদক্ষেপ নিয়ে আমরা সাফল্যমণ্ডিত হতে পারি অতি চমৎকার ভাবে তিনি তা বর্ণনা করেছেন। মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবন কিভাবে সুখময় ও সুন্দর হতে পারে তা তিনি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন। এ অধ্যায়টিকে তিনি এগারটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত করেছেন। পয়লা পরিচ্ছেদে মানবিক প্রয়োজন ও মৌলিক অধিকারের নীতিমালা নির্ধারণ করেছেন। অতঃপর বিভিন্ন প্রয়োজন ও অধিকারের বাস্তবায়ন পদ্ধতি বলেছেন। ফলে নাগরিক জীবন, পারস্পরিক লেন-দেন, রাষ্ট্রনীতি, সমরনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতির বিভিন্ন দিক এভাবে বিন্যস্ত করেছেন যা দেখে অত্যাধুনিক কালের রাষ্ট্র বিজ্ঞানী, সমাজ বিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদরাও হতভম্ব হয়ে যায়। শাহ সাহেব (রঃ) শাসকদের জীবন চরিত সম্পর্কে আলোচনা প্রসংগে বলেনঃ শাসককে অবশ্যই উত্তম চরিত্রের হতে হবে। তাকে এক দিকে বীরের মত শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে জন কল্যাণের প্রয়োজনে, অপর দিকে তাকে দয়ালুও হতে হবে। তাকে বিজ্ঞ হতে হবে যাতে ইসলামী বিধি-নিষেধগুলোর তিনি যথাযথ বাস্তবায়ন ঘটাতে পারেন। তাকে প্রাপ্ত বয়স্ক, বুদ্ধিমান এক স্বাধীন পুরুষ হতে হবে। তা না হলে তার প্রভাব জনগণের ওপর পড়বে না। তাকে পূর্ণাঙ্গ দেহের এক সুস্থ ব্যক্তি হতে হবে। তা না হলে জনগণ তাকে যথাযথ সম্মান দিতে পারবে না। তাকে দাতা ও সামাজিক হতে হবে, তা হলে জনগণ তাকে ভালবাসবে। তাকে জন কল্যাণের কাজে নিয়োজিত হতে হবে, তা হলে জনগণ তাকে তাদের হিতাকাঙ্ক্ষী ভাববে। তাকে চতুর শিকারীর দূরদর্শিতা নিয়ে জনগণের সাথে ব্যবহার বজায় রাখতে হবে এবং সময়সুযোগ মতে শিকারের কাজ করতে হবে। তার বড় কাজ হবে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ব্যাপারে তাকে সার্বক্ষণিক সজাগ দৃষ্টির অধিকারী হতে হবে। এভাবে অল্প কতায় তিনি জনপ্রিয় শাসকের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন। শেষ পরিচ্ছেদে তিনি জনগণের ভেতরে বিভিন্ন রীতি-নীতি সম্পর্কে পর্যালোচনা করেন। চতুর্থ অধ্যায়ে তিনি সৌভাগ্য নিয়ে আলোচনা করেন। সৌভাগ্য কাকে বলে এবং সৌভাগ্য সম্পর্কিত ধ্যান- ধারণা নিয়ে মানুষের ভেতরে কি কি মতভেদ রয়েছে এবং সৌভাগ্য অর্জনের উপায় নিয়ে তিনি এ অধ্যায়ে সমিস্তারে আলোচনা করেছেন। সৌভাগ্যের অধ্যায়টিকে তিনি তাওহীদ, শির্ক ও ঈমানের ওপর আলোচনা করেছেন। তাছাড়া নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত এবং তার সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান নিয়েও আলোচনা করেছেন। বিশেষতঃ এগুলোর রহস্য ও তত্ত্ববিশ্লেষণ করেন। পরিশেষে পাপের স্তরভেদ, পাপের ক্ষতি-সমূহ, বিশেষতঃ পাপ কি করে কোন ব্যক্তি বা সমাজকে ধ্বংস করে তা তিনি সুস্পষ্ট ভাবে তুলে ধরেন। তেমনি তুলে ধরেছেন পুণ্য কি ব্যক্তি ও সমাজকে ইহলোক ও পরলোকের শান্তি ও সুখের পথ খুলে দেয়। ষষ্ঠ অধ্যায়ে তিনি জাতীয় রাজনীতির ওপর আলোচনা করেছেন। এ অধ্যায়টিকে তিনি একুশটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত করেছেন। দ্বীন ও মিল্লাতের বিভিন্ন ব্যাপারে জাতির পথপ্রদর্শক সম্প্রদায়, অতীতের ধর্মসমূহ, ইসলাম ও জাহেলী যুগের বিভিন্ন দিক নিয়ে তিনি অত্যন্ত মূল্যবান আলোচনা করেন। তাছাড়া এতে শরয়ী ও রাষ্ট্র পরিচালন ব্যবস্থার বিভিন্ন রহস্য ও তত্ত্বকথা তিনি তুলে ধরেছেন। সপ্তম বা শেষ অধ্যায়টিকে তিনি এগারটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত করেছেন। তাতে নবুয়তী জ্ঞানসমূহ, হাদীস সংকলনাদি, সাহাবা, তাবেঈন ও ফকীহদের মতভেদ ও মতামতের ওপর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেছেন। শেষভাগে তিনি তাহারাত ও সালাত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এভাবেই পয়লা খণ্ড সমাপ্ত হয়।

দ্বিতীয় খণ্ড

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) তাঁর হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ দ্বিতীয় খণ্ডে ইবাদত, সামাজিক সম্পর্ক ও রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা করেছেন। সর্বাগ্রে তিনি নামায, রোযা ও হজ্জ্বের পরিচ্ছেদ কায়েম করেছেন। এ খণ্ডকে তিনি বিভিন্ন অধ্যায়ে বিভক্ত করেননি, বরং প্রত্যেকটি আলোচনা স্বতন্ত্র শিরোনাম দিয়েছেন। কায়িক আত্মিক ইবাদত সম্পর্কে আলোচনার পর ব্যবসা-বাণিজ্য, রুজীরুটি উপার্জনের বিভিন্ন দিক আলোচনা করেন। কারণ, ইবাদত কবুলের ভিত্তিই হল হালাল রুজী। এ কারণেই ব্যবসায়ের রীতিনীতি ও অর্থোপার্জনের উপায়-উপকরণকে ইসলামী পদ্ধতিতে পরিচালনাই ইবাদত কবুলের চাবিকাটি। এরপর পারিবারিক ব্যবস্থার পরিচ্ছেদ দাঁড় করিয়েছেন। বিয়ে, তালাক, স্ত্রীর অধিকার, সন্তান-সন্ততির শিক্ষা-দীক্ষা ইত্যাদির ওপর সবিস্তারে আলোচনা করেছেন। অতঃপর দেশ ও জাতি সম্পর্কিত ব্যাপারগুলো আলোচনা করেছেন। খেলাফত, বিচার পদ্ধতি, দণ্ডবিধি, সমরনীতি ও অন্যান্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনা করেছেন। তাঁর এ আলোচনা এতই পাণ্ডিত্যপূর্ণ যে, এ কালের পণ্ডিতরাও দেখে অবাক হয়ে যায়। অবশেষে শাহ সাহেব জনসাধারণের সাধারণ জীবন যাপনকে বিভিন্ন রীতিনীতি আলোচনা করেছেন। আচার- আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছদ, সভ্যতা-সংস্কৃতি ইত্যাকার ব্যাপারে তিনি মূলনীতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। অবশেষে সাহাবায়ে কেরামের চারিত্রিক গুণাবলী তুলে ধরে তিনি তাঁর এ অমূল্য গ্রন্থটির পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন। এই বইটি এমন আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল যে মার্কসবাদী দর্শনের প্রবক্তা কার্ল মার্কস ও লেলিন এই বই থেকে সার সংগ্রহ করে তাঁদের মার্কসবাদী ম্যানিফেস্টো তৈরী করেছিলেন। শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুশাসনটুকু বাদ দিয়ে দেন।

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) এর মাদ্রাসা

শাহ সাহেবের পিতা শাহ আব্দুর রহীম (রহঃ) এর মারা যাবার পর তিনি পিতার তৈরী করা মাদ্রাসা ‘মাদ্রাসা-ই-রহীমিয়া’য় অধ্যাপনার কাজ শুরু করেন। তাঁর পিতা ১১শ শতাব্দীর শেষে ১২শ শতাব্দীর প্রথম দিকে এই মাদ্রাসাকে স্থাপন করেন।

শাহ সাহেবের জ্ঞান ও গবেষণার খ্যাতি যখন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল, তখন বিভিন্ন স্থান থেকে অধ্যায়নের জন্য ছাত্ররা এসে ভিড় করতে থাকে। ফলে পুরাতন অট্টালিকায় স্থান সংকুলান অসম্ভব হয়। তখন মুঘল সম্রাট শাহ আলম শাহ সাহেবকে ডেকে শহরের একটি বড়ো অট্টালিকায় দারুল হাদীস স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দেন । এই অট্টালিকাটি সম্রাট শাহ আলম দান করেন। পুরাতন মাদ্রাসার স্থান জনশূন্য হয়ে পড়ে। এই নতুন মাদ্রাসাটি এক সময় খুব বড় এবং জাঁকজমকপূর্ণ ছিল। বস্তুতপক্ষে একে উচ্চস্তরের দারুল উলুম বা বিশ্ববিদ্যালয় বলা হত। মাদ্রাসাটি ১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত অক্ষত ছিল। ১৮৫৭ এর মহাবিদ্রোহের সময় এটি ধ্বংস হয়ে যায়। মাদ্রাসার দরজা জানালা এবং তার কড়ি বরগা লুণ্ঠিত না হলে মনে হয় সেটা আজও পর্যন্ত অক্ষত থাকত। শাহ সাহেবের মৃত্যুর পর তাঁর চার পুত্রই এই মাদ্রাসায় অধ্যাপনার কাজ করেন এবং ইসলামী শিক্ষার কেন্দ্ররুপে এ মাদ্রাসা খ্যাতি অর্জন করে। শাহ সাহেবের পুত্রদের অবর্তমানে শাহ ইসহাক মুহাজিরে মক্কী (রহঃ) এ মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাক (রহঃ) এর ১২৫৬ হিজরীতে মক্কা শরীফ হিজরত করার পর মাওলানা রফিউদ্দীনের প্রতিনিধি মাওলানা মাখসুসুল্লাহ এবং মাওলানা মুসা এ মাদ্রাসার তত্ত্বাবধান করেন। আব্দুস সালাম নামে এক শিশু পুত্র রেখে মাওলানা মুসা ইন্তেকাল করেন। মাওলানা মাখসুসুল্লাহও ইন্তেকাল করেন। তখন খান্দানে নাবালক আব্দুস সালামকে শিক্ষা দেওয়ার মত আর কেউ বেঁচে ছিলেন না। মোট কথা কয়েক পুরুষ পরে তাঁদের এই ধারা বিলুপ্ত হয়ে যায়। তারপর সম্পূর্ণ সম্পত্তি রায় বাহাদুর লালা শিব প্রসাদের হাতে হস্তাগত হয়। এই জন্যই সেই গলিতে ‘মাদ্রাসা-ই-লালা রামকিষন দাস’ ফলক লাগালো হয়েছে।

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) এর আন্দোলন

আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ঃ (হিজরী ১১৩১ – ১১৭৬)

১৭১৭ সালে যখন ইংরেজরা মহীশূরের এক এলাকা দখল করে নেয় ঠিক সেই সময় থেকেই ইংরেজ রাজত্ত্বের ভিত্তি রচনা হয়। এবং ১১৪০ খ্রীষ্টাব্দে বেশ কয়েকটি সুবার শাসনভার গ্রহণ করে বানিজ্য বসতির পথ প্রসস্ত করে। এই বিষয়টি সর্বপ্রথম অনুধাবন করেন শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ)। তিনি দেখেন ইংরেজরা তখন চারটি সুবার শাসনকর্তা। শাহ সাহেব নিজে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে যেতে পারেন নি। তবে তিনি ব্রিটিশ বিতাড়নের পথ প্রসস্থ করে গিয়েছিলেন। তাঁর মহান পুত্ররা তাঁর আন্দোলনকে সারা দেশজুড়ে ছড়িয়ে দেন।

১৭৬২ খ্রীষ্টাব্দে শাহ সাহেবের মৃত্যু হলে তাঁর উপযুক্ত পুত্র শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) আন্দোলনের হাল ধরেন। যখন শাহ সাহেব মারা যান তখন শাহ আব্দুল আজিজ এর বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর। শাহ সাহেবের প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রীয় পরিষদ শাহ আব্দুল আজিজকে ইমাম মেনে নেবার সিদ্ধান্ত করেন। প্রথমে তাঁকে শাহ সাহেবের সংস্কারমূলক আন্দোলনের মূলনীতিগুলি শিক্ষা দেবার ব্যাবস্থা হলো। মাওলানা মুহাম্মাদ আশেক এবং মাওলানা মুহাম্মাদ আমীন তাঁকে হাদীস এবং সংস্কার আন্দোলনের বিষয়ে শিক্ষা দান করেন । শাহ আব্দুল আজিজের শ্বশুর মাওলানা সুরুল্লাহ তাঁকে ফিকাহ শাস্ত্র শিক্ষা দিয়েছিলেন। এভাবে শাহ আব্দুল আজিজকে শাহ সাহেবের যোগ্য উত্তরাধীকারীরুপে গড়ে তোলা হয়েছিল। শাহ সাহেবের যুগে দিল্লীতে মুসলিম রাজত্ত্বের কিছুটা প্রাণ অবশিষ্ট ছিল কিন্তু শাহ আব্দুল আজিজ এর যুগে মুসলিম সম্রাটদের প্রাণশক্তি বলতে কিছুই বাকি ছিল না। ব্রিটিশরা পুরোপুরি গ্রাস করে নিয়েছিল। তখন শাহ আব্দুল আজিজই ইংরেজ উচ্ছেদের কল্পে জেহাদের ফতোয়া জারি করেন। শাহ আব্দুল আজিজের এই ফতোয়াকে কেন্দ্র করেই এদেশে মুসলমানরা প্রথম স্বাধীনতার জন্য শহীদ হতে রাজী হন। পরবর্তীকালেও ‘রেশমী রুমালে’র আন্দোলনের মূলেও ছিল এই ফতোয়া।

এই ফতোয়ার মূলেই ছিল সৈয়দ আহমদ বেরেলবী (রহঃ) আন্দোলন। পরে তিনি এবং তাঁর মূরীদ সৈয়দ শাহ ইসমাইল দেহলভী (রহঃ) পাঞ্জাবের বালাকোটের ময়দানে শহীদ হন। পরে যখন এই আন্দোলন আরও বিস্তৃতি লাভ করে তখন মাওলানা কাসেম নানুতুবী, মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী, মাওলানা জাফর থানেশ্বরী, মাওলানা মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী, মাওলানা ওবাইদুল্লাহ সিন্ধী, মাওলানা হোসেন আহমদ মাদানী প্রভৃতিরা এই আন্দোলনে শরীক হন।

শাহ সাহেবের অনুসারীরা ইংরেজদের ভিত্তি নড়িয়ে দিয়েছিল। ইংরেজরা বুঝে গিয়েছিল যে, শাহ সাহেবের জ্ঞান, গবেষণা দর্শন, লোকেদের অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে গেছে। সে সময় যদি ইংরেজ জাতি উপমহাদেশের মৃত্তিকায় দৃঢ়ভাবে শিকড় না গেড়ে ফেলত তাহলে শাহ ওয়ালীল্লাহর সংস্কার আন্দোলনই শক্তি দখল করতে সমর্থ হত। ইংরেজদের প্রাধান্য ওয়ালীল্লাহর আন্দোলনের পথে শুধু অন্তরায় হয়েই দাঁড়িয়েছিল না বরং তাঁদের চক্রান্তে সে আন্দোলনের রুপকে বিকৃত করে তুলে ধরা হয়েছিল। এই বিকৃত করে তুলে ধরার জন্য তারা কিছু আলেম নামধারী জিন্দিকদেরকে ও কবরপুজারী মুশরিকদেরকে দিয়ে উক্ত আন্দোলনের কর্ণধার উলামায়ে দেওবন্দকে কাফের ফতোয়া দেয় এবং আন্দোলনকে বানচাল করার চেষ্টা করে। কিন্তু শেষমেষ সে চক্রান্ত ব্যার্থ হয়।

আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ঃ (হিজরী ১২৪৬ – ১৩৩৯)

এই আন্দোলন শুরু হয় ১২৪৬ হিজরীতে এবং এই আন্দোলনের জনক ছিলেন শাহ ইসহাক (রহঃ) । ১৩৩৯ হিজরীতে দেওবন্দের শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী (রহঃ) এর ইন্তেকালের পরেই এই আন্দোলনের যবনিকাপাত হয়।

বালাকোটের ঘটনার পরে সুদীর্ঘ ১১ বছর ধরে আন্দোলন সম্পর্কে গবেষণা করার পর শাহ ইসহাক আন্দোলনের একটি পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচী তৈরী করেন। তাঁর এই কর্মসূচীতে দুটি মূলনীতি বিশেষভাবে স্থান পেয়েছিল। সেগুলি হল-

১) হানাফী মাযহাবের অনুসরণ।

২) তুর্কী সরকারের সাথে সম্পর্ক স্থাপন।

এই আন্দোলনে শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) এবং শাহ আব্দুল আজীজ (রহঃ) এর আদর্শ এবং কর্মপন্থা যারা পুরোপুরি সমর্থন করেন না তাদেরকে এই আন্দোলনের সম্পর্ক থেকে মুক্ত করা হয় । ফলে এই আন্দোলন ইয়ামেনী ও ওহাবী নজদী আন্দোলনের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে যায়। এতে অধিকাংশ উপমহাদেশীয় মুসলমানকে এর মধ্যে আকর্ষন করতে সমর্থ হয়। আন্দোলনকে দৃঢ়মূল করার উদ্দেশ্যে জনসাধারণের মধ্যে ঘোষণা করা হয় যে, আন্দোলনের সব নেতা হানাফী ফিকাহ এবং উপমহাদেশীয় আধ্যাত্মিক দর্শন পরিত্যাগ করার আহ্বান জানায় তারা আসলে শিয়া সম্প্রদায়ভূক্ত। তারপর যারা হানাফী ফিকাহ এবং তাসাউফকে অস্বীকার করত সেই হানাফী মাযহাব বিরোধী ফিরকাকে ওয়ালীউল্লাহ-পন্থী মুসলমানগণ ছোট রাফেযী বলত।

দারুল উলুম দেওবন্দ

১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সময় ইংরেজরা হাজার হাজার উলামাকে শহীদ করে। শাহ সাহেবের পিতার প্রতিষ্ঠা করা মাদ্রাসা ‘মাদ্রাসা-ই-রহীমিয়া’ ও এই মহাবিদ্রোহের সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) এর আন্দোলনের প্রধান কর্মকর্তাগণের মধ্যে যাঁরা ১৮৫৭ সালে হিজাজে হিজরত করেন, তাঁরা দিল্লী মাদ্রাসার আদর্শে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। দিল্লী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল শাহ আব্দুল আজীজ (রহঃ) এর যুগে এবং সেখানে অধ্যপকবৃন্দের মধ্যে ছিলেন মাওলানা আব্দুল হাই, তারপর রশীদুদ্দীন দেহলভী, তারপরে মামলুক আলী দেহলভী। ১৮৫৭ব সালের মহাবিদ্রোহের সময় এই মাদ্রাসাও বন্ধ হয়ে যায়।

হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজির মক্কী (রহঃ), ইমাম আব্দুল গণী দেহলভী (রহঃ) এবং শাহ ওয়ালীউল্লাহ পন্থী বিশিষ্ট নেতারা হিজাজে এ আন্দোলনের শক্তিশালী কেন্দ্র গঠন করতে চেয়েছিলেন; এবং সীমান্তের পার্বত্য এলাকায় এ আন্দোলন নতুনভাবে গড়ে তোলার জন্য কর্মপন্থা গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। ভারতীয় উপমহাদেশের আমীর হাজি ইমদাদুল্লাহ (রহঃ) এর প্রতিনিধি ছিলেন শায়খুল ইসলাম মাওলানা মুহাম্মাদ কাসিম নানুতুবী (রহঃ)। হাজি ইমদাদুল্লাহ (রহঃ) একসময় বলেছিলেন যে, আল্লাহ তাঁর কোন কোন বান্দাকে এক একজন লিসান (মুখপাত্র) দিয়ে সাহায্য করেন। শামস তাবরেজীর জন্য মাওলানা রুমি ছিলেন মুখপাত্র। তেমনি মাওলানা কাসেমকে আমার মুখপাত্র রুপে সৃষ্টি করা হয়েছে। আমার মনে যা জাগরিত হয় মাওলানা কাসেমের মুখ থেকে তাই প্রকাশ পায়।

এই মাওলানা মুহাম্মাদ কাসেম নানুতুবী (রহঃ) ১৮৬৬ সালে (১২৮৩ হিজরী) উত্তর প্রদেশের দেওবন্দ নামক ছোট্ট শহরে দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। বর্ণিত আছে নবী (সাঃ) মাওলানা কাসেম নানুতুবী (রহঃ)কে স্বপ্নের জানিয়েছিলেন এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে মাওলানা কাসেম নানুতুবী (রহঃ) শাহ সাহেবের আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। মাওলানা কাসেম নানুতুবী (রহঃ) হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাহিদদের অন্যতম ছিলেন। শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী এর মতবাদ তিনি সমকালীন উপমহাদেশীয়দের সম্মুখে যুগোপযোগী রুপ দিয়ে পেশ করেন। অসংখ্য জ্ঞান পিপাসুর তিনি উৎস ছিলেন-তাদের মধ্যে শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী (রহঃ) একজন ছিলএন। পরবর্তীকালে তিনি দেওবন্দ আন্দোলনের তৃতীয় পর্যায়ের ইমাম এবং অগ্রনায়ক ছিলেন। মাওলানা কাসেম নানুতুবী (রহঃ) এর আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল জাতির দরিদ্র জনসাধারণ-আমীর এবং বিশিষ্ট শ্রেণী নয়। এ আন্দোলনের একমাত্র আল্লাহর মদদের উপর নির্ভরশীল ছিল। সুতরাং দেওবন্দ আন্দোলন উচ্চ শ্রেণীর সংস্পর্শ থেকে যথাসম্ভব মুক্ত ছিল। মাওলানা কাসেম নানুতুবী (রহঃ) এর ইন্তেকাল হয় ১৮৮০ খ্রীষ্টাব্দের ১৫ই এপ্রিল অর্থাৎ ১২৯৭ হিজরীতে। মাওলানা ইসমাইল শহীদ দেহলভীর ব্যাক্তিত্ত্বের ছাপ ছিল তাঁর চরিত্রে।

মাওলানা কাসেম নানুতুবী (রহঃ) একজন কবিও ছিলেন। তিনি এতবড় আশেকে রাসুল (সাঃ) ছিলেন যে মদীনা শহরে প্রবেশের ৭ মাইল আগেই জুতো খুলে নিতেন এই ভেবে যে চোদ্দশ বছর আগে মহানবী (সাঃ) এই পথে হাঁটাচলা করেছেন।

দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রসাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীকালে দেওবন্দ আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন মাওলানা মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী (রহঃ), মাওলানা হোসেন আহমদ মাদানী (রহঃ), মাওলানা ওবাইদুল্লাহ সিন্ধী (রহঃ), মাওলানা হসরত মোহানী (রহঃ) প্রভৃতি শীর্ষস্থানীয় দেওবন্দী জামাতের নেতারা।

মাওলানা কাসেম নানুতুবী (রহঃ) ইন্তেকাল করলে তাঁর স্থলাভিশিক্ত হন মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী (রহঃ)। তিনি পবিত্র কুরাআন, হাদীস ও ফিকাহ শস্ত্রের পাশাপাশি তাসাওফের পণ্ডিত ছিলেন। তিনি হাজি ইমদাদুল্লাহ (রহঃ) এর কাছ থেকে চিশতিয়া, কাদরিয়া, নকশবন্দীয়া এবং সোহরাবর্দীয়া তরিকার উপর দীক্ষা নিয়ে আধ্যত্মিক উৎকর্ষ লাভ করেছিলেন।

আন্দোলনের বিভক্তি

পরবর্তীকালে সৈয়দ আহমদ শহীদ বেরেলবী (রহঃ) এর শাহাদাতের বিষয়কে কেন্দ্র করে শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) এর সমাজ সংস্কারক ও দেশাত্মবোধক আন্দোলন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। নেতৃস্থানীয়দের বেশীরভাগ বিশ্বাসী ছিলেন যে সৈয়দ আহমদ বেরেলবী (রহঃ) শহীদ হয়েছেন। অন্যদল বিশ্বাসী ছিলেন যে সৈয়দ আহমদ বেরেলবী (রহঃ) শহীদ হননি। তিনি জীবিত রয়েছেন। তিনি শিঘ্রই আত্মপ্রকাশ করবেন। এদের সংখ্যা খুবই নগণ্য ছিল। মাওলানা ইসহাক (রহঃ) এবং তাঁর দলবল সৈয়দ আহমদ বেরেলবী (রহঃ) এর শাহাদাতের বিষয়টাকে সমর্থন করতেন। কিন্তু মাওলানা বিলায়েত আলী সাদেকপুরী সাহেবের বিশ্বাস ছিল সৈয়দ আহমদ বেরেলবী (রহঃ) শহীদ হন নি। বরং তিনি কোথাও অদৃশ্য হয়ে গেছেন। মাওলানা বিলায়ত আলী ছিলেন মাওলানা ইসমাইল শহীদ (রহঃ) এর বিশিষ্ট সহচর। সৈয়দ আহমদ বেরেলবী (রহঃ) জিহাদের প্রচারে তাঁকে বিভিন্ন এলাকায় প্রেরণ করতেন। বালাকোটের ঘটনার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। সেজন্যই তিনি সৈয়দ আহমদ বেরেলবী (রহঃ) এর শাহাদাতের ঘটনা বিশ্বাস করতে পারেন নি। এই জন্যই দুই দলের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল।

এই সাদেকপুরী দলের বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন মিঁয়া নাযীর হুসাইন দেহলভী। তিনি দিল্লীতে বসবাস করতেন। তিনি ১২২০ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১২৩৭ হিজরী পর্যন্ত সাদেকপুরেন শিক্ষাদীক্ষা লাভ করেন। ১২৭৪ হিজরীর পরে তিনি স্বাধীনভাবে ইজতেহাদ শুরু করেন। তবে অনেক বিষয়ে শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) এর পৌত্র শাহ ইসমাইল শহীদের অনুসরণ করতেন।

সাদেকপুরী জামাতের মধ্যে একজন ছিলেন নবাব সিদ্দিক হাসান খান ভূপালী। তিনি আব্দুল হক বেনারসীর কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেন। আব্দুল হক বেনারসী আবার ইয়ামেনের যায়দিয়া শিয়া আলেম ইমাম শাওকানীর কাছে থেকে শিক্ষা নিয়েছিলেন। আব্দুল হক বেনারসী জীবনের মধ্যবর্তী সময়ে পুরোপুরী শিয়া হয়ে গিয়েছিলেন এবং সাহাবায়ে কেরামদেরকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা আরম্ভ করেন। ‘তাম্বিহুদ্বাল্লীন’ কিতাবে লেখা আছে, “সৈয়দ আহমদ শহীদ বেরেলবী (রহঃ) এর জেহাদী দলের বিরোধীতা করার জন্য মাওলানা আব্দুল হক বেনারসীকে দল থেকে বিতাড়িত করেন। তিনি মক্কা শরীফে গিয়ে আশ্রয় নেন, কিন্তু তার জেহাদ বিরোধী আকিদা জানতে পেরে মক্কা মদীনার উলামাগণ তার হত্যার আদেশ ঘোষণা করেন। সেখান থেকে কোন রুপে পলায়ন করে বেনারসে এসে আশ্রয় নেন। তাঁর অধিকাংশ মতবাদ রাফেযী মিশ্রিত ছিল। তিনি নিজেকে খলিফা আমীরুল মোমেনীন বলে ঘোষণা করেন।” (তাম্বিহুদ্বাল্লীন পৃষ্ঠা-২)

এই সাদেকপুরী জামাত যখন থেকে ইয়ামেনের যায়েদী শিয়াদের, জাহেরিয়া মতাবলম্বীদের সাথে ও আরবের মেলামেশা শুরু করে ঠিক তখন থেকেশাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) ও শাহ ইসমাইল শহীদ দেহলভী (রহঃ) এর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে। এরপর উক্ত দুটি জামাতের মত ও আদর্শে অনেকখানি ব্যাবধান সৃষ্টি হয় । মুশরিকদের আদৌ ক্ষমা না পাওয়া এবং দুয়ায় কোন ওসীলা অবলম্বন এই দুটি ব্যাপারে উপরোক্ত দুই জামাতের মধ্যে মতানৈক্য বিদ্যমান। ইসমাইল শহীদের আল আবকাত পাঠ করলে শায়েখ মুহিউদ্দীন ইবনুল আরাবী (রহঃ) ওয়াহদাতুল ওজুদ সম্পর্কে তাঁর এবং শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া এবং হাম্বলী মতাবলম্বীদের মতামতের পার্থক্য উপলব্ধি করা যায়। মাওলানা নাযীর হুসাইন দেহলভী ইবনুল আরাবীকে কাফের বলে স্বীকার না করার প্রশ্নে ইসমাইল শহীদের অনুসারী ছিলেন। এই মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলবী সাহেব শায়খ ইবনে আরাবীর ব্যাপারে ভালো আকিদা রাখতেন এবনহ তাঁকে এবং তাঁকে ‘খাতেমুল বিলায়াতিল মুহাম্মাদীয়া’ উপাধীতে স্মরন করতেন এবনহ তাঁর প্রসংসা করতেন। মিঁয়া নাযীর হুসাইন দেহলবীর জীবনী লিখেছেন মাওলানা ফাযলে হাসান বিহারী ‘আল হায়াত বা’দাল মামাত’ নামে। সেখানে লেখা আছে,

“(মাওলানা মিঁয়া নাযীর হুসাইন দেহলবী সাহেব) যখন ‘কিতাবুর রাকায়েক’ এর শিক্ষা দিতে এবং তাসাউফের সত্যতা বর্ননা করতেন তখন বলতেন, সাথীগন! এখানে জ্ঞানের সমুদ্র দেখা যাচ্ছে। এই কারনেই তিনি উলামাদের তাবাকাতের মধ্যে শায়খ মুহিউদ্দিন ইবনে আরাবীকে বড়ই সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতেন এবং বলতেন শায়খ ইবনে আরাবী ‘খাতেমুল বিলায়াতিল মুহাম্মাদীয়া’ ছিলেন।” (হায়াত বা’দাল মামাত, পৃষ্ঠা-১২৩)

এখানে উস্তাদ মিঁয়া নাযীর হুসাইন দেহলবী এবং তাঁর ছাত্ররা একমত যে মুহিউদ্দিন ইবনে আরাবী (রহঃ) ‘খাতেমুল বিলায়াতিল মুহাম্মাদীয়া’ ছিলেন। এবং ছাত্র একথা বাড়িয়ে বললেন, “প্রকাশ্য এবং গোপন জ্ঞান জমাকারী, একাকী শ্রেষ্ঠত্যের অধিকারী ছিলেন। ‘আল হায়াত বা’দাল মামাত’ এর মধ্যে আরও লেখা আছে,

“মাওলানা কাজী বশীরুদ্দীন কনৌজী শায়খ ইবনে আরাবীর বিরোধী ছিলেন। একবার মিঁয়া নাযীর হুসাইনের সঙ্গে শায়খে আকবর (ইবনে আরাবী) এর ব্যাপারে আকিদা নিয়ে দিল্লিতে মুনাযারা করতে এলেন এবং দুই মাস পর্যন্ত দিল্লীতে ছিলেন। প্রত্যেক দিন মুনাযারার মজলিস লাগত কিন্তু মিঁয়া সাহেব নিজের আগের ধ্যান-ধারনা থেকে পিছু হাটলেন না। শেষ পর্যন্ত কাজী সাবেব দুই মাস পর ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেলেন।” (আল হায়াত বা’দাল মামাত, পৃষ্ঠা-১২৩)

সুতরাং মিঁয়া নাযীর হুসাইন দেহলবী সাহেব শায়েখ ইবনে আরাবী (রহঃ) কে সম্মান করতেন এবং তিনি ওয়াহদাতুল ওজুদের বিরোধী ছিলেন না। এমনকি তিনি ওয়াহদাতুল ওজুদের স্বপক্ষে মুনাযারাও করেছেন।

সাদেকপুরী জামাতের নবাব সিদ্দিক হাসান খান ভূপালীও ইবনুল আরাবীকে কাফের বলতেন না। তিনি ‘আত্তাজুল মুকাল্লাল’ গ্রন্থে ইবনুল আরাবীকে কাফের নয় বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “তকলীদ তরক করার ব্যাপারে এবং দলীল মোতাবিক আমল করার ব্যাপারে শায়খ ইবনে আরাবীর বাণী অন্য ব্যাক্তির বানীর থেকে উত্তম এবং এই ব্যাপারে খোদাপ্রেমে আত্মহারা এবং আকর্ষনে ঘেরা বর্ননায় পরিপুর্ন । যাক আল্লাহ তাআলা আমাদের এবং আমাদের সমগ্র মুসলমানদের তরফ থেকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। তাঁর আলোকে যেন আমাদেরকে ফায়েজ দান করুন। তাঁর গোপন এবং বাতিনি পোষাক যেন আমাদের পরান। তাঁর জ্ঞানের মদীরার উত্তাপে যেন আমাদেরকে পুর্ণ করে দেন এবং তাঁর সাথীদের দলে আমাদের যেন হাশর দান করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর মাহাত্মের সদকায় আমাদের এই দুয়া কবুল করুন।” (আত্তাজুল মুকাল্লাল, পৃষ্ঠা-১৮০)

নবাব সিদ্দিক হাসান খানের মতে ইবনে আরাবী সম্পর্কে কোনরুপ বিতর্ক না করা সংগত। তাঁর যে মতগুলি বাহ্যত শরীয়াতের খেলাফ বলে দেখা যাবে, সেগুলির সদর্থ গ্রহণ করা এবং তাঁর প্রতি কুফরী আরোপ করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ।

ইবনুল আরাবীর ব্যাপারে শাহ ইসমাইল শহীদের ব্যাপারে সাদেকপুরী জামাত একমত হলেও তারা শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) এর মতাদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে গিয়েছিল।

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) এর পরে সাদেকপুরী জামাত শাহ সাহেবের মত ও পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেলেও শাহ সাহেবের সুযোগ্য উত্তরসূরী উলামায়ে দেওবন্দ শাহ সাহেবের পথে এখনও কায়েম আছেন। আর ইনশাআল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত থাকবেন। কারণ শাহ সাহেবের মতাদর্শকে টিকিয়ে রাখার জন্যই উলামায়ে দেওবন্দের উত্থান এবং তাঁরাই শাহ সাহেবের সুযোগ্য উত্তরসূরী।

সাজরা

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী

 

Post Views: 11,908
Tags: HistoryShah Waliullah Dehlaviইসলামশাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবীস্বাধীনতা সংগ্রাম
ADVERTISEMENT

Related Posts

বিদ্যাসাগরের প্রতি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিদ্বেষ ও বিরোধীতা
ভারতবর্ষের ইতিহাস

বিদ্যাসাগরের প্রতি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিদ্বেষ ও বিরোধীতা

একজন বিদ্যার সাগর, আর একজন সাহিত্যের সম্রাট। উভয়েই উনিশ শতকের বিখ্যাত মনীষী ও লেখক এবং পরস্পরের সমকালীন। উনিশ শতকের...

by কামরুজ্জামান
November 13, 2024
মন্দির ধ্বংস এবং ইন্দো-মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ
ভারতবর্ষের ইতিহাস

মন্দির ধ্বংস এবং ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিবৃত্ত

লিখেছেনঃ রিচার্ড এম. ইটন সম্প্রতি, বিশেষ করে ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর, দক্ষিণ এশিয়ার মন্দির এবং মসজিদের রাজনৈতিক...

by অতিথি লেখক
November 12, 2024
প্রকৃতি, নান্দনিক চৈতন্য ও মরমিবাদ: বাংলার আরবি-ফার্সি শিলালিপির আধ্যাত্মিক দিক
ইসলামিক ইতিহাস

প্রকৃতি, নান্দনিক চৈতন্য ও মরমিবাদ: বাংলার আরবি-ফার্সি শিলালিপির আধ্যাত্মিক দিক

চিত্র ৪.১ (শিলালিপি নং): পাণ্ডুয়ার শায়খ নূর কুতব আল আলমের সমাধিফলকে ব্যবহৃত সাতটি আধ্যাত্মিক উপাধি...

by মুহাম্মাদ ইউসুফ সিদ্দিক
November 7, 2024
সিন্ধু-সভ্যতার অস্তিত্ব সম্পর্কে নতুন ও রোমাঞ্চকর তথ্য উন্মোচন
ভারতবর্ষের ইতিহাস

সিন্ধু সভ্যতার অস্তিত্ব সম্পর্কে নতুন ও রোমাঞ্চকর তথ্য উন্মোচন

মোহেন্-জো-দড়ো—হরপ্পার তথাকথিত সিন্ধু সভ্যতা সম্পর্কে ভারতের মানুষের গর্ববোধের শেষ নেই। ঐ সভ্যতার ‘আবিষ্কার’-এর সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় সভ্যতার বয়স এক...

by বিবস্বান আর্য
November 8, 2024

POPULAR POSTS

  • সুলতান মাহমুদ

    সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান ও সোমনাথ মন্দির প্রসঙ্গ (১ম পর্ব)

    181 shares
    Share 181 Tweet 0
  • বাউরী সম্প্রদায়ের উৎপত্তির ইতিহাস ও ঐতিহাসিক পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • আর্যদের ভারত আগমন, বিস্তার, সমাজ ও সভ্যতা: এক ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে বৌদি কাদম্বরী দেবীর সম্পর্ক আদৌ কি প্রেমের ছিল?

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • হিন্দু পদবীর উৎপত্তির ইতিহাস, বিবর্তন ও ক্রমবিকাশঃ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

Facebook Page

নবজাগরণ

ADVERTISEMENT
নবজাগরণ

'Nobojagaran' is a website of its kind where you can gather knowledge on all the unknown facts of the world. We human beings always have a thirst for knowledge. Nobojagaran takes its first steps to quench this thirst of ours. We are now in the era of digital world, where we get almost anything online. So how about a bit of knowlyfrom online?

Connect With Us

No Result
View All Result

Categories

  • English (9)
  • অন্যান্য (11)
  • ইসলাম (26)
  • ইসলামিক ইতিহাস (22)
  • ইহুদী (1)
  • কবিতা (37)
  • খ্রিস্টান (6)
  • ছোটগল্প (6)
  • নাস্তিকতা (18)
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (24)
  • বিশ্ব ইতিহাস (24)
  • ভারতবর্ষের ইতিহাস (194)
  • রাজনীতি (38)
  • সাহিত্য আলোচনা (68)
  • সিনেমা (17)
  • হিন্দু (16)

Pages

  • Cart
  • Checkout
  • Checkout
    • Confirmation
    • Order History
    • Receipt
    • Transaction Failed
  • Contact
  • Donation to Nobojagaran
  • Homepage
  • Order Confirmation
  • Order Failed
  • Privacy Policy
  • Purchases
  • Services
  • লেখা পাঠানোর নিয়ম
  • হোম
No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi

©Nobojagaran 2020 | Designed & Developed with ❤️ by Adozeal

Login to your account below

Forgotten Password?

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In
Don't have an account yet? Register Now
wpDiscuz
4
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
| Reply
Open chat
1
Powered by Joinchat
Hi, how can I help you?