লিখেছেনঃ সুরজিৎ দাশগুপ্ত
বাংলার সমগ্র ইতিহাসে ঊনবিংশ শতাব্দী বোধহয় সবচেয়ে গৌরবময় যুগ এবং তাই এই যুগটিকে অনেকে বাংলার রেনেসাঁস-এর যুগ বলে শনাক্ত করেছেন। তাতে কারও কারও পাণ্ডিত্যাভিমানে ঘা লেগেছে মনে হয়। তারা তাই ইউরোপের রেনেসাঁসের অসীম মহিমা ছিল এই কথা ভেবে বাংলার রেনেসাঁসকে খাটো করে থাকেন, বলেন যে, ইউরোপীয় রেনেসাঁসের ব্যাপ্তি ও মহত্ত্ব বাংলার রেনেসাঁসের ছিল না, বাংলার রেনেসাঁসাকে এক বিখ্যাত ঐতিহাসিক একটা ক্যারিকেচার পর্যন্ত বলেছেন, কেউ আবার বলেছেন যে পরাধীন দেশে নাকি রেনেসাঁস হয় না। কিন্তু ইউরোপের রেনেসাঁস তো সমগ্র ইউরোপে হয়নি, হয়েছিল ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ইটালিতে। রেনেসাঁসের প্রেরণাতে যেসব নতুন সমুদ্রপথ বা নতুন মহাদেশ আবিষ্কৃত হয়েছিল সেসবের পৃষ্ঠপোষক ছিল পর্তুগাল-স্পেনের রাজা-রানি প্রমুখ। রেনেসাঁসের যুগটাই যে দাস ব্যবসায়ের আর খ্রিস্টীয় সত্যের জিজ্ঞাসুদের জীবন্ত দাহের স্বর্ণযুগ; এই সত্যের প্রতি এইসব পণ্ডিতবর্গ কি অন্ধ? পরাধীন দেশে রেনেসাঁস হয় না, কিন্তু ওই রেনেসাঁসের জন্মভূমি ইটালি কি তখন একটা স্বাধীন দেশ ছিল? ইটালি তখন ছিল পরস্পর বিবদমান ছোট ছোট নগররাষ্ট্রে বিভক্ত। তা ছাড়া ওই রেনেসাঁসের যে শিল্প নিয়ে সবাই মুগ্ধ সেসবের বিষয় তো ছিল খ্রিস্টানধর্মের বিভিন্ন পুরাণ ও কাহিনি, সে শিল্পের সৌন্দর্যের আড়ালে ছিল একমাত্র খ্রিস্টানধর্মের মাহাত্ম্যের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। প্রকৃতপক্ষে ইউরোপের রেনেসাঁস ছিল গিবেললিন, গুয়েলফ, মেদিচি প্রভৃতি ধনী বণিকবংশের অনুগ্রহলালিত শ্বেতাঙ্গ, পুরুষসর্বস্ব, উগ্র খ্রিস্টধর্মবিশ্বাসী এক আন্দোলন। সাধারণ মানুষের জীবনে তার তথাকথিত মানবিকতা, জ্ঞানপিপাসা, যুক্তিশীলতা ইত্যাদির প্রভাব ছিল খুবই নগণ্য। নারীর অধিকার অথবা প্রযয়োজনের কথা, কৃষকদের অবস্থার কথা কেউ ভাবেননি।
এবার দেখা যাক বাংলার রেনেসাঁসের ফলে সমাজে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটতে শুরু করল। এর জন্য পুরো ঊনবিংশ শতাব্দীর ইতিহাস পর্যবেক্ষণের প্রযয়োজন নেই শুধুমাত্র বাংলার রেনেসাঁসের জনক মহাত্মা রামমোহন রায়ের জীবন ও কীর্তিগুলি পর্যালোচনাই যথেষ্ট। রামমোহনের অনুরাগীরাও তার কীর্তির ইতিহাস রচনা শুরু করেন ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় এসে রামমোহনের স্থায়ীভাবে বসবাসের ও আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠার বৃত্তান্ত থেকে। অথচ তার আগে কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তার জীবনে ঘটে গেছে। একটি হল ধর্মচিন্তার ক্ষেত্রে গভীর মতপার্থক্যের জন্য গৃহত্যাগ ও দেশের নানা স্থানে ভ্রমণ। অনেক জীবনী লেখক লিখেছেন যে তিনি সেসময় তিব্বত পর্যন্ত গিয়েছিলেন, সেখানের লামাতন্ত্রর সম্বন্ধে এমন কিছু বলেছিলেন বা করেছিলেন যাঁর জন্য তার জীবন বিপন্ন হয় ও তিব্বতি মহিলাদের দয়ায় প্রাণরক্ষা হয়। তিনি খােদ তিব্বতে গিয়েছিলেন কি না এ নিয়ে মতভেদ আছে, কিন্তু গৃহত্যাগকালে তিনি যে উত্তরবঙ্গে গিয়েছিলেন এ বিষয়ে কোনও তর্ক নেই। রামমোহনের নিজের সম্বন্ধে নিজের লেখাটি থেকে জানতে পাই যে গৃহত্যাগ করে দেশভ্রমণের কালে আপন অভিজ্ঞতাগুলি থেকে ইংরেজদের প্রতি তার প্রবল বিরূপতা জেগেছিল। কোন্ অভিজ্ঞতা থেকে ওই বিরূপতা জেগেছিল তা তিনি বিশদ করেননি। ফলে কিছুটা অনুমান করে নিতে হচ্ছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ তিন দশক ছিল উত্তরবঙ্গ জুড়ে সন্ন্যাসী-ফকির আন্দোলন। বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছেন যে ওই আন্দোলন দমনে ইংরেজদের যে যুদ্ধ করতে হয়েছিল সেটা ছিল পাঞ্জাব যুদ্ধের সমতুল্য। অর্থাৎ ভারতের মাটিতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে যেসব যুদ্ধ করতে হয় সেগুলির মধ্যে ভীষণতার দিক দিয়ে প্রথম হচ্ছে পাঞ্জাবের যুদ্ধ, তারপরেই সন্ন্যাসী-ফকিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এটা মনে করা স্বাভাবিক যে রামমোহনের সঙ্গে ওই সন্ন্যাসী-ফকিরদের যোগাযোগ হয়েছিল এবং তাদের অথবা তাদের সমর্থকদের কাছ থেকে তার প্রথম জীবনের ইংরেজ বিদ্বেষ পেয়েছিলেন। কিন্তু গৃহে ফিরে আসার পরে পরিস্থিতির চাপে তাঁকে ইংরেজ কোম্পানিরই কাজ নিতে হল এবং তখন জন ডিগরির মতো মানুষের সংস্পর্শে এসে তার আগের ইংরেজ-বিদ্বেষী মানসিকতাকে অতিক্রম করেন। এখানেও একটা প্রশ্ন। জাগে। কোম্পানির চাকরির সুবাদে তিনি ১৮০৯-১০ সালে কিছুকাল রংপুরে ছিলেন। এটা সর্বস্বীকৃত সত্য। রংপুর ছিল সন্ন্যাসী-ফকিরদের আসল ঘাঁটি এবং কথিত আছে যে রংপুরের ফুলচৌকির জমিদারই মজনু শাহ’ অর্থাৎ পাগল রাজা ছদ্মনামে সন্ন্যাসীফকির আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন। রামমোহন যখন কোম্পানির দেওয়ান হিসেবে রংপুরে বাস করছিলেন তখন কি ওই গৌরবময় আন্দোলনের নেতৃবর্গের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়নি?
রংপুরের আগে ১৮০২-০৪ সাল নাগাদ রামমোহন কিছুকাল মুর্শিদাবাদেও কোম্পানির চাকুরিতে ছিলেন। তাঁর এই মুর্শিদাবাদবাসের পর্ব রামমোনের জীবনে অত্যন্ত অর্থপূর্ণ, কারণ এই সময় তিনি ‘তোহফৎ-উল-মুওয়াহিদিন’এবং মনজারএত-উল-আদিয়ান’ নামে দুটি পুস্তিকা লেখেন। দ্বিতীয়টির কোনও কপির হদিশ পাওয়া যায়নি, শুধু তোহফৎ-উল-মুওয়াহিদিন’-এর একটি উল্লেখ থেকে জানা যায় যে‘মনজার-এত-উল-আদিয়ানে’ বিভিন্ন ধর্মের তুলনামূলক আলোচনা করা হয়েছে। এই পুস্তিকাটির কপি পেলে নিশ্চিন্তে বলা যেতে পারত যে তুলনামূলক ধর্মবিদ্যায় তিনিই। পথিকৃৎ। ‘তোহফৎ-উল-মুওয়াহিদিন’-কেই তাই তার প্রথম রচনা বলা যায়। এই পুস্তিকাটির প্রথমাংশ, যাকে ভূমিকা বলতে পারি, সেই অংশ লেখা হয়েছে আরবি ভাষাতে আর মূল রচনা সাধারণ মানুষের জন্য ফার্সি ভাষাতে লেখা। এখানে বলা প্রয়োজন যে ১৮৩৮ সাল পর্যন্ত ফার্সিই ছিল সরকারি ভাষা এবং তখন গ্রামের পাঠশালাগুলোতেও ফার্সি ছিল লেখাপড়ার ভাষা। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের ছিল গভীর ফার্সিপ্রীতি ও জ্ঞান। কিন্তু তিনি কি তার সন্তানদের মধ্যে ফার্সি-চৰ্চাতে আগ্রহ সঞ্চার, করেছিলেন? এ বিষয়ে আমার কোনও স্পষ্ট জ্ঞান নেই।
আমরা রামমোহনের আলোচনার সময় তাঁর এই প্রথম রচনাটির কথা ভুলে যাই। অথচ রামমোহনের অসাধারণত্বের প্রথম সাক্ষ্য আরবি-ফার্সি দুটি ভাষাতে লেখা এই রচনাটির ইংরেজি ও বাংলা অনুবাদ একদা সুলভ ছিল, কিন্তু তখনও এই পুস্তিকাটি রামমোহন চর্চার অন্তর্গত হয়নি। ওই অনুবাদ থেকে দেখি যে ভূমিকা অংশে রামমোহন আরবের বিখ্যাত যুক্তিবাদী মুতাজিলাদের পথে প্রমাণ করেছেন যে কোনও ধর্মই সম্পূর্ণ সত্য নয়, সব ধর্মেই কিছু ভ্রান্তি আছে। তারপরে ফার্সিতে লেখা মূল অংশে বিভিন্ন ধর্মের আলোচনা করে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন। যে কারও মনে আঘাত না দেওয়া এবং বিশ্বমানবের জন্য শান্তি’—এটাই সমস্ত মানুষের আদর্শ হওয়া বাঞ্ছনীয়। এই রকম উপলব্ধি ইউরোপের রেনেসাঁসে সম্পূর্ণ অভিনব। আমাদের মনে রাখা। উচিত যে বিশ্বের সমস্ত মানুষের জন্য শান্তির সন্ধান দিয়েই বাংলার রেনেসাঁস যাত্রা শুরু করেছিল।
এ কথা অবশ্য সর্বজনবিদিত যে রামমোহনের কীর্তিগুলির মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত হল স্বামীর মৃত্যুর পরে স্বামীর চিতাতে তার স্ত্রীকে জীবন্ত দাহ করার বিরুদ্ধে আন্দোলন। এবং শেষ পর্যন্ত সেই আন্দোলনে বিজয় লাভ। একথা ঠিক যে সহমরণের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়নের আগে লর্ড বেন্টিঙ্ক রামমোহনের মত জানতে চাইলে রামমোহন স্বপক্ষে বা বিপক্ষে কোনও মত না দিয়ে জানিয়েছিলেন তিনি আধ্যাত্মিক চিন্তায় নিমগ্ন আছেন তাই সতীদাহের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়নের বিষয়ে মতামত জ্ঞাপনে অক্ষম। অমন একটি ধোঁয়াটে উত্তর দিতে পারলেন অথচ ত্যা বা না লিখে একটা স্পষ্ট উত্তর দিতে কি পারতেন না? আসলে রামমােহন সরকারি আইন দিয়ে একটি প্রম, সামাজিক প্রথার নিবারণ চাননি, তিনি চেয়েছিলেন দেশবাসী আপন যুক্তিতে মনুষ্যত্ব দিয়ে মন থেকে সতীদাহ প্রথাকে রক্তক! তখন রক্ষণশীলরা ওই আইনের বিরুদ্ধতা করে ইংল্যান্ডের উচ্চতর মহলের কাছে আইনটিকে খারিজ করার জন্য দরবার করে।
রক্ষণশীলদের সতীদাহ প্রথাকে বহাল রাখার জন্য তৎপর হতে দেখে রামমোহনও ইংল্যান্ডে গিয়ে রক্ষণশীলদের বিরোধিতা রার জন্য তৎপর হলেন! শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রচেষ্টাই জয়যুক্ত হয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে ইউরোপীয় রেনেসাঁসের তথাকথিত মানবতাবাদী সমাজ যখন খ্রিস্টান ধর্ম সম্বন্ধে ভিন্নমত পোষণকারীদের জীবন্ত দাহ করা সম্বন্ধে নীরব তখন বাংলার রেনেসাঁসের জনক বিধবাদের জীবন্ত দাহ করার বিরুদ্ধতা করার জন্য কালাপানি পার হয়ে সুদুর ইংল্যান্ডে গিয়ে হাজির হচ্ছেন।
সতীদাহ নিবারণ প্রসঙ্গে রামমোহনের আরও একটি কাণ্ড লক্ষণীয়। তিনি যখন প্রথম সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন তখনই এই প্রশ্ন তার মনে জেগেছিল যে স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়দায়িত্ব তার স্বামীর, কিন্তু স্বামীর মৃত্যু হলে কেউ তো বিনামূল্যে সে দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেবে না। সেজন্য রামমোহন সেই যুগে, সতীহ প্রথা রদ করার জন্য আন্দোলনের অঙ্গ রূপেই যেন দাবি করলেন পৈতৃক সম্পত্তিতে নারীর অংশ চাই। পৈতৃক সম্পত্তিতে নারীর অধিকার ভারত স্বাধীন হবার প্রায় দশ বছর বাদে স্বীকৃত হয়, কিন্তু তার জন্য দাবি উত্থাপন রামমোহন করেছিলেন তার প্রায় একশো পঁয়ত্রিশ বছর আগে! ইউরোপীয় রেনেসাঁসের কোন সন্তান এক নারীর অধিকার সম্বন্ধে সচেতনার পরিচয় দিয়েছিলেন? বাংলার রেনেসাঁসের অপর সন্তান বিদ্যাসাগর ও তার বন্ধু বেথুন নারীশিক্ষার জন্য যে আন্দোলন করেছিলেন তার অনুরূপ কোনও আন্দোলন ইউরোপীয় রেনেসাঁসে হয়নি। বাংলার রেনেসাঁসে নারী জাগরণ একটা পৃথক অধ্যায়, এবং বিশেষ গৌরবময় অধ্যায় এ কথাটা ভালো দারুণ ভুল হবে।
রামমোহনের অপর কীর্তি আধুনিক শিক্ষা প্রচলনের ব্যবস্থা। এখন যা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় আগে তা ছিল প্রেসিডেন্সি কলেজ, তারও আগে ছিল হিন্দু কলেজ। এই কলেজটি প্রতিষ্ঠার মূলে রামমোহন ছিলেন কি না তা নিয়ে বিতর্ক আছে। কিন্তু ঘটনা এই যে রামমোহনের বাড়িতে আত্মীয়সভাতে শহরের নতুন ভাবনার মানুষরা নিয়মিত মিলিত হতেন। এমনই এক মিলনসভাতে ডেভিড হেয়ার শহরে আধুনিক শিক্ষার জন্য একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা বললে উপস্থিত সবাই তাতে একবাক্যে সায় দেন। তখনকার দিনে আধুনিক শিক্ষাকে বলা হত ইংরেজি শিক্ষা। এই শিক্ষা প্রবর্তনের বিষয়ে আলোচনার জন্য বিশেষ একটি সভা ডাকেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হাইড ঈস্ট। এই সভাতে উপস্থিত শহরের ধনী হিন্দু যাঁরা ছিলেন, তারা বললেন যে এই কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে রামমোহন জড়িত থাকলে তারা কোনও সাহায্য করবেন না। রামমোনের প্রতি তাদের বিদ্বেষের কারণ ছিল। রামমোহনের মুসলমান সংসর্গ। তখন রামমোহন নিজেই এই কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন, কারণ তিনি কলেজটির প্রতিষ্ঠা চেয়েছিলেন, উদ্যোক্তাদের তালিকায় নিজের নাম রাখতে চাননি এবং তিনি সরে যাওয়ার পরে ধনী হিন্দুদের অর্থসাহায্যে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় শুধুমাত্র হিন্দু ছাত্রদের জন্য।
হিন্দু কলেজ ছাড়াও আধুনিক শিক্ষার জন্য কলকাতায় আর একটি বিদ্যালয় ছিল যা রামমােহনের অর্থে চলত। এটির অবস্থান প্রথমে ছিল শুড়িপাড়াতে এবং বিদ্যালয়টি ছিল বিনা বেতনের। প্রধান শিক্ষক গোলক মিস্ত্রি জাতিতে প্রামাণিক ছিলেন এবং অপর শিক্ষক ছিলেন দেবনারায়ণ দত্ত। তাদের সুপারিশে ভালো ছাত্ররা ইংরেজি পড়তে আসত রামমোহনের মানিকতলার বাড়িতে, ইংরেজি পড়াতেন মিস্টার মোরক্রফট নামে এক সাহেব এবং এজন্যে সাহেব মাসে একশো টাকা মাইনে পেতেন রামমোহনের কাছ থেকে। রামমোহন ১৮২২ সালে হেদুয়ার উত্তর পাড়ে কিছুটা জমি কিনে স্কুলটাকে নিয়ে আসেন এই জমির উপরে বানানো বাড়িতে। যারা হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থদান করেছিলেন তারা শিক্ষার প্রসারে পরবর্তীকালে অন্য কোনও উদ্যোগ নিয়েছিলেন কি না জানা যায় না, কিন্তু রামমোহন নিজের খরচে বিনা বেতনে ওই অ্যাংলো-হিন্দু স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন, তবে ১৮২২ সালে স্কুলটি নিজস্ব বাড়িতে স্থানান্তরিত হবার পরে রামমোহনের বন্ধুবর্গও নিয়মিত অর্থসাহায্য করতেন। তারাচাদ চক্রবর্তী, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ভূদেব মুখোপাধ্যায় প্রমুখ উনবিংশ শতাব্দীর অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির ছাত্রজীবন শুরু হয় এই স্কুলে। কিন্তু রামমোহনের মৃত্যুর পরে ১৮৩৪ থেকে এই স্কুলের নতুন নাম হয় ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি।
এদেশে আধুনিক শিক্ষা প্রবর্তনের ইতিহাসে রামমোহনের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত হয় ১৮২৩ সালে আমহাস্টকে লেখা চিঠির জন্য। ঘটনার সূত্রপাত কোম্পানি সরকার। কর্তৃক সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা থেকে। রামমোহন সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে ইংরেজি তথা আধুনিক শিক্ষার জন্য উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান। স্থাপনের দাবি করে গভর্নর জেনারেল লর্ড আমহার্স্টকে একটি দীর্ঘ পত্র লেখেন। এই পত্রে সংস্কৃত শিক্ষার চেয়ে ইংরেজি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পক্ষে রামমোহন যেভাবে যেসব কারণ ও যুক্তি উল্লেখ ও ব্যাখ্যা করে এই চিঠি লেখেন তাতে এই চিঠি আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার জন্য এক মূল্যবান দলিল হয়ে আছে। ইংরেজি শিক্ষা ব্যাপকভাবে প্রচলনের জন্য তাঁর বিন্যস্ত প্রখর যুক্তিগুলির এখানে পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন নেই। তবে বিশেষ উল্লেখযোগ্য যে ওইসব শানিত যুক্তির সঙ্গে তিনি এস পাঠক্রম অর্থাৎ কী কী বিষয়ে পড়ানো হবে তার একটা তালিকা দেন। তিনি লেখেন, এই শিক্ষা হবে সংস্কৃত শিক্ষা অপেক্ষা ‘a more literal and enlightened system of instruction, embracing mathematics, natural philosophy, chem. istry and anatomy, with other useful sciences which may be accomplished with the same proposes’।….এখানে উল্লেখযোগ্য যে আজকাল যাকে আমরা Physics বলি তাকেই সেকালে ‘natural I… hilosophy’ বলা হত। রামমোহন তো ইংরেজি শিক্ষার পাঠক্রম তৈরি করে দিলেন, কিন্তু ওই পাঠক্রম তখনকার কালে ইউরোপের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ানো হত না। আজকের দিনে। রামমোহন কর্তৃক উপলব্ধ ওই পাঠক্রম যতই মামুলি মনে হোক না কেন, ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে ওই পাঠক্রম ছিল সম্পূর্ণ বৈপ্লবিক।
সমগ্র বিশ্বের পক্ষেই বৈপ্লবিক। রামমোহনকে ভারতীয় সাংবাদিকতার জনকও বলা যায়। তারও আগে ১৮১৮ সালের মে মাসে ১২২৫ বঙ্গাব্দের ১ জৈষ্ঠ হরচন্দ্র রায় বাংলা সাপ্তাহিক ‘বঙ্গাল গেজেট প্রকাশ করেছিলেন বলে পরবর্তীকালের পত্রপত্রিকায় উল্লেখ পাওয়া যায়। তবু বাংলাভাষায় প্রথম সংবাদপত্ররূপে গণ্য করা হয় শ্রীরামপুর মিশনারি জন ক্লার্ক মার্শম্যান সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘সমাচার দর্পণ। এই ‘সমাচার দর্পণে’ হিন্দু ধর্ম সম্বন্ধে কিছু মন্তব্য প্রকাশিত হলে রামমোহন শিবপ্রসাদ শৰ্ম্মা’ ছদ্মনামে তার উত্তর দেন পত্রাকারে। চিঠিটি প্রকাশ করে সম্পাদক তার সদুত্তর আহ্বান করেন। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ‘শিবপ্রসাদ শৰ্ম্মা’ যখন আবার এক দীর্ঘ বিশদ পত্র পাঠান তখন সম্পাদক সেটি হেঁটেকেটে প্রকাশে রাজি হন। কিন্তু তাতে রামমোহন রাজি নন। তিনি নিজেই তখন একটি দ্বিভাষিকা পত্রিকা প্রকাশ করলেন, ইংরেজি ভাষার পত্রিকার নাম ‘The Brahmunical Magazine – the Missionary and the Brahmin’ 0115 great ভাষার পত্রিকার নাম ‘ব্রাহ্মণ সেবধি-ব্রাহ্মণ ও মিশনারি সংবাদ’, পত্রিকাটির এক পৃষ্ঠায় থাকত বাংলা, পরের পৃষ্ঠায় ইংরেজি। প্রথম সংখ্যাতেই রামমোহন লেখেন। খ্রিস্টান মিশনারিরা যেভাবে হিন্দু ও মুসলমানদের ধর্মকে আক্রমণ করছেন ইংরেজ শাসনের সুবিধে নিয়ে তা প্রজামণ্ডলীর ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্র্যবোধের উপরে হস্তক্ষেপ। তিন সংখ্যা প্রকাশের পরে ‘ব্রাহ্মণ সেবধি’ আর প্রকাশিত হয় না। এর পর ১৮২১ সালের ৪ ডিসেম্বর ১২২৮ বঙ্গাব্দের ২০ অগ্রহায়ণ থেকে রামমোহন সম্বাদ কৌমুদি এবং ১৮২২ সালের ১২ এপ্রিল থেকে ফার্সি সাপ্তাহিক ‘মীরাৎ-উল-আখবার’ প্রকাশ করেন।
১৮২৩ খ্রিস্টাব্দের ৫ এপ্রিল সরকার এক প্রেস অর্ডিন্যান্স জারি করে যে, সরকারকে দেখিয়ে কোনও সংবাদ বা পর্যালোচনা প্রকাশ করা যাবে না। এই অর্ডিন্যালের প্রতিবাদ করে রামমোহন ‘মীরাৎ-উল-আখবারে’র প্রকাশ বন্ধ করে দেন। শেষ সংখ্যার সম্পাদকীয়তে অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে তার বক্তব্য উপস্থাপন করে একটি ফার্সি বয়েৎ উদ্ধৃত করেন যার অর্থ হচ্ছে, ওহে মহাশয়, বুকের বহু রক্ত দিয়ে কেনা যে সম্মান তাকে সস্তায় কোনও দারোয়ানের কাছে বিক্রি কোরো না। তারপর এই অর্ডিন্যান্সএর বিরুদ্ধে একটা চিঠি পাঠালেন সুপ্রীম কোর্টে এবং সেই পত্র-প্রতিবাদে স্বাক্ষর দিলেন রামমোহন স্বয়ং এবং দ্বারকানাথ ঠাকুর, প্রসন্নকুমার ঠাকুর, হরচন্দ্র ঘোষ, গৌরীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ বিশিষ্ট নাগরিকবর্গ। এখানেই ক্ষান্ত হলেন না, অন্য কারও নাম না জড়িয়ে নিজেই একটি চিঠি পাঠালেন খোদ ইংল্যান্ডের রাজাকে। তখনকার আইন অনুসারে একজন সাধারণ নাগরিক সরাসরি রাজাকে সম্বোধন করলে তার কারাবাসের শাস্তি পর্যন্ত হতে পারত। এই শাস্তির ঝুঁকি নিয়ে রামমোহন যে চিঠি লেখেন তার মূল কথা হল ‘Your Majesty is well aware, that a free press has never yet caused a revolution in any part of the world becouse, while man can easily represent the grievances arising from the conduct of the local authorities to the supreme Government, and thus get them redressed, the grounds of discontent that excite revolution are removed; whereas, where no freedom of the press existed, and grievances consequently remained unrepresented and unredressed, innumerable revolutions have taken place in all parts of the globe, or if prevented by the armed force of the government, the people continued ready for insurection. …’ 011918 corta, ‘the existence of free press is equally necessary for the sake of the Government and the governed.’ কারণ স্বাধীন সংবাদপত্রের মাধ্যমে শাসিতবর্গ আপন অভাব অভিযোগের কথা শাসকবর্গকে জানাতে পারে, শাসিতের সমস্যা জেনে শাসক সেসবের সমাধান করে দেশে শান্তি বজায় রাখতে পারে এবং শাসিতের কথা জেনেশুনে শাসন করতে গেলে ভয়ংকর অশান্তি ঘটে। শাসিতের কথা জেনেশুনে। শাসকের শাসন করা উচিত এই বক্তব্যের ভেতর থেকে পরিস্ফুট হয়েছে ভারতের প্রথম রাজনৈতিক চেতনা। এই জন্যেই রামমোহন ভারতের রাজনৈতিক চেতনার জনক বলে পরিগণিত। রাজ্য শাসন করা হবে শাসক ও শাসিতের মধ্যে পারস্পরিক বক্তব্য আদানপ্রদানের ভিত্তিতে – রামমোহনের এই নীতির ফল দেখা গেল প্রায় একশো বছর পরে গোলটেবিল বৈঠকের সময়। যখন প্রথম শাসক ইংরেজ ও শাসিত ভারতীয় মুখোমুখি আলোচনার জন্য এক টেবিলে বসে।
একধিক পণ্ডিত বাংলার রেনেসাঁসের জনক রামমোহনকে কৃষকশোষক বা কৃষকশত্রু বলে চিহ্নিত করেছেন। হাউস অফ কমন্সের সিলেক্ট কমিটি যখন রামমোহনের কাছে ভারতের রাজস্ব ব্যবস্থা সম্বন্ধে মতামত জানতে চাইল তখন একটি Spy Cam, ‘What is the condition of the cultivator under the present Zamindary system of Bengal, and Ryotwary system of the Madras Presidency? উত্তরে রামমোহন লেখেন, Under both system condition of the cultivators is very miserable; in the one, they are placed at the mercy of the Zamindar’s avarice and ambition; in the other, they are subjected to the extortions and intrigues of the surveyors and other government revenue officers.’ কিন্তু সবচেয়ে কৌতুহলোদ্দীপক মন্তব্য করেছেন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সম্বন্ধে। তিনি লেখেন, ‘With a view to facilitate the collection of the revenue and to encourage proprietors to improve their estates, government liberally relieved them in the year 1793 from the distress and difficulties originating in the uncertainity of assessment, by concluding a perpetual settelement with them. But I am at a loss to conceive why this indulgence was not extended to their tenants, … some, however, doubt whether government can now assume the power of bettering the condition of this immence portion of its subjects, without violating the long-standing practice of the country, and the principles laid down in their existing regulations, at least for the last forty years. But I am satisfied that an unjust precedent and practice, even of longer standing, cannot be concidered as the standard of justice by an enlightened government.’ অর্থাৎ ১৮৩১ সালের ১৯ আগস্ট লন্ডনে বসে রামমোহনের লিখিত অভিমত হল, ১৭৯৩ সালের জমিদারদের সঙ্গে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ভেঙে নতুন করে কৃষকদের সঙ্গে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করাটা এক উদার ন্যায়পরায়ণ সরকারের কর্তব্য। যাঁরা রামমোহনকে কৃষক-শত্রু বলেছেন তারা আসলে আপন অজ্ঞতাকে ঢাকতে চেয়েছেন। পাণ্ডিত্যাভিমান ও হামবড়া ভাব দিয়ে। আর ইউরোপীয় রেনেসাঁসের মহত্ত্বে মুগ্ধরা কি ওই রেনেসাঁসের একজন সন্তানের নাম করতে পারবেন যাঁর চেতনায় কৃষকদের সম্বন্ধে এরকম অনুভব ছিল?
বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রথম ব্যক্তিরূপে রামমোহনের সম্বন্ধে আরও অনেক কথা লেখার থাকলেও আর মাত্র একটি কথা লিখে এই প্রবন্ধ শেষ করব। রামমোহন যে প্রথম যৌবনেই পরিবারের সঙ্গে বিশ্বাসভেদের জন্য গৃহত্যাগ করে উত্তর ভারতের নানা স্থানে ঘুরেছিলেন সেকথা আগেই বলেছি। সেকালে অমন বহুদর্শী ব্যক্তি খুবই দুর্লভ ছিলেন। তাঁর প্রথম পুস্তিকায় তিনি জানিয়েছিলেন যে মানুষের প্রথম ব্ৰত হ’ বিশ্বমানবকে শান্তি দেওয়া। ওই বিশ্বমানবের ধারণার মধ্যেও দিগন্ত-ঘেরা বাংলার ভূগোলের বাইরে ছড়ানো বিশাল ভারত ও পাহাড়-সমুদ্র-ঘেরা ভারতের বাইরে বিভিন্ন বর্ণের মানুষের বিচিত্র বিশ্ব রয়েছে। বিশ্বের সমস্ত মানুষকে, বিশেষত অন্যায়ের রিরুদ্ধে সংগ্রামে রত দেশবিদেশ নির্বিচারে সকল মানুষকে তিনি আপন আত্মীয় বলে মনে করতেন। এই মনে করা থেকেই বিশ্বের সকল জাতির মধ্যে সদ্ভাব সম্প্রীতি ও শান্তি রক্ষায় আবশ্যকতা সম্বন্ধে তার মনে আকুলতা ছিল। সকল জাতির মধ্যে শান্তিযাপনার প্রয়োজনীয়তা প্রথম তীব্রভাবে অনুভূত হয় প্রথম মহাযুদ্ধের পরে এবং সেই অনুভব থেকেই প্রধান শক্তিমান দেশগুলি প্যারিসে মিলে ১৯১৯ সালে জাতিসংঘ স্থাপন করে। কিন্তু তার ৮৮ বছর আগে রামমোহন ওই রকম আদর্শ নিয়ে ওই রকম একটি সংঘ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে লিখেছিলেন, ‘untressed common sense as well as the accurate deductions of scientific research lead to the conclusion that all mankind are one great family of which numerous nations and tribes existing are only various branches… … the ends of constitutional Government might be better attained by submitting every matter of political differance between two countries to a congress composed of an equal number from the parliament of each … … By such a congress all matters of differance, whether political or commercial, affecting the Natives of any two civilized countries with constitutional Governments, might be settled amicably and justly to the satisfaction of both and profound peace and friendly feelings might be preserved between them from generation to generation.’ইউরোপীয় রেনেসাঁসের কোনও বিখ্যাত সন্তান কী এরকম ভাবে বিশ্বশান্তির কথা ভেবেছিলেন?
এ কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই যে ইউরোপীয় রেনেসাঁসের অপেক্ষা বাংলার রেনেসাঁস শিল্পেসাহিত্যে সমকক্ষ না হয়েও সামগ্রিকভাবে অভিনব, বহুব্যাপ্ত ও মানবিক। এবং অবশ্যই আদর্শে ও উদ্দেশ্যে মহান ছিল এবং এর ব্যাপ্তি ও মহত্ত্বের প্রথম প্রতীক ছিলেন রামমোহন রায়। রাজা রামমোহন রায় নয়, আধুনিকতার পথিকৃৎকে মধ্যযুগের এক শাসকের দেওয়া খেতাবে সম্মানিত করার অর্থ মধ্যযুগীয় ভাবনার কাছে আত্মসমর্পণ, রামমোহন রামমোহনই। রবীন্দ্রনাথ তাঁর নামের আগে কখনও ভারত পথিক’ কখনও মহাত্মা’ ব্যবহার করেছেন, কিন্তু রাজা’ কখনও নয়। সোফিয়া ডবসন কোলেট অবশ্য ‘রাজা’ শব্দটি ব্যবহার করতেন। সেকালে বিলেতের অনেকে রামমোহনকে ‘রাজা’ বলে উল্লেখ করতেন, বোধহয় রামমোহন’ কথাটার সংক্ষেপিত রূপ হিসেবে। যিনি বাংলার রেনেসাঁসের জনক, যিনি আধুনিকতার পথিকৃৎ তিনি শুধুই রামমোহন। তাকে ‘রাজা’ বললে মধ্যযুগকে গৌরবান্বিত ও আধুনিক যুগকে খর্ব করা হয়। আধুনিক ভারতের জনক বললেই তাঁকে ঠিকভাবে বোঝানো হয়।
রচনাকালঃ ২০১১
‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।