• মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
Sunday, June 22, 2025
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ
No Result
View All Result

নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহর প্রতি এত অনীহার কারণ কি?

লায়লা খালিদ by লায়লা খালিদ
August 18, 2023
in ভারতবর্ষের ইতিহাস
0
নবাব সিরাজ

চিত্রঃ নবাব সিরাজউদ্দৌলা, Image Source: dailyasianage

Share on FacebookShare on Twitter

লিখেছেনঃ লায়লা খালিদ

নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ্ আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজদের বিরুদ্ধে তাঁর বীরত্ব ছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রেরণার উৎস।

বিধানসভার বিগত অধিবেশনে (৯.৫.৮৯) একটি বেসরকারি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। প্রস্তাবটিতে কলকাতা বিমানবন্দরের নাম পাল্টে নেতাজি সুভাষ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং ফোর্ট উইলিয়ামের নাম পাল্টে ‘সিরাজদৌল্লাহ দুর্গ’নাম রাখার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট সুপারিশ করা হয়। প্রস্তাবে বলা হয়, ‘বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদৌল্লাহ। বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে ইংরেজদের সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত করে কলকাতায় ইংরেজদের দুর্গ দখল করে শৌর্য ও বীর্যের পরিচয় দিয়েছেন এবং ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে দেশের মানুষের কাছে ভবিষত্যের জন্য প্রেরণা সৃষ্টি করেছেন। সেজন্য এই সভা তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও দেশবাসীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নিদর্শন হিসেবে বর্তমান ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গকে ‘সিরাজদৌল্লাহ দুর্গ’ নামে অভিহিত করার জন্য রাজ্য সরকার মারফত কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছে।’নেতাজি সুভাষের নামে কলকাতা বন্দরকে নামাঙ্কিত করার কথাও প্রস্তাবে বলা হয়। আলোচনা প্রসঙ্গে বিধায়করা বলেন–‘সিরাজদৌল্লাহ ছিলেন স্বধীনতার প্রতীক। সিরাজদৌল্লাহ তাঁর দূরদৃষ্টি, দেশপ্রেম এবং ইংরেজদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের দ্বারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছেন।’

প্রস্তাবটি পাশ হওয়ার কথা খবরের কাগজে প্রকাশিত হতেই সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন কয়েকজন ‘ঐতিহাসিক’ ও ‘সংবাদপত্র-সেবী’ আঁতকে উঠলেন। তাঁদের আসল আপত্তি হচ্ছে, সিরাজদৌল্লাহ মুসলমান। তাঁর নামে ফোর্ট উইলিয়ামের নামকরণ করা হলে মুসলমানদের তোল্লা দেওয়া হবে। এতে ‘সাম্প্রদায়িকতা’ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। এ ধরনের প্রস্তাব হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার উস্কানি দেওয়ার নামান্তর। এটা ধর্মান্ধতা।

নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ্ (সঠিক বানান এটাই– সিরাজ দৌল্লা বা সিরাজদৌল্লা নয়) ও ‘সাম্প্রদায়িকতা’ সম্বন্ধে এই ধরনের মতামত পোষণকারী বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে অগ্রণী হচ্ছেন জনৈক শ্রী অমলেশ ত্রিপাঠী। তিনি ইদানিং নিজেকে ‘ঐতিহাসিক’প্রমাণ করার জন্য মহাব্যস্ত।

বিধানসভায় নাম বদলের পরামর্শ দুটো পাশ হওয়ার পরই কয়েকজন সংবাদপত্র-সেবী ও ‘ইতিহাসবিদ’ ভয়ানক উদ্বিগ্ন হয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। দিন কয়েক পর (২৭.৫.৮৯) এদের মিলিত তৎপরতার ফসল হিসাবে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় বিরাট কলেবরের এক সংবাদ-নিবন্ধ বের করা হয়। শিরোনাম—‘ফোর্ট উইলিয়ামের নাম বদল চান না ঐতিহাসিকেরা। এতে বাবু শ্রী অমলেশ ত্রিপাঠী, শ্রী হোসেনুর রহমান প্রভৃতি ঐতিহাসিকের ‘বক্তব্য’, ‘মতামত,’ ‘ধারণা’ ও ‘আপত্তি’ছাপা হয়।

উল্লেখ করার মতো হল, নেতাজীর নামে বিমানবন্দরের নামকরণ সম্বন্ধে কেউ কোনও আপত্তি তোলেননি। এ থেকে বোঝা যায় নেতাজীর নামে কলকাতা বিমানবন্দর পরিচিত হোক— এ প্রস্তাবে ঐতিহাসিকদের সর্বসম্মত সায় রয়েছে। আপত্তিটা শুধু নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ্ -র নামে নামকরণ সম্বন্ধে।

আনন্দবাজারের নিবন্ধটি পড়লে দেখা যাবে, প্রথমে কিছু একাডেমিক আপত্তির আড়ালে সিরাজের নামে ফোর্টের নামকরণ ঠেকানার চেষ্টা নেওয়া হচ্ছে। প্রথম আপত্তি, ‘নাম পাল্টে ইতিহাস পাল্টানো যায় না। ’যুক্তি যদি এই আপত্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো— তাহলে সেই সম্বন্ধে বলার কিছু ছিল না। বরং পুরানো নাম না পাল্টানোর জন্য এবং ‘ইতিহাস জ্ঞানশূন্য’ কর্মকর্তারা হঠকারিতা করে যেসব নাম পাল্টে ফেলেছিল— আবার সেগুলোর আগেকার নাম ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে সর্বপ্রযোজ্য কোনও নিয়ম-নীতি বা কানুন তৈরির জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা নেওয়ার কথাও ভাবা যেত পারত।

কিন্তু বিশেষ এক দৃষ্টিকোণ সম্পন্ন এই ঐতিহাসিকেরা বুঝতে পেরেছিলেন, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ্কে ‘রোখার জন্য’ তাদের এই যুক্তি খুব একটা ওজনদার নয়। কারণ স্বাধীনতার আগে ও পরে শত শত স্থান, রাস্তা, প্রতিষ্ঠান প্রভৃতির নাম বদল করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এ কোনও নতুন জিনিস নয়। কলকাতার ঐতিহাসিক ইসলামিয়া কলেজের নাম পাল্টে রাখা হয় সেন্ট্রাল ক্যালকাটা কলেজ। মুসলমানদের আপত্তি, আবেদন-নিবেদনের বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা করা হয়নি। ‘ঐতিহাসিক’ডালহৌসি স্কোয়ারের নাম পাল্টে রাখা হয়েছে বিনয়-বাদল-দীনেশ বাগ। সংবাদপত্র-সেবী এবং ইতিহাসবিদ্রা আপত্তি করা দূরে থাকুক– একে স্বাগতই জানিয়েছিলেন। হালে কলকাতা মনুমেন্টের নাম পাল্টে রাখা হয়েছে ‘শহীদ মিনার’। এগুলোতে কিন্তু ঐতিহাসিকদের আপত্তি নেই। বরং ওই নিবন্ধেই আর-এক ঐতিহাসিক বাবু গৌতম চট্টোপাধ্যায় ফোর্ট উইলিয়ামের নামে সিরাজের নাম রাখার বিরোধিতা করলেও, শহীদ মিনারের নাম পরিবর্তন সোৎসাহে সমর্থন করেছেন। তাঁর ভাষায়, ‘নেপালের স্বাধীনতা হরণের স্মৃতি অক্টারলোনি মনুমেন্টের নাম বদলানো ঠিক হয়েছে। কারণ ১৯৩১ সালের ২৬ জানুয়ারি মেয়র সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে পরিচালিত মিছিল ওখানে পুলিশের হাতে আক্রান্ত হয়- স্বাধীনতা সংগ্রামের এই ধরনের বহু ঘটনার সঙ্গে মনুমেন্ট জড়িত।’

এবার এই তাবড় ঐতিহাসিকেরা আর একটি খোঁড়া যুক্তি খাড়া করার চেষ্টা করেছেন। অধ্যাপক বরুণ দে বলেন, ‘বর্তমান ফোর্ট উইলিয়ামের সঙ্গে সিরাজের কোনও সম্পর্ক ছিল না। ১৭৫৬ সালে সিরাজ কলকাতা আক্রমণ করে যে ফোর্ট উইলিয়াম দখল করে ভেঙে দেন,  সেটি এখনকার জিপিও-র কাছে অবস্থিত ছিল।’ বাবু বরুণ দে-র বক্তব্য মেনে নিলে ধরে নিতে হবে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক না থাকলে কারও নামে কোনও কিছু নামাঙ্কিত করা যায় না। হাওড়া ব্রীজের নাম ‘রবীন্দ্র সেতু’রাখা হয়েছে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ হাওড়া ব্রীজে আরাম কেদারা লাগিয়ে কবিতা লিখেছিলেন বলে আমাদের জানা নেই। শুধু হাওড়া ব্রীজ নয়, এ ধরনের ‘সম্পর্কহীন’নাম পরিবর্তনের শত শত উদাহরণ দেওয়া যাবে। কিন্তু সিরাজের বেলায় এ ধরনের নাম পরিবর্তন চলবে না। এর কারণটি বাবু শ্রী অমলেশ ত্রিপাঠী খোলসা করে বলে দিয়েছেন। সেই প্রসঙ্গে পরে আসছি। অবশ্য বরুণবাবু হয়তো যুক্তি দেখাতে পারেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ট্রেন ধরার জন্য বার কয়েক হাওড়া ব্রীজ পারাপার করেছিলেন। সেই সুবাদে অবশ্য হাওড়া ব্রীজের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের একটি ‘প্রত্যক্ষ সম্পর্ক’আবিষ্কার করা যায়।

এরপর ইতিহাস-পণ্ডিতরা নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলাহর বিরুদ্ধে আর একটি ‘মোক্ষম যুক্তি’হাজির করার চেষ্টা করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, আমাদের ইতিহাসে সিরাজের কোনও অবদান নেই। তাই পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের ইতিহাসে সিরাজ গুরুত্বহীন। তাঁদের বক্তব্য, ইতিহাস নির্ঘণ্টে লর্ড ক্লাইভের বিজয় অভিযানের বর্ণনা প্রসঙ্গে বাংলার শাসক হিসেবে সিরাজের নামও তো উল্লিখিত হয়। এর উপরও আবার কি চাই’।

আনন্দবাজারের ভাষায়, ‘হঠাৎ সিরাজদৌল্লাকে নিয়ে এত মাতামাতি করা হচ্ছে কেন’ গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের জিজ্ঞাসা–সিরাজ কি ইতিহাসের বিচারে বীরোচিত কিছু করেছিলেন’ ইতিহাসের তথ্য কিন্তু তেমন সাক্ষ্য দেয় না।’ অমলেশ ত্রিপাঠীর চোখেও সিরাজের ভূমিকা মোটেই গৌরবোজ্জ্বল কিছু নয়। তিনি বলেন, ‘বিশিষ্ট ইংরেজ ঐতিহাসিক পার্সিভাল স্পিয়ার তাঁর ‘ক্লাইভ অব বেঙ্গল’গ্রন্থে সিরাজের ভূমিকার নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করে একই অভিমত দিয়েছেন।’ বরুণ দে বলেন– ‘সিরাজকে শিভালরাস নবাব’ ইত্যাদি বিশেষণ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’

এঁরা সবাই বাঘা বাঘা ঐতিহাসিক। অন্তত ইতিহাসের ময়দানে এঁরাই সরবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। অতএব বাবুদের ইতিহাস-ব্যাখ্যা শিরোধার্য অবশ্যই। কিন্তু মনে প্রশ্ন জাগে–কি করলে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ্ ‘বীরোচিত কিছু’ করেছেন বলে বোঝা যেত, মানে আমাদের পণ্ডিত-ঐতিহাসিকরা ক্ষমা-ঘেন্না করে সিরাজকে অন্তত কিছুটা স্বীকৃতি দিতে রাজি হতেন’

কিন্তু তারা একবারও ভাবলেন না যুদ্ধ বিগ্রহ, বিরোধিতা না করে তরুণ নবাব সিরাজ অনায়াসে ইংরেজদের সঙ্গে আপস করে গা বাঁচিয়ে চলতে পারতেন। বেনিয়া ইংরেজদের বাংলাকে শোষণ করে বাণিজ্যে ঢালাও মুনাফা অর্জনের সুযোগ ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান করলে তারা জগৎ শেঠ-উমিচাঁদের চেয়ে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহর সঙ্গে রফা করাই বেশি পছন্দ করতেন। কিন্তু নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ্ দেশ ও প্রজাদের প্রতি দায়িত্বে অবহেলা করে এবং সম্মান খুইয়ে গদি রক্ষার চেষ্টা করেননি। তিনি সংগ্রামের পথকেই বেছে নিয়েছিলেন এবং জীবন দিয়েও নিজের দায়িত্ব পালনের ভরপুর কোশেশ্ করেন। এত কিছু সত্ত্বেও কিন্তু সিরাজের ভূমিকা এই ঐতিহাসিক প্রবরদের চোখে ‘বীরোচিত’ কিংবা ‘গৌরবোজ্জ্বল’ নয়। অমলেশ ত্রিপাঠীজী বরাতও দিয়েছেন, লর্ড ক্লাইভের জীবনীকার ইংরেজ সাহেব পার্সিভাল তাঁর বইতে সিরাজকে প্রশংসা করেননি।

সাহেবরা যখন সিরাজকে পছন্দ করেননি, সেক্ষেত্রে তাঁদের গুণগ্রাহী ইতিহাসবিদবাবুরা আর কি করে সিরাজকে ভালো বলবেন বা প্রশংসা করবেন!

অবশ্য ইতিহাসবিদবাবুদের ইংরেজ-প্রীতি এবং মুসলিম বিদ্বেষের এই ধারা নতুন কিছু নয়। এদের পূর্বসূরীরা নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহর সময় থেকে অবাধে এ কাজের আঞ্জাম দিয়ে আসছেন। পলাশির একশত বছর পর ১৮৫৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায় মহাবিদ্রোহ— কুরবানি ও বীরত্বের অভূতপূর্ব নিদর্শন রাখলেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। শেষ মুঘল সম্রাট— বাহাদুর শাহ পরাজিত হলেন– দিল্লি ইংরেজদের কব্জায় এল। শেতাঙ্গ ফিরিংগীদের বিজয়ের খবরে কলকাতায় উচ্চবর্ণের হিন্দু বুদ্ধিজীবী ও ইতিহাসবিদরা আহ্লাদে ঊর্ধ্ববাহু হয়ে নেত্য করতে লাগলেন। আক্ষরিক অর্থেই সেদিন সাহেবদের বশংবদ হিন্দু লেখক-বুদ্ধিজীবীরা ইংরেজদের বিজয়ে হিন্দু পাঠকদের ‘ঊর্ধ্ববাহু হয়ে নৃত্য’করতে আহ্বান করেছিলেন। যখন ইংরেজরা সারা দেশের সাধারণ মানুষদের উপর শোষণ-অত্যাচার চালাচ্ছে, মুনাফার লোভে দেশীয় শিল্প ধ্বংস করছে, যখন দেশপ্রেমিক সংগ্রামীরা মরণপণ যুদ্ধে শহীদ হচ্ছেন তখন পণ্ডিত গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য সম্পাদিত ‘সম্বাদ ভাস্কর’ পত্রিকা মন্তব্য করছে– ‘হে পাঠক সকল– ঊর্ধ্ববাহু হইয়া পরমেশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়া জয়ধ্বনি করিতে করিতে নৃত্য কর। আমাদের (অর্থাৎ ইংরেজদের) প্রধান সেনাপতি মহাশয় সশস্ত্র হইয়া দিল্লি প্রদেশে প্রবেশ করিয়াছেন– শত্রুদিগের (অর্থাৎ দেশপ্রেমিক সংগ্রামীদের) মোর্চা শিবিরাদি ছিন্নভিন্ন করিয়া দিয়াছেন। তাহারা বাহিরে যুদ্ধ করিতে আসিয়াছিল আমাদের তোপমুখে অসংখ্য লোক নিহত হইয়াছে। হতাবশিষ্ট পাপিষ্ঠরা দুর্গ প্রবিষ্ট (লালকেল্লা) হইয়া কপাট রুদ্ধ করিয়াছে। আমাদের সৈন্যরা দিল্লির প্রাচীরে উঠিয়া নৃত্য করিতেছে।’ (২০ শে– জুন– ১৮৫৭)।

শুধু গদ্যে নয়– সংবাদ প্রভাকরের সম্পাদক কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত পদ্যও বাদ দেননি। তাঁর ভাষায়ঃ

‘‘ভারতের প্রিয় পুত্র হিন্দুসমুদয়—

মুক্তমুখে বল সবে ব্রিটিশদের জয়।’’

অবশ্য সিপাহী বিদ্রোহের শুরুতেই কবি আশা ব্যক্ত করেছিলেন ইংরেজরা বিজয়ী হবে এবং

‘‘যবনের যত বংশ একেবারে হবে ধ্বংস

সাজিয়াছে কোম্পানি সেনা’’

সেই সঙ্গে—

গরু জরু যত বংশ  একেবারে হবে ধ্বংস

এইবেলা সামাল সামাল।’’

শুধু ঈশ্বর গুপ্ত নন, কলকাতার সমকালীন সকল নমস্য হিন্দু বুদ্ধিজীবী, বঙ্কিম-ভূদের থেকে আরম্ভ করে হেঁজি-পেঁজি প্রত্যেকে ইংরেজ-রাজকে স্বাগত জানিয়েছেন, এর মঙ্গল কামনায় জীবনপণ করেছেন।

এরপরেও বিভিন্ন সময়ে আমরা এই বাবু বুদ্ধিজীবি ও ইতিহাসবিদদের সমসাময়িক ইংরেজ শাসকদের পদহেলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিরোধিতা ও বিরূপ মূল্যায়ণ করতে দেখেছি। টিপু সুলতানের পরাজয় ও নিহত হওয়ার সংবাদে এরা ঘোরতর আনন্দ প্রকাশ করেন। সেকালের পত্র-পত্রিকা ও বইপত্রে এর অসংখ্য নজির লিপিবদ্ধ রয়েছে। তিতুমীরের সংগ্রামকেও এঁরা ভালো চোখে দেখেননি, ‘বীরোচিত’বা ‘গৌরবোজ্জ্বল’মনে করার তো প্রশ্নই ওঠে না। তিতুমীর ছিলেন এদের চোখে ‘দস্যু এবং তস্কর মাত্র’।

স্বাভাবিকভাবেই এঁদের উত্তরসূরী এখনকার ইতিহাস পণ্ডিত ও ঐতিহাসিকরা যে সিরাজ-উদ-দৌল্লাহকে নেহাতই তুচ্ছ গণ্য করবেন—এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সেই পুরানো ট্রাডিশন বর্তমানেও সমানে চলেছে।

আগেই বলেছি, ঐতিহ্য রক্ষার একাডেমিক কারণে ফোর্ট উইলিয়ামের নাম পরিবর্তনের বিরোধিতা করলে বা এই ধরনের রেওয়াজ রয়েছে বলে নজির দিয়ে আপত্তি জানালে কোনও মহল থেকেই আনন্দবাজারের ঐতিহাসিকদের বক্তব্যের বিরোধিতা হত না। কিন্তু তাঁদের যুক্তির ধরণ-ধারণ দেখলেই বোঝা যায় আসল লক্ষ্য অন্য কোথাও। ঐতিহাসিক শ্রী অমলেশ ত্রিপাঠী মহাশয় শেষ পর্যন্ত থলি থেকে বেড়াল বের করে দিয়ে মোদ্দা কথাটি কবুল করে ফেলেছেন। আনন্দবাজারের ভাষায়, ‘অমলেশ ত্রিপাঠীর ধারণা– স্বাধীনতার ৪২ বছর পর হঠাৎ ফোর্ট উইলিয়ামের নাম পাল্টে তাকে সিরাজের নামে চিহ্নিত করার প্রচেষ্টার পিছনে রাজনৈতিক দলগুলির মুসলিম ভোট সংগ্রহের আগ্রহ কাজ করেছে।’ শ্রীযুক্তবাবু অমলেশ ত্রিপাঠী আরও বলেন, ”নির্বিচারে নাম পাল্টে প্রথমে ইংরেজ রাজত্বের চিহ্ন– পরে দেশে মুসলমান রাজত্বের চিহ্ন (যেমন দিল্লির নাম পাল্টে দেহলী বা আরও অতীতের ইন্দ্রপ্রস্থ মুছতে মুছতে আমরা কোথায় পৌঁছব, অমলেশবাবুর সন্দেহ, ‘হঠাৎ এতদিন পরে সিরাজের নামে ফোর্ট উইলিয়ামকে চিহ্নিত করার পিছনে মুসলমান ভোট দখলের অভিসন্ধি রয়েছে। রাম-জন্মভূমি ও বাবরি মসজিদ নিয়ে উত্তরপ্রদেশে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে যেভাবে ধর্মান্ধতার সুড়সুড়ি দেওয়া হচ্ছে– কলকাতায় সিরাজের নামে ফোর্টের নাম করণের প্রচেষ্টা তার থেকে বিচ্ছিন্ন নয়।”

এরপর রঙ্গ-রসিকতার মাধ্যমে শ্রী অমলেশ ত্রিপাঠী তাঁর প্রকৃত মনোবাসনা ব্যক্ত করেছেন–”যদি নাম পাল্টাতেই হয়, তাহলে কলকাতার অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন কালীঘাটের কালীমন্দির আছে। কালীর চেয়ে ভালো রক্ষাকর্ত্রী আর কে’ তাই ফোর্ট উইলিয়ামের নাম পাল্টে ‘কালিকা-দুর্গ’করা হোক।”

বুঝতে অসুবিধা হয় না– ঐতিহাসিক শ্রী অমলেশ ত্রিপাঠীর মূল আপত্তি হচ্ছে– সিরাজ-উদ-দৌলাহ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তাঁর নামে ফোর্টের নামকরণ করা হলে পশ্চিমবাংলায় এখন ‘মুসলমান’বলে যে সম্প্রদায় রয়েছে, তাদের পোয়াবারো হয়ে যাবে। এমনিতেই তারা ধর্মান্ধ। তার উপর এসব করা হলে এদের সাম্প্রদায়িকতা একেবারে উথলে উঠবে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও বলিহারি। ভোটের লোভে মুসলমানদের তোয়াজ করে একেবারে মাথায় তুলতে চাইছে। নইলে সিরাজের নামে নামকরণের প্রস্তাব কেউ তোলে!

অমলেশবাবুরা এখন যাই বলুন না কেন, তাদের মিষ্টি মিষ্টি কথাতেই এতদিন কিন্তু আমরা বিশ্বাস করে এসেছি, হিন্দু-মুসলমান মিলিয়েই আমরা ভারতীয় এবং বাঙালি। আমাদের উভয়ের মিলিত অবদানেই ভারতীয় ও বাঙালি সংস্কৃতি-ঐতিহ্য-ইতিহাস গড়ে উঠেছে। আর সেক্যুলার ভারতবর্ষে— কে হিন্দু– কে মুসলিম—এ পরিচয় গৌণ। ‘ভারতীয়’ এটাই হল জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে আমাদের প্রধান পরিচয়। আমাদের বোঝান হয়েছিল– রাণাপ্রতাপ– রবীন্দ্রনাথ– বঙ্কিমচন্দ্র– ভগৎ সিং– আকবর– টিপু– হাজী মুহাম্মদ মহসীন– নজরুল প্রমুখ উজ্জ্বল পুরুষেরা ধর্ম নির্বিশেষে ভারতের হিন্দু-মুসলমানের গৌরবময় উত্তরাধিকার।

অমলেশবাবুদের মন খোলসা করে কথা বলায় এখন কিন্তু বোঝা যাচ্ছে, দেশে অন্যান্যদের সঙ্গে ‘মুসলমান’বলেও এক ধরনের প্রাণী থাকে। তাদের আবার আলাদা ইতিহাস– আলাদা রাজনীতি! ভারতীয় ও বাঙালিদের থেকে এদের ফারাক অনেখানি– মুসলিম তোষণ-নীতির ফলে এদের বাড়-বাড়ন্তের আর শেষ নেই!

ত্রিপাঠীজীরা যদি এমনটি নাই ভাবেন, তাহলে বলতে হয় মহাত্মা গান্ধী,  রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র,  বিবেকানন্দ,  ঋষি অরবিন্দ, মায় বিদেশিনী ভগিনী নিবেদিতা পর্যন্ত বিভিন্ন জনের নামে রাস্তা-ঘাট– ভবন– সেতু– হাসপাতাল ও নানা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছে। আমাদের কিন্তু কখনই মনে হয়নি এসবের দ্বারা হিন্দুভোট হাসিলের চেষ্টা করা হচ্ছে বা সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দেওয়া হচ্ছে। অথচ সিরাজ-উদ-দৌলাহ– তিতুমীর– শরীয়তউল্লাহ– আবদুল লতিফ বা বেগম রোকেয়া প্রমুখ মুসলিম কৃতীজনকে যদি সামান্য স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাবও ওঠে, ঐতিহাসিক ও বুদ্ধিজীবিবাবুরা হই হই করে ওঠেন,  ‘মুসলিম তোষণ হচ্ছে।’তাঁরা এতে সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা মায় বিচ্ছিন্নতাবাদ-সব ধরনের গন্ধ খুঁজে পান।

আবার মজার কথা– মুসলমানরা যদি কখনও মুসলিম হিসাবে তাদের কোনও স্বতন্ত্র অভাব-অভিযোগ– সমস্যা বা দাবি-দাওয়া তুলে ধরার চেষ্টা করেন—এঁরা চোখ বুঁজে অম্লানবদনে উপদেশ কিংবা হুমকিও দিয়ে থাকেন–‘এতো বেশী মুসলমান মুসলমান বলে চিৎকার না করে নিজেকে ভারতীয় ভাবার চেষ্টা করুন– দেখবেন সব সমস্যা মিটে গেছে।’

কিন্তু দেখা যায়, ভারতীয় নাগরিক হিসাবে যখন মুসলমানদের ন্যায্য প্রাপ্য বা ভাগের অংশ দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে— তখন তাঁরা ‘মুসলিম তোষণ’ থেকে শুরু করে ‘জাতীয় সংহতি বিপন্ন’ হওয়ার নানা অজুহাত ছাড়া করেন।

এছাড়া স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় থেকেই দেখা যাচ্ছে, মুসলিমদের প্রকৃত ও ন্যূনতম দাবিসমূহকেও সাম্প্রদায়িকতা–বিচ্ছিন্নতাবাদ বলে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছে। আর বর্ণহিন্দুদের সমস্ত ধরনের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনকে ‘জাতীয়তাবাদ’ ও ‘দেশপ্রেমের’ ছদ্মাবরণে দেশের সকল জনসাধারণের উপর একতরফা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অশুভ প্রবণতা আজ আবার দানা বাঁধছে ভয়ংকরভাবে। দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাঠামোতে মুসলমানদেরও যে-কোনও হিংসা বা অংশ থাকতে পারে, বাবু অমলেশ ত্রিপাঠীর মতো বুদ্ধিজীবিরা তা চিন্তা করতেও রাজি নন। সরব তো নয়ই– মুসলমানদের নীরব উপস্থিতিও তাঁদের সহ্যের বাইরে। ব্রাহ্মণ্যবাদী মহলের এই ধরনের অনুদার ও সাম্প্রদায়িক মনোভাব এক সময় উপমহাদেশকে বিভক্তির পথে ঠেলে দিয়েছিল। এ ধরনের প্রবণতা আজকের দিনেও সুখী-সমৃদ্ধ ভারতবর্ষ গড়ার কাজে কোনওভাবেই সহায়ক হবে না। দেশের ভাষা ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে বর্তমান অস্থিরতা তারই প্রমাণবহ। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের এ পথে ঠেলে দেওয়া কখনও কল্যাণকর হতে পারে না।

শ্রী অমলেশবাবু আশংকা ব্যক্ত করেছেন, ইংরেজ রাজত্বের চিহ্নগুলো মুছে ফেললে মুসলিম রাজত্বের চিহ্নগুলোও মুছে ফেলতে হবে (দিল্লি হবে ‘ইন্দ্রপ্রস্থ’) পরাধীনতার সঙ্গে যুক্ত ঐতিহাসিক চিহ্নসমুহ ‘মুছে ফেলা’ উচিত কি উচিত নয়— সেটি সম্পূর্ণ আলাদা বিতর্ক। এখানে যেটা লক্ষ্য করার তা হল শ্রী অমলেশবাবু উপনিবেশিক ইংরেজ শাসনের সঙ্গে ভারতের মুসলিম রাজণ্যবর্গ ও ঐতিহ্য-সংস্কৃতিক এক করে দেখেছেন। তাঁর বিবেচনায়– ইংরেজ ও মুসলমান উভয়েই বিদেশী। তাড়াতে হলে তো দুটোকেই তাড়ানো উচিত।

উপনিবেশিকতাবাদী বিদেশী ইংরাজদের শাসনের সঙ্গে ভারতের মুসলমানদের অভিন্ন মনে করার এই প্রচ্ছন্ন প্রবণতার দিকে তাকালেই মুসলমানদের সম্বন্ধে ত্রিপাঠীজীদের মনোভাব বোঝা যায়। সেইসঙ্গে ‘ভারতীয় জাতীয়তা’বলতে তাঁরা কি বোঝেন তাও স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। ‘হিন্দু জাতীয়তা’ ছাড়া ভারতের জন্য মিশ্র কোনও জাতিসত্ত্বার অস্তিত্ব তাঁদের পছন্দ নয় (যদিও ভারতীয় সংবিধানে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য এবং মিশ্র সংস্কৃতি ও জাতিসত্ত্বার রূপকার উপরই জোর দেওয়া হয়েছে)। বিশদ আলোচনা না করে অমলেশবাবুদের এটুকু বলাই যথেষ্ট যে– আর্য হিন্দুরাও কিন্তু বহিরাগত। ‘চিহ্ন মোছার’ যে মাপকাঠি তৈরির প্রচ্ছন্ন হুমকি তিনি দিয়েছেন— তাতে ‘ইন্দ্রপ্রস্থে’ কুলোবে না– আরও পিছিয়ে বর্তমানের উপজাতি-আদিবাসীদের হাতে রাজ্যপাট ফিরিয়ে দিয়ে মহাপ্রস্থানের পথ ধরতে হবে। ইতিহাসকে ভালোবাসলেও এই সম্ভাবনা ঐতিহাসিক ত্রিপাঠীজীর কাছে খুব একটা সুখপ্রদ হবে বলে মনে হয় না।

এসব দেখে শুনে স্বাভাবিকভাবেই ধারণা জন্মে যে– মুসলিমরা নিজেদের অতীতকে জানুক– তা নিয়ে গর্ব অনুভব করুর—প্রভাবশালী একটি মহল তা কিছুতেই চান না। কলকাতা পৌরসভা স্বাধীনতার আগে থেকেই এই মহলের কব্জায় রয়েছে। তাই দেখা যায়– তারা brute মেজরিটির জোরে তৎকালীন মুসলিম-প্রধান অঞ্চলের মীর্জাপুর পার্ককে অবলীলায় ‘শ্রদ্ধানন্দ পার্কে’ রূপান্তরিত করে দেন। যে মীর্জার নামে এই পার্ক ছিল, তিনি ওই অঞ্চলের মুসলিমদের কাছে খুবই শ্রদ্ধা ও ভক্তির পাত্র ছিলেন। আর ‘স্বামী শ্রদ্ধানন্দ’ তাঁর ‘শুদ্ধি’ অভিযান ও কার্যকলাপের জন্য মুসলিমদের কাছে ছিলেন খুবই বিতর্কিত।

দেখা যায়, বর্ণহিন্দুদের কৃতী-পুরুষদের স্মৃতি সংরক্ষণের নানা ব্যবস্থাদি ছাড়াও-কার কোথায় আঁতুড়ঘর ছিল– কিংবা কার কোথায় মুখে ভাত বা হাতে খড়ি হয়েছিল— তার রক্ষণা-বেক্ষণের জন্যও সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

অথচ নারীশিক্ষার অগ্রদূত– সমাজসেবিকা ও সুলেখিকা বেগম রোকেয়ার সোদপুরে অবস্থিত কবরটি পর্যন্ত বিনষ্ট করে তাঁর নাম নিশান মুছে দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের উদাহরণ মিলবে ভুরিভুরি।

একটি পত্রিকা গোষ্ঠীর ঢক্কানিনাদের জোরে শ্রী অমলেশ ত্রিপাঠী মহাশয়ের ‘ঐতিহাসিক’বাজার রমরমা। ভারত ভাগের সব দায় মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দিয়ে তাদের ‘ভিলেন’ হিসাবে চিহ্নিত করাই তাঁর পছন্দ। আনন্দবাজারে সিরাজকে উপলক্ষ্য করে তাঁর ‘মুসলিম-ভীতি’র জু-জু তৈরির চেষ্টা এরই অংশমাত্র।

শ্রী অমলেশ ত্রিপাঠী ও সমমনা ঐতিহাসিকদের কাছে নিবেদন।

আপনারা হাওয়ার সঙ্গে যুদ্ধে করছেন। ফোর্ট উইলিয়ামের নামকরণ সিরাজের নামে করা হোক—এ ধরনের কোনও দাবি তোলা পশ্চিমবাংলার মুসলমানরা বহুদিন আগেই ছেড়ে দিয়েছেন। দারিদ্র, বেকারি ও অশিক্ষায় জর্জরিত বাংলার মুসলমানরা জানেন, সিরাজের নামে ফোর্ট উইলিয়ামের নামকরণ হলেও তা তাদের অবস্থার কোনও পরিবর্তন সুচিত করবে না। দু’জন মুসলমানকেও সেখানে চাকুরি দেওয়া হবে না। ক্ষুধাতুর মুসলমানরা ফোর্ট উইলিয়ামে ‘সিরাজ’ চান না– দু’মুঠো ভাত– একটু নুন এখন তাঁদের প্রধান প্রয়োজন।

মুর্শিদাবাদে যাতায়াতকারী একটি ট্রেন (বর্তমানে এটি ভাগীরথী এক্সপ্রেস নামে চলছে) চালু হওয়ার সময় তার নাম ‘সিরাজ এক্সপ্রেস’ রাখার প্রস্তাব উঠেছিল। কিন্তু একটি প্রভাবশালী মহলের চাপে তা করা যায়নি। মুসলিমরা এ নিয়েও কোনও উচ্চ-বাচ্য করেননি।

অমলেশবাবুকে পুনরায় নিবেদনঃ

ফোর্ট উইলিয়ামের নাম পরিবর্তন করা হলে আপনার পছন্দ মতো ‘কালিকা-দুর্গই রাখুন– মুসলিমদের বিন্দুমত্র আপত্তি নেই। অমলেশবাবুরা মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার ভীতিজনক কাল্পনিক চিত্র প্রচার করে পশ্চিমবাংলার মুসলিমদের জীবনধারণ ও অস্তিত্ব রক্ষার সংকীর্ণ ক্ষেত্রটিকে আরও সংকুচিত না করে দিলেই তারা কৃতজ্ঞ বোধ করবে। তারা জানে, সিরাজ দুর্গের ‘বাবু বিলাস’তাদের জন্য নয়।

[সালটা ছিল ১৯৮৯। বামফ্রন্ট আমলের রমরমা তখন। বিধানসভায় প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল, দমদম বিমানবন্দরকে নেতাজির নামে ও ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গকে সিরাজ-উদ-দৌলাহ-র নামে করা হোক। এক প্রথম শ্রেণির দৈনিকে বাবু বুদ্ধিজীবী ও ঐতিহাসিকরা সিরাজের নাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রবল প্রতিবাদ তোলেন। ফোর্ট উইলিয়ামের নাম ‘সিরাজ দুর্গ’ করার উদ্যোগের সেখানেই ইতি। নিবন্ধটি মাসিক কলম পত্রিকায় ১৯৮৯ সালের নভেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়েছিল।]

[সৌজন্যঃ দৈনিক পুবের কলম]

‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।

‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।

‘নবজাগরণ’ এর ফেসবুক পেজে লাইক করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।

Post Views: 4,645
Tags: Nabab SirajuddaullahSirajuddaullahনবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহনবাব সিরাজউদ্দৌল্লাহ
ADVERTISEMENT

Related Posts

সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনকাল : (১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ)
ভারতবর্ষের ইতিহাস

সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনকাল : (১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ)

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম মুঘল সম্রাট শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে সর্বাধিক শক্তিশালী, বুদ্ধিমান ও রাজনৈতিকভাবে দক্ষ ছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেব। ইতিহাসে...

by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
June 19, 2025
বিদ্যাসাগরের প্রতি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিদ্বেষ ও বিরোধীতা
ভারতবর্ষের ইতিহাস

বিদ্যাসাগরের প্রতি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিদ্বেষ ও বিরোধীতা

একজন বিদ্যার সাগর, আর একজন সাহিত্যের সম্রাট। উভয়েই উনিশ শতকের বিখ্যাত মনীষী ও লেখক এবং পরস্পরের সমকালীন। উনিশ শতকের...

by কামরুজ্জামান
November 13, 2024
মন্দির ধ্বংস এবং ইন্দো-মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ
ভারতবর্ষের ইতিহাস

মন্দির ধ্বংস এবং ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিবৃত্ত

লিখেছেনঃ রিচার্ড এম. ইটন সম্প্রতি, বিশেষ করে ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর, দক্ষিণ এশিয়ার মন্দির এবং মসজিদের রাজনৈতিক...

by অতিথি লেখক
June 19, 2025
প্রকৃতি, নান্দনিক চৈতন্য ও মরমিবাদ: বাংলার আরবি-ফার্সি শিলালিপির আধ্যাত্মিক দিক
ইসলামিক ইতিহাস

প্রকৃতি, নান্দনিক চৈতন্য ও মরমিবাদ: বাংলার আরবি-ফার্সি শিলালিপির আধ্যাত্মিক দিক

চিত্র ৪.১ (শিলালিপি নং): পাণ্ডুয়ার শায়খ নূর কুতব আল আলমের সমাধিফলকে ব্যবহৃত সাতটি আধ্যাত্মিক উপাধি...

by মুহাম্মাদ ইউসুফ সিদ্দিক
November 7, 2024

POPULAR POSTS

  • সুলতান মাহমুদ

    সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান ও সোমনাথ মন্দির প্রসঙ্গ (১ম পর্ব)

    181 shares
    Share 181 Tweet 0
  • বাউরী সম্প্রদায়ের উৎপত্তির ইতিহাস ও ঐতিহাসিক পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • আর্যদের ভারত আগমন, বিস্তার, সমাজ ও সভ্যতা: এক ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে বৌদি কাদম্বরী দেবীর সম্পর্ক আদৌ কি প্রেমের ছিল?

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • হিন্দু পদবীর উৎপত্তির ইতিহাস, বিবর্তন ও ক্রমবিকাশঃ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

Facebook Page

নবজাগরণ

ADVERTISEMENT
নবজাগরণ

'Nobojagaran' is a website of its kind where you can gather knowledge on all the unknown facts of the world. We human beings always have a thirst for knowledge. Nobojagaran takes its first steps to quench this thirst of ours. We are now in the era of digital world, where we get almost anything online. So how about a bit of knowlyfrom online?

Connect With Us

No Result
View All Result

Categories

  • English (9)
  • অন্যান্য (11)
  • ইসলাম (27)
  • ইসলামিক ইতিহাস (23)
  • ইহুদী (2)
  • কবিতা (37)
  • খ্রিস্টান (6)
  • ছোটগল্প (6)
  • নাস্তিকতা (18)
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (24)
  • বিশ্ব ইতিহাস (24)
  • ভারতবর্ষের ইতিহাস (195)
  • রাজনীতি (38)
  • সাহিত্য আলোচনা (68)
  • সিনেমা (17)
  • হিন্দু (16)

Pages

  • Cart
  • Checkout
  • Checkout
    • Confirmation
    • Order History
    • Receipt
    • Transaction Failed
  • Contact
  • Donation to Nobojagaran
  • Homepage
  • Order Confirmation
  • Order Failed
  • Privacy Policy
  • Purchases
  • Services
  • লেখা পাঠানোর নিয়ম
  • হোম
No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi

©Nobojagaran 2020 | Designed & Developed with ❤️ by Adozeal

Login to your account below

Forgotten Password?

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In
Don't have an account yet? Register Now
1
Powered by Joinchat
Hi, how can I help you?
Open chat
wpDiscuz
0
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
| Reply