• মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
Saturday, June 21, 2025
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ
No Result
View All Result

টিপু সুলতান জীবন ও কৃতিত্ব

মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
March 24, 2021
in ভারতবর্ষের ইতিহাস
0
টিপু সুলতান

চিত্রঃ টিপু সুলতান, Image Source: Google Image

Share on FacebookShare on Twitter

লিখেছেনঃ চৌধুরী আতিকুর রহমান

১৭৯৯ সালের ৪-ঠা মে মাত্র ১৭ বছর রাজত্বের পর টিপু সুলতান ব্রিটিশদের সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় যুদ্ধক্ষেত্রেই প্রাণ বিসর্জন দেন। মনে করা হয়, বেশ কিছু ক্ষেত্রে ইউরোপ অপেক্ষা ভারতীয়দের উৎকর্ষতা চোখে পড়ার মতো হলেও, টিপু যে সময় রাজত্ব করেছিলেন তার আগেই ভারতের বিজ্ঞান ও যুদ্ধাস্ত্র সম্পর্কিত অগ্রগতি থমকে গিয়ে এই সকল ক্ষেত্রে ইউরোপীয়দের তুলনায় দৈন্যদশা ক্রমে প্রকট হয়ে উঠেছিল। টিপু এই দৈন্যদশা থেকে বের হওয়ার জন্য মৌলিক চিন্তার সঙ্গে সঙ্গে বিলিতি উদ্ভাবনী শক্তির ব্যবহার করেন। তিনি ব্রতী হয়েছিলেন সামাজিক, আর্থিক ও বৌদ্ধিক বিকাশকে পুরোপুরি সাজাতে। স্বল্পকালীন প্রচেষ্টায় ইউরোপীয়দের সাফল্যকে পুরোপুরি ধরতে না পারলেও তিনি যে দক্ষিণে এক বিশাল অংশের ব্রিটিশ শাসনক্ষেত্র অপেক্ষাও সমৃদ্ধশালী ভারতের পত্তন করেছিলেন ইংরেজরাও স্বীকার করেছে। ব্রিটিশরা বুঝে যায় টিপু সম্পূর্ণরূপে পরাজিত না হলে সমস্ত ভারত জুড়ে তাদের সাম্রাজ্যবিস্তার স্বপ্নই রয়ে যাবে। ইংরেজদের বিশেষ টিপুভীতির অন্যতম কারণ হল নতুনের প্রতি টিপুর আকর্ষণ। তিনি বর্তমান কর্ণাটক তথা ভারতের রাজনৈতিক, সামাজিক, বৌদ্ধিক সবদিক থেকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।

টিপু সুলতানের উদ্ভিদবিদ্যা, উদ্যানবিদ্যা ও কৃষি ভাবনা: কর্নেল উইলিয়াম কার্কপ্যাট্রিক টিপুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের অন্যতম সেনাপতি ছিলেন। উইলিয়ামের ছোট ভাই জেমস কার্কপ্যাট্রিক নিজাম পরিবারের জামাতা হন এবং উর্দু ও ফার্সি ভাষায় পারদর্শিতার সঙ্গে সঙ্গে নিজাম ও ও টিপুর মধ্যে লড়াইয়ের পরামর্শদাতা ছিলেন। বস্তুত, টিপুর সঙ্গে শত্রুতার জন্য মারাঠা ও নিজাম দরবারে আত্মীয়তা পাতিয়ে বা না পাতিয়ে এইরকম বহু ব্রিটিশ বসবাস করতেন। এরাই ব্রিটিশ সমস্ত ভারতকে কব্জা করার পর ইংরেজি সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হন। উইলিয়াম কার্কপ্যাট্রিক বলেছেন, “টিপু নিজে চিকিৎসাবিদ্যাসহ সমস্ত বিজ্ঞান শাখায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি উদ্ভিদের শ্বাসকার্য বিষয়েও গবেষণা করেছিলেন। তার গ্রন্থাগারে ইংরেজি ঔষধবিদ্যা ও ইউরোপীয় উদ্ভিদবিদ্যার বইয়ের ফার্সি অনুবাদ সংরক্ষিত ছিল। টিপুর পতনের পর বইগুলি রয়েল সোসাইটির গ্রন্থাগারের স্থান পায়। ছোটভাই জেমস কার্কপ্যাট্রিক বড়ভাইয়ের মতো টিপুর প্রতি ততটা বিদ্বেষপরায়ণ ছিলেন না। ১৭৯২-এর ফেব্রুয়ারীতে স্বদেশ স্কটল্যান্ডে টিপুর ব্যাঙ্গালোরের উদ্যান সম্বন্ধে চিঠি লিখে পাঠালেন, ‘আমাকে সবচেয়ে আন্দোলিত করেছে উত্তম রুচিসম্পন্ন ও নকশা অনুযায়ী প্রধান রাজপথের দু’পাশে দীর্ঘাকার সাইপ্রেস গাছের সারি। এত সুন্দর আমি এর আগে দেখিনি।’ শ্রীরঙ্গপত্তম অবরোধ দিয়ে চতুর্থ মহীশূর যুদ্ধ (১৭৯৯) শুরু হওয়ার এক মাস পর অসংখ্য ইউরোপীয় সেনা ও পশুর গলিত মৃতদেহের মধ্যে থেকেও জেমস লিখতে ভুললেন না, ‘নগর ছাড়াও দ্বীপের মধ্যে অবস্থিত প্রাসাদ ও উদ্যানগুলি ব্যাঙ্গালোর অপেক্ষাও চমৎকার’। লালবাগ সম্বন্ধে লিখলেন,’ যুদ্ধের জরুরী প্রয়োজনে আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রাসাদটি হাসপাতলে পরিণত করা হয়েছে এবং উদ্যানটি অবরোধের সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য ভেঙে ফেলা হয়েছে। রাজপথের দুই পাশের দীর্ঘাকার সাইপ্রেস গাছগুলি কেটে ফেলা হয়েছে, একইসঙ্গে কমলালেবু, আপেল, চন্দন এমনকি সুগন্ধি গোলাপ ও জুঁইয়ের বাগানও রক্ষা পায়নি।
লালবাগ নির্মাণে ফরাসি হাতও ছিল। ১৭৮৭ সালে কয়েকজন ফরাসি উদ্যানবিদ আসেন। তাঁদের কিছুটা হাত লালবাগ নির্মানেও ছিল।

চিত্রঃ টিপু সুলতান, Image Source: notunshomoy

জর্জ ভাইকাউন্ট ভ্যালেন্সিয়া ১৮০৩ সাল নাগাদ পূর্বতন টিপুর রাজ্যে ভ্রমণের সময় লিখলেন, ‘আমি সুলতানের বাগানের এক প্লেট স্ট্রবেরিতে অত্যন্ত তৃপ্ত হলাম’। ফ্রান্সিস বুকানন মালাভাল্লির নিকট ফলের বাগান সম্বন্ধে লিখলেন,’মালাভল্লি শহরের লাগোয়া জলাধারটি সুলতান দ্বারা স্থাপিত উদ্যানে নিরবিচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ করে। উদ্যানটিতে ২৪০০ গাছ রয়েছে যার অর্ধেকই আমের। এগুলি ফলে ভারাক্রান্ত এবং কিছু কমলালেবু অত্যন্ত উপাদেয়’। বুকানন আরও বলেছেন, ‘মুসলিম সুলতান দ্বারা স্থাপিত উদ্যান গুলি বিশাল বর্গাকার প্রাচীর দ্বারা বিভক্ত, যাদের পাশে সুন্দর সাইপ্রেস গাছ ও গুল্ম দ্বারা সাজানো। একটি প্লটের পুরোটাই ছিল গোলাপের, অন্যটি বেদানার।

গরম মসলার একটি বিশেষ চারা মহীশূর রাজ্যে পাওয়া যেত না। সুলতান ত্রিবাঙ্কুর থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় তার চারা সংগ্রহ করে মহীশূরে প্রথমবারের মতো উৎপাদন শুরু করেন। এলাচ, কাজুবাদাম ও সব্জির উপর কোন কর ছিল না। টিপু বেশ কয়েকটি হুকুমনামায় তাঁর সাম্রাজ্য জুড়ে আম, জাম, পান, সুপারি, নারকেল, আনারস, ডুমুর, স্ট্রবেরি এবং আরও বহু ধরনের ফলের চাষ করতে বলেছিলেন। এই রকমই এক ফর্মান হল, রায়তদের মধ্যে কেউ প্রথমবার নারকেল বাগান গড়ে তুললে প্রথম চার বছর তাকে কোন কর দিতে হবে না, পঞ্চম বছর তাকে অর্ধেক কর দিতে হবে এবং ষষ্ঠ বছর থেকে তাকে পুরো কর দিতে হবে। নারকেল গাছের মাঝে মাঝে কোন সবজি বা শাক চাষ করলে কোন কর দিতে হবে না। তিনি ছোটখাটো অপরাধীদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য ফরমান জারি করেছিলেন, যদি কারও উপর অল্প জরিমানা ধার্য করা হয়, তাহলে সে যদি তার গ্রামে দুটি আম গাছ ও দুটি জাম গাছ লাগায়, পানি দেয় এবং দশ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত প্রতিপালন করে তবে তার কৃত অপরাধ মাফ করে দেওয়া হবে। টিপু প্রতিটি গ্রামে জমি নির্দিষ্ট করে সেগুন, শাল, ধুপি, পাইন, লাক্ষা ও চন্দন চাষের জন্য আমিলদের কাছে হুকুমনামা পাঠান। সাধারণত নদীবাঁধ, খালপাড়, পুকুরপাড় ও পাহাড়ের গায়ে ভূমিক্ষয় রোধের জন্য অর্থকরী উদ্ভিদ চাষের উৎসাহ দেন। সামাজিক বন সৃজনের জন্য সরকারি ভাণ্ডার থেকে বীজ ও চারা সরবরাহ করা হত। দরিদ্র কৃষকদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে বলদ লাঙ্গল ও শস্য বীজ সরবরাহ করা হত। ক্ষেতের ব্যয়ভার হিসাবে ২০ থেকে ৩০ রুপি অনুদান দেওয়া হতো। শুধু গাছ লাগানো নয়, এদের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থাও করেন। সরকারের অনুমতি ছাড়া কেউ কোনও গাছ কাটলে সেই সস্তা-গন্ডার যুগেও তাকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হত। স্থান নির্বাচন, বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণ সংক্রান্ত তাঁর চিন্তা পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এই যুগের প্রেক্ষিতে যথেষ্ট আধুনিক ছিল।

ক্যালেন্ডার সংস্কার: ইসলামী হিজরী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী মাসগুলি চান্দ্রমাস হিসাবে গণনা করা হয়। মাস গণনার ফলে সৌর বছর অনুযায়ী প্রতি বছর ১০-১১ দিনের পার্থক্য হয়ে যায়। টিপু এই অসুবিধা দূর করার জন্য হযরত মোহাম্মদ সোয়াল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের জন্মদিনকে প্রথম দিন ধরে মৌলুদ মাসের প্রচলন করেন। সৌর ও চান্দ্রমাসের গণনায় সাযুজ্য রাখার জন্য হিন্দু ক্যালেন্ডারের মল মাসের মত অতিরিক্ত মাসেরও ব্যবস্থা করেন।

টিপুর শিল্পনীতি: কর্নাটকের লালবাগে ইংল্যান্ড থেকে ওক, উত্তমাশা অন্তরীপ থেকে পাইন এবং মেক্সিকো থেকে অ্যাভোকাডো এনে চাষ করেন। তিনি আম, তুঁত, কমলা লেবু, পেয়ারা ইত্যাদি গাছ লাগিয়েছিলেন। এছাড়া তুলো ও নীল চাষেও উদ্যোগী হন। তিনি মসজিদ বা প্রাসাদ নির্মাণের চেয়েও বিশাল বিশাল রাজপথ, নদীবাঁধ, জলাধার নির্মাণ ও সংস্কারে ব্রতী হন। টিপু পুরনো জলাধার ও বাঁধ সংস্কার করেন এবং নিজেও বেশ কিছু বাঁধ ও জলাধার নির্মাণ করেন। এইসব জলাধারগুলি শুধুমাত্র সুখা মরশুমে চাষের জলই সরবরাহ করত না, পানীয় জল এবং শিল্পের প্রয়োজনেও ব্যবহার করা হত। উঁচু থেকে জল ফেলে পাখার মত ধাতব বস্তু ঘুরিয়ে যাঁতা চালানো হতো যা শস্য পেশাইয়ের কাজে লাগত। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্ক্রু-র মতো পেঁচিয়ে কামান, মাস্কেট, বন্দুকের নল তৈরি করা হত।

টিপুর শিল্পনীতির পর্যালোচনা করে বহু পন্ডিত বলেছেন, তিনি আধুনিক পুঁজি নির্ভর ও জ্বালানী নির্ভর শিল্পের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। সরকারের হাতে বেশি পুঁজি থাকায় কমদামে কাঁচামাল কিনে তা থেকে বস্তু উৎপাদন করে বেশি দামে বিক্রি এই প্রাথমিক নীতির উপর নির্ভর করে তাঁর শিল্পনীতি গড়ে উঠেছিল। আধুনিক গবেষণায় জানা যায়, তিনি সমবায় ব্যাংকিং নীতির প্রচলন করেছিলেন। এই ব্যাংকগুলি ১০ হাজার ও তার উপরের অংশিদারিকে ৫০ শতাংশ হারে মুনাফা দিত। ৫০০০ টাকা লগ্নিকারীকে ২৫ শতাংশ মুনাফা দিত এবং ৫০০০-এর উপর লগ্নিকারীকে ১২% লাভ দিত। কখনও কখনও রাষ্ট্রও শেয়ার কিনত। তিনি জলস্রোত ব্যবহার করে যন্ত্র ঘোরানোর ব্যবস্থাপত্র জানতেন (যা মধ্যযুগের ভারতে ভালই জানা ছিল, উদাহরণ শতকে নির্মিত মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গাবাদের পানচাক্কি। এমনকি স্বল্প পরিমাণে কয়লা থেকে শক্তি নিয়ে শিল্পে ব্যবহার করেছিলেন। সব দিক বিবেচনা করে সিসেরো বলেছেন, ভারতে শিল্প ও পুঁজিবাদের প্রবক্তা ছিলেন টিপু সুলতান। টিপু উন্নত বাণিজ্য ব্যবস্থাও গড়ে তুলেছিলেন। এই ব্যবস্থার সুষ্ঠু রূপায়ণের জন্য ম্যাঙ্গালুরু বন্দর দখল করেছিলেন। তাঁর শিল্প-বাণিজ্য ব্যবস্থার লক্ষ্যই ছিল চরম ইংরেজ বিরোধিতা। তিনি তৎকালীন সময়ে প্রধান শক্তি তুরস্ক ও ফ্রান্সের সঙ্গে নানারকম সামরিক ও বেসামরিক চুক্তি করেছিলেন। তিনি শর্ত হিসাবে লেখেন তাঁর উৎপাদিত পণ্য যেন সোজা বা ঘুরপথে কোনওভাবেই ব্রিটিশ হাতে না পড়ে। তার অর্থনীতি ইউরোপের শিল্প বিপ্লব ও সামন্ত প্রথার মধ্যবর্তী পর্যায়ের ছিল বলেই মনে করা হয়।

বলা যেতে পারে, তিনি ইউরোপীয় ধাঁচের শিল্প বিপ্লবের বীজ বপন করেছিলেন। তবে অকাল প্রয়াণে তা সম্পন্ন করতে পারেননি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, দাভনগেরে বেতুর হুগলি নামক শহরের পার্শ্ববর্তী একটি গ্রাম। হায়দার গ্রামটি আপ্পাজী রাম নামে এক মারাঠি ব্রাহ্মণকে জায়গীর দেন। আপ্পাজি ওই গ্রামে কিছু বণিককে এনে বসান। উত্তরাধিকারীবিহীন আপ্পাা মারা গেলে টিপু দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে আরও বনিক এনে বসান। বর্তমানে দাভানগেরে একটি শিল্পঞ্চল ও বাণিজ্য কেন্দ্র।

কাঁচ ও সিরামিক শিল্প: টিপুর রাজ্যে কাঁচশিল্প যথেষ্ট উন্নত ছিল। চেন্না পাটনা কাঁচ শিল্পের কেন্দ্র ছিল। তবে কাঁচ, সিরামিক ও পাথরের উপর নকশা খোদাই করা হত বিভিন্ন জায়গায়। সাধারণত কাঁচের বোতল তৈরি ও গহনা হিসাবে আংটি নির্মাণে কাঁচের ব্যবহার বেশি হত। টিপুর পতনের পর তাঁর প্রাসাদে প্রচুর বইপত্র, টেলিস্কোপ, লেন্স ছাড়াও উন্নত মানের কাঁচ ও চিনা মাটির পাত্র দেখতে পাওয়া যায়।

সুতিবস্ত্র উৎপাদন: টিপুর আমলে উন্নতমানের সুতিবস্ত্র উৎপাদনে পারদর্শী ছিলেন প্রচুর প্রসিদ্ধ বয়নশিল্পী। তারা শ্রীরঙ্গপত্তমের কাছেই গঞ্জাম নামক স্থানে বসবাস করতেন। টিপু তাখদের সূক্ষ্ম বস্ত্র এমনকি মসলিন উৎপাদনেও উৎসাহ দিতেন। গাব্বি, সিলঘাটা, কোয়েম্বাটুর, ব্যাঙ্গালোর, হরিহর, সত্যমঙ্গলা ইত্যাদি স্থানগুলি টিপুর বস্ত্রশিল্পের পীঠস্থান ছিল।

রেশম চাষ ও রেশম বস্ত্র- বর্তমানে তামিলনাড়ু ও মহীশুরের (কর্ণাটক) রেশমের জগৎজোড়া নাম। উভয় প্রদেশেই রেশম শিল্পের জন্মদাতা ছিলেন টিপু। রেশম চাষের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি রাজধানীর শ্রীরঙ্গপত্তমের কেল্লা অধিকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদকে একটি চিঠি পাঠান। তিনি নিজে তখন মারাঠাদের সঙ্গে ঘোরতর যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। চিঠিটির মর্মার্থ ছিল এইরকম-” বুরহানউদ্দিন ও ও কস্তুরি ব্রহ্মকে রেশম কীট আনার জন্য বাংলায় পাঠানো হয়েছে। তারা এখন ফেরার পথে। তাদের আসার সঙ্গে সঙ্গে তাদের নিকট জেনে নেবেন কীটগুলিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সঠিক কি করতে হবে? এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন। আপনি নিশ্চয় রেশম কীটদের খাদ্য ও তুঁত গাছের পাতা সরবরাহ করবেন, যা আসলেই চাষ করতে বলে দেওয়া হয়েছে। বাংলা থেকে আনা রেশম কীটের সংখ্যাও জানাবেন। আমার আরও জানতে ইচ্ছা করে কোন জায়গায় কীটগুলিকে রাখা হবে এবং তাদের সংখ্যা কিভাবে বাড়ানো হবে?” শুধু বাংলা নয় ছেলে এ নিয়ে যা বন্ধ করে জানিনা অন্যান্য জায়গা থেকে এমনকি সুদূর ওমানের মাস্কাট থেকে রেশম কীট আনিয়েছিলেন এবং রেশম কীটের মানের উন্নয়ন ঘটান যা পরে দাক্ষিণাত্যের নিজস্ব রেশমে পরিণত হয়। দাক্ষিণাত্যে মোট ২১ টি জায়গায় রেশম বস্ত্র উৎপাদন হত। রেশম কীট প্রতিপালনের জন্য দরকার শাহতুঁত গাছ। তিনি কয়েকজনকে চিনে পাঠান শাহতুঁত গাছ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিতে। প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেরার পথে তাঁরা কয়েকটি চারাও আনেন।

মুক্তো চাষ ও উত্তোলন: ম্যাঙ্গালোর উপকূলে মুক্তো চাষ, উত্তোলন ও বিপণন কেন্দ্র খোলেন টিপু। এই কর্মকান্ডের জন্য তিনি এই ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত উন্নত এলাকা মাস্কাট (ওমান) ও বাহরাইন থেকে ডুবুরি নিয়ে এসেছিলেন। এই শিল্পের উন্নতির জন্য প্রচুর সময় ও অর্থ ব্যয় করেছিলেন এবং তা থেকে যা আয় হতো ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অস্ত্র নির্মাণ ও খরিদে ব্যায় করতেন।

চিনি শিল্প: চিনি উৎপাদনে টিপু বিশেষ নজর দেন। তিনি আখ চাষে উৎসাহ দিতেন এবং আখের রস থেকেই চিনি পাওয়া যেত। চিনিকলগুলো দেবেনহাল্লি, হসপেট, চেন্না-পাটনা ইত্যাদি এলাকায় স্থাপন করা হয়। টিপুর কারখানায় উৎপন্ন চিনি ছিল উন্নত মানের ও পরিষ্কার। এসব কারখানায় চিটেগুড়ও উৎপন্ন হত। সিসেরভ চিনি উৎপাদন ব্যবস্থা দেখেই বলেছিলেন, টিপু আধুনিক ভারতীয় শাসকদের মধ্যে বিশ্বস্ত আধুনিক শিল্প পুঁজিবাদের প্রবক্তা। চিনি শিল্পে তিনি চিনা প্রযুক্তি ও চিনা বিশেষজ্ঞ ব্যবহার করেছিলেন।

লৌহ-ইস্পাত শিল্প: টিপুর পতনের পর ফ্রান্সিস বুকানন ১৮০০ সাল নাগাদ মহীশূর ভ্রমণ করেন। তিনি সেসময় সেখানে লৌহ পৃথক করার জন্য খনিজ গলানোর প্রচুর চুল্লি দেখতে পান। এখানে প্রচুর লোক কাজ করতেন এবং অস্ত্র নির্মাণে এই ইস্পাত ব্যবহার করা হত। দাভানহাল্লি ও তারামণ্ডলপেট (তিনি লৌহ ইস্পাত শিল্প কেন্দ্রের নাম নিয়েছিলেন তারামণ্ডল।) ছিল লৌহ ইস্পাত শিল্প কেন্দ্র। এখানেই টিপু তাঁর বিশেষ মডেলের রকেট উৎপাদন করতেন। চেন্নাপাটনায় উৎপন্ন ইস্পাতের তারকে বাজনা যন্ত্রের তার হিসেবে ব্যবহার করা হত। ঘাঁটিপুরা ও কানেকাল লৌহ খনি থেকে আগত জলস্রোতে ধাতব লৌহ পাওয়া যেত প্রধানত বর্ষার চার মাসে। বাকি ৮ মাসে পাওয়া যেত যথেষ্ট পরিমাণে কালো বালি। লৌহ মিশ্রিত এই বালি গলিয়ে যথেষ্ট লৌহ পাওয়া যেত। মধুগিরি, চেন্নারায়াদুর্গ, হাগালাবাড়ি, দেবরায়াদূর্গে পাহাড় থেকে আগত কালো রংয়ের বালিকে চুল্লিতে গলানো হত। অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা এক ঝুড়ি কয়লা ঢালতেন, এরপর দুহাত ভরে যতটা কাল বালি ওঠে ঠিক ততটা নিয়ে দুইবার ঢালা হত। তারপর এর উপর আরও কাঠ কয়লা দিয়ে আগুন দেওয়া হত। এভাবে এই পদ্ধতিটি বারংবার চালানো হত। তারপর চুল্লি থেকে ধাতব লৌহ বের করে পেটাই লোহা তৈরি করা হত। পাথুরে খনিজ একই পদ্ধতিতে ধাতুতে পরিণত করা হত। উৎপন্ন লৌহখন্ডের মূল্য কম থাকলেও এই লৌহ খন্ড থেকেই বেশি পরিমাণে ইস্পাত প্রস্তুত করা হত। টিপুর সময় প্রাপ্ত ধাতব লৌহ ছিল রট আয়রন যা শক্ত, নমনীয় ও মরিচাবিহীন।

ডা. বেঞ্জামিন হায়ন লৌহ থেকে ইস্পাত প্রস্তুতির বর্ণনা দেন। ৫২ টি লৌহ খন্ড একটি পাত্রে (ক্রুসিবল) রেখে টাঙ্গেডু (কাসিয়া) গাছের শুকনো ডাল ও ভোনানগাড়ির (কনভলভুলাস) পাতাসহ পাত্রর মুখটি কাদা দিয়ে শক্ত করে বন্ধ করে তলদেশটি মাঝে রেখে চক্রাকারে সজ্জিত করা হত। মাটিতে গর্ত করে এই ব্যবস্থাটি কাঠকয়লা দিয়ে পূর্ণ করে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হত। এরপর ৬ ঘন্টা ধরে বাতাস করা হত। তারপর পাত্রগুলি চুল্লি থেকে সরিয়ে পানি মিশ্রিত কাদায় রেখে ঠান্ডা করে ইস্পাত বার করে নেওয়া হত। বর্তমানে ব্লাস্ট ফার্নেসে ১০০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কার্বন গ্রহণ শুরু হয় যা সম্পৃক্ত মাত্রায় পৌঁছায় ১৪ হাজার ডিগ্রিতে। অবশেষে তা ঢালাই লোহায় পরিনত হয়। বর্তমান পদ্ধতি জানা না থাকলেও সেই সময় ভারতে প্রস্তুত ইস্পাত যেভাবেই হোক ইউরোপ অপেক্ষা উন্নত ছিল। ভারতে ইস্পাত প্রস্তুতিতে ৬ ঘন্টা লাগলেও ইউরোপে লাগতো ৬-৭ দিন। স্বাভাবিকভাবেই কার্বনকণা ঠাসবুনোট তৈরি করতে পারত না। পর্যাপ্ত কার্বন সরবরাহ করতেই বিশেষ ধরনের গাছের কাঠ (কাসিয়া) ও পাতা (কনভলভুলাস) ব্যবহার করা হত।

শের ই মহীশূর ফতেহ আলী টিপু সুলতানের সামরিক দক্ষতা:

মহীশূরের টিপু সুলতান ছিলেন বিদ্যোৎসাহী। তিনি হিন্দু ও মুসলিম পণ্ডিতদের সামনে বসে ধর্ম, ভাষা ইত্যাদি যেমন শিখেছিলেন, তেমনই রাজ্য পরিচালনা, গণিত, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি সবই পিতা হায়দার আলীর তত্ত্বাবধানে পন্ডিতদের কাছে শিখে নেন। এইসকল বিষয় তাঁর সামরিক দক্ষতার হাউ আর ইউ মধ্যে ফুটে উঠেছে। এগুলি আলোচনা করা হলো।

মহিশুর বাহিনীর সেনাসদস্য সংখ্যা স্থির ছিল না, কমবেশি হত। ১৭৬৭ সালে প্রথম মহীশূর যুদ্ধে মহীশূর সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল মাত্র ৩০ হাজার। ১৭৮২ সালে দ্বিতীয় মহিশুর যুদ্ধের সময় সেনা সংখ্যা বেড়ে ৮৮ হাজার হয়। ১৭৯২ মহীশূর তৃতীয় যুদ্ধের সময় টিপুর অধীনে ১৮ হাজার অশ্বারোহী ও ৫০ হাজার পদাতিক সৈন্য ছিল। অনিয়মিত ১ লক্ষ সিপাহী ছিল। ১৭৯৯-এ ইং- মহীশূর সর্বশেষ যুদ্ধে খোদ ইংরেজ ঐতিহাসিক দের বর্ণনায় পায়, সুলতানের সঙ্গে কেল্লার ভিতরে ও আশপাশে ৩৫০২ জন নিয়মিত অশ্বারোহী, ৯৩৯২ জন অনিয়মিত অশ্বারোহী, ২৩,৪৮৩ জন নিয়মিত পদাতিক সিপাহী, ৬৯০৯ জন অনিয়মিত স্বেচ্ছাসেবী সিপাহী এবং ৪৭৪৭ জন বন্দুকধারী সিপাহী ছিল। ৪ জন উচ্চপদস্থ ফরাসি অফিসার, ইউরোপীয় সেনা 50 জন ও ৩৫০ জন আফ্রিকান সৈন্য ছিল। রাজধানীর বাইরে বেদনোর, হসপেট, ম্যাঙ্গালোর, ব্যঙ্গালোর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ শহর গুলোতে সৈন্য নিয়ে মোট সৈন্য সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৮০ হাজার।

জাহাজ নির্মাণ শিল্প: সালতানাতে খোদাদাদ বা হায়দার টিপুর মহিশুর রাজ্যে তাঁরাই সর্বপ্রথম ভারতীয় হিসাবে নৈবহরের উপযেগিতা বুঝে ছিলেন। হায়দার নৌবহরের ভিত্তি স্থাপন করেন। টিপুর তত্ত্বাবধানে জাহাজ নির্মাণ শিল্প ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ শিল্প ছিল। ১৭৯৩-এ জাহাজ পরিচালনা প্রশিক্ষণের জন্য ভাটকালে একটি কলেজ খোলা হয়। ১৭৯৬ সালে টিপু ‘ওজারাতে মীর ইয়াম’ নামে পৃথক নৌযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রালয় খোলেন এবং ১০০ টি জাহাজ নির্মাণের হুকুমনামা জারি করেন। পৃথক নৌ মন্ত্রণালয় স্থাপনের পূর্বে এটি প্রতিরক্ষা দপ্তরের অধীনে ছিল। ম্যাঙ্গালোরে নির্মিত জাহাজ সম্পর্কে কার্কপ্যাট্রিক বলেন, “এগুলি ছিল শক্তিশালী ও টেকসই এবং ১০ হাজারের মত মানুষ জাহাজ নির্মাণে জড়িত ছিল”। টিপুর ৪০ টিরও বেশি যুদ্ধজাহাজ ছিল। ২০ টি বৃহৎ ও ৪২ টি রণতরী যুদ্ধের জন্য সব সময় তৈরি থাকতো। বড় রণতরী গুলিতে একসঙ্গে ৭২টি তোপ রাখা যেত। ছোট গুলিতে ৪৬ টি তোপ রাখা যেত।

জাহাজগুলি ভারতবর্ষের বিভিন্ন উপকূল, আরব দেশ, তুরস্ক, ফ্রান্স, পূর্ন ভারতীয় উপকূলে মালপত্র পরিবহনে যুক্ত ছিল।

জাহাজগুলি তৈরীর জন্য টিপু ম্যাঙ্গালোর, মিরজান ও মওলুদাবাদে কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। মালাবারের গভীর জঙ্গল থেকে সাগওয়ান কাঠ সংগ্রহ করে কারখানা গুলিতে পাঠানো হত সেই কাঠ থেকেই জাহাজ নির্মাণ হত। জাহাজগুলির নকশা টিপু সুলতান নিজের হাতে করতেন। জাহাজ নির্মাণকল্পে যে লোহা ব্যবহার করা হত তা সমুদ্রের চুম্বকীয় পাহাড়ের আকর্ষণে ধাক্কা না খায় তা থেকে বাঁচার জন্য টিপু সর্বপ্রথম তামার ব্যবহার শুরু করেন।

শ্রীরঙ্গপত্তনমের পতনের পর ম্যাঙ্গালোর বন্দর থেকে যে সকল জাহাজ হস্তগত করে তার একটা তালিকা পাওয়া যায়।

১১২ ফিটের জাহাজ ১ টি, ১১০ ফিটের জাহাজ ৩ টি, ১০৫ ফিটের ২ টি, ১০৪ ফিটের ১ টি, ৯৫ ফিট ৩ টি, ৭০ ফিট ৩ টি, ৬৫ ফিট ১ টি, ৬০ ফিট ১ টি।

অস্ত্র নির্মাণ শিল্প: মহীশূর সেনাবাহিনীতে যদিও দেশি বিদেশী সব ধরনের যুদ্ধাস্ত্রের বিশাল ভান্ডার ছিল; সুলতান সাধারণত দেশে প্রস্তুত যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করতে পছন্দ করতেন। বেঙ্গালুরু, শ্রীরঙ্গপত্তনম, চিত্র দুর্গা ও বেদনূর-এ যুদ্ধাস্ত্র তৈরীর চারটি বিশাল কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যেখানে ফরাসি বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে তরবারি, বন্দুক, তীর, গোলাবারুদ ও ছোট সাইজের কামান তৈরি হত। যেহেতু মহীশুরের তোপের মুখ ইংরেজদের থেকে বড় হত, তাই গোলাবর্ষণের ক্ষেত্রে মহিশুর বাহিনী সবসময়ই শত্রুপক্ষের চেয়ে এগিয়ে থাকত। মহীশুরের তোপের সুখ্যাতি দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল। শুধু তোপখানার সরঞ্জাম বহন করার জন্য ৪০ হাজার গরুর গাড়ি নিয়োজিত ছিল। বেলুড়ের অস্ত্র কারখানায় বছরে ২০ হাজার বন্দুক তৈরি হতো। শ্রীরঙ্গপত্তমের পতনের পর ইংরেজরা যে যুদ্ধ সম্পদ লাভ করে, সেখানে ৬০ হাজার বন্দুক, ১২ হাজার গোলা, ৫ লক্ষ গুলি, ৯২০ টি দোনালা বন্দুক ছাড়াও বারুদ ও অন্যান্য অস্ত্রের বিপুল পরিমাণ মজুদ ছিল। তাঁর শাহাদাতের পর শ্রীরঙ্গপত্তমের কেল্লা থেকে ৯২০ টি তোপ পাওয়া যায়, যার মধ্যে মাত্র ৫১ টি ছিল ইউরোপীয় মডেলের। এর থেকে প্রমাণ হয় তিনি। দেশীয় অস্ত্রের বেশি ব্যবহার করতেন

চারিদিকে শত্রু পরিবেষ্টিত হওয়ায় তিনি বাধ্য হন অস্ত্র নির্মাণে। তবে তা কখনো সাধারণ মানুষের নিকট কষ্টকর ছিল না। একবার তিনি এক নদীর ধারে অস্ত্র তৈরির একটি কারখানা খোলেন। কারখানার বর্জ্যে নদীর মাছের ক্ষতি হলে স্থানীয় মানুষ আপত্তি জানায়। তিনি তৎক্ষণাৎ কারখানা বন্ধ করে দেন।

লৌহ শিল্পে টিপুর উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার হয়েছিল রকেট (টিপুর ভাষায় সুহাব) নির্মাণে। একটি ৮ থেকে ১০ ফুট লম্বা মোটা বাঁশ নিয়ে ভিতরে ৬ থেকে ১২ পাউন্ড ওজনের লোহার আস্তরণ দেওয়া হত। এর একপ্রান্তে থাকত ফিউজ ও বারুদ। আর্দ্র আবহাওয়ায় ভেজা মাটিতে বন্ধ অংশটুকু পুঁতে বারুদে আগুন দিলে তা প্রায় দেড় মাইল দূরে গিয়ে পড়ত। শুকনো মাটিতে ভূমির সমান্তরালে এগুলি রেখে বিভিন্ন দিকে উড়িয়ে শত্রুপক্ষের অশ্বারোহী ও বারুদের গাড়ির প্রভূত ক্ষতি করা হত। টিপু সুলতান মাস্কেট, বন্দুক, কাঁচ ও চিনামাটির যাবতীয় উন্নত প্রযুক্তি জানতে তুরস্ক ও ফ্রান্সে দূত পাঠান। কনস্টান্টিনোপলের ওসমানিয়া খলিফার দরবারে টিপু মহীশুরের নির্মিত রকেটের একটা নমুনা পাঠিয়েছিলেন। বুকানন বলেছেন, এক ফরাসি প্রযুক্তিবিদ জলধারা চালিত একটি মোটর তৈরি করেন, যা কামানের নলের গর্ত তৈরি করতে পারত। ১৭৯২-এ মুর লেখেন, একজোড়া বলদকে কাজে লাগিয়ে একই সঙ্গে ৫০ টি মাস্কেট ও একটি বন্দুকের নলে গর্ত করা হচ্ছে।

রকেট ও মিসাইল: প্রথম রকেট উৎপাদনে চীনের কৃতিত্বের কথা নিডহ্যাম স্বীকার করেছেন। ওই রকেটের কার্যকারিতা বা ধ্বংস ক্ষমতা কতটা তা নিয়ে বিতর্কে না গিয়েও বলা যায়, ব্রিটিশ সেনা কর্নাটকের পাহাড়ি পাকদন্ডী বেয়ে তাদের ভারী মালপত্র, যুদ্ধাস্ত্র বয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় টিপুর রকেট আক্রমণ ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর প্রভূত ক্ষতি সাধন করেছিল। ব্রিটেনের উলউইচ মিউজিয়ামে টিপুর তৈরি একটি রকেট এখনও দেখা যায়। এই রকেটটির নকল মডেল তৈরি করে ওয়াশিংটন ডিসির স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনে রাখা আছে। টিপুর রকেটকে অনেকেই বলছেন প্রথম মিসাইল। কারণ, রকেট দিক নির্ণয় যন্ত্র, খোল, দন্ড সহ নিজেকে বয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু মিসাইল এসবের সঙ্গে কিছু পরিমাণে মারণাস্ত্র বহন করে। টিপুর মিসাইলে বিস্ফোরক ছাড়াও তরবারি যুক্ত থাকত।

উইলিয়াম ডালরিম্পল তাঁর ‘হোয়াইট মুঘলস’ পুরুলিয়া বইয়ের (পৃ. ১৯২) লিখছেন, ‘ সিপাহীদের রাইফেল ও কামান সম্প্রতিক ফরাসি নকশা অনুযায়ী তৈরি হয়েছিল এবং তাদের কামান ( আর্টিলারি) ছিল কোম্পানির সেনাদলের ব্যবহৃত অস্ত্রের চেয়ে প্রযুক্তিগতভাবে প্রগতিশীল। ডালরিম্পলের বই পড়ে মনে হতে পারে ফরাসি সাহায্যের কারণেই টিপু ব্রিটিশদের বেগ দিয়েছিলেন। ফরাসি সাহায্য নিলেও টিপুর অস্ত্রভাণ্ডারে দেশীয় অস্ত্রই বেশি ছিল এবং তা ব্যবহার করতে বেশি পছন্দ করতেন। তবে তিনি উইলিয়াম কংগ্রেভের প্রথম রকেট তৈরির প্রচারটিকে ধুলিসাৎ করে দিয়েছেন। অমিতাভ ঘোষ তাঁর ‘রকেটস অফ দ্য টাইগার টিপু সুলতান’ বইয়ে (পৃ.১৭২-১৭৬) বলেছেন,’অন্তত মিসাইল নির্মাণের ক্ষেত্রে ইউরোপীয়দের তুলনায় প্রকৃতপক্ষে টিপু ছিলেন অগ্রগামী।’ শেষ যুদ্ধে টিপুর পরাজয় সম্বন্ধে ডালরিম্পলের বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়, টিপুর মিসাইল সহ উন্নত অস্ত্রের সামনে পড়ে ব্রিটিশ বাহিনী যখন রণে ভঙ্গ দেওয়ার মুখে তখনই হায়দ্রাবাদের নিজামের বাহিনী এসে ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়ে যৌথ লড়াইয়ের মাধ্যমে টিপুর বাহিনীকে পরাজিত করে। (নিজামের সেনাপতি মীর আলম ছিল, টিপুর প্রধান উজির মীর সাদিকের ভাই। মীর সাদিক ভাইয়ের জন্য বা আরও বৃহত্তর উদ্দেশ্যে টিপুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল।)

টিপুর পতনের কয়েক দশক পর উইলিয়াম কংগ্রেভের তৈরি রকেট নেপোলিয়নের বাহিনীকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল। ফরাসিরা টিপুকে রকেট তৈরিতে প্রযুক্তিগত সাহায্য করে ব্রিটিশদের বিপর্যস্ত করলে কয়েক দশক পর নেপোলিয়ন ব্রিটিশ বাহিনীর কংগ্রেভের ছোঁড়া রকেটে বিপর্যস্ত হল কি করে? বরং উল্টোটাই হওয়া স্বাভাবিক ছিল। সমাধানে আমিতাভ বাবু বলেন, ‘টিপুর পতনের পর তাঁর তৈরি রকেট ইংল্যান্ডের উলউইচের রাজকীয় জাদুঘরে স্থান পেয়েছিল। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ক্যাপ্টেন উইলিয়াম কংগ্রেভ। কংগ্রেভের পুত্র জুনিয়ার উইলিয়াম কংগ্রেভ নিশ্চিত রকেট দুটি নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। প্রচলিত ইতিহাসে উইলিয়াম কংগ্রেভ হয়ে গেলেন রকেটের আবিষ্কর্তা। কিন্তু কৃতিত্ব পাওয়া উচিত ছিল টিপু সুলতানের। কংগ্রেভ সব রকম সরকারি সাহায্য পাওয়া সত্ত্বেও ১৮০৬ পর্যন্ত তাঁর রকেট প্রযুক্তিতে সাফল্য পাননি। কারণ, তিনি টিপুর মতো ইস্পাত নির্মিত বিস্ফোরকের বাক্সের পরিবর্তে কাগজ বা কার্ড বোর্ডের বাক্সর ব্যবহার করেছিলেন। এর মূল কারণ, তৎকালীন ইউরোপে ইস্পাত উৎপাদনেও ভারতের মতো অত উন্নত ছিল না। কংগ্রেভ যখন কোম্পানি খুলে একের পর এক যুদ্ধে জিততে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সাহায্য করছেন তখন দমদমে আরও এক ইংরেজ এর থেকে উন্নত মানের মিসাইল আবিষ্কার করেন। কিন্তু তাঁর আবিষ্কার ঔপনিবেশিক নীতির চাপে পড়ে হারিয়ে যায়। ব্রিটিশ সরকারের চাপে কংগ্রেভ কোম্পানির মিসাইল আমদানিই প্রতিষ্ঠা পায়।

ইতিহাস ও ঐতিহ্য

নির্ভীক শাসকরূপে টিপু সুলতানের অবদানের মূল্যায়ন: টিপুর সমাজভাবনার ক্ষেত্রে সর্ব ধর্মের সন্নিবেশ দেখা যায়। তাঁর ১৬ জনের মন্ত্রিত্বে ৭ জন এবং সেনাপতিদের ১৯ জনের মধ্যে ১০ জন হিন্দু ছিলেন। তিনি বহু মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করেন। এমনকি প্রবল শত্রু কন্নড় খ্রিস্টানদেরও প্রোটেস্ট্যান্ট ইংরেজদের ছলনা ও গুপ্তচরবৃত্তির হাত থেকে রক্ষাকল্পে প্রকৃত ক্যাথলিক খ্রিস্টান রূপে গড়ে তোলার জন্য গোয়ার বিশপকে চিঠি পাঠান।

ক’জন জানেন সর্বপ্রথম আদমশুমারি করেছিলেন টিপু সুলতান। সমস্ত মহীশূর রাজ্যের জনগণনা ভারতবর্ষের মধ্যে প্রথম ছিল। তিনি প্রধান উজির মীর সাদিককে এক পত্রে লিখেন,

মীর সাদিকের নামে ফরমান ৯ জুলাই ১৭৮৬:
নির্দেশ করা হচ্ছে যে পুরো রাজ্যের আদমশুমারি করা হোক। সেখানে অবশ্যই প্রত্যেকের লিঙ্গ ও সম্পত্তির বিবরণ থাকবে। শুমারি সম্পন্ন করার পর তার রিপোর্ট সুলতানের কাছে পৌঁছাতে হবে।
স্বাক্ষর- টিপু সুলতান
মহীশূর রাজ্যের সমস্ত কাজীর কাছে নির্দেশ পাঠানো হয় তারা আদমশুমারির সহায়তা দান করবে। গণনায় পুরুষ, মহিলা, শিশু, বাড়িঘর, স্থাবর সম্পত্তি ও পেশা ইত্যাদির উল্লেখ থাকবে।

বাংলায় প্রথম জনগণনা শুরু হয় ১৮৭১ সালে।

ব্যভিচার ও বহুবিবাহ রোধের জন্য টিপু সুলতান দাসীসহ সকল নারীর যথাযথ খবর নিতেন। এরপর কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে দন্ডনীয় অপরাধ ঘোষণা করতেন। তিনি ফরমান জারি করেছিলেন, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ বজায় রাখতে, বেশ্যাবৃত্তি রোধে ও অভিভাবকহীন নারীদের দেবদাসীরূপে মন্দিরে আশ্রয় রোধে এসকল নারীদের সরকার থেকে যত্ন নিতে হবে। অর্থ সাহায্য ও রান্না করা খাবার খাইয়ে তাদের কিল্লাদার মারফত আদালতে পাঠানো হবে। তিনি আরও এক ফরমানবলে আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য মদ তৈরি ও ব্যবসা নিষিদ্ধ করেন। তামাক ও গাঁজা চাষ নিষিদ্ধ করে তামাকজাত দ্রব্যের ধূমপান, চর্বণ সবকিছুই দন্ডনীয় ঘোষণা করেন। মদ্য প্রস্তুতি রোধে তিনি শুধুমাত্র খেজুর ব্যতীত আঙ্গুরসহ কয়েকটি ফলের চাষ নিষিদ্ধ করে দেন। এই পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কারণে বার্ষিক আয় সে যুগের হিসাবে ১ কোটি রূপি হ্রাস পায়। কিন্তু তারপরও জনগণকে অনিষ্টকর মদের কুফল থেকে রক্ষা করতে ক্ষতি মেনে নিয়েছিলেন। অর্থমন্ত্রী মীর সাদিক এই নিষেধাজ্ঞার ফলে রাজকোষে টান পড়ার কথা তাঁকে জানান। উত্তরে তিনি বলেন এক্ষেত্রে শুধুমাত্র ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা বিচার্য নয়, বরং স্ফীত রাজকোষের চেয়ে নাগরিক ও যুবকদের আর্থিক উন্নতি ও নৈতিকতা রক্ষা করা বেশি বিচার্য হবে। এইসব সরকারি ব্যবস্থা সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য সরকারী কর্মচারীদের নৈতিকতার উপরও জোর দেন তিনি। নিজে ও সরকারি আমলাদের নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থের দোহাই দিয়ে মোট আটটি শপথবাক্য পাঠ করাতেন। জমিদাররা আইন শৃঙ্খলা রক্ষা, কর আদায় এবং দেওয়ানী ব্যবস্থার সর্বেসর্বা ছিলেন। এদের হটিয়ে তিনি বেতনভুক আমিলদার, সেরেস্তাদার ও গোমস্তা নিযুক্ত করেন। টিপু সুলতানের সমাজ ভাবনা তার উন্নত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভাবনা থেকে ভিন্ন ছিল না বরং অনেকটাই ছিল আধুনিক স্তরের এবং কয়েকটি ক্ষেত্রে মৌলিকতার দাবিদার।

উন্নত প্রজাতির ঘোড়ার জন্য ও হান্নিকিরা নামে উন্নত প্রজাতির গরুর জন্য তিনি গবেষণাগার স্থাপন করেছিলেন। গোপালন ও গবেষণার বীক্ষণা গারের নাম ছিল অমৃত মহল। টিপু ছিলেন ভারতীয় শাসকদের মধ্যে সর্বশেষ প্রতিরোধকারী। তিনি ঘরে-বাইরে বিশ্বাসঘাতক ও শত্রু দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রেই যুদ্ধরত অবস্থায় ১৭৯৯ সালের ৪-ঠা মে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ইহলোক ত্যাগের সময় সাধারণ সৈনিকের মত যুদ্ধরত ছিলেন, তেমনই শাসক থাকাকালীনও খাতায়-কলমে বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর মৌলিক গবেষণা, লেখা, অনুবাদ ও সাহিত্য চর্চা করেছিলেন। টিপুর প্রযুক্তি চর্চার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল, তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে প্রাপ্ত এক যান্ত্রিক মানুষের মরণ আর্তনাদ। এক্ষেত্রে দেখা যায় হেক্টর মুনরোর পুত্রের সুন্দরবনের বাঘের হাতে মৃত্যু কল্পনা করে গর্জনরত একটি বাঘ জনৈক ইংরেজ সেনাপতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। যদিও লন্ডনের ভিক্টোরিয়া ও অ্যালবার্ট যাদুঘরে রক্ষিত যন্ত্রটির প্রকৃত গর্জন আর শোনা যায় না।

টিপু ভারতের বুকে এক স্বাধীনতাপ্রিয়, উদ্যমী ও নির্ভীক শাসক রূপে চিরকাল বন্দিত হবেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় শাসক হিসাবে ভারতীয় সামন্ত প্রথার বদ্ধ প্রাচীরে আঘাত করতে পেরেছিলেন। যদিও তার আগে অবশ্য আওরঙ্গজেব মনসবদারি প্রথা তুলে দিয়ে জমিদারি প্রথা শুরু করেছিলেন। টিপু কার্যক্ষেত্রে পলিগারি বা সামন্ত প্রভুদের একচ্ছত্র আধিপত্য ভেঙ্গে দিয়ে জমিদারি প্রথার প্রচলন করেন। পরে এই জমিদারি প্রথাও তুলে দিয়ে সমস্ত জমি সরকারি হিসাবে ঘোষণা করেন এবং কৃষকদের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ স্থাপন করেন। প্রশাসনের অফিসারদের পুরস্কার হিসাবে জায়গীর প্রদান বন্ধ করে দেন। তবুও কিছু জমিদার যাতে দুর্নীতি না করতে ও কৃষকদের উপর অত্যাচার না করতে পারেন তার জন্য আমিলদার নিযুক্ত করেন যার কাজই হল পুরো জেলা চষে সুলতানের কাছে পাঠান। যদি জমিদার দ্বারা দূর্নীতি প্রমাণ হত তবে সুলতান সেই জমিদারের সব ফসল বাজেয়াপ্ত করতেন, ধনী জমির মালিকের জন্য ২০ পাগোড়া ও মধ্যবিত্ত জমির মালিকের জন্য ১০ পাগোড়া জরিমানা ধার্য হত। ধর্মীয় সংস্থাগুলোর হাতে জমে থাকা সম্পদ ভূমি কেড়ে নিয়ে সাধারণের মধ্যে বিলি করেন। এছাড়াও মুদ্রার মাধ্যমে খাজনা প্রদান এবং রাজস্ব আদায়ের সুষ্ঠু পদ্ধতি প্রচলন করে রাজকোষকে স্ফীত করেন। শিল্প-বাণিজ্য অর্থনীতি এবং বাণিজ্যিক পুঁজিবাদী অর্থনীতির প্রচলন করে তিনি সর্বতোভাবে ভারতকে মধ্যযুগ থেকে টেনে বের করে আনার চেষ্টা করেন। তিনি ও তার পিতা শিল্প-বাণিজ্যের উন্নতির জন্য পরিকাঠামো উন্নয়নে নজর দেন। কোচিন স্টেট ম্যানুয়াল বলছে, ‘হায়দার ও টিপুর রাজত্বে রাজ্যের সমস্ত বড় রাস্তাগুলি অতি অল্প সময়ে গড়ে উঠেছিল’।

ঐতিহাসিক সি কে করিম লিখেছেন, “দাক্ষিণাত্যে অষ্টাদশ শতকে টিপু সুলতানকেই সড়ক তৈরির বৃহত্তম কারিগর হিসাবে দেখা হয়।”
কৃষির উন্নতির জন্যে ৩৯ হাজার পুকুর, ১৬ হাজার কুঁয়ো ও ২৪ টি বড় বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। এমনকি কাবেরি নদীর উপর কৃষ্ণসাগর ড্যাম-এর স্থানেই বাঁধ নির্মাণ তাঁর পরিকল্পনায় ছিল। ভিত্তি স্থাপন করার পর শুরু করতে না পারলেও পরে সেই স্থানেই বাঁধ নির্মিত হয়। পতনের কিছুদিন আগে ৭০ ফুট লম্বা একটি বাঁধ নির্মাণে হাত দেওয়া হয়। লিউইস রাইস হিসেব করে দেখেছিলেন, আর্দ্র এলাকায় ৩/৮ ভাগ ও শুখা এলাকায় ৫/৮ ভাগ অর্থাৎ সমস্ত জমির ৩৫ ভাগ সেচের আওতায় আনা হয়েছিল।

টিপু আরও কিছুদিন বেঁচে থাকলে ভারতের প্রকৃত নবজাগরণ আরও ফলপ্রসূ হত। অষ্টাদশ শতকে কোলকাতার বুকে নবজাগরণের কথা বলা হয়। বিধবা বিবাহ প্রচলন, সতীদাহ প্রথা রদ ইত্যাদি সমাজের উচ্চশ্রেণীর মানুষের উপকার করেছিল। নিম্নশ্রেণির হিন্দু-মুসলিমদের ঢেউয়ের মত একের পর এক ব্রিটিশ ও তাঁবেদারদের শোসনের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছিল। এসব থেকে বোঝা যায় প্রকৃত সার্বিক নবজাগরণ (রেনেসাঁ) শুরু হয়েছিল টিপুর হাতেই, যদিও তাঁর অকাল মৃত্যুতে তা স্তিমিত হয়ে পড়ে।

Post Views: 3,176
Tags: Tipu Sultanইতিহাসচেপে রাখা ইতিহাসটিপু সুলতানটিপু সুলতান শহীদব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ইতিহাসভারতবর্ষের ইতিহাসমহীশূরের বাঘস্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস
ADVERTISEMENT

Related Posts

সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনকাল : (১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ)
ভারতবর্ষের ইতিহাস

সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনকাল : (১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ)

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম মুঘল সম্রাট শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে সর্বাধিক শক্তিশালী, বুদ্ধিমান ও রাজনৈতিকভাবে দক্ষ ছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেব। ইতিহাসে...

by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
June 19, 2025
বিদ্যাসাগরের প্রতি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিদ্বেষ ও বিরোধীতা
ভারতবর্ষের ইতিহাস

বিদ্যাসাগরের প্রতি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিদ্বেষ ও বিরোধীতা

একজন বিদ্যার সাগর, আর একজন সাহিত্যের সম্রাট। উভয়েই উনিশ শতকের বিখ্যাত মনীষী ও লেখক এবং পরস্পরের সমকালীন। উনিশ শতকের...

by কামরুজ্জামান
November 13, 2024
মন্দির ধ্বংস এবং ইন্দো-মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ
ভারতবর্ষের ইতিহাস

মন্দির ধ্বংস এবং ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিবৃত্ত

লিখেছেনঃ রিচার্ড এম. ইটন সম্প্রতি, বিশেষ করে ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর, দক্ষিণ এশিয়ার মন্দির এবং মসজিদের রাজনৈতিক...

by অতিথি লেখক
June 19, 2025
প্রকৃতি, নান্দনিক চৈতন্য ও মরমিবাদ: বাংলার আরবি-ফার্সি শিলালিপির আধ্যাত্মিক দিক
ইসলামিক ইতিহাস

প্রকৃতি, নান্দনিক চৈতন্য ও মরমিবাদ: বাংলার আরবি-ফার্সি শিলালিপির আধ্যাত্মিক দিক

চিত্র ৪.১ (শিলালিপি নং): পাণ্ডুয়ার শায়খ নূর কুতব আল আলমের সমাধিফলকে ব্যবহৃত সাতটি আধ্যাত্মিক উপাধি...

by মুহাম্মাদ ইউসুফ সিদ্দিক
November 7, 2024

POPULAR POSTS

  • সুলতান মাহমুদ

    সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান ও সোমনাথ মন্দির প্রসঙ্গ (১ম পর্ব)

    181 shares
    Share 181 Tweet 0
  • বাউরী সম্প্রদায়ের উৎপত্তির ইতিহাস ও ঐতিহাসিক পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • আর্যদের ভারত আগমন, বিস্তার, সমাজ ও সভ্যতা: এক ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে বৌদি কাদম্বরী দেবীর সম্পর্ক আদৌ কি প্রেমের ছিল?

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • হিন্দু পদবীর উৎপত্তির ইতিহাস, বিবর্তন ও ক্রমবিকাশঃ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

Facebook Page

নবজাগরণ

ADVERTISEMENT
নবজাগরণ

'Nobojagaran' is a website of its kind where you can gather knowledge on all the unknown facts of the world. We human beings always have a thirst for knowledge. Nobojagaran takes its first steps to quench this thirst of ours. We are now in the era of digital world, where we get almost anything online. So how about a bit of knowlyfrom online?

Connect With Us

No Result
View All Result

Categories

  • English (9)
  • অন্যান্য (11)
  • ইসলাম (27)
  • ইসলামিক ইতিহাস (23)
  • ইহুদী (2)
  • কবিতা (37)
  • খ্রিস্টান (6)
  • ছোটগল্প (6)
  • নাস্তিকতা (18)
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (24)
  • বিশ্ব ইতিহাস (24)
  • ভারতবর্ষের ইতিহাস (195)
  • রাজনীতি (38)
  • সাহিত্য আলোচনা (68)
  • সিনেমা (17)
  • হিন্দু (16)

Pages

  • Cart
  • Checkout
  • Checkout
    • Confirmation
    • Order History
    • Receipt
    • Transaction Failed
  • Contact
  • Donation to Nobojagaran
  • Homepage
  • Order Confirmation
  • Order Failed
  • Privacy Policy
  • Purchases
  • Services
  • লেখা পাঠানোর নিয়ম
  • হোম
No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi

©Nobojagaran 2020 | Designed & Developed with ❤️ by Adozeal

Login to your account below

Forgotten Password?

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In
Don't have an account yet? Register Now
1
Powered by Joinchat
Hi, how can I help you?
Open chat
wpDiscuz
0
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
| Reply