• মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
Friday, August 22, 2025
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ - জ্ঞান অর্জনের বিস্বস্থ সংস্থা
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ - জ্ঞান অর্জনের বিস্বস্থ সংস্থা
No Result
View All Result

ছিয়াত্তর-এর মন্বন্তর ও বাংলার জমিদারগণঃ ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ

চৌধুরী আতিকুর রহমান by চৌধুরী আতিকুর রহমান
January 5, 2021
in ভারতবর্ষের ইতিহাস
0
ছিয়াত্তর-এর মন্বন্তর

চিত্রঃ ছিয়াত্তর-এর মন্বন্তর, Image Source: itibritto

Share on FacebookShare on Twitter

পলাশি প্রহসনের কুশীলবদের কি হয়েছিল? সকলেই বলবেন, সব অপঘাতে মারা গিয়েছিল। মীরজাফরের কুষ্ঠ, মীরনের বজ্রাঘাতে, জগৎ শেঠ, রাজবল্লভদের গঙ্গায় ডুবে, নন্দকুমারের ফাঁসি কাষ্ঠে, ক্লাইভের আত্মহননে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু নবাবি আমলের ১৯ জন জমিদার যাদের অধিকাংশ ইংরেজদের পক্ষ নিয়েছিল তাদের কি হয়েছিল? মন্বন্তর এর সময় রাজস্ব আদায়ের বহর ছিল নজরকাড়া। রাজস্ব আদায়ে রাজ কর্মচারীরা কিছুমাত্র গাফিলতি দেখায়নি। নবাব আলীবর্দী খাঁর আমলে পুর্নিয়া জেলায় রাজস্ব আদায় হতো বার্ষিক ৪ লক্ষ টাকা ১৭৬৯-এ তা বেড়ে হয় ২৫ লক্ষ টাকা। নাজিমদের (রেজা খাঁ, সিতাব রায়) রাজস্ব আদায়ে অনেক বেশি মনোযোগ বেড়ে যায়। অবশ্য ততদিনে ইংরেজদের কাছে নায়েব নাজিমদের প্রয়োজন ফুরিয়ে আসছিল। ক্লাইভ প্রণীত দ্বৈতশাসনে চতুর ইংরেজগণের প্রশাসনিক কোনও দায়িত্ব ছিল না। যদিও তাদের হাতেই ছিল প্রশাসন। হান্টার সাহেব ক্লাইভের উদ্ধৃতি দিয়ে এই প্রথাকে মুখোশ বলায় খুব সহজে বোঝা যায় যে, ব্রিটিশ সচেতনভাবেই সামনে সিতাব রায় ও রেজা খাঁ-র মত ভারতীয় মুখ রেখে দিয়েছিল। যথারীতি এরপর খোঁজা হতে লাগল বলির পাঁঠা। এ ক্ষেত্রে যে দুজন সবথেকে সহজ শিকার ছিল, তাদের পদচ্যুত করে বিচারালয়ের সামনে হাজির করা হলো। সিতাব রায় সহজেই ছাড়া পেয়ে গেলেন। আর সহজতম শিকারটিকে (রেজা খাঁ) আপ্রাণ চেষ্টা করা হল শাস্তি দেওয়ার। তিনিও অবশেষে ছাড়া পেয়ে গেলেন।

ছিয়াত্তরের মন্বন্তর
চিত্রঃ ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের দৃশ্য, Image Source: kalerkantho

ইতিহাস কিন্তু আসল অপর অপরাধীদের চিনে ফেলেছে এবং ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি রোধে সবরকম বাধাদানে প্রস্তুত। রাজস্ব আদায়ের রেসিডেন্ট ‘বোর্ড অফ ডিরেক্টরী’তে চিঠি পাঠিয়ে বলল, নাজিমরা জমিদার ও কৃষকদের কাছ থেকে যত বেশি পারে অর্থ আদায় করে নিচ্ছে। জমিদাররাও নাজিমদের থেকে নিচের স্তরের মানুষদের অবাধ লুন্ঠনের অধিকার লাভ করেছে। নাজিমরা তাদের সকলের সর্বস্ব কেড়ে নেওয়ায় রাজকীয় বিশেষ অধিকার সংরক্ষিত রেখেছে এবং তারই মারফত দেশের ধন সম্পদ অবাধে লুন্ঠন করে বিপুল ঐশ্বর্যের অধিকারী হয়েছে। (চিঠির তারিখ ০৩.১১.১৭৭২ “ভারতের কৃষক বিদ্রোহ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম’- সুপ্রকাশ রায়।) এসব হওয়ার মূল কারণ হলো ইংরেজ কর্তৃক উপর থেকে নিচে যতদূর সম্ভব যত বেশি কর আদায় করা যায় সে রকম ব্যবস্থা পাকা করা। সাধারণ মানুষ এই ব্যাবস্থাপনার বলি হয়েছিল।

পুরাতন অভিজাত পরিবারগুলিও বাদ যায়নি। এই পরিবারগুলির অধিকাংশই পলাশী ষড়যন্ত্রে ইংরেজদের পক্ষাবলম্বন করেছিলেন। হান্টার সাহেবের হিসেব মতে, রাজস্বের টাকায় প্রজা পালনে ৬০০০ টাকা ব্যয় হলেও ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিল দাদন প্রথায় বাংলার শিল্পিদের দিয়ে বস্ত্র ও অন্যান্য বস্তু উৎপাদন করে ইউরোপে পাঠিয়ে কোম্পানির মুনাফা লাভে। আাদায়কৃত রাজস্ব দিয়ে প্রজা পালনের পরিবর্তে কোম্পানির নিজস্ব ব্যবসায় তার প্রায় ৬০ ভাগ ব্যবহার হয়। এতে বাংলার যাবতীয় পরিকাঠামো ভেঙ্গে চুরমার করে দেয় আর এর ফল হলো অভূতপূর্ব দুর্ভিক্ষ।

এরকম দুর্ভিক্ষ বাংলা না আগে দেখেছিল না পরবর্তীতে হয়েছে। বহু গ্রাম কৃষিজমি সহ গ্রামবাসীরা স্রেফ উধাও হয়ে গিয়ে এলাকা জঙ্গলে পরিণত হল। এসবই আপাত দৃষ্টিতে ছিল মন্বন্তরের তাৎক্ষণিক ফলাফল।

এবার হান্টার সাহেবের বর্ণনা থেকে সুদূরপ্রসারী ফলাফল তুলে ধরা যাক। ‘১৭৭১ সাল শুরু হওয়ার আগেই কৃষকদের ১/৩ ভাগ পৃথিবী থেকে ধুয়ে মুছে গেল। আর একদা ধনী পরিবার গুলির একটা অংশ দরিদ্র হয়ে গেল। প্রতিটি জেলাতে একই দৃশ্য। রাজস্ব আদায়কারী বড় চাষীর দল ছিল এক সচ্ছল অংশ। সাধারণের চোখে তারা ছিল সরকারের সাক্ষাৎ প্রতিভূ। রাজস্ব আদায় করতে না পারায় তাদের ক্ষমতা হারিয়ে হাজতে গেল। তাদের পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদনের অবলম্বন একমাত্র ভূমিখণ্ড পুনরায় নিলাম করা হলো। বাংলার প্রাচীন পরিবারগুলি যারা মুঘলদের সময় প্রায় স্বাধীন ছিল এবং ব্রিটিশ সরকার পরবর্তীতে যাদের ভূমির প্রকৃত মালিক বলে স্বীকৃতি দেয় তারা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলো। মন্বন্তর গ্রাস করেছিল অখন্ড বাংলার পশ্চিমাংশকে বেশি। বর্ধমান, বীরভূম, বিষ্ণুপুর, নদীয়া, পুর্ণিয়ার অর্ধেক মানুষ মারা গিয়েছিল। পুরো বাংলা ধরলে এক তৃতীয়াংশ মানুষ মারা গিয়েছিল। ফল হয়েছিল রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়নি। এরপর একে একে জমিদার পরিবারগুলি ইংরেজ কোম্পানিকে তাদের খাক মেটানোর জন্যে জমিদারিত্ব বিসর্জন দিতে হয়েছিল। মনে রাখতে হবে মুঘল সিস্টেমে এরা ছিল খাজনা আদায়কারী জমির মালিক নয়। জমির প্রকৃত মালিক ছিল কৃষকেরা। তারাই নেই তো আদায়কারীও থাকতে পারে না। তাই হয়েছিল। এদের যা হয়েছিল, হয়েছিল। হান্টার সাহেব তাঁর ‘দ্য অ্যানালস অফ রুরাল বেঙ্গল’ বইয়ে বলেছেন, বাংলার পুরনো অভিজাত বংশীয়দের ২/৩ অংশই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় (পৃ.-৪০)। কিন্তু ইংরেজরা ১ শালা, ৫ শালা, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে পুরনো মুঘল সিস্টেমটাকেই বরবাদ করে দিয়ে জমিদারদের জমির মালিক করে দেয়। কৃষকেরা হয়ে যায় ভূমি শ্রমিক।

১৭৭০ থেকেই বাংলার পুরনো অভিজাত পরিবার গুলি ধ্বংস কার্য শুরু হয়। নদীয়ার রাজা একজন শক্তিধর অভিজাত। কৃষ্ণনগরের মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়কে বলা হয় পলাশি প্রহসনের নেপথ্যে থাকা মূল ষড়যন্ত্রকারী। তিনিই সমস্ত ষড়যন্ত্রকারীদের একত্রিত করেছিলেন। প্রহসনের পর ক্লাইভ তাঁর আতিথ্য গ্রহণ করে এবং প্রচুর উপহারসামগ্রী ও বাজনা-বাদ্য সহ কোলকাতায় ফেরে। দূর্ভিক্ষের পর দারিদ্র ও অসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকলেও, ইংরেজরাঁ তার কার্যকলাপে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ ছিল। খাজনা অনাদায়ে লোকটি অবসর গ্রহণ করে অন্যমতে তাঁর জমিদারি ছিনতাই করা হয়। তাঁকে রাজ্যপাট দিতে হয় তার পুত্র কুসুম চন্দ্রকে। লোকটি কোম্পানির ব্যবহারে হতাশায় একপ্রকার বন্দী হিসাবে মারা যায়।
বর্ধমান ছিল রাজস্ব আদায়ের কেন্দ্র। বর্ধমানের মহারাজ, যাঁর এলাকা সর্বপ্রথম বিপদে পড়ে এবং যিনি শেষ পর্যন্ত শুধু দিয়েই গিয়েছিলেন, মন্বন্তর এর শেষের দিকে নিঃস্ব, কপর্দকশূন্য হয়ে মারা যান। পিছনে রেখে গেলেন এমন একটি শূন্যগর্ভ খাজাঞ্চিখানা যে তাঁর বংশধরদের গৃহের মূল্যবান বাসনপত্র গলিয়ে তা থেকে রাজস্ব দিতে হল এবং যখন সেগুলিও শেষ হয়ে গেল তখন কোম্পানি সরকারের কাছে ধার নিয়ে বাবার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হল। ১৬ বছর পর আমরা দেখলাম সরকারের সন্তোষ বিধান করতে না পেরে তাঁর নিজের প্রসাদেই নজরবন্দি। এই দুই মহারাজের প্রতি কোম্পানি সরকার সদয় ছিল। কারণ, তারা রাজ্যপাট পাওয়ার ক্ষেত্রে এদের সর্বাধিক সাহায্য পেয়েছিল। জমিদারীর সামান্য অংশও হারাতে হয়নি।
রাজশাহীর মহারাণী, বীরভূমের খাঁ রাজাদের বা বিষ্ণুপুরের মহারাজার সে সৌভাগ্য হয়নি। বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের রাজত্ব বিস্তৃত ছিল বর্তমান বাঁকুড়া জেলা, পশ্চিম বর্ধমান ও বীরভূমের কিয়দংশ নিয়ে। অর্থাৎ অজয়, দামোদর, কাংসাবতী, সুবর্ণরেখা অববাহিকা ও জঙ্গলমহল ছিল তাদের রাজত্বের অংশ। এখনও মল্লরাজাদের কীর্তি বিশাল বিশাল মন্দিরগুলি পশ্চিম বর্ধমানে বিদ্যমান। নবাবদের প্রতি অনুগত মল্লরাজারা বর্গি আক্রমণ কৃতিত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করেন। মন্বন্তর এর পর কোম্পানি সরকার রাজস্ব অনাদায়ে রাজাকে কারাবন্দি করেন এবং সেখানেই মারা যান। ‘অ্যানালস অফ রুরাল বেঙ্গল’ অ্যপেনডিক্সে পন্ডিত ক্রনিকল উল্লেখ করে বলছে, ১৭৭০-এর মন্বন্তর মল্লদের রাজ্য প্রজাশূণ্য করে দেয়। ইংরেজরা রাজাপুত্রদের জমির দালাল ছাড়া কিছু মনে করেনি। আনন্দের সঙ্গে তাদের ধ্বংসকার্য সম্পন্ন করে। বিষ্ণুপুর রাজ বেশ কিছুদিন ক্লান্তিকর বলপ্রয়োগ সহ্য করার পর মৃত্যুকালে বন্দীদশা মুক্ত হন। এমনকি বিগ্রহ মদনমোহনজি-কে কোলকাতার গোকুলচন্দ্র মিত্রর কাছে বন্ধক রাখতে বাধ্য হন। পরে বহু কষ্টে জোগাড় করা টাকা গোকুল নিয়েও বিগ্রহ ছাড়তে রাজি না হওয়ায় মামলা সুপ্রিম কোর্ট (তখন কোলকাতায়) পর্যন্ত গড়ায়। পরে কোর্ট রায় দেয় হুবহু নকল একটা মূর্তি গড়ে রাজাকে দেওয়া হোক।
রাজশাহির মহারানী বনোয়ারী প্রজাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন, ছিলেন তুখোড় বুদ্ধিমতী। তিনি তাঁর জেলার নিয়ন্ত্রণ শক্ত হাতেই ধরে রেখেছিলেন। কিন্তু শীঘ্রই রাজস্ব আদায় করতে না পারায় এবং কোম্পানির চাহিদা মেটাতে না পারায়, তাঁকে সন্ত্রস্ত করা হলো। ভীতি প্রদর্শন করা হলো তাঁর জমিদারী কেড়ে নেওয়া হবে, জমি নিলামে চড়ানো হবে, সমস্ত সরকারি ভাতা ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
৪-ঠা ফেব্রুয়ারী ১৭৭১ দিনাজপুরের রাজা বৈজনাথ জানালেন; তাঁর জমিদারীর বিস্তীর্ণ অংশ জনশূণ্য হয়ে গেছে, বহু গ্রাম পরিত্যক্ত, বীজ ধান ও কৃষিকার্যের অভাবে জমিগুলিও পরিত্যক্ত। তবুও দাবিমত ১৩ লক্ষ ৭০ হাজার ৯৩২ টাকার পরিবর্তে ১২ লক্ষ টাকা সংগ্রহীত হয়েছে। তবুও রাজাকে বলা হলো, তিনি যদি মন দিয়ে রাজস্ব আদায় না করেন তবে তাঁর জমিদারিত্ব কেড়ে নেওয়া হবে এবং তাঁকে অনাদায়ী হিসাবে গণ্য করা হবে।
বীরভূমের রাজনগরে খাঁ রাজাদের যাত্রা শুরু হয় ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে দিওয়ান রহমত খান বাহাদুর থেকে। যদিও তাঁদের আগে আসাদুল্লাহ খান ও জুনায়েদ খান এই দুজনের নাম পাওয়া যায়। ১৭৫৬-য় সিরাজদৌল্লাহর কলকাতা বিজয়ের সময় এই বংশের আলি নকী খান নবাবের সঙ্গী ছিলেন। বর্তমান কোলকাতার উচ্চবিত্ত এলাকা আলিপুর এর নাম এই আলি নকি খানের নামের সঙ্গে যুক্ত। মীরজাফরের সময় মিরন অত্যাচার শুর করলে এই বংশের আসাদুজ্জামান খান মুর্শিদাবাদ অভিমুখে সৈন্যদল নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। মিরন বজ্রাঘাতে মারা যায়। শোকার্ত নবাবের সৈন্যদল আসাদুজ্জামানকে আটকাতে পারেনি। অবশেষে মীরজাফরের স্ত্রী মনি বেগম ইংরেজদের ডাকে। ইংরেজরা আসাদুজ্জামানকে পরাজিত করতে সক্ষম হয় এবং নবাব দরবারে কর দিতে বাধ্য করে। স্বাধীনচেতা আসাদুজ্জামান খান এরপরও কোম্পানি রাজত্ব মেনে নিতে পারেননি। মীর কাসেমকে সঙ্গ দিয়ে একের পর এক যুদ্ধে ইংরেজদের বিরোধিতা করেন। মীর কাসিম পরাজিত হয়ে পলায়ন করলেও ১৭৬৫ সাল পর্যন্ত আসাদুজ্জামান খান কোম্পানি বাহিনীকে বেগ দিতে থাকেন। হেতমপুরের যুদ্ধে পরাজয়ের পর কোম্পানি পক্ষ তাঁর বহু অধিকার কেড়ে নেয়, বীরভূমের রাজধানী রাজনগর থেকে সিউড়ি চলে যায়। এরপর ধীরে ধীরে জমিদারের বেশিরভাগ অংশই হেতমপুরের রাজা নিলামে কিনে নেয়। হেতমপুর রাজার পূর্বপুরুষ আসাদুজ্জামানের পূর্বপুরুষ রনমস্ত খানের দরবারে চাকরি করতেন। একমাত্র মুসলিম জমিদার তথা বীরভূম রাজ আসাদুজ্জামান খাঁ বন্দী হওয়ার আগে প্রথম বছর অল্পের জন্যে রক্ষা পেলেন। আসাদুজ্জামান খাঁ-র পর থেকে বীরভূম রাজাদের বৈভব কমতে থাকে। মোহাম্মদ জামান খানের সময় থেকে দিওয়ান লালা রামনাথ ও ব্রিটিশ রেসিডেন্ট মি. কিটিং বীরভূমের স্টেট দেখাশোনা করতে থাকে। রামনাথের সময়ই বীরভূমে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রয়োগ করা হয় এবং তিনি বিশাল এলাকা জায়গীর হিসাবে পান। এরইমধ্যে তাঁদের দেওয়ান পুরন্দরপুরবাসী রাধাকৃষ্ণ রায়কে ১৪০০ বিঘা জমি জায়গীর দেন। দি ইন্ডিয়ান মুসলমানস বইয়ে হান্টার সাহেব বাংলার অভিজাত মুসলিমদের পতনের উদাহরণ হিসাবে রাজনগরের খাঁ রাজাদের পতন উল্লেখ করেছেন। ‘যদি কেহ উদাহরণ দাবি করে, তাহলে আমি নগরের রাজাদের কথা উল্লেখ করব। ইংরেজরা যখন প্রথম তাদের সংস্পর্শে আসে তখন ২০০ বছরের অবিমৃষ্যকারিতা ও অমিতব্যয়িতার পরেও- তাদের বার্ষিক রাজস্ব আদায় ছিল ৫০ হাজার পাউন্ড (সাড়ে সাত লাখ টাকা)। অসংখ্য থামঘেরা রাজপ্রাসাদের বারান্দার মধ্য দিয়ে আজ তাদের রাজা উঁকি মেরে চেয়ে দেখেন, তাদের রাজ্যটি ভেঙে দুটো ইংরেজি জেলা করা হয়েছে। তাঁদের মসজিদ ও অসংখ্য ছোট ছোট গ্রীষ্মকালীন প্রমোদভবনগুলি একটা কৃত্রিম হ্রদের চারপাশে ঝকমক করত এবং হ্রদের বুকে প্রতিবিম্ব ফেলত, সে হ্রদে একটা শৈবালেরও নিশানা ছিল না। একটি সোনালী সাম্পান অন্দরের সোপান শ্রেণী থেকে বের হয়ে গর্বভরে পানি কেটে কেটে হ্রদের মাঝখানে একটা ফুল বাগিচায় ঢাকা দ্বীপে আসা যাওয়া করত; সূর্য যখন অস্ত যেত, সৈনিকেরা দুর্গে পাহারা দেওয়া থেকে রেহাই পেত, শিশুদের কলধ্বনি ও তরুণীদের বীণার ঝংকার রাজকুমারীদের বাগিচার দেওয়ালের ওপার থেকে মুহুর্মুহু শোনা যেত। আজ সে দুর্গের বিরাট দরবাজা ছাড়া আর কিছু নেই। ছাদবিহীন মসজিদের দেওয়ালগুলি থেকে চুনবালির নকশা-কাজ অনেক আগে খসে পড়ে গেছে, নহর ভরা বড় বড় বাগিচাগুলি আজ হয় জঙ্গলে পরিপূর্ণ হয়েছে, না হয় ধানক্ষেতে পরিণত হয়েছে। তাঁদের মাছভরা দিঘীগুলি আজ বিশ্রী দুর্গন্ধময় ডোবা হয়ে গেছে। সেই গ্রীষ্মকালীন প্রমোদভবন গুলি আজ ইট-সুরকির স্তুপে পরিনত। এখানে সেখানে এক-আধখানা দেওয়াল দাঁড়িয়ে আছে এবং তাঁদের খিলান করা মুরীয় ঢঙে বানানো জানালাগুলি যেন বিষাদ ভরে চেয়ে আছে। কিন্তু পুরনো শাহী হ্রদটার দৃশ্যই সবচেয়ে শোকাবহ। রাজপ্রাসাদটা তার তীরে দাঁড়িয়ে আছে। আজ আর তার সাবেক কালের থাম ঘেরা মনোরম দৃশ্য নেই। এটা যেন একটা কয়েদখানা। তার রোদ-বৃষ্টি খাওয়া দেওয়ালগুলির চেহারা নিচের সবুজ রঙের গাঁজলা মতো পানির বিকৃত চেহারার সঙ্গে চমৎকার মিশে গেছে। বারান্দা গুলি ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়েছে। হতভাগিনী মহিলারাও- যাঁরা আজও গালভরা ‘রানী’ উপাধি ধারণ করেন- আর বৈকালে ঘেরাটোপ দেওয়া সাম্পানে চড়ে বিহারে বের হয়না। তাঁদের বিলাসবহুল অন্দরমহলে আর ছাদ নেই। রাজবাড়ীর হতভাগা বাসিন্দাদের এখন তাদেরই ভাঙ্গা আস্তাবলের সামনে কুঁড়েঘরে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

…. যে দেশের মানুষ সম্পূর্ণ কৃষির উপর নির্ভরশীল, সেখানকার জনসংখ্যা কমার সঙ্গে সঙ্গে অনাবাদী জমির পরিমাণ বেড়ে যায়। বাংলার এক তৃতীয়াংশ মানুষ হারিয়ে যাওয়ায় এক-তৃতীয়াংশ জমি দ্রুত জঙ্গলে পরিণত হয়েছিল। যখনই প্রদেশটি সাধারণভাবে উৎপীড়নের ফলে ঠিকা শ্রমিকের অভাবে ভুগছে, তখনই কোম্পানির ইংল্যান্ডের আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় অর্থের চাপ বেড়েই চলছিল। এমন অবস্থা হয়েছে কাউন্সিল পার্শ্ববর্তী দেশীয় রাজ্যের মানুষকে বাংলায় আসতে প্রলোভিত করতো। ১৭৭৬ নাগাদ চাপিয়ে দেওয়া নীতি এমন জায়গায় পৌঁছাল যে, আগে যেখানে কৃষক ছিল বেশি ও জমি ছিল কম, সেখানে নবাগতরা দেখল জমি প্রচুর কিন্তু ব্যবহারকারী কৃষক কম। দুর্ভিক্ষের ছয় বছর পর স্থানীয় ও বহিরাগত কৃষকদের মধ্যে নির্দিষ্ট সীমারেখা তৈরী হয়ে গিয়েছিল এবং বহিরাগত রায়তেরা গ্রামবাংলার উল্লেখযোগ্য সদস্য হয়ে দাঁড়ায়। দুর্ভিক্ষের পর প্রথম ১৫ বছর জনহীনতা দ্রুত বেড়ে গেল। দুর্ভিক্ষে খাদ্যাভাবের প্রভাব শিশুদের উপর বেশি পড়ে এবং ১৭৮৫-তে বয়স্করা মারা যাওয়ার পর তাদের জায়গা নেওয়ার জন্য কোন বংশধর পাওয়া গেল না। এই ধরনের সাধারণ বিষয় ছাড়াও জমির মালিকদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর লড়াই শুরু হয়ে গেল। তাঁদের জমির এক-তৃতীয়াংশ অনাবাদি পড়ে থাকায় প্রতিবেশী কৃষককে কৃষিজমি কম ঠিকা মূল্যে চাষের অঙ্গীকার ও আইনি ঝামেলা থেকে বাঁচানোর অঙ্গীকার করে প্রলুব্ধ করা হতে লাগল। জমির মালিকরা আরো বেশি দরিদ্র হয়ে পড়ায় নিলাম ডাকতে লাগল এবং বহিরাগত কৃষকদের অর্ধেক মূল্যে কৃষিতে নিযুক্ত করতে লাগল। স্থানীয় কৃষকেরা এই প্রতিযোগিতায় পেরে না উঠে কৃষিকার্য এবং জমিও ছেড়ে দিল। পার্লামেন্টের সদস্যরা ১৭৮৩ নাগাদ অনাবাদী জমির কথা জানতে পেরেছিল। কিন্তু কারণ খুঁজে না পেয়ে কমিশন বসাল। পার্লামেন্ট একটি প্রদেশকে পুনরায় জনবহুল করতে পারেনা, ফলে কৃষিজমি কৃষি ছাড়াই পড়ে থাকল। ১৭৮৯ সালের ১৮-ই সেপ্টেম্বর ৩ বছর ধরে খোঁজ খবর নেওয়ার পর লর্ড কর্নওয়ালিস রিপোর্ট দিলেন বাংলার এক-তৃতীয়াংশ কৃষিজমি জঙ্গলে রূপান্তরিত হয়েছে এবং জঙ্গলে শুধুমাত্র জন্তুরা বাস করে।

হান্টারের দৃষ্টিতে ছিয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ ও আনন্দমঠ প্রসঙ্গ: উইলিয়াম উইলসন হান্টার সাহেব ব্রিটিশ সরকারের অধীনে চাকরি নিয়ে ভারতে আসেন। তিনি ছিলেন স্কটিশ। নানান সরকারি নথিপত্র ঘেঁটে ‘দ্য অ্যানালস অফ রুরাল বেঙ্গল’ নামে একটি পুস্তক লেখেন। এই পুস্তকে বেনিয়া কোম্পানির মানদন্ডটি পলাশীর যুদ্ধের পর কেমন করে ধীরে ধীরে রাজদণ্ডের আকার নিচ্ছিল তা অবশ্য তিনি উল্লেখ করেননি। তিনি প্রায় প্রতিটি জায়গায় লিখেছেন, দুর্ভিক্ষের সময় শাসন ক্ষমতাটি ছিল মুসলিমদের হাতে। এ ছাড়া শাসন পরিচালনার কালো হাতটি হয়তো তিনি লক্ষ্য করেননি অথবা সযত্নে এড়িয়ে গেছেন। মনে করা হয় তাঁর এই পুস্তক পাঠেই অনুপ্রাণিত হয়ে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আনন্দমঠ উপন্যাস রচনা করেন। সাহিত্য সম্রাটের তথ্য সংগ্রহের উৎস পুস্তকে দুর্ভিক্ষের ও পরবর্তী বিপর্যয়ের যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা আনন্দমঠ রচনাকালে সঠিক চিত্রিত হয়নি। দুর্ভিক্ষে এক-তৃতীয়াংশ মানুষের মৃত্যু হওয়ায় এক-তৃতীয়াংশ জমি দ্রুত জঙ্গলে পরিণত হয়েছিল। এই জঙ্গলের বর্ণনাকালে হান্টার সাহেব বারবার ‘মুসলিম মিসরুল’-এর কথা বলে জঙ্গল সৃষ্টির দায় মুসলিম শাসকদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের ধোয়া তুলসীপাতা প্রমাণ করতে চেয়েছেন। হান্টার সাহেবের লেখায় জানা যায়, মীরজাফরের সময়ই ক্লাইভের ব্যবস্থাপনায় নবাবের বাহিনীর যে ৭০ হাজার জওয়ানকে বরখাস্ত করা হয়েছিল,পদচ্যুত সেই সৈন্যদল যত্রতত্র ঘুরে ফিরে বেড়াত। যেখানে যত ব্যাপক লুটপাট করত। এরা প্রায়ই কোম্পানির পোশাক পরে গ্রামে সাধারণ গৃহস্থের কাছ থেকে ব্যাপক তোলা আদায় করত। এরা নিজেদের গৃহহীন বলত ভক্তের দল এবং ৫০ হাজার লোকের দল নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরত। কাউন্সিল ১৭৭৩-এ লিখল,

‘আইন অমান্যকারী একদল ডাকাত’ যারা সন্ন্যাসী বা ফকির নামে পরিচিত ছিল, এরা এই দেশটিতে বহু পূর্ব থেকেই ছিল এবং ধর্মীয় তীর্থ করার ভান করত। প্রধান এলাকাগুলিতে ঘুরে বেড়াতো; এবং যেখানে যেত ব্যাপক লুটতরাজ চালাত যা এদের অভ্যাসকে সর্বাপেক্ষা অধিক প্রকাশ করত। দুর্ভিক্ষের পর বছর গড়ালে দের সংখ্যা স্ফীত করল ক্ষুধার্ত মানুষের দল, যাদের না ছিল বপনের বীজ, না ছিল চাষ শুরুর ব্যবস্থা। ১৭৭২-এর শীতল আবহাওয়া বঙ্গে এদের টেনে আনলো। ৫০ হাজার মানুষ গৃহদাহ, ধ্বংসকার্য ও ব্যাপক লুটতরাজ শুরু করল। কালেক্টররা সেনা বাহিনীকে ডাকলেও প্রাথমিক বিজয়লাভের পর সম্পূর্ণ পরাজিত হল এবং ক্যাপ্টেন টমাস (সেনাপতি) তাঁর সমস্ত বাহিনী নিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন। শীত শেষের মুখে, কাউন্সিল কোর্ট অফ ডিরেক্টরের কাছে রিপোর্ট দিতে পারলো যে, একজন দক্ষ কমান্ডারের নেতৃত্বে সাফল্যের সঙ্গে তাদের পরাস্ত করা গিয়েছে। কিন্তু এক মাসের মধ্যেই দেখা গেল এই রিপোর্টটি ছিল অপরিণত। ১৭৭৩-এর ৩১-শে মার্চ ওয়ারেন হেস্টিংস সরাসরি অনুমোদন করলেন যে, ‘টমাসের পর যে কমান্ডারকে নিযুক্ত করা হয়েছিল অ-সুখকরভাবে তাঁর ভাগ্যেরও একই পরিণতি হয়েছে’। চার ব্যাটেলিয়ান সৈন্য লুণ্ঠনকারীদের বিরুদ্ধে নিযুক্ত ছিল, এবং জমির মালিকদের উপর থেকেও পিটুনি কর তুলে নেওয়া হয়েছিল কিন্তু যৌথবাহিনীও কোন ফল দিল না। কোনওরকম রেভিনিউ আদায় করা গেল না এবং গ্রামের বাসিন্দারাও লুণ্ঠনকারীদের সঙ্গে সর্বতোভাবে একাত্ম বোধ করেছিল। সমস্ত পল্লী এলাকার শাসনব্যবস্থা বিকল হয়ে গেল।( দি অ্যানালস অফ রুরাল বেঙ্গল, পৃ. ৪৯-৫০) মীরজাফরের সময়ই ক্লাইভের ব্যবস্থাপনায় নবাবের বাহিনীর ৭০ হাজার জওয়ানকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। হান্টার সাহেব তাঁর বর্ণনায় এঁদের পদচ্যুত ও তোলাবাজ বললেও এঁরা এবং পরবর্তীতে যোগ দেওয়া দুর্ভিক্ষের বুভুক্ষুর দল ( দুর্ভিক্ষ ও পরবর্তী বুভুক্ষু সৃষ্টির জন্যও ব্রিটিশ দায়ী) পলাশি অপেক্ষাও বেশি বাধা দান করেছিল এবং ব্রিটিশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিসহ দীর্ঘদিন লড়াই করেছিল। হান্টার যতই ইংরেজ প্রশাসনকে আড়াল করুন, তথাকথিত ৫০ হাজার চালচুলোহীন ফকির-সন্ন্যাসীর সঙ্গ দিয়ে গৃহী গ্রামবাসীরাও ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়েছিল। এটি সম্ভব হয়েছিল নিদারুণ অত্যাচার থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য। বাংলার বুকে ১৭৬৯ নাগাদ সুপারভাইজার রূপে কয়েকজনকে বসানো হয়েছিল- পূর্ণিয়ার মিস্টার ডুকারেল, বীরভূমে মিস্টার হিগিনসন, রাজশাহীর মিস্টার ক্লজ, মুর্শিদাবাদের মিস্টার রিড ইত্যাদি। এঁদের কাজই ছিল রাজস্ব আদায় ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখা। এর জন্য সংশ্লিষ্ট রাজস্ব আদায়কারী সাধারণ দেশীয় জমিদারবর্গ কতটা নিষ্ঠুর ব্যবস্থাপত্র নিচ্ছেন তা দেখা এঁদের কাজ ছিল না। এঁরা এবং এঁদের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ক্রমাগত বর্ধিত হারে রাজস্ব আদায় ও সেই রাজস্ব যথাসম্ভব বাংলায় কম খরচ করে সিংহভাগ ইংল্যান্ডে পাঠানোর দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখত। জমিদারের অবস্থা ছিল শাঁখের করাতের মত। তাঁরা যথাসম্ভব অধিক পরিমানে বোর্ডের চাহিদামত রাজস্ব আদায়ে বাধ্য ছিল। এর জন্য স্বল্পসংখ্যক রায়তের (বেশিরভাগই দুর্ভিক্ষপীড়িত ও পরবর্তীকালে মারা গিয়েছিল) উপর চরম অত্যাচার চালানো হত। রাজস্ব আদায় না হলে জমিদারি কেড়ে নিয়ে একদা তাদেরই দ্বারা অত্যাচারিত ক্ষিপ্ত ষাঁড়ের মতো রায়তদের গোত্রে ফেলে দেওয়া হত। প্রাক্তন জমিদার ও অভিজাতদের কিছু অংশ যোগ দেন ফকির-সন্ন্যাসীদের সঙ্গে। হান্টার সাহেব ঘটনাু পরম্পরার বিপরীতে গিয়ে বহুবার গির্জার স্তোত্র পাঠের মত করে ‘মুসলমান মিসরুল’ বাক্যটি ব্যবহার করেছেন এবং বোঝাতে চেয়েছেন, এই ‘অপশাসন’ই যাবতীয় দুঃখ-কষ্টের মূল। অথচ তিনিই অনবধানবশত এমন কিছু সত্য কথা বলে গিয়েছেন, যা থেকে প্রমাণিত হয় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ও লোভাতুর শাসক মুসলিম শাসনকালের একদা সমৃদ্ধশালী বাংলাকে পথে বসিয়েছিল। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র যদি হান্টার বর্ণিত টমাসের ঘটনাটিই সঠিক চিত্রিত করতেন তবে হিন্দু-মুসলিম লড়াইটি তাঁর উপন্যাসে বর্ণিত হত না।

লিখেছেনঃ চৌধুরী আতিকুর রহমান

Post Views: 8,971
Tags: ছিয়াত্তর-এর মন্বন্তরজমিদারদুর্ভিক্ষবাংলাবাংলার জমিদার
ADVERTISEMENT

Related Posts

গোপাল পাঁঠা : ইতিহাসের অন্ধকারে এক বিতর্কিত চরিত্র
ভারতবর্ষের ইতিহাস

গোপাল পাঁঠা : ইতিহাসের অন্ধকারে এক বিতর্কিত চরিত্র

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম কলকাতার বউবাজারের মঙ্গলা লেনে জন্মেছিলেন গোপাল পাঁঠা ওরফে গোপাল চন্দ্র মুখোপাধ্যায়। পারিবারিক পেশা ছিল পাঁঠার...

by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
August 18, 2025
সুলতানি যুগের ঐতিহাসিক পুনর্গঠনের নথি ও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান
ভারতবর্ষের ইতিহাস

সুলতানি যুগের ঐতিহাসিক পুনর্গঠনের নথি ও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম গজনীর মাহমুদ ও মহম্মদ ঘোরীর ধারাবাহিক ও সফল সামরিক অভিযানের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে...

by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
August 9, 2025
ময়ূরাক্ষী তীরবর্তী বীরভূম : ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সমাজের সন্ধানে
ভারতবর্ষের ইতিহাস

ময়ূরাক্ষী তীরবর্তী বীরভূম : ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সমাজের সন্ধানে

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম বঙ্গদেশের অন্তঃস্থলে অবস্থিত বীরভূম জেলার ভূপ্রকৃতি, সংস্কৃতি ও ইতিহাস এক গভীর অন্তঃসার ধারণ করে আছে,...

by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
July 10, 2025
সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনকাল : (১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ)
ভারতবর্ষের ইতিহাস

সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনকাল : (১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ)

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম মুঘল সম্রাট শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে সর্বাধিক শক্তিশালী, বুদ্ধিমান ও রাজনৈতিকভাবে দক্ষ ছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেব। ইতিহাসে...

by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
June 19, 2025

Facebook Page

নবজাগরণ

ADVERTISEMENT
No Result
View All Result

Categories

  • English (9)
  • অন্যান্য (11)
  • ইসলাম (28)
  • ইসলামিক ইতিহাস (23)
  • ইহুদী (3)
  • কবিতা (37)
  • খ্রিস্টান (6)
  • ছোটগল্প (6)
  • নাস্তিকতা (18)
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (24)
  • বিশ্ব ইতিহাস (26)
  • ভারতবর্ষের ইতিহাস (198)
  • রাজনীতি (39)
  • সাহিত্য আলোচনা (72)
  • সিনেমা (18)
  • হিন্দু (16)

Pages

  • Cart
  • Checkout
  • Checkout
    • Confirmation
    • Order History
    • Receipt
    • Transaction Failed
  • Contact
  • Donation to Nobojagaran
  • Homepage
  • Order Confirmation
  • Order Failed
  • Privacy Policy
  • Purchases
  • Services
  • লেখা পাঠানোর নিয়ম
  • হোম

No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi

©Nobojagaran 2020 | Designed & Developed with ❤️ by Adozeal

Login to your account below

Forgotten Password?

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In
Don't have an account yet? Register Now
1
Powered by Joinchat
Hi, how can I help you?
Open chat
wpDiscuz
0
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
| Reply