• মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
Saturday, June 21, 2025
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ
No Result
View All Result

সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক ও তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাঃ ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ

মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
March 18, 2021
in ভারতবর্ষের ইতিহাস
0
সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক

চিত্রঃ সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক, Image Source: tutorialathome

Share on FacebookShare on Twitter

সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক এর অর্থাৎ তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠা উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খিলজী  বংশের আকস্মিক পতনের পরই তুঘলক বংশ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। এ বংশের রাজত্বকাল ইতিহাসের সময় বিচারে স্বল্পায়ু হলেও (১৩২০-১৪১২ খ্রি:) উপমহাদেশের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৩২০ খ্রিস্টাব্দের শেষে খিলজী শাসক কুতুবুদ্দিন মােবারক খিলজী তাঁর অনুগৃহীত গুজরাটের পারওয়ারী বংশােদ্ভূত নিচু বর্ণের হিন্দু স্বধর্মত্যাগী খসরু কর্তৃক নিহত হন। ফলে খিলজী  শাসনের অবসান ঘটে। সুলতানের হত্যাকারী খসরু নাসিরউদ্দিন খসরু শাহ নামে দিল্লির সিংহাসনে আরােহণ করেন। খসরু শাহ খিলজী বংশের প্রতি অনুরক্ত আমীরদের হত্যা করেন এবং নিজ বংশের লােকদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ােগ করেন। এ সময় দিল্লিতে এক ধরনের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ইসলাম ধর্মের চরম অবমাননা শুরু হয়। ফলে মুসলমান অভিজাতদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা খসরু শাহ-এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেন। মালিক ফখরুদ্দিন জুনা খান এ সময় দিল্লিতে “আমীর-ই-আখুর” পদে নিয়ােজিত ছিলেন। তাঁর পিতা গাজি মালিক পাঞ্জাব অঞ্চলের শাসনকর্তা এবং সফল সেনাপতি হিসেবে খ্যাত ছিলেন। মালিক জুনা কৌশলে দিল্লি ত্যাগ করে পাঞ্জাবে পিতার সাথে মিলিত হন। পুত্রের কাছে প্রভু হত্যা ও ধর্ম দলনের খবর পেয়ে গাজি মালিক অন্যান্য শাসনকর্তাদের সাথে মিলিত হয়ে দিল্লি অভিযান করেন। গাজি মালিকের সম্মিলিত বাহিনীর কাছে খসরু শাহ পরাজিত ও নিহত হন। খিলজী বংশের কোন উত্তরাধিকারী বেঁচে না থাকায় দিল্লির অভিজাত শ্রেণীর একান্ত অনুরােধে গাজি মালিক ‘সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক’ নামে দিল্লির সিংহাসনে আরােহণ করেন। এভাবে তুঘলক বংশের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

 গিয়াসুদ্দীন তুঘলক
চিত্রঃ গিয়াসুদ্দীন তুঘলক, Image Source: wikimedia

তুঘলকের বংশ পরিচয়

তুঘলক শাসকদের বংশ পরিচয় সম্পর্কে পন্ডিতদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে। তবে সাধারণত মনে করা হয়ে থাকে যে, তুঘলক শাসকরা মূলত তুর্কি এবং তুর্কিদের করৌনা গােত্রভুক্ত। যতটুকু জানা যায়, গাজি মালিকের পিতা মালিক তুঘলক দিল্লির প্রবল প্রতাপান্বিত সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের ক্রীতদাস ছিলেন। মালিক তুঘলক পাঞ্জাবের জনৈকা জাঠ নারীকে বিয়ে করেন। এ নারীর গর্ভজাত সন্তান হলেন গাজি মালিক।

সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক (১৩২০-১৩২৫)

একজন সাধারণ সৈন্য হিসেবে জীবন শুরু করে তিনি নিজ যােগ্যতাবলে ক্রমে পদোন্নতি পেয়ে সুলতান আলাউদ্দিন খিলজীর শাসনকালে সালতানাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পাঞ্জাবের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। ১৩২০ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরােহণের পূর্ব পর্যন্ত তিনি সে পদে বহাল ছিলেন। এ সময়কালে তিনি বীরত্বের সাথে মােঙ্গল হামলা প্রতিহত করে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা

সিংহাসনে আরােহণ করে সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক সালতানাতে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হন। পূর্ববর্তী দুজন শাসকের অনাচার ও অবহেলার কারণে প্রশাসন ও অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়েছিল। তিনি অত্যন্ত কঠোর মনােভাব প্রদর্শন করে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। প্রদেশগুলােতে যােগ্য শাসক নিযুক্ত করে প্রশাসনিক কাঠামােকে শক্তিশালী করে তােলেন। জনসাধারণের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি রাজস্ব হ্রাস এবং সেচ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করেন। তিনি দরিদ্র জনসাধারণের জন্য সাহায্য এবং কৃষকদের জন্য ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করেন। প্রশাসনের অন্যান্য শাখাও তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তিনি পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থার পুনর্গঠন করে জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। তিনি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের এবং গুণীজনের পৃষ্ঠপােষকতা করেন। ডাক বিভাগের পুনর্গঠন ও সংস্কার করে তিনি সালতানাতের মাঝে সংবাদ আদান-প্রদানের ব্যবস্থাকে নিশ্চিত করেন। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে সামরিক চৌকি ও দুর্গ স্থাপন করে তিনি সামরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। দিল্লির অদূরে তিনি বিখ্যাত ‘তুঘলকাবাদ’ দুর্গ নির্মাণ করেন।

রাজ্য বিজয় সৈনিক হিসেবে অসাধারণ সাফল্যের অধিকারী সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক সালতানাতের সর্বত্র নিজের কৃতিত্ব স্থাপন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে শান্তি-শৃক্মখলা প্রতিষ্ঠা করে তিনি দাক্ষিণাত্যের বিদ্রোহী রাজাদের দমন করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি মূলত সামরিক প্রাধান্য স্থাপন এবং সাম্রাজ্য বিস্তারের নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। দাক্ষিণাত্য এবং বাংলায় তিনি সামরিক সাফল্য অর্জন করেন।

দাক্ষিণাত্য ও উড়িষ্যা

সুলতান আলাউদ্দিন খিলজীর মৃত্যুর পর থেকেই দাক্ষিণাত্যের তেলেঙ্গানা রাজ্যের কাকাতীয় বংশের রাজা দ্বিতীয় প্রতাপ রুদ্রদেব দিল্লির আনুগত্য অস্বীকার করে নজরানা প্রদান বন্ধ করে দেন। সুলতান তার বড় ছেলে এবং সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মালিক জুনা খানকে তেলেঙ্গানার বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। যুবরাজ জুনা খান বরঙ্গল দুর্গ অবরােধ করেন। কিন্তু কাকাতীয় সৈন্যবাহিনীর চরম প্রতিরােধ ও সৈন্যবাহিনীতে মহামারী দেখা দেওয়ায় জুনা খান অবরােধ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। এর অল্পদিন পরে তিনি আবার বরঙ্গল আক্রমণ করে দ্বিতীয় প্রতাপ রুদ্রদেবকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেন। বঙ্গলের নতুন নাম রাখা হয় সুলতানপুর। এ সময় জুনা খান মাদুরার পান্ড্যরাজ্য আক্রমণ করেন বলেও জানা যায়। যুবরাজ জুনা খানের নেতৃত্বে দিল্লি বাহিনী উড়িষ্যা আক্রমণ করে রাজা দ্বিতীয় ভানুদেবকে পরাজিত করেন। বিজয়ী যুবরাজ রাজধানীতে ফিরে এলে সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক তাঁকে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংবর্ধনা জানান।

বাংলা বিজয়

১৩২২ খ্রিস্টাব্দে বাংলার সুলতান শামসউদ্দিন ফিরােজ শাহ মারা গেলে তার ছেলেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এ সুযােগ গ্রহণ করে সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক ১৩২৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলা আক্রমণ করেন। তিনি শামসউদ্দিন ফিরােজ শাহের বড় ছেলে গিয়াসউদ্দিন বাহাদুরকে পরাজিত ও বন্দি করেন এবং ছােট ছেলে নাসিরউদ্দিন ইব্রাহিমকে বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত করে দিল্লি ফিরে যান। বাংলায় সামরিক সাফল্য অর্জন সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের সর্বশেষ কৃতিত্ব। সকল অভিযান শেষে দিল্লি ফেরার পথে তিনি দিল্লির অদূরে আফগানপুর নামক স্থানে ১৩২৫ খ্রিস্টাব্দে দুর্ঘটনায় মারা যান। কোন কোন ঐতিহাসিক সুলতানের দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুকে শাহজাদা জুনা খানের ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার কোন সূত্র নেই।

চরিত্র

তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক একজন উদার মনােভাবাপন্ন শাসক ছিলেন। সে কালের ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বারাণীর মতে, সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক বহুবিধ গুণের অধিকারী ছিলেন। সামাজিক কলঙ্কের কালিমামুক্ত নির্মল চরিত্রের অধিকারী সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের ব্যক্তিগত আচার-আচরণ ছিল অত্যন্ত সাধারণ। সুরা পান ও সেকালে প্রচলিত আমােদ-প্রমােদের প্রতি তাঁর বিন্দুমাত্র আসক্তি ছিল না। গিয়াসউদ্দিন তুঘলক একজন ধর্মভীরু নরপতি ছিলেন। একজন সুন্নী মুসলমান হিসেবে তিনি ধর্মীয় আচারঅনুষ্ঠান ও রীতি-নীতির প্রতি নিষ্ঠাবান হলেও ধর্মান্ধতার কলুষকালিমা কখনােই তাঁর উদার হৃদয়কে কলুষিত করতে পারেনি। তিনি আলেম সমাজকে শ্রদ্ধা করতেন, কিন্তু প্রয়ােজনে তাদের প্রতি কঠোর হতে কুণ্ঠিত হননি। নিরপেক্ষ বিচার, ইসলাম ধর্মের প্রতি সুগভীর শ্রদ্ধাবােধ, আইনের প্রতি নিষ্ঠা প্রভৃতি ছিল তার চরিত্রের কতিপয় উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য। মাত্র পাঁচ বছরের রাজত্বকালে দিল্লি সালতানাতের মধ্যে তিনি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। বাংলায় দিল্লির কর্তৃত্ব ফিরিয়ে আনাও তাঁর কৃতিত্ব।

সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক (১৩২৫-১৩৫১)

তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করলে তাঁর বড় ছেলে এবং উত্তরাধিকারী শাহজাদা জুনা খান সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক নামে দিল্লির সিংহাসনে আরােহণ করেন। তাঁর রাজত্বকাল উপমহাদেশের ইতিহাসে এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে। মুসলিম শাসনের সূচনালগ্ন থেকে তাঁর মত বিদ্বান, জ্ঞানী ও প্রাগ্রসর চিন্তা-চেতনার অধিকারী আর কোন সুলতান দিল্লির সিংহাসনে আরােহণ করেননি। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক মধ্যযুগের ইতিহাসের এক আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। অতুলনীয় গুণাবলীর অধিকারী সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বকাল মূলত ভারতীয় উপমহাদেশের এক বিয়ােগান্তক অধ্যায়।

মুহাম্মদ বিন তুঘলক
চিত্রঃ মুহাম্মদ বিন তুঘলক, Image Source: historyforexam

অভ্যন্তরীণ নীতি

সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলকের দীর্ঘ রাজত্বকালকে (১৩২৫-১৩৫১) মােটামুটিভাবে দুটো ভাগে ভাগ করা যেতে পারে, প্রথম ভাগ ১৩২৫-১৩৩৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। এ সময়কালে সুলতান সফলতার সাথে প্রশাসন পরিচালনা এবং বিভিন্ন সংস্কারমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। দ্বিতীয়ভাগ ১৩৩৫ থেকে ১৩৫১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত। এ সময় সুলতান নানাবিধ অভ্যন্তরীণ সমস্যার সম্মুখীন হন। এ সকল সমস্যার মােকাবেলা করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি মৃত্যুর মাধ্যমে অন্তহীন সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পান। সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক চতুর্দশ শতকের ভারতের ইতিহাসে এক নতুন শাসনব্যবস্থার সূচনা করেছিলেন। মধ্যযুগের ইতিহাসে ধর্মীয় নেতাদের শক্তিশালী প্রভাব বলয় ছিন্ন করে রাজতন্ত্রকে একচ্ছত্র করে তােলার যে চেষ্টা সুলতান আলাউদ্দিন খিলজী করেছিলেন, (১২৯৬-১৩১৬) মুহাম্মদ বিন তুঘলক সে ধর্মীয় নিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থার বাস্তব রূপায়ণ করতে সচেষ্ট হন। সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক গভীর পান্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। ফলে তিনি সহজেই আলেমদের মন-মানসিকতা বুঝতে পারতেন। তিনি যুক্তিনির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পছন্দ করতেন বলে আলেমদের এড়িয়ে চলতেন। এমনকি তাদের বহুবিধ সুযােগ-সুবিধা বাতিল করে তাদেরকে সাধারণ মানুষের পর্যায়ভুক্ত করতে চেয়েছিলেন। এর অর্থ এ নয় যে তিনি ধর্মবিরােধী ছিলেন, বস্তুত তিনি প্রশাসনকে আলেমদের অশুভ প্রভাব থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন মাত্র। রাজতন্ত্রকে শক্তিশালী করে তােলার জন্যই সুলতান ধর্মীয় আইন-কানুনের পরিবর্তে যুক্তি ও ন্যায়ের ভিত্তির ওপর প্রশাসন গড়ে তুলতে আগ্রহী ছিলেন। এ প্রচেষ্টা যুগের পরিপ্রেক্ষিতে অত্যন্ত প্রগতিশীল হওয়ায় সালতানাতে গভীর সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। অবশ্য তিনি তাঁর এ মনােভাব ধরে রাখতে পারেননি। সংস্কার বিমুখ প্রতিক্রিয়াশীল চতুর্দশ শতকের ভারতে মহান সুলতানের এ উদ্দেশ্য সফল হয়নি। রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে সুলতান ধর্মীয় গােষ্ঠীর সাথে আপােষ করতে বাধ্য হন।

বিদ্রোহ দমন

সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বকালের প্রথম দিকে বেশ কয়েকটি বিদ্রোহ দেখা দেয়। তিনি দৃঢ়হাতে এগুলাে দমন করেন। ১৩২৬-২৭ খ্রিস্টাব্দে সুলতানের ফুপাতাে ভাই বাহাউদ্দিন দাক্ষিণাত্যের গুলবর্গায় বিদ্রোহ ঘােষণা করেন। সুলতান বিদ্রোহী বাহাউদ্দিনের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। বাহাউদ্দিন পরাজিত হয়ে কামপিল রাজের আশ্রয় ভিক্ষা করেন। এ অভিযানে সুলতানের বাহিনী কামপিল রাজকে যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত করে। বিদ্রোহী বাহাউদ্দিন হয়সলরাজ তৃতীয় বল্লালের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করেন। কামপিল বিজয়ের পর সুলতানের বাহিনী হয়সল রাজ্য আক্রমণ করে। যুদ্ধে তৃতীয় বল্লাল পরাজিত হয়ে বাহাউদ্দিনকে সুলতানের সৈন্যদের কাছে হস্তান্তর করে। বিদ্রোহী বাহাউদ্দিনকে প্রাণদন্ড দেয়া হয়। এ সময় তিনি দাক্ষিণাত্যের বিজিত রাজ্যগুলােকে সরাসরি দিল্লির শাসনাধীনে নিয়ে আসেন। ফলে দাক্ষিণাত্যে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এর পরপরই মুলতানের শাসনকর্তা বাহরাম আইবা ফিলু খান বিদ্রোহ ঘােষণা করেন। সুলতান এ সময়ে দৌলতাবাদে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে তিনি দিল্লি হয়ে মুলতান। গমন করেন এবং সম্মুখ যুদ্ধে বাহরামকে পরাজিত করে বন্দি করেন এবং প্রাণদন্ডে দন্ডিত করেন। রাজপুত কাহিনী থেকে জানা যায়, সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক রাজপুতনায় রাজা হাম্মির-এর বিরুদ্ধে স্বয়ং সৈন্য পরিচালনা করে পরাজিত ও বন্দি হয়েছিলেন। সুলতান অর্থ প্রদান এবং বেশ কিছু এলাকার অধিকার। ছেড়ে দিয়ে নিজের মুক্তি অর্জন করেন। সমকালীন ফার্সি রচনাবলীতে এর কোন উল্লেখ বা ইঙ্গিত না থাকায় আধুনিক পন্ডিতগণ এ বিষয়কে কাল্পনিক বলে মনে করেন। সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক তাঁর রাজত্বের প্রথম দিকেই মােঙ্গল হামলার শিকার হয়েছিলেন। ১৩২৮-২৯ খ্রিস্টাব্দ মােঙ্গল নেতা তারমাশিরীন উত্তরপশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকে পড়ে এবং পাঞ্জাব ও মুলতান লুণ্ঠন করে দিল্লির কাছে এসে পড়ে। সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক হামলাকারীদের পরাজিত করে ভারত থেকে তাড়িয়ে দেন। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে, সুলতান অর্থ প্রদানের মাধ্যমে হামলাকারীদের শান্ত করেন। যেভাবেই হােক, এটা সত্য যে, তিনি মােঙ্গল হামলা থেকে সাম্রাজ্যকে রক্ষা করতে পেরেছিলেন।

রাজত্বকালের দ্বিতীয় ভাগে বিদ্রোহ ও পতন

সুলতান তাঁর রাজত্বের এ সময়ে বেশ কয়েকটি সংস্কারমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন (পরিকল্পনাগুলাে পরবর্তী পাঠে বিস্তারিতভাবে আলােচনা করা হবে)। কিন্তু তার এই সামরিক সাফল্য স্থায়ী হয়নি। ১৩৩৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে তার সৌভাগ্য রবি অস্তমিত হতে শুরু করে। মহতী পরিকল্পনাসমূহের ব্যর্থতা রাজকোষ শূন্য করে ফেলে এবং সুলতানের মন-মানসিকতায় উল্লেখযােগ্য পরিবর্তন ঘটে। তিনি অস্থির ও নিষ্ঠুর হয়ে ওঠেন। এ সময় সালতানাতের মৌলবাদী ধর্মীয়গােষ্ঠী প্রকাশ্যে সুলতানের বিরুদ্ধাচরণ করতে শুরু করেন। আলেমদের প্রতি বিরূপ মনােভাবসম্পন্ন সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক বাস্তব ব্যবস্থা হিসেবে মিশরের খলিফার কাছ থেকে তাঁর অনুকূলে ফরমান আনার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু এতেও অবস্থার তেমন কোন উন্নতি ঘটেনি।

১৩৩৫ খ্রিস্টাব্দ মাবারের শাসনকর্তা জালালউদ্দিন আহসান শাহ স্বাধীনতা ঘােষণা করলে সুলতান স্বয়ং তার বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। কিন্তু বরঙ্গলের কাছে পৌঁছালে তার সেনাবাহিনীতে কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ফলে তিনি দৌলতাবাদে ফিরে যেতে বাধ্য হন। মাবার অঞ্চল স্বাধীন হয়ে যায়। বাংলার ওপর দিল্লির নিয়ন্ত্রণ কখনাে তেমন কার্যকরী ছিল না। মূলত দিল্লি থেকে বাংলার দূরত্ব এবং অন্যান্য ভূ-প্রাকৃতিক কারণে বাংলাকে দিল্লির কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হতাে না। ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দ ফখরুদ্দিন মােবারক শাহ সােনারগাঁয়ে ক্ষমতা দখল করে স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। অন্যত্র ব্যস্ত থাকায় সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক বাংলার বিরুদ্ধে কোন সামরিক ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হন। ফলে ফখরুদ্দিন মােবারক শাহ একজন স্বাধীন সুলতান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। এ সময়ে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ দেখা দেয়, সুলতান দু’চারটি ছােট খাট বিদ্রোহ দমন করতে সক্ষম হলেও সার্বিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন। ১৩৪০-৪১ খ্রিস্টাব্দে অযােধ্যার শাসনকর্তা সালতানাতের প্রধান আমীর মালিক আইন-উল-মুলক মুলতানীকে দাক্ষিণাত্যের দায়িত্বভার গ্রহণ করতে নির্দেশ দিলে তিনি বিদ্রোহ করেন। সুলতান নিজেই তার বিরুদ্ধে অগ্রসর হয়ে তাকে পরাজিত করেন। তিনি আইন-উল-মুলককে ক্ষমা করে দেন এবং অন্য এক সম্মানজনক পদে নিযুক্ত করেন। সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলকের প্রতি আর কখনও সৌভাগ্য রবি সুপ্রসন্ন হয়নি। একের পর এক বিদ্রোহের শিখা প্রজ্বলিত হতে থাকে। ১৩৪২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে উত্তর ভারতে সুলতান তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হলেও দাক্ষিণাত্যের রাজনৈতিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। ১৩৪৪ খ্রিস্টাব্দে কাকাতীয় রাজপুত্র নায়ক দাক্ষিণাত্যের অন্যান্য হিন্দু সামন্তদের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে মুসলিম শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তােলেন। হয়সলরাজ তৃতীয় বীর বল্লাল এতে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করেন। ফলে দাক্ষিণাত্যের এক উল্লেখযােগ্য অঞ্চলে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটে এবং স্বাধীন হিন্দুরাজ্যের অভ্যুদয় ঘটে। বস্তুত, এ সময় গুজরাট ও দেবগিরিতে সুলতানের কর্তৃত্ব বহাল ছিল। কিন্তু এ অঞ্চলও অল্পদিনের মধ্যে সুলতানের হাতছাড়া হয়ে যায়। দেবগিরির শাসনকর্তার অপসারণকে কেন্দ্র করে দেবগিরিতে বিদ্রোহ দেখা দেয়। বিদ্রোহী অভিজাতগণ নতুন শাসনকর্তাকে বন্দি করে কোষাগার লুট করে এবং দুর্গ দখল করে নেয়। এ অবস্থায় সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক বিদ্রোহ দমনের উদ্দেশ্যে দেবগিরিতে আসেন। কিন্তু কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করার পূর্বেই তিনি দেবগিরির বিদ্রোহ দমনের দায়িত্ব জনৈক সেনাপতির ওপর অর্পণ করে গুজরাটের বিদ্রোহ দমন করতে ছুটে যান। এর ফলে বিদ্রোহী নেতা হাসান দাক্ষিণাত্যের গুলবর্গায় স্বাধীন বাহমনী রাজ্য প্রতিষ্ঠার সুযােগ লাভ করেন। ১৩৪৭ খ্রিস্টাব্দ তিনি সুলতান আলাউদ্দিন বাহমান শাহ নামে সিংহাসনে আরােহণ করেন। সুলতানের দেবগিরি ত্যাগের ফলে সারা দাক্ষিণাত্যই তাঁর হাতছাড়া হয়ে যায়। গুজরাটে এসেও সুলতান তেমন সুবিধা করতে পারেননি। গুজরাটের বিদ্রোহ দমন করতে তিনি খুবই সচেষ্ট ছিলেন। বিদ্রোহীদের তাড়া করে তিনি সিন্ধুর থাট্টার দিকে অগ্রসর হন। এখানেই তিনি অসুস্থ হয়ে ১৩৫১ খ্রিস্টাব্দের ২০শে মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। মুহাম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বকালের শেষের দিকে কয়েক বছর সুলতানকে বিদ্রোহ দমনে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয়। সুলতানের ব্যর্থতা ও আর্থিক দুর্বলতার সুযােগে সাম্রাজ্যের চারিদিকে বিদ্রোহের প্রবণতা দেখা দেয়। এক বিদ্রোহ দমন করতে না করতেই আরেক বিদ্রোহের উদ্ভব হয়।সংস্কার প্রচেষ্টাগুলাের ব্যর্থতার কারণেই দীর্ঘ রাজত্বকালের শেষের দিকে তাঁকে এই দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় পড়তে হয়েছিল।

সারসংক্ষেপ

তুঘলক বংশের ইতিহাস উপমহাদেশের সামগ্রিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। গিয়াসউদ্দিন তুঘলক এ বংশের অন্যতম সুলতান। তার স্বল্পকালীন রাজত্বে দিল্লি সালতানাতের মধ্যে শৃক্সখলা ফিরে আসে। দাক্ষিণাত্যে, উড়িষ্যা এবং বাংলা অঞ্চলে তাঁর কৃতিত্ব উল্লেখযােগ্য। তাঁরই পুত্র মুহাম্মদ বিন তুঘলক নানা কারণে আলােচিত চরিত্র। মুহাম্মদের রয়েছে অভ্যন্তরীণ নীতি, বিদ্রোহ দমন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাফল্য। মােঙ্গল আক্রমণ থেকে সাম্রাজ্য রক্ষায় তিনি সফল হন। রাজত্বকালের দ্বিতীয় ভাগে তাকে বিদ্রোহ মােকাবেলা করতে হয় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তিনি পিছু হঠে আসেন। তার সংস্কার প্রচেষ্টাগুলাের ব্যর্থতা এবং আর্থিক দূর্বলতার কারণেই তুঘলক বংশের পতন ত্বরান্বিত হয়।

সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক
চিত্রঃ সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক, Image Source: tutorialathome

মুহাম্মদ বিন তুঘলকের বিভিন্ন পরিকল্পনা

দিল্লির সুলতানদের মধ্যে সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক ছিলেন সর্বাপেক্ষা শিক্ষিত ও সৃজনশীল চেতনার অধিকারী। রাজত্বের প্রথম দিকে তিনি কয়েকটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিলেন। যদিও এগুলাে সফলতার আলাে দেখতে পায়নি তবুও এগুলাে তার বাস্তব জ্ঞান ও সৃজনশীলতার পরিচয় বহন করে। সে যুগের ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বারাণী সুলতানের পাঁচটি পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলাে হলাে-

  • (১) দেবগিরিতে রাজধানী স্থাপন;
  • (২) খােরাসান অভিযান;
  • (৩) কারাচিল অভিযান;
  • (৪) প্রতীক মুদ্রার প্রচলন;
  • (৫) দোয়াবে কর বৃদ্ধি।

দেবগিরিতে রাজধানী স্থাপন

মুসলিম অধিকারের সূচনালগ্ন থেকেই দাক্ষিণাত্য বিশৃঙ্খলা ও ষড়যন্ত্রের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। নব সাম্রাজ্যভুক্ত সুদূর দাক্ষিণাত্যে মুসলিম জনসংখ্যার স্বল্পতা সে অঞ্চলের বিজিত অধিবাসীদের বিদ্রোহপ্রবণ করে তুলেছিল। সালতানাতের প্রাণকেন্দ্র দিল্লি থেকে অনেক দূরে অবস্থিত দাক্ষিণাত্যের অশান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। অথচ সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছিল অত্যন্ত জরুরি। দিল্লি অপেক্ষা দেবগিরির কেন্দ্রীয় অবস্থান এবং দাক্ষিণাত্যের নৈকট্য দেবগিরিতে একটি নতুন রাজধানী স্থাপন করতে সুলতানকে প্রণােদিত করেছিল। তাছাড়া দীর্ঘকালের উপর্যুপরি মােঙ্গল হামলা এবং কথিত বন্যার ফলে পাঞ্জাবের গুরুত্ব হ্রাস পায়। এসকল বিষয় বিবেচনা করে অধিকতর মধ্যবর্তী স্থানে রাজধানী স্থাপনের প্রয়ােজনীয়তা দেখা দেয়। সামরিক ও রাজনৈতিক কারণ ছাড়াও এর মূলে সামাজিক-সাংস্কৃতিক কারণও ছিল। দেবগিরিতে রাজধানী স্থাপনের মাধ্যমে দাক্ষিণাত্যে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও মুসলিম সংস্কৃতির প্রসার ঘটানাে সুলতানের একটি লক্ষ ছিল, কোন কোন ফার্সি উৎস গ্রন্থে এরকম উল্লেখ দেখা যায়। সেকালের ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বারাণী উল্লেখ করেছেন যে, দেবগিরির অবস্থান ছিল সাম্রাজ্যের প্রায় মধ্যবর্তী স্থানে এবং বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় সমদূরবর্তী। বারাণী উল্লেখ করেছেন যে, সুলতান দেবগিরিতে রাজধানী প্রতিষ্ঠা করে দিল্লির ধ্বংস ডেকে আনেন। দিল্লিকে এমনভাবে জনশূন্য করা হয় যে, দিল্লি এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় একটা কুকুর বিড়ালও ছিল না। যাহােক, সুলতান দেবগিরি যাত্রীদের জন্য সড়ক নির্মাণ ও আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করেছিলেন। মানসিক যন্ত্রণা ও দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি সহ্য করতে না পেরে অনেকেই পথিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেন।

মরক্কো দেশীয় পর্যটক ইবনে বতুতা (আবু আবদুল্লা মুহাম্মদ ইবনে বতুতা) সুলতানের এ পরিকল্পনার কারণ হিসেবে এক অদ্ভুত কাহিনীর উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন যে দিল্লির অভিজাত নাগরিকবৃন্দ সুলতানকে নেপথ্যে গালিগালাজ করতাে এবং সুলতানের নিকট বেনামীতে অসভ্য ভাষায় চিঠি লিখতাে। ফলে ক্রোধান্বিত সুলতান দিল্লি ধ্বংস করতে মনস্থ করেন। দিল্লির অধিবাসীদের শহর ত্যাগ করার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেধে দেওয়া হয়। এ সময়সীমা অতিক্রান্ত হলে সুলতানের নির্দেশে পরিচালিত অনুসন্ধানে একজন অন্ধ ও একজন খোঁড়া ব্যক্তিকে পাওয়া যায়। এ ব্যক্তিদ্বয়কে ঘােড়ার পায়ে বেঁধে দিল্লি হতে দেবগিরিতে পাঠানাে হয়। ইবনে বতুতার এই বক্তব্য শুধুমাত্র অতিরঞ্জন নয়, এটা নিতান্তই কল্পনাপ্রসূত। তিনি এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নন। তাঁর বক্তব্যে স্ববিরােধিতা রয়েছে। ১৩৩৪ খ্রিস্টাব্দে দিল্লি এসে দিল্লির আয়তন ও জনসংখ্যা দেখে তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন। তাঁর মতে দিল্লি তখন ধনে-ঐশ্বর্যে এবং জনসংখ্যায় অন্যতম ছিল। আবার তিনিই বলেছেন যে দিল্লিকে চরমভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল। তাই যদি হয়, তাহলে সাত, আট বছরের মধ্যে দিল্লিতে অনুরূপ পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কি করে সম্ভব হয়েছিল? সে সময়ের আরেকজন উল্লেখযােগ্য ঐতিহাসিক ইসামী (খাজা আবদুল মালেক ইসামী) তাঁর রচিত গ্রন্থে সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলকের বিরুদ্ধে দিল্লি ধ্বংস ও দিল্লির অধিবাসীদের দেবগিরিতে নিয়ে যাবার অভিযােগ উত্থাপন করেছেন। এছাড়াও তিনি সুলতান সম্পর্কে অনেক অপ্রিয় বিষয় উল্লেখ করেছেন। এক্ষেত্রে স্মরণ করা যেতে পারে যে, ইসামীর পরিবার দিল্লি ত্যাগে বাধ্য হয়েছিল বলে সুলতানের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন এবং এ ক্ষোভ স্বত:স্ফূর্তভাবে তাঁর লেখায় প্রকাশ পেয়েছে। সুতরাং এ বিষয়ে ইসামীর বর্ণনাও পুরােপুরি গ্রহণযােগ্য নয়। বস্তুত দিল্লিকে ‘জনশূন্য’ করার অভিযােগ অলীক কল্পনামাত্র। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় দিল্লি রাজধানীর মর্যাদাও হারায়নি। ১৩২৭ ও ১৩২৮ খ্রিস্টাব্দে দুখানি সংস্কৃত লিপি হতে জানা যায় যে, সেকালের দিল্লির হিন্দু অধিবাসীদের অবস্থা ভাল ছিল এবং সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলকের প্রশংসাই করা হয়েছে। এর একটি লিপি কূপ খননের স্মারক হিসেবে উৎকীর্ণ করা হয়েছে। যদি হিন্দুরা সুলতান কর্তৃক নিপীড়িত হতেন তথা দিল্লি ত্যাগ করতে বাধ্য হতেন, তাহলে পানীয় জলের জন্য কূপ খননের প্রয়ােজন হতাে না এবং সুলতানের প্রশংসাও লিপিবদ্ধ করা হতাে না। এছাড়া সুলতান দেবগিরিতে অবস্থানকালে মুলতানের শাসনকর্তা বাহরাম আইবা কিশলু খান বিদ্রোহ করেন। সুলতান স্বয়ং এ বিদ্রোহ দমন করার জন্য মুলতান যান।বিদ্রোহীদের পরাজিত করে প্রত্যাবর্তনকালে সুলতান “দারুল মুলক” (রাজধানী) দিল্লিতে অবস্থান করেন বলে ঐতিহাসিক ইয়াহিয়া বিন আহম্মদ তাঁর ‘তারিখ-ই-মােবারকশাহী’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। অতএব, সংগতভাবেই মনে করা যেতে পারে যে সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক দিল্লি হতে রাজধানী দেবগিরিতে স্থানান্তর করেননি দেবগিরিতে একটি নতুন বা দ্বিতীয় রাজধানী স্থাপন করে তিনি সালতানাতের দক্ষিণ অঞ্চলে মুসলিম কর্তৃত্ব সুদৃঢ় করতে এবং মুসলিম সংস্কৃতির বিকাশ সাধনের চেষ্টা করেছিলেন। দামেস্কের ঐতিহাসিক শাহাবউদ্দিন তাঁর ‘মাহালিক-উল-আবসার’ গ্রন্থে রাজধানী পরিবর্তনের কোন উল্লেখ করেননি। তিনি লিখেছেন যে, দিল্লি সালতানাতের দুটি রাজধানী ছিল (১) দিল্লি এবং (২) দেবগিরি। এ দুই রাজধানীর মধ্যে সুলতান সুন্দর যােগাযােগ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। একথা স্বীকার করতেই হবে যে পরিকল্পনাটি কোন একজন একনায়কের খেয়ালখুশীর ফসল নয়, রাজধানীর নিরাপত্তা বিধান ও সালতানাতের সুশাসন নিশ্চিত করতেই সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। দেবগিরিতে রাজধানী স্থাপনের পরিকল্পনা স্থায়িত্ব লাভে ব্যর্থ হয়। সুলতানের সুগভীর আগ্রহ ও অর্থানুকূল্য সত্তেও অভিজাত শ্রেণী – ওলামা ও ওমরাহদের অসহযােগিতার ফলে সুলতান দিল্লি ফিরে আসতে বাধ্য হন। অবশ্য দাক্ষিণাত্যের বিরূপ জলবায়ুও এরজন্য বহুলাংশে দায়ী ছিল। ঐতিহ্যমন্ডিত দিল্লি শহরের পরিচিত পরিবেশ ছেড়ে দাক্ষিণাত্যের অজানা-অচেনা সমাজ ও প্রতিকূল পরিবেশ গ্রহণ করে নেয়ার মত মন মানসিকতা দিল্লির অভিজাত শ্রেণীর ছিল না বলেই পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হয়।

তবে উল্লেখ্য যে, রাজনৈতিক দিক থেকে ব্যর্থ হলেও এর সামাজিক ও ধর্মীয় প্রভাব ছিল সুদূর প্রসারী। দিল্লি হতে আসা ওলামাদের সকলেই দিল্লিতে ফিরে যাননি। যারা দেবগিরিতে থেকে যান তাদের প্রচেষ্টায় সেখানে মুসলিম সমাজ গড়ে ওঠে এবং এমনকি পরবর্তী সময়ে দাক্ষিণাত্যে মুসলিম রাজত্বও প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

খােরাসান অভিযান

বারাণী কর্তৃক উল্লেখিত সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলকের পরিকল্পনাগুলাের মধ্যে দ্বিতীয়টি ছিল খােরাসান অভিযান। সেকালে মধ্য এশিয়ায় বিরাজমান রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এ পরিকল্পনা অত্যন্ত বাস্তব সম্মত ছিল। বহুবিধ গুণের অধিকারী সুলতান একজন সুদক্ষ যােদ্ধা ও সমরকুশলী সেনানায়ক ছিলেন, সামরিক সংগঠন ও সামরিক অভিযানের প্রতি তাঁর তীব্র অনুরাগ ছিল। সিংহাসনে আরােহণের আগেও তিনি সামরিক ক্ষেত্রে নৈপুণ্যের পরিচয় দিয়েছিলেন। সুলতানের রাজত্বের প্রথম দিকে তাঁর দরবারে আশ্রয় গ্রহণকারী কয়েকজন খােরাসানী আমীর তাঁকে খােরাসান আক্রমণ করতে আহ্বান জানান। বস্তুত, সে অঞ্চলের রাজনৈতিক অবস্থাও তখন আক্রমণের অনুকূলে ছিল। পারস্যের দুর্বল শাসক আবু সাঈদের অযােগ্যতার ফলে পারস্যের সীমান্তে তখন মােঙ্গল। নেতা তারমাশিরীন এবং মিশরের সুলতান আন-নাসির হামলা চালাচ্ছিলেন। সম্ভবত: এ আক্রমণকারীদের। সাথে সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলকের কোন রকম যােগাযােগ ছিল। অতএব, এ অভিযানের পরিকল্পনা অবাস্তব বা অসম্ভব ছিল না। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সুলতান ৩,৭০,০০০ সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী গড়ে তােলেন। এ বাহিনী ছিল সুলতানের নিয়মিত সৈন্যবাহিনী ও প্রাদেশিক শাসকদের অধীনস্থ বাহিনীর অতিরিক্ত। বারাণীর গ্রন্থে শুধুমাত্র সৈন্য সংখ্যার উল্লেখ রয়েছে। সৈনিকদের নিয়ােগের শর্ত বা বেতন ভাতা সম্পর্কে কোন উল্লেখ নেই। অনুমান করা যেতে পারে যে নিয়ােগের শর্তসমূহ অবশ্যই আকর্ষণীয় ছিল। অন্যথায় অত্যাল্প সময়ে এক বিশাল বাহিনী গড়ে তােলা সম্ভব হতাে না। বিপুল সংখ্যক রাজপুতসহ দেশী-বিদেশী বহুলােক এ বাহিনীতে যােগ দেয়। দুর্ভাগ্যবশত খােরাসান অভিযানের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ এবং সম্পূর্ণ বাহিনী গঠিত হবার পরও সুলতান এ অভিযান বাতিল করতে বাধ্য হন। বারাণীর বর্ণনা মতে ৩,৭০,০০০ সৈন্য আরিজ-ই-মমালিকের দপ্তরে তালিকাভুক্ত হয়েছিল। পুরাে এক বছর ধরে এ বিশাল বাহিনীকে নিয়মিত বেতন ভাতা প্রদান করা হয়। অবশ্য বারাণী এ অভিযান বাতিলের কোন কারণ উল্লেখ করেননি। তবে মধ্য এশিয়ার রাজনৈতিক অবস্থার আকস্মিক পরিবর্তনই এ পরিকল্পনা বাতিলের একমাত্র কারণ। সুলতানের প্রস্তুতি পর্বের শেষলগ্নে মিত্র জোটের এক সদস্য মােঙ্গল নেতা তারমাশিরীন বিদ্রোহী অভিজাতদের দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত হলে মিত্র জোটে ভাঙ্গন ধরে এবং মিশরের সুলতান আন-নাসির ও পারস্য সম্রাট আবু সাঈদ-এর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হলে জোটের ভাঙ্গন পূর্ণতা লাভ করে। ফলে সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক একা হয়ে যান। একজন বাস্তববাদী সমর নায়ক হিসেবে একাকী দূরদেশে অভিযানে যাওয়া অনুচিত বিবেচনা করে তিনি এ অভিযান পরিকল্পনা বাতিল করেন। এতে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয় এবং ঐ বিশাল বাহিনী সালতানাতের জন্যে এক হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। সম্পূর্ণ বাহিনী ভেঙ্গে দেয়া যেমন সম্ভব ছিল না। তেমনি সম্ভব ছিল না ঐ বাহিনীর নিয়মিতকরণ। বাহিনী ভেঙ্গে দিলে ব্যাপক অশান্তির সম্ভাবনা ছিল। আর নিয়মিতকরণের ক্ষেত্রে প্রয়ােজন ছিল বিপুল অর্থ যােগানের। এ সংকটের সমাধান হিসেবে সুলতান বাছাই করা ১০০,০০০ সৈন্য পরবর্তী অভিযানের জন্য রেখে বাকি সৈন্য বিদায় করে দেন।

কারাচিল অভিযান

সুলতান মুহাম্মদ তুঘলকের অপর পরিকল্পনা কারাচিল অভিযান। সম্ভবত: ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে এটি সংঘটিত হয়। বারাণীর মতে কথিত কারাচিল অভিযান ছিল খােরাসান অভিযানের অংশবিশেষ। তিনি মনে করেন যে খােরাসান আক্রমণে সেনাবাহিনীর চলাচল নিরাপদ করার জন্য সুলতান হিন্দুস্থান এবং চীনের মাঝে অবস্থিত পার্বত্য অঞ্চল দখল করতে মনস্থ করেন। কিন্তু এ বক্তব্য মােটেই ঠিক নয়। কারণ হিমালয় অঞ্চলে অবস্থিত কারাচিল কোনক্রমেই খােরাসান অভিযানের প্রতিবন্ধক হতে পারে না। পরবর্তী সময়ের ঐতিহাসিক ফিরিশতা সম্ভবত বারাণীর ভুল বুঝতে পারেন এবং সেটা সংশােধন করতে গিয়ে আরেকটি ভুলের জন্ম দেন। কারণ তিনি কারাচিল অভিযানকে চীন অভিযানের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেন। কোন কোন আধুনিক ঐতিহাসিক ফিরিশতার বক্তব্য গ্রহণ করে মনে করেন যে, সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক চীন দেশ আক্রমণ করেছিলেন এবং সে আক্রমণ ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। মূলত কারাচিল অভিযান ছিল নগরকোট অভিযানের অংশ বিশেষ। পাঞ্জাবের কাংড়া জেলায় অবস্থিত নগরকোট নামক পার্বত্য দুর্গটি এ পর্যন্ত মুসলিম শাসনের বাইরে ছিল। ১৩৩৭ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক নাগরকোটে এক অভিযান প্রেরণ করেন। নাগরকোটের হিন্দু অধিপতি প্রাণপণে প্রতিরােধ করেও আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। নগরকোট অধিকারের পরপরই সুলতান কারাচিল অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কারাচিল অভিযান কোন অলীক কল্পনা ছিল না। বস্তুত, বাস্তব রাজনৈতিক পরিকল্পনারূপেই কারাচিলে অভিযান প্রেরিত হয়। ইতােপূর্বেই সুলতানের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে পূর্ব, দক্ষিণ এবং পশ্চিমাঞ্চলে সালতানাতের সীমান্ত সুরক্ষিত হয়েছিল। অতএব উত্তরাঞ্চলে সীমান্ত সুরক্ষার জরুরি প্রয়ােজনেই তাঁকে কারাচিল অভিযান করতে হয়। এ অঞ্চলে একজন অত্যন্ত শক্তিশালী হিন্দু রাজা রাজত্ব করতেন। তাকে দমন করা একান্তই প্রয়ােজন ছিল। তদুপরি হিমালয় অঞ্চল তথা উত্তর সীমান্তে চীনা অভিযান বন্ধ করাও সুলতানের উদ্দেশ্য ছিল। এ সকল কারণে তিনি হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত হিন্দু রাজ্য কারাচিল আক্রমণ করেন। কারাচিল অভিযানের জন্য সুলতান যথার্থ প্রস্তুতি গ্রহণ করেন, দুর্গম অঞ্চলে এ অভিযান পরিচালনার জন্য তিনি খসরু মালিক নামক জনৈক যােগ্য সেনাপতিকে দায়িত্ব প্রদান করেন। অভিযানের সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করে সুলতান এর সাফল্য নিশ্চিত করতে সেনাপতিকে নির্দেশ প্রদান করেন যে, তিনি যেন কিছুদূর অগ্রসর হয়েই একটি করে চৌকি স্থাপন করেন- যাতে যােগাযােগ, সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত না হয়। সুলতানের নির্দেশিত ব্যবস্থাদি মেনে চলে সেনাপতি খসরু মালিক প্রাথমিক পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করেন, কিন্তু পরে তিনি নিজের খেয়াল খুশী মতাে চলতে থাকলে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হন। দুর্ভাগ্যবশত: এ সময়ে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয় এবং সুলতানি বাহিনীতে মহামারীরূপে প্লেগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। চরম প্রাকৃতিক প্রতিকূলতায় সুলতানের বাহিনী পর্বতবাসী উপজাতিদের আক্রমণের মুখে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। এ অভিযানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ইবনে বতুতার মতে মাত্র ৩ জন এবং বারাণীর মতে মাত্র ১০ জন সৈন্য আত্মরক্ষা করে দিল্লি ফিরে যেতে সক্ষম হয়। দেখা যায় যে, সেনাপতির খামখেয়ালী এবং প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা সুলতানের এ পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করে দেয়।

প্রতীক মুদ্রার প্রচলন

সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলককে যথার্থই মুদ্রা নির্মাতাদের যুবরাজ বলে অভিহিত করা হয়েছে। তিনি তাঁর রাজত্বকালে মুদ্রা ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কার সাধন এবং নতুন মানের মুদ্রা প্রবর্তন করেন। রাজত্বের প্রথম দিকে সুলতান মূল্যবান ধাতুসমূহের আপেক্ষিক মূল্য নির্ধারণ এবং বিনিময় ব্যবস্থাকে কার্যকরী করে তােলার জন্য মুদ্রা ব্যবস্থার সার্বিক সংস্কার সাধন করেন। কিড় তাঁর প্রবর্তিত প্রতীক মুদ্রা ব্যবস্থা ছিল নিঃসন্দেহে একটি মৌলিক ও সাহসী পদক্ষেপ। বারাণীর বিবরণ পড়ে মনে হয় যে, চরম আর্থিক সংকট নিরসন করার উদ্দেশ্য নিয়েই সুলতান প্রতীক তাম্র মুদ্রা প্রবর্তন করেছিলেন। প্রতীক তাম্র মুদ্রা প্রবর্তন আর্থিক সংকটের কারণ না ফল- এটা বিবেচনার দাবি রাখে।

বারাণীর মতে সুলতানের বিভিন্ন পরিকল্পনা ও অমিতব্যয়িতার ফলে রাজকোষ শূন্য হয়ে পড়ে। ফলে তিনি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার পরিবর্তে তাম্র মুদ্রা প্রচলন করতে বাধ্য হন। কিন্তু প্রতীক তাম্র মুদ্রার প্রবর্তন যে আর্থিক সংকটের ফল নয়- তা সহজেই প্রমাণ করা যেতে পারে। বারাণীর বর্ণনা থেকেই জানা যায় যে, প্রতীক মুদ্রা ব্যবস্থা ব্যর্থ হলে সুলতান আসল নকল সকল প্রতীক মুদ্রা প্রত্যাহার করে নেন এবং সেগুলাের সমপরিমাণ। অর্থ স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রায় পরিশােধ করেন। আর্থিক সংকটের কারণে প্রতীক তাম্র মুদ্রা প্রবর্তন করা হলে ঐ মুদ্রা প্রত্যাহার করে সমমূল্য প্রদান করা সুলতানের পক্ষে অবশ্যই সম্ভব হতাে না।

অতএব দেখা যায় যে, বারাণীর উল্লেখিত আর্থিক সংকট প্রতীক মুদ্রা প্রবর্তনের কারণ নয়। সম্ভবত দুটি কারণে সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক প্রতীক মুদ্রা প্রবর্তন করতে উৎসাহী হয়েছিলেন। প্রথমত, মধ্যযুগে ভারতসহ পৃথিবীর সর্বত্রই রৌপ্যের অভাব দেখা দেয়। চতুর্দশ শতকে ভারতে যে রৌপ্যের অভাব ছিল তা সুলতানের মুদ্রা সংস্কার হতেই প্রমাণিত হয়। সুলতান স্বর্ণ মুদ্রার ওজন বৃদ্ধি ও রৌপ্যমুদ্রার ওজন হ্রাস। করেন। এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে, রাজকোষ শূন্য ছিল না এবং স্বর্ণের তুলনায় রৌপ্যের সরবরাহ কম ছিল। এ সময় প্রায়ই রৌপ্য মুদ্রার মূল্যমানের হ্রাস বৃদ্ধি ঘটতে থাকে। এ সময় মুদ্রার চাহিদাও বহুলাংশে বেড়ে যায়। বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ােগের ফলে সমস্যা প্রকটতর হয়ে ওঠে। দ্বিতীয়ত, জ্ঞান প্রদীপ্ত সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক নিঃসন্দেহে উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী ছিলেন। তিনি পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে ভালােবাসতেন। তার আগে থেকেই চীন ও পারস্যে কাগজ ও চামড়ার মুদ্রা প্রচলিত ছিল। এ উদাহরণ তাঁকে রূপার অভাবজনিত সমস্যা মােকাবেলায় তামার মুদ্রা প্রবর্তন করতে উৎসাহিত করে। প্রচলিত রৌপ্য মুদ্রার সমমূল্যে তাম্রমুদ্রা জারি করা হয়।

প্রতীক তাম্র মুদ্রা প্রবর্তন সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলকের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় বহন করে। নতুন মুদ্রা প্রবর্তনের মাধ্যমে দেশের সম্পদ বৃদ্ধি, সাম্রাজ্য বিস্তার ও প্রশাসন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তােলাই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল। জনসাধারণকে ধােকা বা ফাকি দেবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছাও তাঁর ছিল না। কিচ্ছু সুলতানের সদিচ্ছা সত্ত্বেও তাঁর এ মহতী পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।

এ ব্যর্থতার মূলে অনেকগুলাে কারণ ছিল। প্রথমত, নব প্রবর্তিত এ প্রতীক তাম্রমুদ্রা উত্তীর্ণ করার ক্ষেত্রে তিনি রাষ্ট্রীয় একচ্ছত্র অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। অর্থাৎ মুদ্রা যাতে জাল করা সম্ভব না হয় সেরকম কোন ব্যবস্থা তিনি গ্রহণ করেননি। ফলে প্রায় ঘরে ঘরে তাম্র মুদ্রা তৈরি হতাে। বারাণী উল্লেখ করেছেন যে, প্রতিটি হিন্দুর ঘরই একটি টাকশালে পরিণত হয়েছিল। দেশব্যাপী হিন্দুগণ অগণিত জাল তাম্রমুদ্রা তৈরি করে। তাম্র মুদ্রা ব্যাপক হারে জাল হবার ফলে মূল্যবান ধাতু নির্মিত মুদ্রাসমূহ বাজার হতে উধাও হয়ে যায়। জনগণ তাম্র মুদ্রা দিয়ে রাজস্ব প্রদান করে এবং এর দ্বারা অস্ত্র, অশ্ব এবং মূল্যবান সামগ্রীসমূহ ক্রয়করে নিজেদের অবস্থার উন্নতি সাধন করে। ক্রমে ধাতু মুদ্রার অভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধ্বস নামে এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।

দ্বিতীয়ত, ভারতে মুসলিম শাসনব্যবস্থার প্রচলিত অস্থিতিশীলতা এ ব্যবস্থার ব্যর্থতার আরেকটি কারণ। স্থিতিশীল রাষ্ট্রতন্ত্রের পূর্ণ দায়িত্ব ছাড়া প্রতীক মুদ্রা প্রবর্তনের মত কোন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সফল হতে পারে না। পূর্ববর্তী খিলজী শাসক আলাউদ্দিন খিলজী (১২৯৬-১৩১৬) অর্থনৈতিক সংস্কার ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ প্রথা প্রবর্তন করেছিলেন; কিন্তু তার মৃত্যুর সাথে সাথেই সে ব্যবস্থা বিলীন হয়ে যায়।

তৃতীয়ত, যে কোন অর্থনৈতিক বা উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের সফলতার জন্য জনগণের সম্পৃক্ততা অপরিহার্য। চতুর্দশ শতকের ভারতীয় জনগণের মন-মানসিকতা ছিল অত্যন্ত সংকীর্ণ এবং সংস্কার বিরােধী। ফলে চতুর্দশ শতকের ভারতে প্রতীক মুদ্রার ব্যর্থতা অবশ্যম্ভাবী ছিল। সুলতানের উদ্দেশ্য যতই মহৎ হােক না কেন জনসাধারণ তামাকে তামা হিসেবেই বিবেচনা করেছে, মুদ্রা হিসেবে নয়।

দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধি

সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলকের আরেকটি পরিকল্পনা ছিল দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধি করা। গঙ্গা, যমুনার। মধ্যবর্তী দোয়াব অঞ্চল ছিল সালতানাতের সর্বাপেক্ষা উর্বর অঞ্চল। এ অঞ্চলে পানি সরবরাহের অভাব না থাকায় প্রচুর শস্য উৎপাদন হতাে; এবং বলতে গেলে দোয়াব ছিল সালতানাতের শস্যভান্ডার। বস্তুত, দোয়াব অঞ্চলে ভূমির উর্বরতা এবং সম্পদের প্রাচুর্য সুলতানকে ঐ অঞ্চলে কর বৃদ্ধি করতে আগ্রহী করে তােলে। খােরাসান ও কারাচিল অভিযানের বিপুল ব্যয় এবং প্রতীক তাম্র মুদ্রা ব্যর্থ হওয়ায় সুলতানের কোষাগার প্রায় শূন্য হয়ে পড়ে। ফলে বাধ্য হয়েই তিনি সালতানাতের সবচেয়ে সম্পদশালী দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধি করেন।

সমকালীন ঐতিহাসিক ইসামী বা মরক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতা দোয়াবে কর বৃদ্ধি সম্পর্কে কিছুই লিখেননি। এতে প্রতীয়মান হয় যে, বিষয়টির প্রতি তারা তেমন গুরুত্ব প্রদান করেননি। একমাত্র ঐতিহাসিক বারাণীই (দোয়াব অঞ্চলের অধিবাসী) এ বিষয়ে তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে সুলতান দোয়াব অঞ্চলে ১০ গুণ বা ২০ গুণ কর বৃদ্ধি করেন। ফলে রায়তগণ বাড়ি-ঘর ছেড়ে বনে বাদাড়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। সুলতানের সেনাবাহিনী সেখানেও তাদের তাড়া করে হত্যা করে।

বারাণীর এরূপ বক্তব্য নিতান্তই অতিরঞ্জিত এবং সুলতানের বিরুদ্ধে তাঁর ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও বিদ্বেষের বহি:প্রকাশ বলে আধুনিক পন্ডিতগণ মনে করেন। সম্ভবত ঐ কর বৃদ্ধির ফলে বারাণীর গ্রামবাসী এবং আত্মীয়-স্বজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। যাহােক দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধি নতুন কিছু নয়। সুলতান আলাউদ্দিন খিলজী ও দোয়াবে কতিপয় আবওয়াবসহ (নির্ধারিত খাজনার অতিরিক্ত দেয় কর) ৫০% কর আরােপ করেছিলেন এবং অত্যন্ত কঠোরতার মাধ্যমে তা আদায় করেছিলেন। কিন্তু তাতে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক দোয়াব অঞ্চলে কি হারে কর বাড়িয়েছিলেন, বারাণী তা নির্দিষ্ট করে বলেননি। তাঁর কথিত ১০ গুণ বা ২০ গুণ কর বৃদ্ধি একেবারেই অসম্ভব হতে পারে যে সুলতান ১০% বা ২০% কর বৃদ্ধি করেছিলেন। সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক তাঁর রাজত্বের প্রায় সব ক্ষেত্রেই দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছিলেন, খােরাসান অভিযানের জন্য গঠিত বিশাল সেনাবাহিনীতে দোয়াব অঞ্চলের বহুলােক যােগ দিয়েছিল। সে বাহিনী ভেঙ্গে দেবার পর তারা দোয়াবেই ফিরে যায়। ফলে আঞ্চলিক অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। দোয়াব অঞ্চলে তখন এক প্রকার দুর্ভিক্ষ অবস্থা বিরাজ করছিল। এরকম অবস্থায় কর বৃদ্ধির ঘটনা ঘটে। ফলে দোয়াবের প্রজাগণ অসন্তুষ্ট হয়ে বিদ্রোহ করে এবং কর আদায়কারীদের হত্যা করে। তারা নিজেদের শস্য পুড়িয়ে বনে বাদাড়ে আশ্রয় নেয়। এতে অবস্থার অবনতি ঘটে। এবং ব্যাপক দুর্ভিক্ষের আশংকা দেখা দেয়। দোয়াবের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সুলতান বিদ্রোহী প্রজাদের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সুলতানের উদ্দেশ্য যাই হােক না কেন জনসাধারণ এ পদক্ষেপকে নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য করে। এই ব্যবস্থার ফলে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ঐতিহাসিক বারাণী স্বাভাবিক কারণেই বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করে লিপিবদ্ধ করেছেন।

এ বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে অবগত হয়ে সুলতান তাৎক্ষণিকভাবে কিছু ত্রাণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এগুলাের মধ্যে কূপ খনন এবং ‘তাকাভী’ ঋণ প্রদান বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। কিন্তু সুলতানের গৃহীত ব্যবস্থাগুলাে অবস্থার তেমন পরিবর্তন সাধন করতে পারেনি। দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাসে বহুলােক মারা যায়।

সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলকের কল্যাণকামী পরিকল্পনাগুলাে দুর্ভাগ্যের অশুভ শক্তির প্রভাবে ব্যর্থ হয়ে যায়। পরিকল্পনাগুলাে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সুলতান ব্যর্থ হন বটে, কিন্তু এ ব্যর্থতার জন্য তাঁকে সম্পূর্ণভাবে দায়ী করা যায় না। একটি ক্রমবর্ধমান সাম্রাজ্যের অসংখ্য সমস্যার মােকাবেলা তাঁকে করতে হয়েছে। প্রায় ক্ষেত্রেই সুলতানের কর্মচারীরা তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেনি বা প্রয়ােজনমত সহযােগিতা দান করেনি। এটি অনস্বীকার্য যে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। আর এ ব্যর্থতার মূলে ছিল প্রায় ক্ষেত্রেই পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতা।

দেবগিরিতে রাজধানী স্থাপন করে দাক্ষিণাত্যে মুসলিম অধিকার দৃঢ় করার ও মুসলিম সংস্কৃতির প্রসার ঘটানাের প্রচেষ্টায় সুলতানের বাস্তব চিন্তারই পরিচায়ক। কিন্তু পরিকল্পনাটি কার্যে পরিণত করতে গিয়ে সুলতানের পদক্ষেপ, বিশেষ করে দিল্লি থেকে কর্মচারীদের সপরিবারে স্থানান্তরে বাধ্য করার বিষয়ে কিছুটা অবাস্তবতা ছিল বলে মনে করা যায়। কারাচিল ও খােরাসান অভিযান মধ্যযুগের যে কোন নরপতিরই স্বাভাবিক কার্যক্রম বলে মনে করা যায়। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন সুলতানকে একটি অভিযানের পরিকল্পনা ত্যাগ করতে বাধ্য করে। অন্যটি প্রতিকূল অবস্থার জন্য ব্যর্থ হয়। এসব সামরিক পরিকল্পনার ব্যর্থতা অর্থাভাবের কারণ হয়ে থাকতে পারে। ফলে রাজ্যের সবচেয়ে উৎপাদনক্ষম অঞ্চলে কর বৃদ্ধির মধ্যে তেমন কোন অবাস্তবতার লক্ষণ নেই। তাম্র মুদ্রা প্রচলনের প্রচেষ্টা অবশ্যই সুলতানের যুগের তুলনায় অগ্রসর চিন্তার পরিচয় বহন করে। তবে তাম্র মুদ্রার নকল রােধের ব্যবস্থা গ্রহণ না করা অবশ্য সুলতানের ব্যর্থতার পরিচায়ক। প্রত্যেকটি পরিকল্পনাই সুলতানের সদুদ্দেশ্যের পরিচয় বহন করে। সমসাময়িক জনগণ তাঁকে অনেক ভুল বুঝেছে। একের পর এক ব্যর্থতা দিল্লি সালতানাতের জন্য দুর্যোগই বয়ে এনেছিল।

সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলকের চরিত্র ও কৃতিত্ব

ত্রয়ােদশ ও চতুর্দশ শতাব্দীতে ভারতে শাসনকারী প্রতিটি বংশেই একজন করে অতি বিখ্যাত নরপতি ছিলেন। প্রাথমিক তুর্কি বংশের কর্মবীর সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন, খিলজী বংশের দুঃসাহসী রাজনৈতিকঅর্থনীতিবিদ আলাউদ্দিন খিলজী এবং করোনা তুর্কি বংশে আদর্শবাদী সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক ইতিহাসের পাতায় অমর-অক্ষয় হয়ে আছেন।

সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক সুগঠিত শরীর ও সুন্দর চেহারার অধিকারী ছিলেন। খেলাধুলা, অশ্বারােহণ, অস্ত্র পরিচালনা প্রভৃতি বিষয়ে তিনি বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। সহজ-সরল জীবন যাপনে অভ্যস্থ সুলতান ব্যক্তিগত জীবনে সফল এবং পাপাচার থেকে মুক্ত ছিলেন। বিনীত স্বভাব ও ন্যায়পরায়ণতা তাঁর চরিত্রের উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও শিক্ষকদের প্রতি তিনি বিশ্বস্ত এবং তাঁর মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। দরবারের অনুষ্ঠানে আড়ম্বরতা পছন্দ করলেও ব্যক্তিগত আচার-আচরণে ছিলেন সহজ, সরল ও সংযমী। তিনি মদ পান করতেন না, নৈতিকতা বর্জিত ক্রিয়াকান্ডে জড়িত লােকদের সংস্পর্শ তিনি এড়িয়ে চলতেন। তিনি প্রজাদের জন্য মদ্যপান নিষিদ্ধ করেছিলেন। কামনা-বাসনায় সুলতান ছিলেন অত্যন্ত সংযত। আওরঙ্গজেবের মত গোঁড়া ও নাসিরউদ্দিনের মত কৃজ্জ্ববান না হলেও সুলতান আচার-আচরণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন।

শাসক হিসেবে সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক উদার, দানশীল ও ন্যায়পরায়ণ ছিলেন। সমকালীন ঐতিহাসিকগণ তার দানশীলতার প্রশংসা করেছেন। আলাউদ্দিন খিলজীর মত তিনি প্রশাসনিক কাজে আলেম সমাজকে এড়িয়ে চলেছেন এবং শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে নিজের চিন্তা-চেতনাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। এ কারণে কোন কোন গোঁড়া ঐতিহাসিক তাঁকে অধার্মিক বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু এই অভিযােগ মােটেও সত্য নয়। তিনি ধর্মভীরু ছিলেন এবং অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে ধর্মীয় নীতিসমূহ মেনে চলতেন। তিনি নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান যারা পালন করতাে না, তাদের শাস্তি দিতেন। কিন্তু তিনি ধর্মান্ধ ছিলেন না। তিনি হিন্দুদের প্রতি উদার ও সহনশীল ছিলেন। হিন্দুদের মধ্যে প্রচলিত ‘সতীদাহ’ প্রথা বন্ধ করার জন্য তিনি চেষ্টা করেছিলেন। উদারতা ও সহনশীলতার দিক থেকে তাঁকে মহামতি আকবরের পূর্বসুরী বলা যেতে পারে। মুসলিম বিজয়ের সূচনালগ্ন থেকে দিল্লির সিংহাসনে আরােহণকারী নরপতিদের মধ্যে সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক ছিলেন নিঃসন্দেহে সবার চেয়ে জ্ঞানী ও মার্জিত। অতুলনীয় স্মরণশক্তি, বুদ্ধিমত্তা ও বহুবিধ জ্ঞানের অধিকারী সুলতান সমকালীন ঐতিহাসিকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছেন। তাঁর বহুমুখী প্রতিভার বিকাশ তাঁকে সেকালের এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছিল। সমকালীন জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় তাঁর পারদর্শিতা ছিল। ইবনে বতুতা এবং তার বর্ণনা অনুসরণ করে কতিপয় ঐতিহাসিক সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলককে রক্তপিপাসু ও নিষ্ঠুর বলে অভিযুক্ত করেছেন। এ অভিযােগ যথার্থ নয়। গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক রয়েছে সত্য। কিন্তু তা যথাযথভাবে প্রমাণিত হয়নি। বিদ্রোহীদের তিনি কঠোরভাবে দমন করেছেন এবং নির্মম শাস্তি দিয়েছেন। সে যুগের প্রচলিত ব্যবস্থা হিসেবেই তিনি তা করেছেন। এ প্রসঙ্গে সুলতান আলাউদ্দিনের দন্ডপ্রথার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। সেকালে প্রায় সারা বিশ্বেই দন্ডপ্রথা কঠোর ছিল। সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক ওলামা বিরােধী পদক্ষেপ গ্রহণ করে বহু শত্রু সৃষ্টি করেছিলেন এবং তারাই অতিরঞ্জিতভাবে সুলতানের নিষ্ঠুরতার কথা লিখেছেন।

সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক প্রজারঞ্জক শাসক ছিলেন এবং প্রজাদের কল্যাণ সাধনের প্রতি তাঁর দৃষ্টি ছিল। এমনকি শত্রুর প্রতিও তিনি ঔদার্য্য প্রদর্শন করেছেন। অভাব ও দুর্ভিক্ষের সময় তিনি ব্যাপক সাহায্য প্রদান করা ছাড়াও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় জলসেচের ব্যবস্থা এবং ভূমি উদ্ধার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে কৃষি ব্যবস্থাকে জোরদার করে তুলেছিলেন। আধুনিককালের কোন কোন ঐতিহাসিক সমকালীন দৃষ্টিভঙ্গিতে সুলতানের কার্যকলাপের বিচার করতে গিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে পাগলামীর অভিযােগ উত্থাপন করেছেন। কিন্তু সমকালীন ঐতিহাসিকদের লেখনিতে এ ধরনের বিন্দুমাত্র আভাস-ইঙ্গিতও নেই। এক্ষেত্রে ইউরােপীয় ঐতিহাসিকগণই অগ্রগামী ভূমিকায় রয়েছেন। বারাণী তাঁকে ‘সৃষ্টির যথার্থ বিস্ময়’, ‘বিপরীতমুখী গুণাবলীর এক বিরল সমন্বয়’ বলে উল্লেখ করেছেন। ইবনে বতুতা তাঁকে রক্তপিপাসু বলে উল্লেখ করলেও কখনাে তাঁকে পাগল বা উম্মাদ বলেননি। তাঁর রাজত্বকালেই সালতানাতের পতন শুরু হয়। তাঁর গড়া সাম্রাজ্য তার চোখের সামনেই ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে। এজন্য তাঁকে সম্পূর্ণরূপে দায়ী করা যায় না। বাস্তব বিচারবুদ্ধি বর্জিত বলে তাঁকে অভিযুক্ত করাও ঠিক নয়। সারা জীবন তিনি প্রতিকূল অবস্থার বিরুদ্ধে লড়েছেন এবং তিনি কখনাে হতাশ হননি। এটা সত্য যে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন এবং তার ব্যর্থতার জন্য বহুলাংশে দায়ী ছিল প্রতিকূল পারিপার্শ্বিকতা যার ওপর তাঁর কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না। এক দশকব্যাপী স্থায়ী দুর্ভিক্ষ তার শাসনামলের গৌরব ম্লান করে দেয় এবং তাঁর প্রজাদের বিদ্রোহী করে তােলে। তাঁর রাজত্বের শেষার্ধে দাক্ষিণাত্যে হিন্দু রাজাদের বিদ্রোহ মূলত আলাউদ্দিন খিলজী র বিজয় ও লুণ্ঠনের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবেই দেখা দিয়েছিল। বিদ্রোহী বাংলা বরাবরই দিল্লির প্রতি বিরূপ মনােভাবাপন্ন ছিল। ক্রমবর্ধমান একটি সাম্রাজ্যের সার্বিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে তিনি তাঁর কর্মচারীদের আন্তরিক সহযােগিতা লাভে বঞ্চিত ছিলেন। ফলে সুন্দর আদর্শ ও অফুরন্ত সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন, একথা স্বীকার করতেই হয়।

সার সংক্ষেপ

ভারতবর্ষের ইতিহাসে সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক একজন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। এই সুলতানের পাঁচটি পরিকল্পনা ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে। দিল্লি থেকে সরিয়ে দেবগিরিতে রাজধানী স্থাপন তুঘলকের প্রথম পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনা স্থায়িত্ব পায়নি এবং ব্যর্থ হয়। তবে এর ধর্ম-সামাজিক প্রভাব ছিল সুদূর প্রসারী। মুহাম্মদের দ্বিতীয় পরিকল্পনা ছিল খােরাসান অভিযান। এ অভিযানে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়। কারাচিল অভিযানের পরিকল্পনা বেশ জোরালােভাবে গৃহীত হলেও প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার জন্য এটিও ব্যর্থ হয়ে যায়। পরিকল্পনাসমূহের মধ্যে প্রতীক তাম্র মুদ্রার প্রচলন তুঘলকের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় বহন করে। এতত্সত্ত্বেও এ মহতী পরিকল্পনাটিও ব্যর্থ হয়। অবশ্য এ ব্যর্থতারও অনেকগুলাে যৌক্তিক কারণ ছিল। দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধি তুঘলকের অপর একটি পরিকল্পনা। এই কর বৃদ্ধি দোয়াবের প্রজাদেরকে বিদ্রোহী করে তােলে। শােনা যায়, এ সময় দোয়াবে দুর্ভিক্ষও দেখা দিয়েছিল। সুলতানের সব কয়টি পরিকল্পনা সদুদ্দেশ্যে গৃহীত হলেও তা সফল হয়নি। এই ব্যর্থতা দিল্লি সালতানাতের জন্য দুর্যোগ বয়ে আনে।

 

Post Views: 6,207
Tags: তুঘলকতুঘলক বংশতুঘলক রাজবংশমুহাম্মদ বিন তুঘলকসুলতানসুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক
ADVERTISEMENT

Related Posts

সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনকাল : (১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ)
ভারতবর্ষের ইতিহাস

সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনকাল : (১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ)

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম মুঘল সম্রাট শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে সর্বাধিক শক্তিশালী, বুদ্ধিমান ও রাজনৈতিকভাবে দক্ষ ছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেব। ইতিহাসে...

by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
June 19, 2025
বিদ্যাসাগরের প্রতি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিদ্বেষ ও বিরোধীতা
ভারতবর্ষের ইতিহাস

বিদ্যাসাগরের প্রতি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিদ্বেষ ও বিরোধীতা

একজন বিদ্যার সাগর, আর একজন সাহিত্যের সম্রাট। উভয়েই উনিশ শতকের বিখ্যাত মনীষী ও লেখক এবং পরস্পরের সমকালীন। উনিশ শতকের...

by কামরুজ্জামান
November 13, 2024
মন্দির ধ্বংস এবং ইন্দো-মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ
ভারতবর্ষের ইতিহাস

মন্দির ধ্বংস এবং ভারতে মুসলিম শাসনের ইতিবৃত্ত

লিখেছেনঃ রিচার্ড এম. ইটন সম্প্রতি, বিশেষ করে ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর, দক্ষিণ এশিয়ার মন্দির এবং মসজিদের রাজনৈতিক...

by অতিথি লেখক
June 19, 2025
প্রকৃতি, নান্দনিক চৈতন্য ও মরমিবাদ: বাংলার আরবি-ফার্সি শিলালিপির আধ্যাত্মিক দিক
ইসলামিক ইতিহাস

প্রকৃতি, নান্দনিক চৈতন্য ও মরমিবাদ: বাংলার আরবি-ফার্সি শিলালিপির আধ্যাত্মিক দিক

চিত্র ৪.১ (শিলালিপি নং): পাণ্ডুয়ার শায়খ নূর কুতব আল আলমের সমাধিফলকে ব্যবহৃত সাতটি আধ্যাত্মিক উপাধি...

by মুহাম্মাদ ইউসুফ সিদ্দিক
November 7, 2024

POPULAR POSTS

  • সুলতান মাহমুদ

    সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান ও সোমনাথ মন্দির প্রসঙ্গ (১ম পর্ব)

    181 shares
    Share 181 Tweet 0
  • বাউরী সম্প্রদায়ের উৎপত্তির ইতিহাস ও ঐতিহাসিক পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • আর্যদের ভারত আগমন, বিস্তার, সমাজ ও সভ্যতা: এক ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে বৌদি কাদম্বরী দেবীর সম্পর্ক আদৌ কি প্রেমের ছিল?

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • হিন্দু পদবীর উৎপত্তির ইতিহাস, বিবর্তন ও ক্রমবিকাশঃ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

Facebook Page

নবজাগরণ

ADVERTISEMENT
নবজাগরণ

'Nobojagaran' is a website of its kind where you can gather knowledge on all the unknown facts of the world. We human beings always have a thirst for knowledge. Nobojagaran takes its first steps to quench this thirst of ours. We are now in the era of digital world, where we get almost anything online. So how about a bit of knowlyfrom online?

Connect With Us

No Result
View All Result

Categories

  • English (9)
  • অন্যান্য (11)
  • ইসলাম (27)
  • ইসলামিক ইতিহাস (23)
  • ইহুদী (2)
  • কবিতা (37)
  • খ্রিস্টান (6)
  • ছোটগল্প (6)
  • নাস্তিকতা (18)
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (24)
  • বিশ্ব ইতিহাস (24)
  • ভারতবর্ষের ইতিহাস (195)
  • রাজনীতি (38)
  • সাহিত্য আলোচনা (68)
  • সিনেমা (17)
  • হিন্দু (16)

Pages

  • Cart
  • Checkout
  • Checkout
    • Confirmation
    • Order History
    • Receipt
    • Transaction Failed
  • Contact
  • Donation to Nobojagaran
  • Homepage
  • Order Confirmation
  • Order Failed
  • Privacy Policy
  • Purchases
  • Services
  • লেখা পাঠানোর নিয়ম
  • হোম
No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi

©Nobojagaran 2020 | Designed & Developed with ❤️ by Adozeal

Login to your account below

Forgotten Password?

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In
Don't have an account yet? Register Now
1
Powered by Joinchat
Hi, how can I help you?
Open chat
wpDiscuz
0
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
| Reply