আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ : প্রাচীন ও মধ্যযুগের সাহিত্য ছিল মূলত পুঁথি নির্ভর। উনিশ শতক পর্যন্ত ওইসব পুঁথির প্রচলন ছিল। তবে আধুনিকতার প্রসারে সেগুলি ক্রমেই গুরুত্ব হারাচ্ছিল ও লুপ্ত হতে শুরু করছিল। ফলে উনিশ শতকে যাঁরা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচনায় উদ্যোগী হয়েছিলেন, তাঁদের হাতে সামান্যই উপকরণ ছিল। পরিচিত কিছু সাহিত্যকীর্তি ছাড়া বাংলা ভাষায় লেখা অনেক উপাদানের সঙ্গেই তাদের পরিচয় ছিল না। বাংলা সাহিত্যের এসব নিদর্শন হাতে লেখা পাণ্ডুলিপিতে সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু সেসব পাণ্ডুলিপি বা পুঁথির সংগ্রহ-সংরক্ষণের কোনাে চেষ্টা তখনাে হয়নি। তবে সাহিত্যের ইতিহাস রচনা ও পুনর্গঠনের জন্য শুধু নয়, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসের মূল্যবান দলিল হিসেবেও লুপ্তপ্রায় ওই সব পুঁথি সংগ্রহ ও সংরক্ষণের প্রয়ােজন। বিশেষভাবে অনুভূত হতে থাকে। সময়ের এই দাবি পূরণের লক্ষে অগ্রগণ্য ছিল কলকাতার রয়্যাল এশিয়াটিক সােসাইটি, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
(১)
ভারতে হাতে লেখা পুঁথি সংগ্রহ বা সংরক্ষণের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ শুরু হয় মােটামুটিভাবে ১৮৬৮ সালে। সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের অনুরােধে স্যার জন লরেন্স বিশেষ উদ্যোগ নিলে ভারত সরকার এজন্য ২৪ হাজার টাকা বরাদ্দ করেন। অবিভক্ত বাংলায় পুঁথি সংগ্রহ-সংরক্ষণ ও শ্রেণিবদ্ধকরণের দায়িত্ব কলকাতার রয়্যাল এশিয়াটিক সােসাইটির উপর বর্তায়। ১৮৭০ সালে ভারত সরকার এই সােসাইটিকে এজন্য বার্ষিক ৩২০০ টাকা মঞ্জুর করেন। কলকাতার এশিয়াটিক সােসাইটিতে একাজের দায়িত্ব পান রাজেন্দ্রলাল মিত্র (১৮২২-৯১)। রাজেন্দ্রলাল মূলত সংস্কৃত পুঁথি সংগ্রহ করেছিলেন। পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ সম্পর্কিত তথ্য, তালিকা ও বিবরণ প্রকাশ করে তিনি পান্ডুলিপি গবেষণার পথ খুলে দিয়েছিলেন।
এরপর নবজাগরণের উদ্দীপনায় ইতিহাস রচনার মূল্যবান উপাদান প্রাচীন ঐতিহ্য অন্বেষণ ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার তাগিদে উনিশ শতকের নয়ের দশক থেকে বাংলা পুঁথি সংগ্রহের নিয়মিত প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। এই প্রয়াসে যাঁরা অগ্রণী ছিলেন, তাদের মধ্যে মহামহােপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (১৮৫৩-১৯৩১), দীনেশচন্দ্র সেন (১৮৬৬-১৯৩৯), অম্বিকাচরণ গুপ্ত, নগেন্দ্রনাথ বসু (১৮৬৬-১৯৩৮), শিবরতন মিত্র (১৮৭২-১৯৩৮), বসন্তরঞ্জন রায় (১৮৬৫-১৯৫২) প্রমুখ ছিলেন বিশেষ উল্লেখযােগ্য এঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও (১৮৬১-১৯৪১)। রাজেন্দ্রলালের মৃত্যুর পর হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রয়্যাল এশিয়াটিক সােসাইটির পুঁথি সংগ্রহ কার্যক্রমের পরিচালক নিযুক্ত হন (১৮৯১)। সােসাইটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকাকালে তিনি বাংলা ভাষায় রচিত পুথি সংগ্রহের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেন। ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পুঁথি সংগ্রহের পাশাপাশি তিনি নেপাল ও তিব্বত থেকেও পুঁথি সংগ্রহ করেছিলেন। পুঁথির বর্ণনানুক্রমিক তালিকা প্রণয়ন করে তিনি তা প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। তাঁর সংগৃহীত দুর্লভ কিছু পুঁথি ভারতবর্ষের বিভিন্ন ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসের আকর উপাদানের মর্যাদা পেয়েছে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসের ক্ষেত্রে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার চর্যাপদের পুঁথি (১৯০৭)। এটি হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষার ‘বৌদ্ধগান ও দোহা’ নামে তাঁর সম্পাদনায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ হতে প্রকাশিত হয় (১৯১৬)।
প্রাচ্যবিদ্যাচর্চার অন্তরিক আগ্রহে রবীন্দ্রনাথ প্রাচীন পুঁথি সংগ্রহ ও সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, ‘দেশকে ভালবাসিবার প্রথম লক্ষণ ও কর্তব্য দেশকে জানা। ১৮৯১-এ ‘সাধনা’ পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর ‘প্রাচীন পুঁথি উদ্ধার’ প্রবন্ধে স্বদেশবাসীকে প্রাচীন পুঁথি অনুসন্ধানের আবেদন তাৎপর্যবাহী। পুঁথিপত্রের সংগ্রহ-সংরক্ষণ ও মুদ্রণের ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথের একটা বড় ভূমিকা সেকালেই স্বীকৃত হয়েছিল। ১৮৮৬-এ তত্ত্ববােধিনী পত্রিকায় আদি ব্রাহ্ম সমাজের সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রদত্ত বিজ্ঞাপন থেকেই তা বােঝা যায়। রবীন্দ্রনাথের নিবেদন ছিল,
“যে সকল মহাশয় আদি ব্রাহ্মসমাজের পুস্তকালয় হইতে হস্তলিখিত পুঁথি ও পুস্তকাদি পাঠ জন্য ঋণ লইয়া গিয়াছেন তাহাদিগের প্রতি নিবেদন যে তাহারা অনুগ্রহ করিয়া এই মাঘ মাসের মধ্যে সমাজের লাইব্রেরিয়ানের নিকট প্রতি প্রেরণ করেন।”
বাংলা ১৩০১-এ ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’-এর প্রতিষ্ঠা হলে রবীন্দ্রনাথ তার সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। এ প্রতিষ্ঠানটির বহুমুখী কর্মধারার বিশেষ করে প্রাচীন পুঁথি সংগ্রহ ও সংরক্ষণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ও ঠাকুরবাড়ির অনেক গুণীজনেরা। ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ পত্রিকায় (১৩০১) প্রথমবর্ষের কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতিতে ঈশানচন্দ্র বসুকে মাসিক দশ টাকা বেতনে পুঁথি সংগ্রহের কাজে নিয়ােগ করা হয়। দ্বিতীয় বর্ষের (শ্রাবণ ১৩০২) কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, সভাপতি রমেশচন্দ্র দত্ত (১৮৪৮-১৯০৯) বলেছেন,
“আমার বিবেচনায় কৃত্তিবাসী রামায়ণের ন্যায় কাশীরাম দাসের মহাভারত, কবিকঙ্কনের চণ্ডী প্রভৃতি প্রাচীন পুঁথি (মশ বাহির করিতে চেষ্টা করাও পরিষদের একটি প্রধান কার্য্য।”১
‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’-এ পুঁথিশালা পত্তনের প্রাথমিক উদ্যোগে রবীন্দ্রনাথের সার্থক সহযােগী ছিলেন রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী (১৮৬৪-১৯১৯)। রামেন্দ্রসুন্দরকে লেখা ব্যোমকেশ মুস্তফীর (১৮৬৮-১৯১৬) চিঠিপত্র থেকেও জানা যায়, আদি ব্রাহ্ম সমাজের পুঁথি সংগ্রহ ও ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’-এ প্রদান করার উদ্যোগ রবীন্দ্রনাথ ১৩১২ সাল থেকেই গ্রহণ করেছিলেন।২ সংস্কৃত ও ব্রহ্মধর্ম বিষয়ক কিছু বাংলা ও একটি তিব্বতী পুঁথি পরিষদকে রবীন্দ্রনাথ দান করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে সাহিত্য পরিষদের ষােড়শ বর্ষের (১৩১৬) বার্ষিক কার্যবিবরণীর লেখাটি উল্লেখযােগ্য,
“বৎসরের আরম্ভে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় একরাশি হস্তলিখিত পুঁথি …পরিষদকে দান করিয়েছেন। ঐ সকল পুঁথি এককালে তত্ত্ববােধিনী সভার লাইব্রেরীতে ছিল ও কিছুদিন হইতে বােলপুর শান্তিনিকেতনে রক্ষিত ছিল। এই পুস্তকরাশির অধিকাংশ সংস্কৃত গ্রন্থ তাহার মধ্যে বেদবেদান্ত সংক্রান্ত পুস্তকের সংখ্যাই অধিক। তদ্ভিন্ন অন্যান্য দর্শন, কাব্য, ব্যাকরণ, প্রভৃতিও আছে।”
বাংলা ভাষা সাহিত্যের গােড়ার ইতিহাস বদলে যায় মহামহােপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এবং বসন্তরঞ্জন রায় আবিষ্কৃত হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোঁহা’ এবং বড়ু চণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ গ্রন্থ দুটি ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে মুদ্রিত হওয়ায়। এঁরা দুজনেই পুঁথি সংগ্রহের ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথ দ্বারা পৃষ্ঠপােষিত হয়েছিলেন। বসন্তরঞ্জন প্রায় ৮০০ পুঁথি সংগ্রহ করেছিলেন। ১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা পাণ্ডুলিপি বিভাগ চালু হলে তিনি তাঁর সংরক্ষক নিযুক্ত হন এবং ১৯৩২ সাল পর্যন্ত ওই দায়িত্ব পালন করে পুঁথি সংগ্রহে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করেন। তাঁর সংগৃহীত বহু পুঁথি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে সংরথিত আছে। পূর্বোক্ত শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের পুঁথি আবিষ্কার (১৯০৯) তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি।
পুঁথি সংগ্রহের উদ্যোগের কথা ঘােষণা করে রবীন্দ্রনাথের আবেদন প্রচারিত হয় ‘হিন্দু’, ‘বিহার হেরল্ড’ পত্রিকায় ১৯ ফেব্রুয়ারী ১৯২৩-এ। রবীন্দ্রনাথের আবেদনের অংশ বিশেষ,
“Sir, Realising, the urgent of preserving old manuscripts of Sanskrit and Varnacular literature from destruction and disappearance from India, Viswa-Bharati has under taken to collect, edit and utilise them for public benefit… It is needless to say that old manuscripts sent to us that have a literary or historical importance, will be gratefully received by our institution and preserved in Viswa-Bharati library in Santiniketan with rare.”৩
প্রভাত মুখােপাধ্যায় ১৯২৩ খ্রীষ্টাব্দে বির্বভারতীর পুঁথি বিভাগ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস বিবৃত করতে গিয়ে লিখেছেন,
“গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে আশ্রম বিদ্যালয় পত্তন করার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে হস্তলিখিত পুরাতন গ্রন্থ সংগ্রহের উদ্যোগ করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি আশা করেছিলেন, শান্তিনিকেতনে সেকালের ও একালের বিসংস্কৃতির চর্চা হবে এবং তাঁর এই ভাবনা থেকেই বিভারতীর প্রতিষ্ঠা। সেকালের ভারতীয় সংস্কৃতির উপকরণ পুরাতন গ্রন্থাদির মধ্যেই মুখ্যত নিহিত আছে তার সন্ধান তিনি ভালভাবেই জানতেন। বিভারতীর কর্মধারার একটি প্রধান অংশ ছিল দেশের নানা স্থান থেকে প্রাচীন পুথি সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও আলােচনা।”8
(২)
১৩৫৮ আষাঢ় বিভারতীর ‘পুঁথি পরিচয়’ গ্রন্থমালার প্রথম খণ্ডের মুখবন্ধে অধ্যক্ষ প্রবােধচন্দ্র বাগচী (১৮৯৮-১৯৫৬) লিখেছিলেন,
“বিভারতীর প্রতিষ্ঠার পর সুসংবদ্ধভাবে পুথি সংগ্রহের কাজ আরম্ভ হয়। একাজে সহায়তা করেন ত্রিবান্দ্রমের পণ্ডিত শ্ৰীযুক্ত অবকৃষ্ণ শাস্ত্রী। তিনি কিছুকাল শান্তিনিকেতনে অবস্থান করেন ও নিকটবর্তী অঞ্চল থেকে বহু সংস্কৃত ও বাংলা পুথি সংগ্রহ করেন। আর দক্ষিণ-ভারত থেকেও গ্রন্থাকারে লিখিত প্রায় আড়াই হাজার পুথি সংগ্রহ করা হয়। নেপাল রাজকীয় পুথিশালা থেকেও কিছু পুঁথির প্রতিলিপি আনানাে হয়।”৫
দীনেশচন্দ্র সেন (১৮৬৬-১৯৩৯) তাঁর স্মৃতিকথায় বাংলা পুঁথি সংগ্রহের আদিপর্বের একটা বিবরণ দিয়েছেন,
“সংস্কৃত পুঁথিরই লােকে সন্ধান করিত বাংলা পুঁথির কোন খোঁজই কেহ লইত না।…হঠাৎ একদিন কে আমায় ‘মৃগলুব্ধ’ নামক একখানি প্রাচীন হাতের লিখিত পুঁথির খোঁজ দিয়া গেল। সেই পুঁথিখানি সংগ্রহ করিতে যাইয়া জানিতে পারিলাম, সেরূপ আরও অনেক অপ্রকাশিত পুঁথি ত্রিপুরা জেলায় আছে। তখন আমি এই কাজে আমার প্রকৃতির সমস্ত ঝেকের সহিত লাগিয়া পড়িলাম।…এইভাবেই যখন প্রায় ১০০ শত অপ্রকাশিত বাংলা পুঁথির সংগ্রহ হইল, তখন মাসে মাসে তাহার বিবরণ সম্বলিত সন্দর্ভ ‘সাহিত্যে’ প্রকাশিত করিতে লাগিলাম এবং বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ আমাকে উৎসাহ দিয়া পত্রাদি লিখিতে লাগিলেন।
আমি এই পুঁথি ক্রয় করিবার জন্য অনুরােধ করিয়া এশিয়াটিক সােসাইটির ডাক্তার হােনলি মহাশয়কে চিঠি লিখিলাম। তিনি পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর উপর ভার দিলেন। একদিন সকালবেলা একটি –গ্ল্যাডস্টোন ব্যাগ হাতে করিয়া গৌরবর্ণ, ঈষৎ গুম্ফরেখালাঞ্ছিত শ্রীমুখ-শালী, ফিটবাবুর মত পণ্ডিত বিনােদবিহারী কাব্যতীর্থ আমার বাড়ি আসিয়া উপস্থিত হইলেন। শাস্ত্রী মহাশয় তাঁহাকে পাঠাইয়া দিয়াছেন।…তখন বিনােদ আর আমি পল্লীতে পল্লীতে পুঁথি খুঁজিয়া ঘুরিয়াছি।”
এখানে দীনেশচন্দ্র সম্ভবত ১৮৯৪-৯৫ সালের কথা বলছেন। তবে তার আগেই হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বাংলা পুঁথির সন্ধানে প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্যে’র প্রথম সংস্করণের ভূমিকায় দীনেশচন্দ্র সেকথা বলেছেন,
“আমি…ডাক্তার হােরনলি সাহেবের নিকট…এক পত্র লিখি।…এই সূত্রে মহামহােপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়ের সঙ্গে আমার পত্ৰদ্বারা পরিচয় হয় তিনি প্রাচীন বঙ্গসাহিত্যের উদ্ধার করিতে ইতিপূর্বেই উদ্যোগী ছিলেন…।”৬
কলকাতা বিবিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগ খােলার সঙ্গে সঙ্গেই (১৯১৬) পুঁথি সংগ্রহ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং বাংলা পান্ডুলিপি বিভাগও চালু করা হয়। প্রধানত দীনেশচন্দ্র সেন, নগেন্দ্রনাথ বসু, বসন্তরঞ্জন রায় প্রমুখের সংগৃহীত পুঁথিগুলির উপর নির্ভর করেই ওই পান্ডুলিপি বিভাগ তাঁর পথ চলা শুরু করেছিল। কলকাতা বিধবিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপােষকতায় ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে দীনেশচন্দ্র সেন বাংলা পুঁথি সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ওই বিধবিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক থাকাকালে (১৯১৯-১৯৩২) তিনি বাংলা সাহিত্যের বহু প্রাচীন নিদর্শন উদ্ধার ও সংগ্রহে সফল হন। বিশেষ উল্লেখযােগ্য হল—চন্দ্রকুমার দে (১৮৮৯-১৯৪৬), আশুতােষ চৌধুরী (১৮৯০-১৯৪৪) ও জসীমউদ্দীন (১৯০৩-১৯৭৬) প্রমুখ সংগ্রাহকের সাহায্যে পূর্ববাংলার গ্রামাঞ্চল থেকে পালাগান সংগ্রহ। ওইসব পালগান তাঁর সম্পাদনায় ময়মনসিংহ ‘গীতিকা ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা’ নামে চার খণ্ডে প্রকাশিত হয় (১৯২৩-১৯৩২)।৭ দীনেশচন্দ্র সেন প্রাচীন সাহিত্যের নিদর্শন উদ্ধারের পাশাপাশি সেগুলির তারিখ নির্ণয় করে কালানুক্রমিক ধারাবাহিকতায় বিন্যস্ত করেছিলেন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসচর্চার প্রথম যুগে ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ (১৮৯৬) রচনা করে তিনি ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচনার ধারার সূচনা করেছিলেন।৮
প্রায় একই সময়ে পুঁথি সংগ্রহের উদ্যোগ নেন ‘বিশ্বকোষ’ প্রণেতা নগেন্দ্রনাথ বসু (১৮৬৬-১৯৩৮)। বঙ্গভাষা ও সাহিত্যের দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকায় (১৯০১) দীনেশচন্দ্র উল্লেখ করেছেন যে, নগেন্দ্রনাথের সংগ্রহে তখন এক হাজার বাংলা পুঁথি ছিল। ১৩০৪ ও ১৩০৬ সনের ‘সাহিত্য পরিষৎ’ পত্রিকায় তাঁর সংগৃহীত পুঁথির আংশিক বিবরণ প্রকাশিত হয়েছিল। এখানে তালিকার ছকে ২১৩ টি বাংলা পুঁথির পরিচয় দেওয়া হয়।৯ এ সময় হরগােপাল দাসকুণ্ডুর সংগৃহীত কিছু পুঁথির বিবরণও প্রকাশ পেয়েছিল।১০ ১৮৯৫-৯৬ সালে শিবরতন মিত্রও (১৮৭২-১৯৩৮) বীরভূম অঞ্চলে পুঁথি সংগ্রহ করতে শুরু করেন এবং তাঁর সংগৃহীত দু’শ পুঁথির বিবরণ পরে (১৩২৬) ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ’ থেকে প্রকাশিত হয়।
এইসব উদ্যোগের ফলে হাজার হাজার প্রাচীন সাহিত্য-নিদর্শন অবিভক্ত বাংলাসহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহীত হয়। এর ফলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অতীত ইতিহাসের বিভিন্ন দিক আরাে স্পষ্টতর হয়ে ওঠে। তবে এ ক্ষেত্রে একটা বড় সীমাবদ্ধতা তখনাে ছিল। পুঁথি সংগ্রহের ওই সব উদ্যোগের ক্ষেত্রে হিন্দু সাহিত্য-সাধকদের পুঁথিই কেবল গুরুত্ব পেয়েছিল। মুসলমান সাহিত্য-স্রষ্টাদের সাধনা ও অবদানের দিকটি নেপথ্যে ও অনালােকিত থেকে গিয়েছিল।
(৩)
এই প্রেক্ষাপটে দেখলে বাংলা পুঁথি সংগ্রহ ও গবেষণায় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের (১৮৬৯-১৯৫৩) ভূমিকা ও অবদানের তাৎপর্য যথাযথভাবে অনুধাবন করা যায়। তিনিই ওই সময়কার একমাত্র পুঁথি সংগ্রাহক, সংকলক ও গবেষক, যিনি কোনােরকম প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপােষকতা ও আর্থিক আনুকূল্য ছাড়াই সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টায় আড়াই হাজারেরও বেশি পুঁথির এক ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছিলেন, যার মধ্যে ছিল বেশ কিছু দুর্লভ ও অমূল্য সংগ্রহ। সে-সব পুঁথির মাধ্যমে শুধু যে বাংলা সাহিত্যের নানা অজ্ঞতাপূর্ণ উপাদান ও তথ্য সংগৃহীত হয়েছে তাই নয়, বহু অপরিজ্ঞাত কবি, অপরিচিত কাব্য ও অজানা তথ্য সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। তাঁর বিশাল পুঁথি সংগ্রহ ও দু’খণ্ডে প্রকাশিত তাঁর ‘বাঙ্গালা প্রাচীন পুথি’র বিবরণ থেকে আমরা জানতে পেরেছি, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের একটা উল্লেখযােগ্য অংশ সৃষ্টি হয়েছে বাঙালি মুসলমানের সাহিত্য-সাধনায়। বাঙালি মুসলমানের আধুনিক শিক্ষা ও মানস বিকাশে এর প্রভাব অপরিসীম। বাঙালি মুসলমান তার অতীত ঐতিহ্যের সন্ধান পেয়ে শুধু যে হীনম্মন্যতার হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে তাই নয়, বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে যে নিজের শেকড়ের দৃঢ় বিস্তার রয়েছে, তাও যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছে।
(৪)
আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ তাঁর সংগ্রহশালার অর্ধেকেরও বেশি পুঁথি সংগ্রহ করেছিলেন হিন্দু বাড়ি থেকে। এ থেকে তাঁর প্রচেষ্টার ব্যাপকতা সম্পর্কে ধারণা করা যেতে পারে। ধর্মীয় ছোঁয়াছুঁয়ির জন্য পুঁথি সংগ্রহে ভীষণ সমস্যায় পড়ে তিনি যে বেশ রাগান্বিত হয়েছিলেন, তা বােঝা যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীকে লেখা তাঁর একটি চিঠি থেকে। সেখানে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ লিখেছেন
“…ব্রাহ্মণ কায়স্থদের বাড়ী বিস্তর পুথি রহিয়াছে।…ইতিপূর্বেই পরিচয় পাইয়াছে যে আমি ‘ম্লেচ্ছ’ মুসলমান! হিন্দুগণ ম্লেচ্ছকে পুথি দিতে চায় বলিয়া আমার পক্ষে পুথি সংগ্রহ আরাে কঠিন হইয়া পড়িয়াছে। তাহাতে নাকি পাপ হয়। হায় যে দেশের লােকের মনােভাব এইরূপ, সেই দেশে হিন্দু মুসলমান দিন দিন কাটাকাটি না হওয়াই বিচিত্র।”১১
পুঁথি সংগ্রহ করতে তাঁকে অপরিসীম লাঞ্ছনা, গঞ্জনা এমনকি জীবনের ঝুঁকিও নিতে হয়েছে। এ সম্পর্কে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ নিজেও লিখেছেন,
“হিন্দু বাড়ী গিয়া এমনও দেখিয়াছি—গোঁড়া হিন্দু আমাকে পুঁথি ছুইতে দেয় নাই—সে পাতা মেলিয়া ধরিয়াছে—আর আমি নােট লিখিয়া লইয়াছি।১২
স্বদেশ ও বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে স্বজাতি সম্বন্ধে তাঁর উদার অসাম্প্রদায়িক চেতনা ছিল বলেই অপমান ও বিড়ম্বনা সহ্য করেও হিন্দুঘরের পুঁথি সংগ্রহ করেছেন। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ বলেছেন,
“আলােক আঁধারে এই সংসার। আমার সাহিত্যিক জীবনের অন্ধকার দিক আছে। মুসলমানের ঘরে জন্মিয়া দেব ভাষা (সংস্কৃত) পড়িতে গিয়াছিলাম বলিয়া কৈশােরে একদিন হিন্দু সতীর্থদের কত টিটকারী আমাকে সহ্য করিতে হইয়াছিল। আজ আবার মনে পড়িতেছে, মুসলমান হইয়া হিন্দুর পুঁথি দেখিতে গিয়াছিলাম বলিয়া কত হিন্দু ভ্রাতা তীব্র অবজ্ঞায় আমার প্রতি বঙ্কিম চাহনি নিক্ষেপ করিয়াছিলেন। খােদাতালাকে ধন্যবাদ, তাহাদের সেই ঘৃণা ও শ্লেষ-দুষ্ট বক্রদৃষ্টিতে ব্যাহত না হইয়া আমার সাহিত্যানুরাগ বরং বাড়িয়াই চলিয়াছিল। তাহারই ফলে আজ আমার পর্ণকুটীর হিন্দু-মুসলমানের অতীত সাহিত্যসম্পদে পূর্ণ।”১৩
পুঁথি সংগ্রহের ক্ষেত্রে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ আরাে যে ধরনের বাধার মােকাবেলা করেছিলেন তা হলাে, নিজের দারিদ্র্য এবং সেই সঙ্গে পুঁথি সংগ্রহে প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপােষকতা ও আনুকূল্যের অভাব। তিনি যে শেষ পর্যন্ত সহায়তা পাওয়ার আশায় এশিয়াটিক সােসাইটির শরণাপন্ন হয়েছিলেন, তার স্বীকৃতি পাওয়া যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীকে লেখা তাঁর পত্রে। তাতে সাহিত্যবিশারদ অকপটভাবে নিজের অবস্থা ও প্রত্যাশার কথা বলেছেন,
“আমি দরিদ্র-অন্নচিন্তা জর্জর ব্যক্তি। তাহাতে আপনাদের ন্যায় উচ্চ পদেও আরাঢ় নহি। সুতরাং ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অর্থ ব্যয় করিয়া পুথি সংগ্রহ করা আমার পক্ষে অসাধ্য। উদার প্রকৃতি কয়েকজন বন্ধুর সাহায্যে মাত্র আমি কয়েকটা পুথি দেখিবার সুযােগ পাইয়াছি। আমার মনে হয়, অর্থবলে আমি এই সকল বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করিতে সক্ষম হইব। তাই আজ আমি আপনার, এশিয়াটিক সােসাইটির আশ্রয় ভিক্ষা করিতেছি। …আপনারা অর্থ সাহায্য করিলে আমি মাতৃভাষায় পূজোপকরণের কতকটা অর্ঘ্য সংগ্রহ করিয়া দিতে পারিব।…”১৪
কিন্তু আর্থিক দৈন্যের বাধা সাহিত্য-সাধনায় তাঁর সুগভীর নিষ্ঠার কাছে হার মেনেছিল। কারণ, মাতৃভূমির প্রাচীন পুণ্যময় গাথা গাইতে গাইতে জীবন অতিবাহিত করার ব্রত ছিল তার। আর তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, ‘সাহিত্যধন ভিন্ন অপর ধন আমার হইবার নহে চাহিও না।’১৫
(৫)
বর্তমান বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস খুললেই দুটি বিরাট অধ্যায় চোখে পড়ে—সুলতানি আমলের বাংলা সাহিত্য ও নবাবি আমলের বাংলা সাহিত্য। এই দুটি অধ্যায় চিহ্নিত হত না, যদি না আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ তাঁর জীবন উৎসর্গ করলে মুসলিম শাসনামলের পুঁথিগুলির উদ্ধারের জন্য। অর্থাৎ তাঁর প্রচেষ্টায় ও অবদানে প্রায় পৌনে চারশ বছরের সাহিত্যিক নিদর্শন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে স্থান পেয়েছে। মধ্যযুগের দেড় শতাধিক কবিকে আবিষ্কারের কৃতিত্ব এককভাবে আবদুল করিমের। পনেরাে শতকের শাহ মুহম্মদ সগীর ও জয়েনউদ্দীন, ষােল শতকের দৌলত উজির বাহরাম খান, মুহম্মদ কবীর, শেখ ফয়জুল্লাহ, সৈয়দ সুলতান, সাবিরিদ খান, সৈয়দ মরতুজা, আবদুল হাকিম, ফকীর গরীবুল্লাহ, হায়াত মাহমুদ, সৈয়দ মুহম্মদ আকবর, শেখ চাদ, মুহম্মদ আকিল, হাজী মুহম্মদ, মুহম্মদ নওয়াজ ও শেখ পরাণ, সতেরাে শতকের দোনাগাজী, দৌলত কাজী, মরদন, মাগন ঠাকুর ও সৈয়দ আলাওল এবং আঠারাে শতকের আলী রাজা, মুহম্মদ ফসীহ ও সৈয়দ হামজা প্রমুখ প্রায় শতেক কবির ও তাদের কাব্যের প্রথম আবিষ্কর্তা-পরিচায়ক আবদুল করিমই। অন্যদিকে রয়েছেন শ্রীধর কবিরাজ, দ্বিজ মাধব, কবীন্দ্র পরমের, শ্রীকর নন্দী, রতিদেব, রামরাজা, মুত্ত(রাম সেন, দ্বিজ লক্ষ্মণ, গােবিন্দ দাস প্রমুখসহ ৩০ জনের বেশি হিন্দু কবিও।
আরাকান রাজসভায় যে বাংলা ভাষার চর্চা হত এ কথা আগে কেউ জানত না। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদই সর্বপ্রথম ১৯০১-০২ সালে অতল গহ্বর থেকে উদ্ধার করে লােক-সম্মুখে তা উপস্থাপন করেন। দীনেশচন্দ্র সেন সুপ্রসিদ্ধ কবি ‘মাগন ঠাকুর’কে শুরুতে ‘মগ’ মনে করেছিলেন। সাহিত্যবিশারদের তথ্য ও উপাদান নিয়ে ‘আরকান রাজসভার বাংলা সাহিত্য’ গ্রন্থটি তারই জীবিতকালে প্রকাশিত হয়। এনামূল হকের সঙ্গে যুগ্মভাবে প্রকাশিত এই গ্রন্থে ১৬০০-১৭০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাভাষায় লিখিত সাহিত্যের বিবরণ পাওয়া যায়। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ দেখিয়েছেন, এই একশত বছরের কালসীমায় তিনজন প্রধান কবি এবং আরও অপ্রধান অনধিক ১৫ জন কবির দেখা পাওয়া যায়। এঁদের মধ্যে মাগন ঠাকুর, দৌলত কাজী ও সৈয়দ আলাওলের নাম উল্লেখযােগ্য।
আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ শুধু প্রাচীন পুঁথিরই সংগ্রাহক ছিলেন না, গবেষণা ও সম্পাদনে ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া তাঁর জুড়ি বাংলায় বিরল। সংগৃহীত পুঁথিগুলির মধ্যে যাদের ঐতিহাসিক ও সাহিত্যিক মূল্য রয়েছে সেগুলিরই তিনি কিছু কিছু সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন। সংগৃহীত পুঁথিগুলির সূচিপত্রও সম্পাদনা করে রেখেছিলেন, অর্থাভাবে প্রকাশ করতে পারেননি। তাঁর প্রথম সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থ নরােত্তম ঠাকুরের ‘রাধিকার মানভঙ্গ’ (১৯০১) ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ থেকে প্রকাশিত হয়। তারপর দু’খণ্ডে ‘বাঙ্গালা প্রাচীন পুঁথির বিবরণ’ (১৩২০-২১) পরিষদ থেকে বেরােয়। এই গ্রন্থটিকে প্রাচীন সাহিত্যের গেজেট বলা যেতে পারে। এখানে ৬০০ পুঁথির বিবরণ রয়েছে। জীর্ণ পুঁথির পাঠোদ্ধার করার ক্ষমতা এবং সাহিত্যের প্রতি তাঁর অনুরাগ দেখে সাহিত্য পরিষদের সহায়তায় ও অর্থানুকূল্যে কবিবল্লভ বিরচিত ‘সত্যনারায়ণ পুঁথি’ (১৯১৫), দ্বিজ রতিদেবের ‘মৃগলুব্ধ’ (১৯১৫), রামরাজার মৃগলুব্ধ ‘সম্বাদ’ (১৯১৫), দ্বিজমাধবের ‘গঙ্গামঙ্গল’ (১৯১৬), আলী রাজা বিরচিত ‘জ্ঞান সাগর’ (১৯১৭), বাসুদেব ঘােষের ‘শ্রীগৌরাঙ্গ সন্ন্যাস’ (১৯১৭), মুক্তারাম সেনের ‘সারদা মঙ্গল’ (১৯১৭), শেখ ফয়জুল্লাহ রচিত ‘গােরক্ষ বিজয়’ (১৯১৭) প্রভৃতি পুঁথি-গ্রন্থ আব্দুল করিমের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়।
আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মুসলমান কবির বৈষ্ণব পদাবলীও সংগ্রহ করে প্রকাশ করেন। তিনি পঞ্চাশজন মুসলিম কবির বৈষ্ণব পদাবলী চট্টগ্রাম থেকে সংগ্রহ ও প্রকাশ করেন। সাহিত্যবিশারদের বিভিন্ন প্রবন্ধ পাঠে এবং আলােচনায় বােঝা যাবে তিনি কিরূপ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিষয়াদি পর্যবেক্ষণ করেন।
আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের সাহিত্যকর্মের সুবিন্যস্ত সামগ্রিক চিত্র পেতে হলে ১৮৯৬ থেকে ১৯৫৩ অবধি তাঁর লিখিত সব রচনার, তাঁর আবিষ্কৃত পরিবেশিত তথ্যের-তত্ত্বের সামূহিক-সামষ্টিক রূপ চোখের সামনে থাকা আবশ্যিক। এ কাজ কে বা কারা কবে কোথায় কোন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ও অর্থে করবেন, তা আজ এ মুহূর্তে কল্পনা করা অসম্ভব। এ সত্ত্বেও দীনেশচন্দ্র সেন, সুকুমার সেন, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, মুহম্মদ এনামুল হক, অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, গােপাল হালদার, আশুতােষ ভট্টাচার্য, সুখময় মুখােপাধ্যায়, কাজী দীন মুহম্মদ, জে সি ঘােষ প্রমুখ মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস লেখক মাত্রই তাঁর কাছে অবশ্যই ঋণী। বিশ্বকোষ অভিধানের ‘বাঙলা ভাষা ও সাহিত্য’ প্রধানত তারই সংগৃহীত উপাদানে লিখিত। সুকুমার সেন বাংলা সাহিত্যের যে বিরাট ইতিহাস লিখেছেন, তাতেও সাহিত্যবিশারদের সংগৃহীত তথ্য ও মালমশলা প্রচুর ব্যবহৃত হয়েছে। দীনেশচন্দ্র সেনের ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ এবং ‘প্রাচীন বঙ্গ সাহিত্যে মুসলমানদের অবদান’ এই দুই গ্রন্থে সাহিত্যবিশারদের বহু উপকরণ ব্যবহৃত হয়েছে। ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’-এ আলাওলের ‘ননদিনী রস-বিনােদিনী’ বলে যে পদ আছে, তা আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদেরই সংগ্রহ।
বস্তুত কলকাতা বিববিদ্যালয়ের এম এ শ্রেণিতে পাঠ্যভুক্ত এবং প্রায় সকল সহায়ক গ্রন্থের লােকসাহিত্য অংশ (প্রাচীন ও মধ্যযুগ) সর্বত্রই আবদুল করিমের সংগৃহীত উপাদান রয়েছে। প্রখ্যাত লােক সাহিত্য-গবেষক মুহম্মদ মনসুরউদ্দীনও (১৯০৪-১৯৮৭) তঁার ‘হারামণি’র (৬ খণ্ড) অনেক উপাদান পেয়েছেন সাহিত্যবিশারদের কাছ থেকে। তিনি তাঁর ঋণ স্বীকার করেছেন এভাবে,
“বাংলা সাহিত্যসেবার জন্যে তিনি মুসলমানদের মধ্যে আমাদের যুগে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন। এই আমার ধারণা তাঁর সম্পর্কে। এই জন্যেই আমার হারামণি প্রথম খণ্ড তাঁর নামে উৎসর্গ করি। আমার আগে আর কেউ তাঁর নামে বই উৎসর্গ করেননি।”
মুহম্মদ এনামুল হকের ‘মুসলিম বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগাংশ, মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ‘বাংলা সাহিত্যের কথা’র (মধ্যযুগ) মুসলিম রচিত সাহিত্যাংশ’ (দোভাষী পুথির অংশ ছাড়া), কাজী দীন মুহম্মদের ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে’রও ওই অংশ আর শাহেদ আলির ‘বাংলা সাহিত্যে চট্টগ্রামের অবদান’ সাহিত্যবিশারদের আবিষ্কার-নির্ভর। ব্রজসুন্দর সান্যাল সম্পাদিত চারখণ্ডে ‘মুসলমান বৈষ্ণব কবি’ নামক গ্রন্থের সমস্ত মাল-মশলা আবদুল করিম সাহেবই সংগ্রহ করে দেন। ব্রজসুন্দর মুসলমান বৈষ্ণব কবি ‘আলী রাজা’ (১৩১১) গ্রন্থ রচনায়ও সাহিত্যবিশারদের সাহায্য নিয়েছেন।
(৬)
সাহিত্যবিশারদের সামগ্রিক সাহিত্য সম্ভারকে শুধু যে তাঁর সমকালের গবেষক ও সাহিত্যকারগণ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস পুনর্গঠনে কাজে লাগিয়েছেন তা নয়, পরবর্তীকালের গবেষকগণ সেসব অবদানকে সাহিত্য-সমাজ-সংস্কৃতির নানা ক্ষেত্রে প্রয়ােজনমতাে কাজে লাগিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, শেষ জীবনে সাহিত্যবিশারদ নিজের পুঁথি সম্পদকে কাজে লাগিয়ে ‘বঙ্গ সাহিত্য পরিক্রমা’ নাম দিয়ে মধ্যযুগের কবি ও কাব্যের পরিচিতিমূলক একটি ইতিহাস লেখার ইচ্ছাপােষণ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর সে ইচ্ছাপূরণ হয়নি। তাঁর এই অসমাপ্ত কাজকে পূর্ণতা দিতে পরবর্তীতে এগিয়ে এসেছিলেন আহমদ শরীফ। দুই খণ্ডে সমাপ্ত তাঁর ‘বাঙালী ও বাংলা সাহিত্য’ নামে যে গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে বহুলাংশে আবদুল করিমের সাধনার ফসলকে মােটামুটিভাবে কাজে লাগানাে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আহমদ শরীফ গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের ভূমিকায় লিখেছেন,
“মধ্যযুগের কবি ও কাব্যের পরিচিতিমূলক একখানা ইতিহাস রচনার প্রবল আগ্রহ জেগেছিল অন্তিমলগ্নে পিতৃব্য আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের। ভূমিকা স্বরূপ ‘বঙ্গসাহিত্য পরিক্রমা’ নামের একটি প্রবন্ধও রচনা করেছিলেন তিনি। বিরাশি বছরের জীবন-পরিসরে ষাট বছরের লেখক-জীবনে বিভিন্ন কবি ও কাব্যের পরিচিতিমূলক পাঁচ শতাধিক প্রবন্ধও ছিল তাঁর আয়ত্তে। কাজেই দেহ বার্ধক্যজীর্ণ না হলে এবং প্রকাশকের সন্ধান পেলে হয়তাে কাজ শুরু করে দিতেন কিন্তু বহু চেষ্টায়ও সম্পাদিত ‘পদ্মাবতী’ প্রকাশক না পেয়ে তিনি এ বাসনা ত্যাগ করেন। ১৯৫৩ সনের ৩০ শে সেপ্টেম্বর তাঁর প্রয়াণের পর তাঁর অপূর্ণ অন্তিম বাসনা আমাকে অনুপ্রাণিত করে এবং অক্টোবর মাসেই তাঁর আবিষ্কৃত কবি ও কাব্যের পরিচিতিমূলক ইতিহাস রচনার কাজ শুরু করি। কিন্তু মাসখানেকের মধ্যেই অমুদ্রিত পুথিভিত্তিক এ ধরনের কাজের অসার্থকতা উপলব্ধি করি এবং তাঁর আবিষ্কৃত প্রধান ও বিশিষ্ট কাব্যগুলাে সম্পাদনা ও প্রকাশনাই প্রাথমিক কর্তব্য বলে স্বীকার করি। সুখের বিষয় উল্লেখযােগ্য পুথির অধিকাংশই সম্পাদিত ও প্রকাশিত হয়েছে।”১৬
শুধু আহমদ শরীফ নয়—গােলাম সাকলায়েন, মযহারুল ইসলাম, ওয়াকিল আহমদ, মমতাজুর রহমান তরফদার, আবদুল হাফিজ, আবদুল জলিল, ক্ষেত্র গুপ্ত, মােতাহার হােসেন সুফি, আবদুল হক চৌধুরি, মােহাম্মদ আবদুল আউয়াল, ঐতিহাসিক আবদুল করিম, মুহম্মদ আবু তালিব, মাহবুবুল আলম, মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, আবদুল মান্নান সৈয়দ, মাহমুদা খানম, মােহাম্মদ মাহফুজুল্লাহ, মহাম্মদ দানীউল হক, খন্দকার মহমুদুল ইসলাম, আজহার ইসলাম প্রমুখ গবেষণগণও তাদের সাহিত্য গবেষণায় সাহিত্যবিশারদের তথ্যকে ব্যবহার না করে পারেননি।
আবদুল করিমের সংগৃহীত পুঁথি সম্পদ কাজে লাগিয়ে মধ্যযুগের বেশকিছু কবির কাব্য বা কাব্য গ্রন্থাবলিও সম্পাদিত হয়েছে। এক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য হচ্ছে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সম্পাদিত আলাওলের ‘পদ্মাবতী’ (১৯৫০), সৈয়দ আলী আহসান সম্পাদিত আলাওলের ‘পদ্মাবতী’ (১৯৬৮) ও সৈয়দ হামজার ‘মধুমালতী’ (১৯৫৭) আহমদ শরীফ সম্পাদিত দৌলত উজির বাহরাম খানের ‘লাইলী মজনু’ (১৯৫৭), মুহম্মদ খানের ‘সত্যকলি-বিবাদ-সংবাদ’ (১৯৫৯), মুহম্মদ কবীরের ‘মধুমালতী’ (১৯৬০), আলাওলের ‘তােহফা’ (১৯৫৮) ও ‘সিকান্দরনামা’ (১৯৭৭), মুজাম্মিলের ‘নীতিশাস্ত্র-বার্তা’ (১৯৬৫) , ‘শাবারিদ খান গ্রন্থাবলি’ (১৯৬৬), কোরেশী মাগন ঠাকুরের ‘চন্দ্রাবতী’ (১৯৬৭), সৈয়দ সুলতানের ‘গ্রন্থাবলী’ (১৯৭২), দোনাগাজীর ‘সয়ফুলমুলক বদিউজ্জামাল’ (১৯৭৫), শেখ মুত্তালিবের ‘কিফায়তুল মুসল্লিন’ (১৯৭৮), সৈয়দ সুলতানের ‘নবীবংশ’ (১৯৭৮) ও ‘রসুলচরিত’ (১৯৭৮), আফজল আলীর ‘নসিয়তনামা’ (১৯৫৯), আবদুল গফুর সম্পাদিত ফয়জুল্লাহর ‘সুলতান জমজমা’ (১৯৬৯) আলী আহমদ সম্পাদিত দৌলত উজির বাহরাম খানের ‘ইমামবিজয়’ (১৯৬৯) রাজিয়া সুলতানা সম্পাদিত নওয়াজিস খানের ‘গুলে বকাওলী’ (১৯৭০), গােলাম সামদানী কোরেশী সম্পাদিত আলাওলের ‘তােহফা’ (১৯৭৫) ও মুহম্মদ এনামুল হক সম্পাদিত শেখ জাহিদের ‘আদ্য পরিচয়’ (১৯৭৯) ইত্যাদি।
(৭)
আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের সংগৃহীত পুঁথির মধ্যে মুসলমান-রচিত ৬৯৭টি পুঁথি ১৯৫০ সালে দান করা হয় ঢাকা বিবিদ্যালয়কে। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালে রাজশাহীর বরেন্দ্র মিউজিয়ামকে হিন্দু-রচিত ৩৮১টি পুঁথি দান করা হয়। সাহিত্যবিশারদ তখন পরলােকগমণ করেছেন। তাঁর ইচ্ছানুসারে আহমদ শরীফ পুঁথিগুলি মিউজিয়ামকে দান করেন। এভাবে বাংলা সাহিত্যের উৎসসন্ধানী গবেষণায় আবদুল করিম যে অবদান রেখেছেন তার কোনাে তুলনা হয় না। তাঁর হাতে পড়েই পুঁথিগুলাে প্রকৃত মর্যাদা পেয়েছে। সেকারণেই আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস তাকে ছাড়া রচিত হওয়া সম্ভব নয়। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী এক পত্রে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ সম্পর্কে লেখেন,
“আপনি যেরূপ অফুরন্ত অধ্যবসায়, যত্ন ও পরিশ্রম করিয়া বাঙ্গালা প্রাচীন পুঁথির বিবরণ সংগ্রহ করিয়া পাঠাইতেছেন, তাহাতে আপনার নিকট বঙ্গসমাজ চিরঋণী থাকিবে।…আপনার ঋণ পরিশােধে আমরা অক্ষম।…আপনার প্রবন্ধগুলি পাঠক সমাজে প্রকাশ করিয়া…আপনার নিকটে ঋণমুক্ত হইতে পারিলেই আমরা যথেষ্ট জ্ঞান করিব। আপনার পুরস্কার ভবিষ্যৎ ইতিহাস লেখকের হস্তে। বর্তমানের অধম সমাজ আপনার পুরস্কার দিতে পারিবে না।”১৭
তথ্যসূত্রঃ
- ১. ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’-এর দ্বিতীয় বর্ষের কার্যবিবরণী, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা, শ্রাবণ ১৩০২, কলকাতা।
- ২. রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীকে লেখা ব্যোমকেশ মুস্তফীর চিঠিপত্র দেখুন-সাহিত্য সাধক চরিতমালা, দশম খণ্ড, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, কলকাতা, পৃ. ৫৭-৬০।
- ৩. পুঁথি পরিচয়, চতুর্থ খণ্ড, বিভারতী গবেষণা প্রকাশনা সমিতি, বির্বভারতী, কলকাতা, ১৯৮০।
- ৪. বাংলা পুঁথি রবীন্দ্রনাথ ও বির্বভারতীর পুঁথি বিভাগ, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা, বর্ষ-৭৫, সং-১, কলকাতা, পৃ. ২৫।
- ৫. প্রবােধচন্দ্র বাগচী, পুঁথি পরিচয়, প্রথম খণ্ড, মুখবন্ধ, বিভারতী, কলকাতা, ১৯৭৫।
- ৬. দীনেশচন্দ্র সেন, বঙ্গভাষা ও সাহিত্য, প্রথম সংস্করণ, ১৮৯৬, ভূমিকা-অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ, কলকাতা, ১৯৯১।
- ৭. ১ম খণ্ড (১৯২৩) ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’ নামে এবং ৩ খণ্ড (১৯২৬, ১৯৩৩, ১৯৩২) ‘পূর্ববঙ্গ গীতিকা’ নামে প্রকাশিত।
- ৮. ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ রচনার জন্য তথ্য ও পুঁথি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তিনি ব্যক্তিগতভাবেও অমানুষিক পরিশ্রম করেছেন। ত্রিপুরা ও চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে পুথি সংগ্রহের জন্য কোনাে কোনােদিন তিনি ২০ মাইল পর্যন্ত হেঁটেছেন। দেখুন- সুপ্রিয় সেন, দীনেশচন্দ্র, কলকাতা, ১৯৮৫, পৃ. ২২।
- ৯. নগেন্দ্রনাথ বসু, বাঙ্গালা পুঁথির সংক্ষিপ্ত বিবরণ, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা, ৪র্থ সংখ্যা, ১৩০৪, পৃ. ২৯৭-৩৪৪ ও ১ম সংখ্যা, ১৩০৫, পৃ. ৪৬-৮০।
- ১০. হরগােপাল দাসকুণ্ডু, বাঙ্গালা পুঁথির বিবরণ, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা, তৃতীয় সংখ্যা, ১৩১৩, পৃ. ১৬১-৯২।
- ১১. সত্যজিৎ চৌধুরী ও অন্যন্য সম্পাদিত, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী স্মারক গ্রন্থ, কলকাতা, ১৯৭৮, পৃ. ৬৪-৬৬।
- ১২. দেখুন-আহমদ শরীফ, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ২০০২, পৃ. ২৮।
- ১৩. বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, শ্রাবণ ১৩৩০।
- ১৪. সত্যজিৎ চৌধুরী ও অন্যন্য সম্পাদিত, প্রাগুক্ত, পৃ. ৬৪-৬৬।
- ১৫. জীবেন্দ্রকুমার দত্তকে লিখিত আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের পত্র, কোহিনূর, বৈশাখ ১৩১২। দেখুন-মুহম্মদ মজিরউদ্দীন, সাহিত্যবিশারদের একগুচ্ছ পত্র মন ও জীবন, বাংলা একাডেমির পত্রিকা, কার্তিক-পৌষ ১৩৮৮, ঢাকা, পৃ. ৯৪।
- ১৬. আহমদ শরীফ, বাঙালী ও বাংলা সাহিত্য, খণ্ড-১, নিউ এজ পাবলিকেশন, ঢাকা, ২০০৭, নিবেদন অংশ দ্রষ্টব্য।
- ১৭. জীবেন্দ্রকুমার দত্ত, বঙ্গভাষায় মুসলমান লেখক আবদুল করিম, দেখুন- মুহম্মদ এনামুল হক ও কবির চৌধুরী সম্পাদিত, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ স্মারক গ্রন্থ, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৯৬৯, পৃ. ২৯।
‘নবজাগরণ’ অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।
‘নবজাগরণ’ এর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন হতে নিচের আইকনে ক্লিক করুন।