• মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
Friday, August 22, 2025
নবজাগরণ
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ - জ্ঞান অর্জনের বিস্বস্থ সংস্থা
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi
No Result
View All Result
নবজাগরণ - জ্ঞান অর্জনের বিস্বস্থ সংস্থা
No Result
View All Result

গোপাল পাঁঠা : ইতিহাসের অন্ধকারে এক বিতর্কিত চরিত্র

মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
August 18, 2025
in ভারতবর্ষের ইতিহাস, রাজনীতি
0
গোপাল পাঁঠা : ইতিহাসের অন্ধকারে এক বিতর্কিত চরিত্র

চিত্রঃ গোপাল পাঁঠা, Image Source: Google

Share on FacebookShare on Twitter

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম

কলকাতার বউবাজারের মঙ্গলা লেনে জন্মেছিলেন গোপাল পাঁঠা ওরফে গোপাল চন্দ্র মুখোপাধ্যায়। পারিবারিক পেশা ছিল পাঁঠার মাংসের ব্যবসা, আর সেই সূত্রেই তাঁর নামের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিল ‘পাঁঠা’। এক সাধারণ ব্যবসায়ী হয়েও তিনি পরিণত হন ইতিহাসের এক রক্তাক্ত অধ্যায়ের মুখ্য চরিত্রে। ১৯৪৬ সালের ভয়াবহ দাঙ্গার সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে যায় এমনভাবে যে আজও ইতিহাসে তাঁর উপস্থিতি বিতর্কিত হয়ে আছে।

গোপাল পাঁঠা : ইতিহাসের অন্ধকারে এক বিতর্কিত চরিত্র
চিত্রঃ গোপাল পাঁঠা, Image Source: Google

১৯৪৭ সালের অগাস্টে স্বাধীনতার সূর্যোদয় হয়েছিল দীর্ঘ দুই শতকের পরাধীনতার অবসান ঘটিয়ে। কিন্তু সেই ভোরের আগে দেশকে পার হতে হয়েছিল বিভাজনের অন্ধকার, দাঙ্গা, প্রতিশোধ আর রক্তপাতের মধ্য দিয়ে। নেহরু যখন দিল্লিতে বলছিলেন—“At the stroke of midnight, when the world is sleeping…” তখন সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে মহাত্মা গান্ধী ছিলেন কলকাতায়। তিনি বলেছিলেন, “স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপন করার থেকেও বেশি হিন্দু-মুসলিম একতা বজায় রাখা দরকার ছিল। যেভাবে ভারত এবং পাকিস্তান স্বাধীনতা পেয়েছে তা এই দুই দেশের মধ্যে শত্রুতার বীজ বপন করে দিয়েছে।” গান্ধীর এই উপস্থিতির পেছনে ছিল ১৯৪৬ সালের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা।

সে বছরের মে মাসে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লেমেন্ট অ্যাটলি ঘোষণা করেন যে ভারতীয়দের হাতে ভারতের শাসনভার তুলে দিতে হবে। ক্যাবিনেট মিশন এসে প্রস্তাব দেয়—হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে ভারত এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে পাকিস্তান গঠিত হোক। মুসলিম লীগ সানন্দে রাজি হয়, কিন্তু কংগ্রেস অস্বীকার করে। জিন্না তখন শক্তি প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেন এবং ঘোষণা করেন ১৬ আগস্ট ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’। উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের দাবিকে জোরালো করা।

সেই দিন বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সুহরাওয়ার্দী কলকাতা পুলিশের ছুটি ঘোষণা করেন এবং শহরে বন্ধের ডাক দেন। কার্যত প্রশাসন অচল হয়ে পড়ে। মুসলিম লীগ সমর্থকরা রাস্তায় নামে, পাল্টা নামে হিন্দু মহাসভা ও কলকাতার মারওয়াড়ি ব্যবসায়ী সমাজ। মুহূর্তের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে—শহর হিন্দু ও মুসলমানের দ্বন্দ্বে বিভক্ত হয়ে যায়। কলকাতার অলিগলিতে লাশ জমতে থাকে, শকুনের মহোৎসব শুরু হয়। ছয় দিন ধরে চলা এই হত্যাযজ্ঞে প্রাণ হারান কয়েক হাজার মানুষ। The Statesman লিখেছিল—“গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংয়ের ঘটনা যেকোনও যুদ্ধের বিভীষিকাকে লজ্জিত করবে।”

গোপাল পাঁঠা : ইতিহাসের অন্ধকারে এক বিতর্কিত চরিত্র
চিত্রঃ হোসেন শহীদ সুহরাওয়ার্দী, Image Source: Google

এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতেই আবির্ভাব ঘটে গোপাল চন্দ্র মুখোপাধ্যায় ওরফে গোপাল পাঁঠার। তিনি বউবাজারের স্থানীয় যুবকদের নিয়ে গড়ে তোলেন সশস্ত্র প্রতিরোধ বাহিনী। প্রচলিত কাহিনিতে শোনা যায়, তাঁর ঘর হয়ে উঠেছিল অস্ত্রের আস্তানা; তিনি নিজ হাতে অস্ত্র বিতরণ করতেন এবং প্রতিরোধের ডাক দিতেন। অনেকের কাছে তিনি ছিলেন হিন্দু মহল্লার রক্ষক, যিনি মুসলিম লীগের আক্রমণ থেকে মানুষকে বাঁচিয়েছিলেন। আবার অন্যদের চোখে তিনি ছিলেন এক উস্কানিদাতা, যিনি প্রতিশোধের নামে দাঙ্গার আগুন আরও উসকে দিয়েছিলেন।

এই সময়েই গান্ধী কলকাতায় এসে অনশন শুরু করেন এবং তাঁর শান্তিপূর্ণ উদ্যোগে শহরের উত্তেজনা অনেকটাই প্রশমিত হয়। তাই একই কালে দাঁড়িয়ে দুটি বিপরীত চরিত্রকে দেখা যায়—গান্ধী ছিলেন শান্তির প্রতীক, আর গোপাল পাঁঠা সহিংস প্রতিরোধ ও প্রতিশোধের প্রতীক।

দেশভাগের পরে গোপাল পাঁঠার নাম কলকাতার অলিগলিতে রয়ে গেল কিংবদন্তি হয়ে। তিনি হিন্দু মহাসভার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যদিও জাতীয় রাজনীতির মঞ্চে বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারেননি। স্থানীয় সমাজে তিনি এক আলোচিত ও ভয়ংকর চরিত্র হয়েই থেকে যান। অনেকে তাঁকে সম্মান করতেন, আবার অনেকেই তাঁর নাম শুনে আতঙ্কিত হতেন।

ইতিহাস আজও তাঁকে নিয়ে বিভক্ত। তিনি কি সত্যিই হিন্দু সমাজের রক্ষক ছিলেন, নাকি ছিলেন রক্তাক্ত দাঙ্গার অন্যতম মুখ্য চরিত্র? একদিকে তাঁর কর্মকাণ্ডকে অনেকে বীরত্ব বলে মনে করেন, অন্যদিকে অনেক ঐতিহাসিক তাঁর নাম উচ্চারণ করেন রক্তপাতের প্রতীক হিসেবে।

নিশ্চিতভাবে বলা যায়, গোপাল পাঁঠা ছিলেন এক অস্থির সময়ের উৎপাদন। স্বাধীনতার আলো ফুটলেও তার ছায়ায় যে অন্ধকার জমেছিল, তার প্রতীক তিনি। ভারতের স্বাধীনতার কাহিনি যতটা উজ্জ্বল ১৫ আগস্টের আলোয়, ততটাই অন্ধকার ঢাকা ১৬ আগস্টের দাঙ্গায়। আর সেই দাঙ্গার ভয়াবহতা স্মরণ করিয়ে দেয় গোপাল পাঁঠার নাম—যা আজও ইতিহাসের পাতায় একই সঙ্গে ভয়ের, বিতর্কের এবং স্মৃতির প্রতিচ্ছবি।

কলকাতার বউবাজারের মঙ্গলা লেনের বাসিন্দা ছিলেন গোপাল চন্দ্র মুখোপাধ্যায়। পারিবারিক পেশা ছিল পাঁঠার মাংস বিক্রি। তাঁর বাবা অনুকূল চন্দ্র মুখোপাধ্যায়ই প্রথম এই ব্যবসা শুরু করেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পরিবারের এই পেশা চলতে থাকায় গোপাল চন্দ্রের নামের সঙ্গে জুড়ে যায় ‘পাঁঠা’। শহরের অলিগলিতে, চায়ের আড্ডায় কিংবা বাজারের আড্ডায় মানুষ তাঁকে ডাকত গোপাল পাঁঠা নামেই।

১৯৪৬ সালের ভয়াবহ দাঙ্গার সময় যখন গোটা কলকাতা রক্তে ভেসে যাচ্ছিল, তখন নিছক এক ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্র মুখোপাধ্যায় পরিণত হন প্রতিরোধের অন্যতম মুখে। নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন তিনি। শোনা যায়, তিনি ভারতীয় জাতীয় সেনার সদস্যদের উদ্দেশে বলেছিলেন ‘ওয়ান টু টেন’ নীতি মেনে চলতে—অর্থাৎ “আমাদের একজনকে মারলে তোমরা ওদের দশজনকে মারবে।” এই উক্তি নিয়েই আজও বিতর্ক অব্যাহত। ইতিহাসবিদদের মতে, এখানে ‘আমাদের’ মানে ছিল হিন্দু সম্প্রদায় আর ‘ওদের’ মানে মুসলমান। তবে একাংশের মতে, তাঁর আসল উদ্দেশ্য ছিল হামলাকারীদের প্রতিরোধ করা, ধর্ম নয়।

ঐতিহাসিক সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গবেষণায় উঠে এসেছে ভিন্ন ছবি। তিনি জানান, ব্যবসার সূত্রে গোপাল পাঁঠার মুসলমান সমাজের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। নিয়মিত যোগাযোগও রাখতে হত তাঁদের সঙ্গে। তাই অকারণে মুসলমান বিদ্বেষ ছড়ানো তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। বরং দাঙ্গার ভেতরে তিনি হাতে অস্ত্র তুলেছিলেন মূলত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে। তবুও, যেহেতু মুসলিম লীগের ডাকেই ১৬ অগাস্টের ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে-র সূত্রপাত, আর অধিকাংশ আক্রমণকারীই ছিলেন মুসলিম, তাই পরবর্তীকালে গোপাল পাঁঠাকে মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে বিশেষ রাজনৈতিক শক্তি।

এই প্রসঙ্গে গোপাল পাঁঠা নিজেই এক সাক্ষাৎকারে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছিলেন। তাঁর ভাষায়—“সেই সময় বাইরে দাঙ্গা চলছিল, আমি বাড়িতে ছিলাম না। ফিরে আসার সময় দেখি আমার বাড়ির দরজার বাইরে শুকনো কাঠ জড়ো করে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দরজা বন্ধ, ভেতরে রয়েছে মেয়ে-বউরা। আমার হাতে একটা সোর্ড ছিল। আমার বাড়িতে যে লুটেরাগুলো আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করছিল তাদের মধ্যে একজনকে আমি দিলাম এক কোপ। সে তো সেখানেই মারা গেল এবং যারা ছিল তারা পালিয়ে গেল।”

এই ঘটনা ঘটেছিল ১৬ অগাস্টে। পরক্ষণেই গোপাল মুখোপাধ্যায় আরও যোগ করেন—“আগে থাকতে কিছু হাতবোমা মজুত রাখা ছিল। আমার কাছে দুটো আমেরিকান ৪৫ পিস্তল ছিল। ফুল লোডেড। চাইলে চালাতে পারতাম কিন্তু চালাইনি। মানুষের প্রাণ নেওয়া খুব সহজ, কিন্তু বাঁচানো খুব মুশকিল। কিন্তু এত বড় দাঙ্গা হবে ভাবা যায়নি। ১৬ তারিখে পাড়ার কিছু মুসলমান পরিবারকে থানায় পৌঁছে দিয়ে আসা হয়। এক মুসলমান জাদুকর বাড়ি ছেড়ে যেতে রাজি হননি। তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয় হিন্দু যুবকরা। কিন্তু ওই দিনই সন্ধ্যের পর থেকে বীভৎস দাঙ্গার খবর আসে। জানা যায়, স্থানীয় ফিয়ার্স লেনে, সাগর দত্ত লেনে প্রচুর মানুষ মারা পড়েছে। হিন্দুরাই বেশিরভাগ মারা গিয়েছিল। তবে যে মুসলমান নেতারা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য এই দাঙ্গা লাগালেন, তাদের কিছু যায় আসলো না। নেতাদের কারণে অনেক নির্দোষ গরিব মুসলমান মারা যায়, কারণ তারাই পেটের টানে রাস্তায় বেরিয়েছিল।”

এই বিবরণ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, দাঙ্গার দিন গোপাল পাঁঠার অবস্থান ছিল এক জটিল দ্বন্দ্বের মধ্যে। একদিকে তিনি নিজের পরিবার ও মহল্লাকে রক্ষা করতে বাধ্য হয়েছিলেন, অন্যদিকে অনেক নিরীহ মুসলমানকেও তিনি রক্ষা করেছিলেন। তাঁর কথায় প্রতিফলিত হয়েছে—দাঙ্গা ছিল মূলত রাজনৈতিক নেতাদের প্ররোচনা ও স্বার্থরক্ষার ফসল। কিন্তু তার খেসারত দিতে হয়েছিল সাধারণ হিন্দু-মুসলমান উভয়কেই।

গোপাল পাঁঠার নাম আজও ইতিহাসে জড়িয়ে আছে রক্তাক্ত অধ্যায়ের সঙ্গে। কারও কাছে তিনি হিন্দু সমাজের রক্ষক, আবার কারও কাছে উগ্র প্রতিরোধের প্রতীক। তবে তাঁর নিজের বক্তব্য ও তৎকালীন সাক্ষ্যপ্রমাণে প্রতিফলিত হয়, তিনি শুধুই দাঙ্গার এক অন্ধকার চরিত্র নন, বরং ছিলেন এমন এক সময়ের ফল, যখন রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যর্থ হয়েছিল, আর সাধারণ মানুষকেই অস্ত্র তুলে নিতে হয়েছিল নিজেদের টিকে থাকার জন্য।

সেই অগ্নিগর্ভ দিনগুলোর নানান প্রকাশিত বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৮ অগাস্ট সকাল থেকেই পরিস্থিতি এক নতুন মোড় নেয়। গোপাল মুখোপাধ্যায় তাঁর সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ে গাড়ি চেপে প্রবেশ করেন কলকাতার বিভিন্ন মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায়। সমসাময়িক সূত্রে দাবি করা হয়, এই পাড়াগুলোতেই লুকিয়ে ছিল দাঙ্গায় সক্রিয় আক্রমণকারীরা। সেখানে গিয়ে শুরু হয় সংঘর্ষ এবং নৃশংস হত্যালীলা। গোপাল মুখোপাধ্যায়ের বাহিনী একা ছিল না, তাঁদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে পড়েছিলেন আরও অসংখ্য সাধারণ মানুষ। সেই সময়ে কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টির বহু কর্মী-সমর্থকও এই প্রতিরোধে সামিল হয়েছিলেন। দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর গুরুদ্বারার শিখ সম্প্রদায়ও অস্ত্র তুলে নেয় নিজেদের রক্ষার্থে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এক রাতের মধ্যে শহরের কামারশালাগুলোতে টগবগ করে আগুন জ্বলতে শুরু করে। সেখানে তৈরি হতে থাকে তরোয়াল, বর্শা, কাটারি থেকে শুরু করে নানা ধরনের দেশি অস্ত্রশস্ত্র। এমনকি রাস্তার রেলিং পর্যন্ত খুলে নিয়ে যাওয়া হয় লোহার চাহিদা মেটাতে। দেশপ্রিয় পার্ক কিংবা রাসবিহারী অঞ্চলে টানা কয়েকদিন একটাও অক্ষত রেলিং অবশিষ্ট ছিল না—সবকিছুই গিয়েছিল কামারশালার চুল্লিতে।

ইতিহাসের পাতা বলছে, উচ্চপদস্থ নেতাদের ক্ষমতার লোভ আর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার দায়ে বলি হয়েছিলেন মূলত মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত সাধারণ বাঙালিরা। সরকারি হিসেবে ১৬ থেকে ২০ অগাস্টের দাঙ্গায় নিহতের সংখ্যা ছিল প্রায় পাঁচ হাজার। কিন্তু বিভিন্ন প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বাধীন সূত্রের বক্তব্য, বাস্তবে মৃতের সংখ্যা অন্তত কুড়ি হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। শহরের অলিগলিতে তখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল অগণিত লাশ, রক্তে ভেসে যাচ্ছিল কলকাতা।

শোনা যায়, কলকাতার সেই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি দেখে মহাত্মা গান্ধী ব্যক্তিগতভাবে গোপাল মুখোপাধ্যায় ও তাঁর বাহিনীকে অস্ত্র সমর্পণ করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিধানচন্দ্র রায়ের ঘনিষ্ঠ, এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও গোপাল মুখোপাধ্যায় সেই আবেদন মানেননি। তাঁর যুক্তি ছিল স্পষ্ট—যে মুহূর্তে রাষ্ট্র যন্ত্র সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ, এবং যখন সাধারণ মানুষ প্রতিদিন মরছে, তখন অস্ত্র ফেলে দেওয়া মানে আত্মঘাতী হওয়া।

তবে এখানেই শুরু হয় বিতর্ক। ইতিহাসবিদদের একাংশ গোপাল মুখোপাধ্যায়কে সরাসরি দায়ী করেছেন কলকাতার রক্তক্ষয়ের জন্য। তাঁদের মতে, তিনি এবং তাঁর বাহিনী ছিলেন মূলত ‘রাস্তার গুন্ডা’, যাঁরা অযথাই পরিস্থিতিকে আরও রক্তাক্ত করে তুলেছিলেন। অন্যদিকে, আরেক দল ইতিহাসবিদ মনে করেন, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ পক্ষপাতদুষ্ট। তাঁদের মতে, যারা আজ গোপালকে গুন্ডা বলে আখ্যা দেন, তাঁরা আসলে বেঁচে আছেন গোপালের কারণেই। কারণ, সেই সময়ে যদি তিনি প্রতিরোধ গড়ে না তুলতেন, তবে হয়তো আরও অগণিত নিরীহ মানুষ প্রাণ হারাতেন।

অতএব, গোপাল মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক আজও থামেনি। কারও কাছে তিনি উগ্র হিংসার প্রতীক, আবার কারও কাছে তিনি প্রতিরোধের নায়ক। তবে ইতিহাসের যেকোনও বিশ্লেষণেই অস্বীকার করা যায় না, তিনি ছিলেন সেই দাঙ্গার অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্র, যাঁকে বাদ দিয়ে কলকাতার ১৯৪৬ সালের রক্তাক্ত অধ্যায় লেখা যায় না।

ঐতিহাসিক সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর এক গবেষণায় লিখেছেন, “গোপাল কখনই সাম্প্রদায়িক ছিলেন না, শুধু আত্মরক্ষার্থে হিন্দু যুবকদের সংগঠিত করেছিলেন। তিনি উভয় সম্প্রদায়ের গৃহহীন ও বিধবাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং তাঁদের খুন বা ধর্মান্তরিত হওয়া থেকেও রক্ষা করেছিলেন।”

এই বক্তব্যে ধরা পড়ে গোপাল পাঁঠা ওরফে গোপাল মুখোপাধ্যায়ের প্রকৃত মানসিকতা। তিনি ছিলেন মূলত এক অস্থির সময়ের সন্তান, যিনি প্রতিরোধের হাতিয়ার হাতে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন, কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর মন ছিল উদার এবং মানবিকতায় ভরপুর। ১৯৪৬ সালের সেই ভয়াবহ দাঙ্গার সময়, যখন কলকাতার রাস্তায় রক্তধারা বয়ে যাচ্ছিল, তখন বহু মানুষ গোপাল মুখোপাধ্যায়কে কেবলমাত্র এক রক্ষাকর্তা হিসেবেই দেখেছিলেন। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে বহু বিধবা, অনাথ, গৃহহীন মানুষ আশ্রয় পেয়েছিলেন তাঁর ছায়াতলে। পরবর্তী সময়ে শহরের সাধারণ মানুষ তাঁর প্রতিরোধকে নায়কোচিত সম্মান দেয়। তাঁদের কাছে গোপাল মুখোপাধ্যায় হয়ে ওঠেন সন্ত্রাসের অন্ধকারের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদের প্রতীক।

কিন্তু দাঙ্গার ক্ষণস্থায়ী সেই পর্ব শেষ হওয়ার পর আর কোনোদিনও তিনি অস্ত্র হাতে তোলেননি। জীবনের বাকি সময় তিনি কাটিয়ে দেন সমাজসেবার কাজে, সাধারণ মানুষকে সাহায্য করার মধ্যে দিয়ে। বিভিন্ন সময়ে গোপালের নাম জড়াতে চাওয়া হলেও তিনি বারবার সাফ জানিয়ে দেন যে তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। বিধানচন্দ্র রায়ের মতো প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠ হয়েও তিনি কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তাঁর নিজের ভাষায়, তিনি ছিলেন একজন সাধারণ মানুষ, সাধারণ মানুষের মতো করেই বাঁচতে চেয়েছিলেন, দলীয় রাজনীতির ঘেরাটোপে নিজেকে আটকে রাখতে চাননি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গোপাল মুখোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা এমনই ছিল যে, তাঁর প্রভাব সাহিত্যের পাতাতেও এসে পৌঁছায়। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের খ্যাতনামা ব্যোমকেশ সিরিজের ‘আদিম রিপু’ গল্পে বাঁটুল সর্দার নামক এক চরিত্রের দেখা মেলে। গবেষক ও পাঠকমহলের একাংশের মতে, এই বাঁটুল সর্দার চরিত্রটির রূপায়ণে গোপাল মুখোপাধ্যায় তথা গোপাল পাঁঠার ছায়া পড়েছে। যদিও শরদিন্দু নিজে সে কথা স্পষ্ট করে যাননি, তবুও সমসাময়িক বাস্তবতা ও চরিত্রের বলিষ্ঠতা মিলিয়ে এই ধারণা যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

অতএব, গোপাল মুখোপাধ্যায় ছিলেন এক বহুমাত্রিক চরিত্র। দাঙ্গার সময় তিনি যেমন কঠোর হয়ে অস্ত্র হাতে প্রতিরোধ গড়েছিলেন, তেমনি জীবনের বাকি সময়ে ছিলেন অতি সাধারণ, মাটির মানুষ। তাঁর জীবন কেবল রক্তাক্ত ইতিহাসের অংশ নয়, বরং সেই ইতিহাসে মানবিকতার এক অমূল্য দৃষ্টান্তও বটে।

তথ্যসূত্র

  • ১। https://indiarag.in/
  • ২। https://sritiochetona.org/
  • ৩। https://www.groundxero.in/
  • ৪। https://inscript.me/
Post Views: 114
Tags: Calcutta Riots 1946Communal ViolenceGopal PathaHindu Muslim RelationsIndian National ArmyKolkata HistorySubhas Chandra BoseThe Bengal Filesকলকাতা দাঙ্গাগোপাল মুখোপাধ্যায়দি বেঙ্গল ফাইলসস্বাধীনতা সংগ্রাম
ADVERTISEMENT

Related Posts

সুলতানি যুগের ঐতিহাসিক পুনর্গঠনের নথি ও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান
ভারতবর্ষের ইতিহাস

সুলতানি যুগের ঐতিহাসিক পুনর্গঠনের নথি ও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম গজনীর মাহমুদ ও মহম্মদ ঘোরীর ধারাবাহিক ও সফল সামরিক অভিযানের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে...

by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
August 9, 2025
ময়ূরাক্ষী তীরবর্তী বীরভূম : ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সমাজের সন্ধানে
ভারতবর্ষের ইতিহাস

ময়ূরাক্ষী তীরবর্তী বীরভূম : ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সমাজের সন্ধানে

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম বঙ্গদেশের অন্তঃস্থলে অবস্থিত বীরভূম জেলার ভূপ্রকৃতি, সংস্কৃতি ও ইতিহাস এক গভীর অন্তঃসার ধারণ করে আছে,...

by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
July 10, 2025
সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনকাল : (১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ)
ভারতবর্ষের ইতিহাস

সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনকাল : (১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ)

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম মুঘল সম্রাট শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে সর্বাধিক শক্তিশালী, বুদ্ধিমান ও রাজনৈতিকভাবে দক্ষ ছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেব। ইতিহাসে...

by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
June 19, 2025
RAW-কে নিষিদ্ধ করার পিছনে আমেরিকা উদ্দেশ্য কি?
রাজনীতি

RAW-কে নিষিদ্ধ করার পিছনে আমেরিকা উদ্দেশ্য কি?

লিখেছেনঃ মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম সাম্প্রতিক কালে ভারতের বৈদেশিক গুপ্তচর সংস্থা ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং’— সংক্ষেপে ‘র’ (RAW) —কে কেন্দ্র...

by মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
June 25, 2025

Facebook Page

নবজাগরণ

ADVERTISEMENT
No Result
View All Result

Categories

  • English (9)
  • অন্যান্য (11)
  • ইসলাম (28)
  • ইসলামিক ইতিহাস (23)
  • ইহুদী (3)
  • কবিতা (37)
  • খ্রিস্টান (6)
  • ছোটগল্প (6)
  • নাস্তিকতা (18)
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (24)
  • বিশ্ব ইতিহাস (26)
  • ভারতবর্ষের ইতিহাস (198)
  • রাজনীতি (39)
  • সাহিত্য আলোচনা (72)
  • সিনেমা (18)
  • হিন্দু (16)

Pages

  • Cart
  • Checkout
  • Checkout
    • Confirmation
    • Order History
    • Receipt
    • Transaction Failed
  • Contact
  • Donation to Nobojagaran
  • Homepage
  • Order Confirmation
  • Order Failed
  • Privacy Policy
  • Purchases
  • Services
  • লেখা পাঠানোর নিয়ম
  • হোম

No Result
View All Result
  • মূলপাতা
  • ইতিহাস
    • ইসলামিক ইতিহাস
    • ভারতবর্ষের ইতিহাস
    • বিশ্ব ইতিহাস
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ধর্ম
    • ইসলাম
    • খ্রিস্টান
    • হিন্দু
    • ইহুদী
    • অন্যান্য ধর্ম
  • নাস্তিকতা
  • রাজনীতি
  • সিনেমা
  • সাহিত্য
    • কবিতা
    • ছোটগল্প
    • উপন্যাস
    • সাহিত্য আলোচনা
  • অন্যান্য
  • ই-ম্যাগাজিন
    • নবজাগরণ (ষাণ্মাসিক) – জীবনানন্দ ১২৫ তম জন্ম সংখ্যা – মননশীল সাহিত্য পত্রিকা
  • Others Language
    • English
    • Urdu
    • Hindi

©Nobojagaran 2020 | Designed & Developed with ❤️ by Adozeal

Login to your account below

Forgotten Password?

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In
Don't have an account yet? Register Now
1
Powered by Joinchat
Hi, how can I help you?
Open chat
wpDiscuz
0
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
| Reply